–আমার মনে হয় আপনার একথা ঠিক নয়। প্রতিবাদ জানিয়ে বললেন প্যাট।
–যাই মনে কর বাপু, একটা কথা মনে রেখো, পার্সিভালকে কখনো বোকা ভেবে নিও না। ও বোকার ভান করে থাকে কিন্তু মহা ধুরন্ধর।
আর একটা কথা, ল্যান্সের কাজকর্মও আমি ভাল মনে করি না। কিন্তু আবার ওকে কেন যেন পছন্দ না করেও পারি না। ওটা চিরকালই কেমন বেপরোয়া গোছের। তোমাকে ওর ওপর নজর রাখতে হবে যেন বাড়াবাড়ি না করে।
ওকেও বলো, পার্সিভালকে যেন সমঝে চলে। ওকে বিশ্বাস করা ঠিক হবে না। এবাড়ির সবাই জঘন্য মিথ্যাবাদী।
কথা শেষ করে খুশি খুশি মুখে প্যাটের দিকে তাকালেন বৃদ্ধা।
.
ইনসপেক্টর নীল স্কটল্যাণ্ড ইয়ার্ডের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করলেন।
ওপাশ থেকে অ্যাসিসট্যান্ট কমিশনার বললেন, মনে হয় সে মারা গিয়ে থাকবে। তবু বেসরকারী স্যানাটোরিয়ামগুলোয় খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে। তুমি খবর পেয়ে যাবে। তোমার ওই কালোপাখির থিওরিটা অভাবিত।
-তবুও ওটাকে অবহেলা করা ঠিক হবে না মনে হচ্ছে স্যার। সব কিছুই কেমন মিলে যাচ্ছে।
–তাই দেখছি–রাই…কালো পাখি…লোকটির নাম–রেক্স
–আমি স্যর ডুবয় আর রাইটের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছি আপাতত। এদের কাউকেই হয়তো গ্ল্যাডিস নামের মেয়েটি দরজার পাশে দেখে থাকবে। ওরা ওখানে কি করছে দেখার জন্যই হয়তো হলঘরে ট্রে নামিয়ে রেখে দেখতে গিয়েছিল। মেয়েটাকে ওখানেই কেউ শ্বাসরুদ্ধ করে মারে। পরে দেহটা বাগানে যেখানে কাপড় শুকোতে দেওয়া হয় সেখানে নিয়ে যায় আর নাকে ক্লিপ এঁটে দেয়।
জঘন্য কাজ। একেবারেই উম্মাদের মতো–
-নাকে ক্লিপ লাগানোর ব্যাপারটা ওই বৃদ্ধা মহিলা মিস মারপলকে খুব নাড়া দেয়। খুবই বুদ্ধিমতী মহিলা। উনি ওই বাড়িতেই আপাতত থাকছেন বৃদ্ধা মিস র্যামসবটমেরও তাই ইচ্ছা।
–তোমার বর্তমান কর্মসূচী কি নীল?
-লণ্ডনের সলিসিটরের সঙ্গে একবার দেখা করতে যাব। রেক্স ফর্টেস্কুর ব্যাপারে আরো কিছু জানা দরকার। তাছাড়া, পুরনো সেই ব্ল্যাকবার্ড সম্পর্কেও খোঁজখবর করতে চাই।
.
বিলিংসলে, হর্সথর্প ও ওয়াল্টার্স প্রতিষ্ঠানের মিঃ বিলিংসলেকে যে ইউট্রিলজের তিনটি মৃত্যুর ঘটনা যথেষ্ট নাড়া দিয়েছে, দ্বিতীয়বারের সাক্ষাৎকারে পরিষ্কার বুঝতে পারলেন ইনসপেক্টর নীল। পুলিসকে সাহায্য করার জন্যই তিনি উদগ্রীব ছিলেন।
-এমন অস্বাভাবিক কাণ্ড আমার সারা কর্মজীবনে আর দেখিনি। এব্যাপারে সবরকম সাহায্যই আপনি আমার কাছ থেকে আশা করতে পারেন। বললেন মিঃ বিলিংসলে।
-আপনিই বলতে পারবেন মিঃ ফর্টেষ্ণুর প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত অবস্থাটা কেমন। তাছাড়া মানুষটির সম্পর্কেও।
-কাজকর্মের সূত্রে মিঃ ফর্টেস্কুর সঙ্গে আমার সোল বছরের পরিচয়। তবে অন্য সলিসিটরের সঙ্গেও তার কাজকর্ম হত। আপনাকে তো উইলের বিষয়ে আগেই বলেছি। বর্তমানে মিঃ পার্সিভাল ফর্টেস্কুই তার সম্পত্তির অবশিষ্ট অংশের উত্তরাধিকারী।
মিঃ বিলিংসলে, আমি এখন মিসেস ফর্টেস্কুর উইলের সম্পর্কেই আগ্রহী। স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি তো একলক্ষ পাউণ্ডের উত্তরাধিকারী হন, তাই না?
-হ্যাঁ। কিন্তু..আপনাকে বিশ্বাস করে বলা যায়, অত টাকা এই মুহূর্তে দেওয়া প্রতিষ্ঠানের পক্ষে অসম্ভব হত।
–তাহলে প্রতিষ্ঠান কি লাভজনক ছিল না?
–গত দেড় বছর থেকেই অবস্থা টলমল।
–এমন অবস্থা হল–বিশেষ কোন কারণ নিশ্চয় থাকবার কথা।
–আপনি ঠিকই অনুমান করেছেন ইনসপেক্টর। আমার ধারণা মিঃ রেক্স নিজেই দায়ী প্রতিষ্ঠানের এ অবস্থার জন্য।
একটু থামলেন মিঃ বিলিংসলে। পরে বললেন, গত একবছর খুবই বেপরোয়া ভাবে কাজ করেছেন মিঃ রেক্স ফর্টেস্কু। কারুর পরামর্শে কান দেন নি। ভাল স্টক বিক্রি করে ফাটকা শেয়ারে একেবারে পাগলের মতো লগ্নী করছিলেন। তবু নিজের কাজের বড়াই করে বড় বড় কথা বলতেন।
মিঃ পার্সিভাল তার বাবাকে বোঝনোর অনেক চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু রেক্স ফর্টেস্কু কোন কথা শোনেন নি।
মিঃ পার্সিভাল আমার কাছেও এসেছিলেন তার বাবার ওপর আমার প্রভাব খাটানোর অনুরোধ নিয়ে। আমি যথাসাধ্য করেছিলাম। কিন্তু সবই ব্যর্থ হয়েছিল। আমার মনে হচ্ছিল রেক্স ফর্টেস্কু একেবারে পাগলের মতো ব্যবহার করছিলেন।
ইনসপেক্টর নীল মাথা ঝাঁকালেন। তাঁর মনে হল, পিতা পুত্রের মনোমালিন্যের ব্যাপারটা তার কাছে পরিষ্কার হচ্ছে।
-তবে আপনি মিসেস ফর্টেস্কুর উইলের বিষয়ে যা জানতে চাইছেন, আমি তার কিছুই বলতে পারব না। তার কোন উইল আমি করিনি।
–আমি সেটা জানি মিঃ বিলিংসলে। আমি কেবল জানতে চাইছিলাম, স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি একলক্ষ পাউণ্ড পাচ্ছেন কিনা?
–না…তা পাচ্ছেন বলা যাবে না। বাধা দিয়ে বললেন মিঃ বিলিংসলে।
–তাহলে কি তিনি খোরপোষ বাবদ সারা জীবন টাকাটা পেতেন?
–না, তাও নয়। তার একলক্ষ পাউণ্ড সম্পর্কে উইলে একটা শর্ত ছিল।
–শর্ত? বিস্মিত হলেন নীল।
-হ্যাঁ। স্বামীর মৃত্যুর পর একমাস জীবিত থাকলে তবেই সরাসরি মিঃ ফর্টেস্কুর স্ত্রী টাকাটা পেতেন। এরকম শর্ত আজকাল বেশ চালু হয়েছে, আকাশপথে ভ্রমণের অনিশ্চয়তার জন্য।
–তাহলে দেখা যাচ্ছে, মিসেস ফর্টেস্কু একলক্ষ পাউণ্ড রেখে যাননি? একলক্ষ পাউণ্ড তাহলে কে পাচ্ছেন?
-প্রতিষ্ঠানেই থাকছে। সেই হিসেবে বলা যায়, সম্পত্তির অবশিষ্ট অংশের উত্তরাধিকারী মিঃ পার্সিভালই টাকাটার মালিক হচ্ছেন। প্রতিষ্ঠানের বর্তমান অবস্থায় টাকাটা তার খুবই প্রয়োজন।