–জানি। তবু আমার কেবলই মনে হয় এ বাড়িতে থাকা বড় বিপজ্জনক।
–আপনার পক্ষে বিপজ্জনক মনে করছেন?
–ইয়ে..মানে…হ্যাঁ—তাই।
–তার মানে আপনি কিছু একটা জানেন?
-ওহ, না, চমকে উঠলেন জেনিফার, আমি কিছু জানি না…কি আবার জানব…আমি কেবল…কেমন নার্ভাস হয়ে পড়েছি… ওই ক্রাম্প লোকটা… কথা বলতে বলতে জেনিফার ফর্টেঙ্কু বারবার হাত মুঠো করতে চাইছেন, মিসেস মারপল লক্ষ্য করলেন। তার বুঝতে অসুবিধা হল না, বিশেষ কোন কারণেই জেনিফার অত্যন্ত ভীত হয়ে পড়েছেন। অনেক চেষ্টা করেও মনের ভাব তিনি গোপন করতে পারছেন না।
.
১২.
বাইরে অন্ধকার নামছে। লাইব্রেরীতে জানালার সামনে বসে উল বুনছেন মিস মারপল। প্যাট ফর্টেস্কু ঘরে ঢুকলেন।
বারান্দায় পায়চারি করছিলাম। আপনাকে দেখে চলে এলাম। চুল্লীর সামনে বসে আপনি সেলাই করছেন দেখে ইংলণ্ডের ঘরোয়া আরামের জীবন বলেই মনে হচ্ছে।
-হ্যাঁ, ইংলণ্ডের মতই। বললেন মিস মারপল। তবে ইউট্টি লজের মতো আর কটা বাড়ি আছে।
–এ বাড়ির কথা আর না বলাই ভাল। টাকাকড়ি কেউ কম খরচ করে না। কিন্তু মনে হয় কোনদিন এ বাড়িতে সুখ ছিল।
–কথাটা আমারো সত্য বলেই মনে হয়।
তবে অ্যাডেল মনে হয় সুখী ছিল, প্যাট বলল, আমি অবশ্য তাকে দেখিনি। জেনিফার যে অসুখী তা বুঝতে পারি। ইলেই তো তার সেই মনের মানুষটিকে নিয়েই ডুবে আছে। ওহ আর মন ধরে রাখতে পারছি না এখানে।
কথা বলতে বলতে মিস মারপলের দিকে তাকাল। পরে বলল, ল্যান্স আমায় কি বলেছে, জানেন? আমি যেন আপনার কাছাকাছি থাকি। তাহলেই নিরাপদে থাকব। তার ধারণা এ বাড়িতে কোন উন্মাদ রয়েছে। কখন কি করে বসবে কেউ বলতে পারে না।
–আপনার অবস্থা আমি উপলব্ধি করতে পারছি। বললেন মিস মারপল।
–আপনার স্বামী ফাইটার পাইলট ছিলেন, তাই না?
-হ্যাঁ। চুল্লীর দিকে তাকিয়ে বিষণ্ণ কণ্ঠে বলেন প্যাট, আমার বিয়ের মাত্র একমাস পরেই সেই সাংঘাতিক ঘটনাটা ঘটেছিল। পৃথিবীটাকে বড় নিষ্ঠুর মনে হয়, জানেন? আমারও তখন মরার ইচ্ছা হয়েছিল। বড় ভাল ছিল ডন। খুবই হাসিখুশি। দেশের জন্য শেষ পর্যন্ত বীরের মতো প্রাণ দিল।
–আপনার দ্বিতীয় স্বামী?
–ওঃ সে বড় বেদনাদায়ক। বড় সুখী ছিলাম আমরা। কিন্তু বিয়ের দুবছরের মধ্যেই বুঝতে পেরেছিলাম ফ্রেডি সহজ পথে চলে না। তাকে বদলে দেয়ার ক্ষমতা ছিল না আমার।
না, কেউ কাউকে বদলাতে পারে না। বললেন মিস মারপল।
–সবই বুঝতে পারতাম, দেখতে পেতাম। কিন্তু আমার করার কিছু ছিল না। এরপর ফ্রেডি নিজেই একদিন বেসামাল হয়ে গেল। নিজেকে গুলি করে আত্মহত্যা করল।
চেনাজানা লোকের কাছে যাতে মুখ দেখাতে না হয়, সেই জন্য আমি ইংলণ্ড ছেড়ে কেনিয়ায় চলে যাই। সেখানেই ল্যান্সের সঙ্গে আমার আলাপ হয়।
আচমকা মিস মারপলের দিকে মুখ ফেরালেন প্যাট। বললেন, আচ্ছা মিস মারপল, পার্সিভালকে আপনার কি রকম মনে হয়?
ভদ্রলোককে তেমন ভাবে দেখার সুযোগ হয়নি, মনে হয় আমার এখানে থাকাটা তিনি পছন্দ করছেন না।
প্যাট হেসে উঠল। তারপর সামান্য ঝুঁকে বলল, ও বড় নীচ। বিশেষ করে টাকাকড়ির ব্যাপারে। ও নাকি বরাবরই এরকম, ল্যান্স বলে। জেনিফারও একই কথাবলে। সংসার খরচের ব্যাপার নিয়ে মিস ডাভের সঙ্গে তো নিত্য খিটিমিটি লেগে আছে। অথচ মিস ডাভ কত কাজের। আপনারও তাই মনে হয় না।
–হ্যাঁ, আমারও তাই ধারণা।
–আর ওই মিস র্যামসবটম। উনি আমাকে বড্ড ভয় ধরিয়ে দেন।
–ভয় ধরিয়ে দেন? কেন?
-কেমন ক্ষ্যাপাটে মনে হয় তাকে। ঘরে বসে সব সময় কেবল মানুষের পাপ নিয়ে ভাবেন। কোনদিন কি করে বসেন
–আপনার সত্যিই এরকম মনে হয়?
-ল্যান্স বলে এ বাড়িতে কোন উম্মাদ আছে। পরিবারেরই কেউ। আমিও তাই ভাবি। বাইরের কেউ কি এভাবে খুন করতে পারে? জানেন, আমার সবসময় ভয় হয়। আবার না কিছু ঘটে–
-না সে ভয় আর নেই বলেই আমার মনে হয়। বললেন মিস মারপল।
নিশ্চিতভাবে কিছু কি বলা যায়?
–মৃত্যুভয় অন্তত এবাড়িতে নেই আমার বিশ্বাস, খুনী লোকটির উদ্দেশ্য সিদ্ধ হয়েছে।
–কোন পুরুষ খুনী?
প্যাট চোখ বড় করলেন। যেন অদ্ভুত কিছু শুনছেন।
–পুরুষ বা স্ত্রীলোক যেই হোক, তার আর খুনের উদ্দেশ্য নেই।
–কোন উদ্দেশ্যের কথা বলছেন আপনি?
মিস মারপল মাথা ঝাঁকালেন। ধীরে ধীরে বললেন, সেটা এখনো বুঝে উঠতে পারিনি।
.
১৩.
কনসোলিডেটেড ইনভেস্টমেন্ট ট্রাস্টের অফিসে অন্যান্য দিনের মতো যথারীতি কাজ চলছে।
মিস সোমার্স সবার টেবিলে চা দিয়ে গেছেন। এমনি সময় ল্যান্স ফর্টেস্কু অফিসে ঢুকলেন। নিরাসক্ত ভঙ্গিতে চারপাশে তাকিয়ে জরিপ করে নিলেন। দেখলেন সবই প্রায় আগের মতোই রয়েছে।
টাইপিস্টদের ঘরে কর্মব্যস্ততার খটাখট শব্দ উঠছে। অনেক দিন পরে ল্যান্সকে দেখে পুরনো কর্মীদের অনেকেই উদগ্রীব হয়ে তাকাতে চাইছিল।
মিস গ্রিফিথ এগিয়ে এসে ল্যান্সের সঙ্গে কুশল বিনিময় করলেন।
–আমার ভাই অফিসে আছেন? জানতে চাইলেন ল্যান্স।
–বোধহয় ভেতরের দিকের অফিসে আছেন। সহজভঙ্গিতে বললেন মিস গ্রিফিথ।
ল্যান্স ভেতরের অফিসের সামনে এসে দেখলেন মাঝ বয়সী এক মহিলা ডেস্কে বসে আছেন।
মিস গ্রসভেনর খুব রূপসচেতন তিনি শুনেছিলেন। কিন্তু সামনের মহিলাকে দেখে তা মনে হল না।
ল্যান্স নিজের পরিচয় দিলেন। জানতে পারলেন, ইনি মিসেস হার্ডক্যাসল। মিঃ পার্সিভাল ফর্টেস্কুর পার্সোনাল সেক্রেটারি। আগেকার রূপসী সেক্রেটারী মিস গ্রসভেনর গত সপ্তাহে চাকরি ছেড়ে দিয়ে চলে গেছেন।