আজ সকালে বেডন হীথেও টেলিফোন করা হয়েছিল। মিসেস ফর্টেস্কুকে পাওয়া যায়নি, তিনি গলফ খেলতে গেছেন।
মিসেস পার্সিভালকেও ফোনে পাওয়া যায়নি। তিনি সারাদিনের জন্য লণ্ডনে গেছেন।
ছোট ছেলে মিঃ ল্যান্সলট বছর খানেক হল বিয়ে করেছেন। তিনি বিয়ে করেছেন লর্ড ফ্রেডরিক অ্যানটিসের বিধবাকে। তাদের বিয়ের ছবি কাগজে ছাপা হয়েছিল।
প্রয়াত লর্ড ফ্রেডরিক অ্যানটিসের নামটি ইনসপেক্টর নীলের জানা। খেলাধুলার জগতে খুব দুর্নাম ছিল ভদ্রলোকের। একটা ঘোড়া দৌড়াবার আগে তিনি নিজের মাথায় গুলি করে আত্মহত্যা করেন।
তার স্ত্রীর সম্পর্কেও একটি ঘটনা নীলের জানা। তিনি এর আগে বিয়ে করেছিলেন এক বৈমানিককে। ব্রিটেনের যুদ্ধে তিনি মারা যান।
এরপর নীল ফোন করলেন বেডন হীথে ইউট্টি লজে। কিন্তু এব্যাপারে কথা বলার মতো সেই সময় বাড়িতে ফর্টেন্ধু পরিবারের কেউই উপস্থিত ছিলেন না।
বাড়ির হাউসকিপার মিস ডাভের সঙ্গেই অগত্যা কথা বললেন নীল। নিজের পরিচয় দিয়ে তিনি জানালেন মিঃ ফর্টেস্কুকে অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। সেখানে তার মৃত্যু হয়েছে।
এধরনের আকস্মিক মৃত্যুতে নিয়মমাফিক কিছু তদন্ত পুলিসকে করতে হয়। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তিনি সেকাজেই বাড়িতে আসছেন।
.
–মিস গ্রিফিথ, এবারে আর কিছু, যা আপনি জানেন, আমাকে জানালে খুশি হব। আচ্ছা মিঃ পার্সিলের সঙ্গে তার বাবার সম্পর্ক কেমন ছিল? প্রশ্ন করলেন নীল।
ইদানীং তাদের বনিবনা হচ্ছিল না। মিঃ পার্সিভাল তার বাবার অনেক কথাই মেনে নিতে পারছিলেন না। এই নিয়েই কথা কাটাকাটি হতো।
পিতা পুত্রের এসব ঝগড়াঝাটি আপনারাও শুনেছিলেন?
-হ্যাঁ, শুনেছিলাম। মিঃ ফর্টেস্কু প্রচণ্ড রেগে গিয়ে একবার বলেছিলেন, ল্যান্সকে আবার বাড়িতে ফিরিয়ে আনবেন। সে ভাল ঘরে বিয়ে করেছেন, তার বুদ্ধিও বড় ছেলের চেয়ে অনেক বেশি চোখা।
এরপর অফিসের অন্য কর্মী মিস গ্রসভেনরের সঙ্গে কথা বলার জন্য প্রস্তুত হলেন নীল।
মিস গ্রিফিথ বিদায় নিলে ডিটেকটিভ ইনসপেক্টর ওয়েট তার ঊধ্বর্তন অফিসারের দিকে তাকিয়ে বললেন, মিঃ ফর্টেস্কু যে ধরনের ব্যবসা করতেন, তাতে বাজারে তার অনেক শত্রু থাকা অসম্ভব নয়।
–হ্যাঁ, শক্ত নিশ্চয়ই ছিল, বললেন নীল, তবে বিষপ্রয়োগ করা হয়েছিল বাড়িতে, অফিসে নয়। গোটা ব্যাপারটার মধ্যে আমি একটা পরিচিত নক্সা দেখতে পাচ্ছি, ওয়েট। দেখ, ভদ্রলোকের দুই ছেলে, বড়টি ভাল। ছোট ল্যান্স বদ। এদিকে স্ত্রীর বয়স স্বামীর চেয়ে ঢের কম। স্ত্রীটির আবার গলফের মাঠে যাতায়াত আছে। খুবই পরিচিত একটা ছক।
এই সময় মিস গ্রসভেনর ঘরে প্রবেশ করলেন। ইনসপেক্টর তাকে বসতে ইঙ্গিত করলেন।
পরে সরাসরিই প্রশ্ন করলেন, মৃত মিঃ ফর্টেস্কু সম্পর্কে আপনাকে দু-একটি প্রশ্ন করতে চাই। ইদানীং তার মধ্যে কোন পরিবর্তন কি আপনি লক্ষ্য করেছিলেন?
পরিবর্তন, মিস গ্রসভেনর বললেন, ঠিক পরিবর্তন কিনা বলতে পারব না, তবে হঠাৎ করেই কেমন রেগে উঠতেন। বিশেষ করে মিঃ পার্সিভাল সম্পর্কে।
–আর একটা প্রশ্ন কেবল আপনাকে করছি মিস গ্রসভেনর। মিঃ ফর্টেস্কুর কি পকেটে শস্যের দানা নিয়ে ঘোরার অভ্যাস ছিল?
-শস্যের দানা? পকেটে? অত্যন্ত বিস্মিত হলেন মিস গ্রসভেনর, এরকম কেন হবে… না না…
ধরুন বার্লি, রাই বা এই জাতীয় কিছু ব্যবসাসংক্রান্ত লেনদেন বা নমুনা হিসেবে
-ওহ না। এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানির প্রতিনিধিদের জন্য তিনি প্রতীক্ষা করছিলেন। আর আসার কথা ছিল এট্ৰিকাস বিল্ডিং সোসাইটির প্রেসিডেন্টের
মিস গ্রসভেনরের কাছ থেকে আর কিছু জানার ছিল না। ইনসপেক্টর নীলের সামনে ব্যাখ্যাহীন প্রশ্ন হয়ে রয়ে গেল এক পকেট রাই।
.
ইউট্টি লজের সামনে গাড়ি থেকে যখন নামলেন ইনসপেক্টর নীল আর ডিটেকটিভ কনস্টেবল ওয়েট–মিস ডাভ জানালা দিয়ে দুজনকে আগেই দেখতে পেলেন।
ইউট্রি লজ নামের বিশাল বাড়িটা লাল ইটের তৈরি। অনেকটা লম্বাটে ধরনের। মাঝে মাঝে টালিবসানো ত্রিকোণ আর শার্সিলাগানো জানালা।
সামনে বিস্তীর্ণ বাগান। সেখানে চোখে পড়ে গোলাপ ফুলের গাছের সঙ্গে নানা জাতের লতা। আর চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য ইউ গাছের ঝোপ।
বাড়ির ডানপাশে বিশাল এক ইউ গাছ খোলা আকাশে শাখাপ্রশাখা বিস্তার করে বেড়ে উঠেছে। তার তলায় অজস্র সেই বিষফল।
যে কেউ এসব ফল দিয়ে ইচ্ছে মতো ট্যাকসিন তৈরি করে নিতে পারে–চারপাশে চোখ বোলাতে বোলাতে ভাবলেন নীল।
অস্বস্তিকর ভাবনাটা মাথায় নিয়েই সদর দরজার ঘণ্টা বাজালেন তিনি। দরজা খুলে তাকে অভ্যর্থনা করল মধ্যবয়স্ক একজন লোক।
নিজের আর সঙ্গীর পরিচয় দিয়ে নীল জিজ্ঞেস করলেন, মিসেস ফর্টেস্কু ফিরেছেন?
-না, স্যর।
–মিঃ পার্সিভাল বা মিস ফর্টেস্কু?
–না, স্যর।
–তাহলে আমি মিস ডাভের সঙ্গেই কথা বলতে চাই।
–ওই যে উনি আসছেন। একপাশে সরে গিয়ে বলল লোকটি।
এইসময় সিঁড়ি দিয়ে কৃশ চেহারার একজন মহিলাকে নিচে নেমে আসতে দেখা গেল। তার পরণে হালকা রঙের পোশাক। নিখুঁত ভাবে চুল বাঁধা। ঠোঁটের কোণে অস্পষ্ট রহস্যময় হাসির রেখা।
মিস ডাভ নিজের পরিচয় দিয়ে পুলিস অফিসার দুজনকে অভ্যর্থনা জানালেন।
ইনসপেক্টর নীল বললেন, যতদূর জানা গেছে সকালে প্রাতরাশের সঙ্গেই মিঃ ফর্টেঙ্কু এমন কিছু গ্রহণ করেছিলেন, যা তার আকস্মিক মৃত্যু ডেকে এনেছিল। সার্জেন্ট হে যাতে রান্নাঘরে গিয়ে যেসব খাবার দেওয়া হয় সেগুলো পরীক্ষা করতে পারেন আপনি দয়া করে তার ব্যবস্থা করে দিন।