-হ্যাঁ। মিস ফর্টেস্কুর একটা টেলিগ্রাম পেয়ে আপনি সঙ্গে সঙ্গেই এসে পড়েন, নয় কি?
–আমাদের পুলিস দেখছি খুবই করিতকর্মা–সবই জানে। ইলেইনের তার পেয়ে আমি চলে আসি।
–আপনারা শিগগির বিয়ে করছেন বলে শুনেছি। বললেন নীল।
–আপনি ঠিকই শুনেছেন ইনসপেক্টর।
–ও বিষয়ে আমার কোন বক্তব্য নেই, ওটা আপনাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। আপনাদের পরিচয় সম্ভবত খুব অল্পদিনের–ছয় কি সাত মাস
–একদম ঠিক।
–মিঃ ফর্টেস্কু আপনাদের বিয়েতে আপত্তি জানিয়েছিলেন। তাঁর অমতে বিয়ে হলে তিনি মিস ফর্টেস্কুকে কোন টাকাকড়ি দেবেন না, একথাও তিনি আপনাকে জানিয়েছিলেন। এরপর আপনি বাগদান ভেঙ্গে দিয়ে চলে যান–
-আপনার সব কথাই ঠিক ইনসপেক্টর। আসল কথা হল রাজনৈতিক মতবাদ সহ্য করতে পারেননি মিঃ ফর্টেস্কু।
তিনি ছিলেন অতি জঘন্য ধরনের পুঁজিবাদী মানুষ। আমি কেবল টাকার জন্য আমার রাজনৈতিক বিশ্বাস ও আদর্শ বিসর্জন দিতে চাইনি।
তবে এখন আপনি উপস্থিত হয়েছেন এমন একজন মেয়েকে বিয়ে করতে যিনি সম্প্রতি ৫০,০০০ পাউণ্ডের মালিক হচ্ছেন।
জেরাল্ড রাইট মিষ্টি হাসলেন। বললেন, না, ইনসপেক্টর এখন তাকে বিয়ে করতে একদম আপত্তি নেই। সমাজের সকলের উন্নতির জন্য এ টাকাটা ব্যয় করা হবে। ওসব আলোচনা থাক ইনসপেক্টর-আপনি যা জানতে এসেছেন সেই কথাই বলুন।
-হ্যাঁ, মিঃ রাইট সেই প্রশ্নই আপনাকে করছি। গত ৫ই নভেম্বর বিকেলে সায়ানাইডের বিষক্রিয়ায় মিসেস ফর্টেঙ্কু মারা যান–এ খবর নিশ্চয়ই আপনার অজানা নয়। ওই দিন বিকেলে আপনি ইউট্রিলজের কাছাকাছি ছিলেন বলেই জানতে চাইছি, ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকা সম্ভব এমন কিছু কি আপনার চোখে পড়েছিল–
কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না ইনসপেক্টর ওই দিন বিকেলে আমি ইউট্রিলজের কাছাকাছি ছিলাম। এমন ধারণা আপনার জন্মাল কি করে?
–মিঃ রাইট, ওই দিন বিকেলে সাড়ে চারটের সময় আপনি হোটেল ছেড়ে বেরিয়েছিলেন এবং ইউট্রিলজের দিকে হাঁটছিলেন। তাই স্বাভাবিক ভাবেই মনে করা যেতে পারে আপনি সেখানে গিয়েছিলেন।
-হ্যাঁ, ইনসপেক্টর, সেরকম ভেবেই বেরিয়েছিলাম। কিন্তু পরে মনে হল কাজটা ঠিক হবে না। তাছাড়া সন্ধ্যা ছটায় মিস ইলেইনের আমার হোটেলে আসার কথা ছিল। তাই আমি কিছুক্ষণ বেড়িয়ে একটা গলির মধ্য দিয়ে হোটেলে ফিরে আসি ছটার মধ্যেই। ইলেইন অবশ্য আসেনি। ওই পরিস্থিতিতে অবশ্য সম্ভবও ছিল না।
–আপনি যখন হাঁটছিলেন, তখন আপনাকে কেউ দেখেছিল?
–তা তো খেয়াল করিনি। সরু গলিটার ভেতর দিয়ে কয়েকখানা গাড়ি অবশ্য পাশ দিয়ে গিয়েছিল। তার মধ্যে চেনাজানা কেউ ছিল কিনা খেয়াল করিনি।
-বেশ। এই হোটেলেই আছেন মিঃ ভিভিয়ান ডুবয়ার সঙ্গে আপনার পরিচয় আছে?
-ডুবয়? আলাপ নেই। মনে হয় লম্বা চেহারা, গাঢ় রঙ, আর সোয়েডের জুতো পছন্দ তিনিই হবেন।
-হ্যাঁ। ওই দিন বিকেলে উনি ইউট্রিলজের দিকে গিয়েছিলেন। রাস্তায় তার সঙ্গে আপনার দেখা হয়েছিল?
-না, তাঁকে দেখেছি বলে মনে হয় না। ওই কর্দমাক্ত গলি দিয়ে কে হাঁটতে যাবে—
বুঝতে পারলাম। বললেন নীল।
ইউট্রিলজে ফিরে আসতেই সার্জেন্ট হে এসে উৎসাহের সঙ্গে অভ্যর্থনা জানালো ইনসপেক্টর নীলকে।
–আপনার সেই কালোপাখি আবিষ্কার করেছি স্যার।
–তাই নাকি?
–হ্যাঁ, স্যর, ওগুলো পাইয়ের মধ্যে ছিল। নৈশভোজের জন্য রবিবারে ঠাণ্ডা পাই রাখা ছিল। কেউ অজান্তে ভাড়ার ঘরে ঢুকে পাত্রের ঢাকনা খুলে শূকরের মাংস বের করে নিয়ে ছিল। আর তার মধ্যে রেখে দিয়েছিল কয়েকটা পচা কালো পাখি। পাখিগুলো মালির চালাঘরে ছিল। এ কিরকম ঠাট্টা বুঝতে পারছি না স্যর।
ইনসপেক্টর নীল অন্যমনস্কভাবে বলে উঠলেন, হা, রাজার এমন খানা অদ্ভুতই বটে-সার্জেন্ট হে কিছু বুঝতে না পেরে হাঁ করে তাকিয়ে রইল। নীল বাড়ির ভেতরে ঢুকে গেলেন।
.
০৯.
–তুমিই তাহলে ল্যান্সের স্ত্রী?
পেসেন্স খেলায় নিমগ্ন মিস র্যামসবটম মুখ তুলে তাকিয়ে বললেন।
–হ্যাঁ। প্যাট উত্তর দিল।
মিস র্যামসবটম তার সঙ্গে আলাপ করতে চান জেনে প্যাট তার ঘরে এসেছিলেন।
-তোমার স্বাস্থ্য বেশ ভালই দেখছি। বোসো আরাম করে। ল্যান্সের সঙ্গে কোথায় আলাপ হয়?
-কেনিয়াতেই পরিচয় হয়েছিল।
–শুনেছি, তোমার আগেও বিয়ে হয়েছিল?
–হ্যাঁ, দুবার।
–ওহ, বিবাহ বিচ্ছেদ হয়?
-না। প্যাট মাথা নত করলেন, আমার প্রথম স্বামী ফাইটার প্লেনের পাইলট ছিলেন। তিনি যুদ্ধে মারা যান।
–আর দ্বিতীয় স্বামী? তিনি শুনলাম গুলি করে আত্মহত্যা করেছিলেন, তাই কি?
–হ্যাঁ।
–তোমার কোন দোষ ছিল?
–না, আমার কোন দোষ ছিল না। রেস খেলতেন।
–হুঁ। বাজিধরা, তাস খেলা এসব শয়তানের কাজ। এই বাড়িটাও শয়তানের আখড়া হয়ে উঠেছিল। ঈশ্বরই তাদের শাস্তি দিয়েছেন।
প্যাট অপ্রতিভ অবস্থায় বসে রইলেন। কথা শুনে ল্যান্সের এফি মাসিকে বোঝার চেষ্টা করতে লাগলেন।
–এ বাড়ির সম্পর্কে কিছু জান তুমি? মিস র্যামসবটম জানতে চান।
–বিয়ের আগে সবাই যেমন শ্বশুরবাড়ি সম্পর্কে জানে আমিও সেটুকুই জেনেছি।
-হ্যাঁ, কথাটা ঠিকই বলেছ। তোমাকে একটা কথা বলছি, আমার বোন ছিল বোকার হদ্দ, আর ভগ্নীপতি এক শয়তান, পার্সিভাল ছিঁচকে। তোমার স্বামী ল্যান্স, সে এই পরিবারের সব চেয়ে মন্দ ছেলে।