.
ইনসপেক্টর নীলের প্রশ্নের উত্তরে তার ডাক্তার বন্ধু বললেন, তোমাদের পুলিসদের মাথায় কি ঘোরে বলো তো। অদ্ভুত সব কথা জানার জন্য হন্যে হয়ে পড়।
ধানাইপানাই বাদ দিয়ে আসল কথাটা বলোতো।
–তাই বলছি। তুমি ঠিকই আন্দাজ করেছ। ব্যাপারটা যতদূর মনে হয় বুদ্ধিভ্রষ্টতা। ওই অবস্থায় মানুষ বিচার বুদ্ধি হারিয়ে ফেলে, সবসময় একটা হামবড়া ভাব, কথায় কথায় বিরক্তি আর রাগারাগি। কোন প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার এই রোগে ভুগলে লালবাতি জ্বলতে দেরি হয় না।
মিঃ ফর্টেস্কুর ব্যাপারটা তার পরিবারের লোকেরা বুঝতে পেরেছিলেন। তাঁকে ডাক্তার দেখাবার ব্যবস্থাও করেছিলেন। কিন্তু তিনি রাজি হননি।
আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি যে তার মৃত্যুটা তোমার বন্ধুদের ক্ষেত্রে শাপে বর হয়েছে।
-ওরা কেউ আমার বন্ধু নয়, বব, বললেন নীল, ওরা একদল বিরক্তিকর মানুষ।
.
১০.
ইউট্রিলজের ড্রইংরুমে পরিবারের সকলেই সেদিন জমায়েত হয়েছেন। পার্সিভাল ফর্টেস্কু সকলকে উদ্দেশ্য করে বলে চলেছেন, এ একেবারে অসহনীয় অবস্থা। পুলিসের পরীক্ষা নিরীক্ষা এখনো পর্যন্ত চলছে, খুশিমত তারা বাড়িতে যাওয়া আসা করছে। এসবের মধ্যে কোন পরিকল্পনা করা বা ভবিষ্যতের ব্যবস্থা করা কারোর পক্ষেই সম্ভব নয়। বাড়ি ছেড়ে যে কেউ নড়বে, তারও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
তবুও মনে হয় ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নিয়ে আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতে পারি। ইলেইন, তোর কথা শোনা যাক। সেই জেরাল্ড রাইট না কি যেন নাম–তাকেই নাকি বিয়ে করছিস? তোরা কবে বিয়ে করছিস?
–যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। ইলেইন বলল।
–মাস ছয়েক অন্তত সময় নিচ্ছিস?
–না, অত দেরি করতে যাব কেন? মাসখানেকের মধ্যেই
–বিয়ের পর কোন পরিকল্পনা আছে তোদের?
–পরিকল্পনা মানে ভাবছি একটা স্কুল খুলব।
–কথাটা শুনতে ভাল–কিন্তু আজকালকার দিনে বড় ঝুঁকির ব্যাপার। আমার মনে হয় ভাল করে ভাবনা চিন্তা করে একাজে হাত দেওয়া উচিত।
-বাধা তো থাকবেই। জেরাল্ড বলে দেশের ভবিষ্যৎ উন্নতি সঠিক শিক্ষার ওপরেই নির্ভর করে।
তোর টাকাটার ব্যাপারে মিঃ বিলিংসলে পরামর্শ দিচ্ছিলেন, ভবিষ্যতে তোর ছেলেমেয়েদের জন্যই টাকাটা কোন ট্রাস্টের হাতে রাখা ভাল। একটা নিরাপত্তা থাকে।
–আমার ইচ্ছা অন্যরকম, ইলেইন বললেন, স্কুলটা চালু করার জন্য টাকার দরকার। কর্নওয়ালে একটা বাড়িও দেখা হচ্ছে। ওটা হলে কিছু বাড়তি ঘর তৈরি করে নিতে হবে।
–ইলেইন…তাহলে তুই ব্যবসা থেকে টাকাটা তুলে নিবি বলছিস? কাজটা মনে হয় ঠিক হবে না।
ব্যবসার অবস্থার কথা তো তুমিই বলেছিলে–বাবা মারা যাওয়ার আগে। তাই টাকা তুলে নেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে বলেই মনে করি।
–ইলেইন, ওরকম বলতে হয়। আমার পরামর্শ যদি শুনিস, আমি বলব এভাবে সবটাকা তুলে নিয়ে স্কুলের আসবাব কিনে খরচ করাটা ঠিক কাজ হবে না। যদি স্কুল না চলে, তুই একেবারে নিঃস্ব হয়ে যাবি।
ইলেইন জোর দিয়ে বলল, স্কুল ঠিক চলবে।
-আমি তোর পক্ষে ইলেইন, চেয়ারে ঘুরে বসে বললেন ল্যান্সলট, কাজে না নামলে আগাম কিছু বোঝা যায় না। তোরা নেমে পড় ইলেইন। তোর টাকা যদি নষ্টও হয়, সান্ত্বনা থাকবে যা করতে চেয়েছিস তা করেছিস।
-তুই তোর উপযুক্ত কথাই বলেছিস, বললেন পার্সিভাল, তোর পরিকল্পনাটা এবার শোনা যাক ল্যান্স। তুই নিশ্চয়ই আবার কেনিয়া পাড়ি জমাবার কথা ভবাছিস? নাকি একটা আশ্চর্য কাজ করার জন্য এভারেস্টের চুড়ায় উঠবি?
এরকম ভাবছ কেন? ল্যান্স বলল।
–ইংলণ্ডের ঘরোয়া জীবনে তো কোনদিন সুস্থির হতে চাসনি না, তাই বলছি।
-বয়সের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের পরিবর্তনও আসে। এবারে আমি ভেবেছি পাকা ব্যবসাদার হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করব।
তার মানে তুই…
–হ্যাঁ, আমি তোমার সঙ্গে ব্যবসা দেখাশোনা করব। তুমি তো সিনিয়র পার্টনার। তবে সামান্য জুনিয়র পার্টনার হিসেবে আমার যে অংশ ও অধিকার আছে, তাই কাজে লাগাব, ভাই পার্সি।
–সবই ঠিক আছে, পার্সি বলল তবে মুশকিল হল, তুই দুদিনেই হাঁপিয়ে উঠবি। সত্যিই কি তুই ঠিক করেছিস ব্যবসাতে ঢুকবি?
-হ্যাঁ, তাই করছি। বলতে পারি পিঠেতে ভাগ বসাচ্ছি।
ব্যবসার অবস্থাটা মোটেই সুবিধার নয়। বড় জোর আমরা ইলেইনের টাকাটা দিতে পারব–যদি ও সেরকম চাপ দেয়। তাই ভাবছি–
–তাহলে কি বললাম ইলেইন, ল্যান্স বলল, সময় মতো টাকাটা তুলে নেওয়াই ভাল।
জেনিফার আর প্যাট, একটু দূরে জানালার পাশে বসে ওদের তিন ভাই বোনকে লক্ষ্য করে চলেছেন।
–এই যদি তোর মনের ইচ্ছা হয়ে থাকে, পার্সিভাল বললেন, তাহলেও বলব, আনন্দ পাবি না, দেখে নিস।
–আমার তা মনে হয় না ভাই পার্সি। প্রতিদিন শহরে অফিস করতে যাওয়া…কর্মচারীদের মধ্যে, বিশেষ করে স্বর্ণকেশী সেক্রেটারী মিস গ্রসভেনরের সান্নিধ্য…ইয়েস স্যার…হাঁ স্যর…শোনা…চমৎকার একটা পরিবর্তন ভাল না লেগে পারে?
–বোকার স্বর্গে বাস করা একেই বলে। ঈষৎ উত্তপ্ত কণ্ঠে বললেন পার্সিভাল, ব্যবসায় যে ঝামেলা পাকিয়ে উঠেছে সেই সম্বন্ধে কোন ধারণাই তোর নেই।
নেই তা জানি। তুমি তো রয়েছে–আমাকে তৈরি করে নেবে।
–দেখ, গত এক দেড় বছর বাবা নিজের মতো করে এমন সব অযৌক্তিক ঝুঁকি নিয়েছেন যে প্রতিষ্ঠানের অর্থনৈতিক ভিত একেবারে নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। বোকার মত ভাল স্টক সব হাত ছাড়া করে ফাটকা খেলেছেন।