–প্রিয় প্যাট, তুমি আমার কোন দুর্ভাগ্য বয়ে আনননি। তোমাকে বিয়ে করার পরেই তো বাবা আমাকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন।
কিন্তু কি হল এতে? এখানে এসে চরম দুর্বিপাকের মধ্যে পড়লে। এ আমার ভাগ্যেরই অভিশাপ।
–এ সব তোমার মনের বিকার প্যাট।
–ওকথা বলো না ল্যান্স। আমি সত্যিই অভিশপ্ত।
–না, প্যাট, না। আমার সৌভাগ্য যে তোমাকে বিয়ে করতে পেরেছি। সে কারণেই দুর্ভাবনা তোমাকে নিয়ে। যদি এখানে সত্যিই কোন উন্মাদ থেকে থাকে, আমি চাই না তুমি বিষ মেশানো কিছু পান কর কিংবা গুলির শিকার হও।
একটু থেমে ল্যান্সলট আবার বলতে লাগল, আমি না থাকলে, ওই বৃদ্ধা মহিলা…কি যেন নাম…হ্যাঁ, মিস মারপল…তার কাছাকাছি থেকো। আমি জানি এফি মাসী তাকে কেন এখানে থাকতে বলেছেন।
-ল্যান্স, আমাদের এখানে কতদিন থাকতে হবে?
–এখনো ঠিক জানি না।
–এ বাড়ি এখন তোমার ভাইয়ের। আমার মনে হয় না আমাদের এখানে থাকা তিনি পছন্দ করছেন।
-ও যাই ভাবুক, আপাতত তাকে মেনে নিয়েই আমাদের এখানে থাকতে হবে।
–আমরা কি তাহলে আর পূর্ব আফ্রিকায় ফিরে যাব না?
–তুমি তাই চাও, বুঝতে পারি। আমারও তাই ইচ্ছা, এদেশ একদম ভাল লাগে না আমার।
ল্যান্সের চোখে হঠাৎ শয়তানী ঝিলিক খেলে গেল। একটু ঝুঁকে বলল, আমাদের মতলবের কথা কাউকে বোলো না প্যাট। পার্সিকে আর একটু কড়কে দেওয়া আমার ইচ্ছে।
–কিন্তু তুমি সাবধানে থেকো ল্যান্স। আমার বড় ভয় হয়।
-হ্যাঁ, ভেবো না, প্যাট, আমি সাবধানেই থাকব। পার্সিকে এত সহজে সব কিছু হাতিয়ে নিতে দেয়া যায় না।
.
ড্রইংরুমের সোফায় বসে মিস মারপল মশগুল হয়ে মিসেস পার্সির সঙ্গে গল্প জমিয়েছিলেন। তাঁর উল্টো দিকে আরাম কেদারায় বসে অনর্গল বকবক করে চলেছেন মিসেস পার্সিভাল।
মিস মারপল বুঝতে পারছিলেন, মনের মতো শ্রোতা পেয়ে মনের যত জমানো ক্ষোভ উজাড় করে দিতে চাইছেন মহিলা।
জীবনে অনেক কিছুই ঘটে, কত ভাল কত মন্দ। মাঝে মাঝে মনের কথা কাউকে বলতে না পারলে শান্তি পাওয়া যায় না। অফিসের কাজে সারাটাদিনই আমার স্বামীকে শহরে কাটাতে হয়। বাড়ি যখন ফেরেন, তখন এত ক্লান্ত থাকেন যে কথা বলার আর উৎসাহ তার থাকে না। সারাদিন নিঃসঙ্গই থাকতে হয় আমাকে।
খাওয়া দাওয়া আর আরাম করা–এর মধ্যে আনন্দ কোথায় বলুন। সামাজিক মেলামেশার কোন সুযোগ নেই।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে একটু থামলেন মিসেস পার্সিভাল। পরে বললেন, মৃত ব্যক্তির বিরুদ্ধে কিছু বলতে নেই জানি, তবু না বলে পারছি না আমার শ্বশুর দ্বিতীয়বার বিয়ে করে মোটেই বুদ্ধির পরিচয় দেননি।
আমার শ্বাশুড়ির বয়স ছিল আমারই সমান। ছিলেনও বড় বেশি পুরুষ ঘেঁষা। দুহাতে টাকা খরচ করতেন। শ্বশুর এত হিসেবি মানুষ ছিলেন, কিন্তু স্ত্রীকে বাধা দিতেন না।
এসব দেখে পার্সি বিরক্ত হত। এত অমিতব্যয়িতা একদম পছন্দ নয় ওর। শেষ দিকে শ্বশুর ভয়ানক বেপরোয়া হয়ে উঠেছিলেন। ঝুঁকির কাজে যেন ইচ্ছে করেই জলের মতো টাকা খরচ করতেন।
–হ্যাঁ বুঝতে পারি, আপনার স্বামীর চিন্তায় পড়াই স্বাভাবিক।
গতবছর খুবই দুর্ভোগ গেছে পার্সির। সব দিক সামাল দিতে গিয়ে নিজেও কেমন বদলে গিয়েছিল। প্রায় সময়ই গুম হয়ে থাকতো–ডাকলে সাড়া দিত না।
আমার ননদ ইলেইন, বড় অদ্ভুত মেয়ে। মিশুকে কিন্তু বড় সহানুভূতিহীন।
পরিবারের লোকজনের কথা এভাবে আমি সম্পূর্ণ অপরিচিত কারো কাছে বলছি ভেবে নিশ্চয়ই আপনি অবাক হচ্ছেন। কিন্তু জানেন, প্রচণ্ড মানসিক উদ্বেগে আমি যেন কেমন হয়ে গেছি। কারো সঙ্গে কথা বললে যেন একটু স্বস্তি পাই। আপনাকে দেখে বড় স্নেহপ্রবণ মনে হয়েছে।
–আপনার মনের অবস্থাটা আমি বুঝতে পারছি। বললেন মিস মারপল।
চোখের কোণে একঝলক তাকিয়ে নিয়ে তিনি বললেন, কথাটা খারাপ শোনাবে হয়তো, মনে হয় আপনার সদ্য প্রয়াত শ্বশুর খুব ভাল মানুষ ছিলেন না।
-না তা কখনওই ছিলেন না। বললেন জেনিফার, আপনাকে বিশ্বাস করে বলছি, অনেকেরই সর্বনাশের কারণ হয়েছেন। সন্দেহ হচ্ছে, সেই কারণেই কেউ প্রতিহিংসা নিল কিনা।
প্রশ্নটা করা হয়তো উচিত হচ্ছে না, একটু ইতস্তত করে বললেন মিস মারপল, কে এমন কাজ করতে পারে আন্দাজ করতে পারেন?
কে হতে পারে?
–ওহ, ওই লোকটা আমার বিশ্বাস, ওই ক্রাম্প। খুবই দুর্বিনীত স্বভাব। লোকটাকে কখনোই পছন্দ হয়নি আমার।
–লোকটার উদ্দেশ্য কি থাকতে পারে বলে মনে করেন? জানতে চাইলেন মিস মারপল।
-লোকটা যে রকম বদ, আর এত বেশি মদ খেতো যে কোন দুষ্কর্মের জন্য তার কোন মোটিভ দরকার হয় না। আমার ধারণা মিঃ ফর্টেন্ধু তাকে কখনো বকাঝকা করেছিলেন। তবে কি জানেন, প্রথমে ভেবেছিলাম অ্যাডেলই আমার শ্বশুরকে বিষ খাইয়েছিল। কিন্তু পরে অবাক হয়ে যাই দেখে সেও বিষ খেয়ে মারা গেল।
আপনাকেই বলছি বিশ্বাস করে, অ্যাডেল হয়তো ক্রাম্পকে দোষারোপ করেছিল। আর তাতে ক্ষেপে গিয়ে সে স্যাণ্ডউইচে কিছু মিশিয়ে দেয়। খুব সম্ভব গ্ল্যাডিসের সেটা চোখে পড়ে গিয়েছিল, ক্রাম্প তাই তাকেও খুন করে বসে।
বাড়িটা বড় ভয়ঙ্কর লাগছে আমার; পুলিসরা যদি বাধানিষেধ না রাখতো আমি অন্য কোথাও চলে যেতাম। জানি না, কোন দিন হয়তো পালিয়েই চলে যাব।
–না, এরকম কাজ ঠিক হবে বলে মনে হয় না। বললেন মিস মারপল। পুলিস ঠিক আপনাকে খুঁজে বার করবে।