–মানে বলছি… অনেক দিন আগের ঘটনা তো…এতদিনে সব মিটে গেছে…
–মিটে গেছে, কে বলেছে?
–তাহলে মেটেনি? নীল বললেন, তাঁকে বিষ খাওয়ানো হয়েছিল—
ওসব বাজে কথা। সে জ্বর হয়ে মরেছে।
–আমি মিঃ রেক্স ফর্টেস্কুর কথা বলছি। বললেন নীল।
এবারে হালকা নীলাভ চোখ তুলে মিসেস ম্যাকেঞ্জি নীলের দিকে তাকালেন।
–আমিও তাই বলছি। সে নিজের বিছানায় শুয়ে মরেছে।
–উনি মারা যান সেন্ট জিউডস হাসপাতালে।
–কিন্তু আমার স্বামী কোথায় মারা যান কেউই তা জানে না। কোথায় তাকে কবর দেওয়া হয় তাও কেউ জানে না। রেক্স ফর্টেঙ্কু যা বলেছে সকলে তাই জানে। অথচ লোকটা জঘন্য মিথ্যাবাদী।
-আপনার কি মনে হয় মিঃ রেক্স ফর্টেস্কু আপনার স্বামীর মৃত্যুর জন্য দায়ী?
আজ সকালে তো ডিম খেয়েছিলাম, বলে উঠলেন মিসেস ম্যাকেঞ্জি, তবু মনে হয় এই তো মাত্র ত্রিশ বছর আগের ঘটনা।
নীল একটু থমকে গেলেন। বুঝতে পারলেন, এভাবে চললে আসল কথায় পৌঁছনো যাবে না। তিনি নিজেকে প্রস্তুত করে নিলেন।
–এক মাস আগে, চাপ দিয়ে বলতে লাগলেন নীল, কে যেন মিঃ রেক্স ফর্টেস্কুর টেবিলের ওপরে কয়েকটা মরা কালো পাখি রেখে দিয়েছিল।
–দারুণ ব্যাপার দেখছি।
–আপনার কোন ধারণা আছে মাদাম, এরকম কাজটা কে করে থাকতে পারে?
-ধারণা দিয়ে কি কাজ। আসল কথাটাই হল, আমি ওদের এই কাজ করার জন্যই মানুষ করে তুলেছিলাম, বুঝলেন?
–আপনার ছেলেমেয়েদের কথা বলছেন?
–হ্যাঁ। ডোনাল্ড আর রুবিওদের যখন মাত্র নয় আর সাত বছর বয়স তখন ওরা ওদের বাবাকে হারায়। প্রতিটা দিন, প্রতিটা রাতে আমি ওদের শপথ করিয়েছি।
ইনসপেক্টর নীল এবারে নড়েচড়ে বসলেন।
–আপনি ওদের কি শপথ করিয়েছিলেন?
–তারা পিতৃহত্যার প্রতিশোধ নেবে–তাকে খুন করবে।
–ওহ, কাজটা ওরা করতে পেরেছিল?
–জেরাল্ড ডেনমার্ক গিয়ে আর ফিরে আসেনি। ওরা তার করে জানিয়েছিল জেরাল্ড যুদ্ধে মারা গেছে।
-খুবই দুঃখজনক ঘটনা। আপনার মেয়ের কি হয়?
–কোন মেয়ে তো আমার নেই।
–আপনার মেয়ে রুবির কথা বলছি।
–ওহ রুবি? তাকে আমি বাতিল করে দিয়েছি। সে বিশ্বাসের মর্যাদা রাখেনি। কথাটা আপনি জানেন।
-আপনার মেয়ে এখন কোথায়, মাদাম?
–আমার কোন মেয়ে নেই, আপনাকে তো আগেই বলেছি। রুবি ম্যাকেঞ্জি বলে আর কেউ নেই।
–আপনি বলছেন সে মারা গেছে?
–মারা গেলে বরং ভালই হত, আচমকা হেসে উঠলেন মিসেস ম্যাকেঞ্জি, নাঃ বড্ড সময় নষ্ট হচ্ছে আপনার সঙ্গে কথা বলে। বইটা আমাকে পড়তে হবে।
আবার থমকে গেলেন ইনসপেক্টর নীল। তিনি আরও কয়েকটা কথা বলার চেষ্টা করলেন। কিন্তু মিসেস ম্যাকেঞ্জি কোন উত্তর করলেন না। তিনি পুনঃ পুনঃ বিরক্তি প্রকাশ করতে লাগলেন।
বাধ্য হয়েই উঠে পড়লেন নীল। সুপারের ঘরে এলেন।
-ওর সঙ্গে দেখা করবার জন্য কেউ আসেন?
–আমি দায়িত্ব নিয়ে আসার পরে কেউ আসেন নি। শুনেছি, আমার আগে যিনি ছিলেন, তার সময়ে মহিলার মেয়ে দেখা করতে আসতেন। কিন্তু মেয়েকে দেখলেই তিনি খুব উত্তেজিত হয়ে পড়তেন। বারবার এমন হওয়ায় তাকে আসতে বারণ করে দেওয়া হয়।
–ওঁর মেয়ে রুবি ম্যাকেঞ্জি এখন কোথায় থাকতে পারেন, আপনার কোন ধারণা আছে?
–না, একেবারেই না।
এখন সবকিছু সলিসিটারের মাধ্যমেই হয়। আপনি তার সঙ্গে দেখা করলে হয়তো কিছু জানতে পারেন।
ইনসপেক্টর নীল আগেই সলিসিটরের সন্ধান পেয়েছিলেন। কিন্তু তারা এ বিষয়ে কিছুই জানাতে পারেনি।
বেশ কয়েক বছর আগেই মিসেস ম্যাকেঞ্জির জন্য একটা ট্রাস্ট গঠন করা হয়েছিল। তারপর থেকে তারা আর মিস ম্যাকেঞ্জিকে দেখেননি। এখন ট্রাস্টই তার ব্যাপারটা দেখেন।
রুবি ম্যাকেঞ্জির চেহারার সঠিক বর্ণনাও কারোর কাছ থেকে জানা সম্ভব হয়নি। একজন মেট্রন জানালেন, ছোটখাট, ছিপছিপে চেহারা। অন্য একজন বলেন, চেহারা ভারিক্কী–গোলগাল। একরকম হতাশ হয়েই নীল দপ্তরে ফিরে এলেন।
১.৩ ইউট্রি লজের বাগানে
১১.
ল্যান্সলট তার স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে ইউট্রি লজের বাগানে বেড়াচ্ছিলেন।
–এই ইউগাছগুলো বড় ভয়ঙ্কর। এসব গাছ বাগানে রাখা সত্যিই রুচিহীনতার পরিচয়। আমি হলে হলিহক্স লাগাতাম।
কথাটা শুনে ল্যান্স চঞ্চল চোখে ইউগাছের দিকে তাকায়।
-যারা বিষ খাওয়ায় তারা বড় ভয়ানক। এসব লোকের মন প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়। বললেন প্যাট।
–আমি ঠিক ওরকম ভাবি না, ল্যান্স বললেন, এসব খুবই ঠাণ্ডা মাথার কাজ।
–তিন তিনটে খুন…এমন কাজ উন্মাদ ছাড়া কে করবে?
–আমারও তাই মনে হয় প্যাট। হঠাৎ তীব্রস্বরে বলে উঠে ল্যান্স, তুমি এখান থেকে চলে যাও–অন্য যে কোন জায়গায় চলে যাও, তোমাকে নিয়ে আমার প্রচণ্ড দুশ্চিন্তা
প্যাট চলতে চলতে শান্ত গলায় বললেন, তুমি বুঝতে পেরেছ, তাই না–এই কাজটা কে করেছে
-না, আমার জানা নেই।
-বুঝতে পারছি, সে কারণেই তুমি আমার জন্য ভয় পাচ্ছ। কথাটা আমাকে জানাবে ভেবেছিলাম।
–আমি সত্যিই কিছু জানি না প্যাট..তবু মনে হয় তুমি এখানে না থাকলেই নিশ্চিন্ত থাকব।
–প্রিয় ল্যান্স, ভালমন্দ যাই ঘটুক, আমি এখান থেকে কোথাও যাচ্ছি না। আমি এ-ও জানি খারাপটাই ঘটবে।
–তার মানে? তুমি একথা বলছ কেন প্যাট?
–আমার অভিশপ্ত ভাগ্যের কথাই বলছি ল্যান্স, দীর্ঘশ্বাস ফেলল প্যাট, আমি যার সঙ্গেই থাকি তার ক্ষতি ছাড়া ভাল হয় না।