-তাহলে তো দেখা যাচ্ছে, তার চায়ে যে ট্যাকসিন ছিল তা পরিবারের পক্ষে অশুভ হয়নি।
–কথাটা শুনতে খারাপ হলেও বাস্তব তাই। এখন যদি অন্তত কিছুদিন সাবধানে চলা যায় তাহলে অনেকটা সামলে ওঠা যাবে।
–কেবল সতর্কতায় কাজ হয় না, ঝুঁকিও নিতে হয়।
–তুই যাই বলিস, আমি যা বুঝি তা হল সতর্কতা আর মিতব্যয়িতা। বললেন পার্সিভাল।
–আমি ঝুঁকি নিতেই পছন্দ করি।
-দেখ ল্যান্স, ঘরে অস্থিরভাবে পায়চারি করতে করতে বলতে লাগলেন পার্সিভাল, আমাদের দুজনের দৃষ্টিভঙ্গি দুরকম, এই অবস্থায় একসঙ্গে চলতে পারব বলে মনে হয় না। হলেই বা মন্দ কি। বললেন লান্স।
–আমার মনে হয় অংশীদারী ব্যাপারটা বাতিল করে দেওয়াই ভাল হবে।
তার মানে আমার অংশটা তুমি কিনে নিতে চাইছ?
–অগত্যা। দৃষ্টিভঙ্গি যখন দুজনের দুরকম
-তাহলে আমার অংশের টাকা তোমাকে মেটাতে হবে। কিন্তু এই তো বলছিলে ইলেইনের টাকাটাই বড় জোর দেওয়া সম্ভব হবে। বাড়তি চাপ তাহলে মেটাবে কিভাবে?
-মানে…ইয়ে…আমি নগদ টাকার কথা বলছি না। স্থাবর সম্পত্তি আর বাড়িখানা আমরা ভাগ করে নিতে পারি।
–কথাটা নেহাৎ মন্দ বলনি। আমাকে ফাটকার অংশ দিয়ে নিজে নিরাপদ সম্পদ ভোগ করতে চাইছ। তবে কি জান…এক্ষেত্রে প্যাটের কথাটাও আমাকে ভেবে দেখতে হবে।
একটু থেমে আবার ল্যান্স বললেন, আমাকে তুমি একেবারেই বোকা ঠাউরে নিয়েছ, পার্সি। ভুয়ো হীরের খনি…ভুয়ো তেলের খনির ইজারা…এগুলোকে তুমি খুবই লাভজনক ভাবতে বলছ আমাকে
–এগুলোর সবই ফাটকাবাজি নয় ল্যান্স। কোন কোনটা খুবই লাভজনক হয়ে উঠতে পারে।
–তুমি বাবার সেই পুরনো দিনের ব্ল্যাকবার্ড মাইনের মতো বাবার ফাটকা খেলার হালের মালগুলো আমাকে গছাতে চাইছ। হ্যাঁ, ভাল কথা পার্সি, ইনসপেক্টর কি তোমার কাছে ব্ল্যাকবার্ড খনির কথা জানতে চেয়েছিলেন?
পার্সির ভ্রূ কুঞ্চিত হল। তিনি কি ভাবলেন।
–হ্যাঁ, জানতে চেয়েছিলেন। আমি বিশেষ কিছুই বলতে পারিনি। তখনতো তুই আর আমি দুজনেই ছেলেমানুষ ছিলাম। আমার যেটুকু মনে আছে, বাবা ওখান থেকে ফিরে এসে বললেন, সব ব্যাপারটাই বাজে।
–ওটা মনে হয়–সোনার খনি ছিল, তাই না? বলল ল্যান্স।
–মনে হয় তাই। বাবা নিশ্চিত ছিলেন ওখানে কোন সোনা ছিল না।
–ম্যাকেঞ্জি নামে একজন লোক মনে হয় বাবাকে ওখানে নিয়ে গিয়েছিল।
–হ্যাঁ। ম্যাকেঞ্জি সেখানে মারা গিয়েছিলেন।
–আমার যেন ভাসা ভাসা মনে পড়ছে–ম্যাকেঞ্জি মারা যাবার পরে খুব একটা ঝামেলা : হয়েছিল…মনে হয় মিসেস ম্যাকেঞ্জি এখানে এসেছিলেন। বাবাকে দোষ দিয়ে অভিশাপও দিয়েছিলেন। আমার মনে আছে তিনি বলেছিলেন বাবাই তার স্বামীকে খুন করেছেন।
–এরকম কিছু হয়েছিল কিনা আমার ঠিক মনে পড়ে না।
–ওই ব্ল্যাকবার্ড খনিটা কোথায়? পশ্চিম আফ্রিকাতে কি?
–সম্ভবত তাই।
–অফিসে গেলে, ওই ইজারার ব্যাপারটা একবার দেখব।
–বাবাকে তো জানিস, পার্সি বললেন, তার ভুল হবার কথা নয়।
–মিসেস ম্যাকেঞ্জি আর যে দুটো বাচ্চাকে তিনি এখানে নিয়ে এসেছিলেন, তাদের কি হল কে জানে। ছেলেমেয়ে দুটোর এতদিনে তো বেশ বড় হবার কথা।
.
পাইউড প্রাইভেট স্যানাটোরিয়াম।
ইনসপেক্টর নীল ভিজিটার্স রুমে একজন বয়স্কা মহিলার মুখোমুখি বসে কথা বলছেন। ইনি হলেন হেলেন ম্যাকাঞ্জি। বয়স ষাট পার হয়েছে। মুখভাবে দুর্বলতার চিহ্ন। চোখে শূন্য দৃষ্টি। তার কোলের ওপর একখানা বই।
স্যানাটোরিয়ামের অধিকর্তা ডাঃ ক্রসবি রোগিনী সম্পর্কে জানিয়েছেন, তাকে পুরোপুরি মানসিক রোগগ্রস্ত বলা চলে না। বেশির ভাগ সময়েই স্বাভাবিক কথাবার্তা বলেন।
মিসেস ম্যাকেঞ্জির সামনে বসে ডঃ ক্রসবির কথাটাই স্মরণ করবার চেষ্টা করলেন নীল।
মাদাম, আমি এক মিঃ ফর্টেস্কুর সম্পর্কে কিছু কথা আপনাকে বলতে এসেছিলাম। ভদ্রলোকের পুরো নাম মিঃ রেক্স ফর্টেঙ্কু। আপনি নামটা শুনেছেন বলেই আমার ধারণা।
মিসেস ম্যাকেঞ্জি বইয়ের ওপরে চোখ ধরে রেখেই বললেন, না, ওই নাম কখনোই শুনিনি।
–আমার ধারণা, বেশ কয়েক বছর আগে তাকে আপনি চিনতেন।
–সে তো গতকালের কথা।
ডঃ ক্রসবির কথা ইনসপেক্টর নীলের মনে পড়ল। তিনি হতাশ না হয়ে বললেন, আপনি বেশ কয়েক বছর আগে ইউট্টি লজে তার বাড়িতে দেখা করতে গিয়েছিলেন।
–হ্যাঁ, খুব সাজানো গোছানো বাড়ি।
-মিঃ ফর্টেস্কু পশ্চিম আফ্রিকায় একটা খনির ব্যাপারে আপনার স্বামীর সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সেটা হল ব্ল্যাকবার্ড খনি।
-বইটা পড়ে শেষ করতে হবে–বেশি সময় নেই।
–নিশ্চয়ই মাদাম; নীল বললেন, মিঃ ম্যাকেঞ্জি আর মিঃ ফর্টেঙ্কু একসঙ্গে আফ্রিকা গিয়েছিলেন খনিটা দেখবেন বলে।
–আমার স্বামীই খনিটা আবিষ্কার করেছিলেন, বললেন মিসেস ম্যাকেঞ্জি, আর তার দাবী জানিয়েছিলেন। খনি চালু করবার মতো টাকা তার ছিল না, তাই মিঃ ফর্টেস্কুর কাছে গিয়েছিলেন। অতসব আগে জানতে পারলে আমি তাকে কিছুতেই যেতে দিতাম না।
–হ্যাঁ, বুঝতে পারছি। মিঃ ম্যাকেঞ্জি আফ্রিকায় গিয়ে জ্বর হয়ে মারা যান। নীল বললেন।
–ওহঃ, বইটা আমাকে পড়তে হবে। বইয়ের ওপর থেকে চোখ না তুলেই বললেন মিসেস ম্যাকেঞ্জি।
–আপনার কি মনে হয় ওই ব্ল্যাকবার্ড খনির ব্যাপারে মিঃ ফর্টেস্কু আপনার স্বামীকে ঠকিয়েছিলেন?
–আপনি বড় বোকা।