ডুবয় বললেন, জরুরী কাজে হোটেল ছেড়ে চলে যাওয়ার মুখেই আপনার টেলিফোন পাই ইনসপেক্টর। এভাবে আটকে থাকায় খুবই অসুবিধায় পড়তে হবে।
–আমাদের হাত পা বাঁধা, বুঝতেই পারছেন। বুঝতে পারছি মিসেস ফটেন্ধুর মৃত্যুতে আপনি খুবই আঘাত পেয়েছেন। আপনাদের মধ্যে গভীর বন্ধুত্ব ছিল, তাই না?
-হ্যাঁ, ইনসপেক্টর, আমরা প্রায়ই একসঙ্গে গলফ খেলতাম। চমৎকার মহিলা।
–আচ্ছা মিঃ ডুবয়, তার মৃত্যুর দিন বিকেলে আপনি তাকে টেলিফোন করেছিলেন?
–ঠিক মনে পড়ছে না। টেলিফোন কি করেছিলাম?
–যতদূর জেনেছি-চারটে নাগাদ আপনি টেলিফোন করেছিলেন।
–ও হ্যাঁ হ্যাঁ-মনে পড়েছে। ওর কুশলবার্তা জানতে চেয়েছিলাম। নিতান্ত মামুলী কথাবার্তা।
-এরপর একটু ঘুরে আসার জন্য আপনি হোটেলে ছেড়ে বেরিয়েছিলেন।
–মানে..হ্যাঁ…ইয়ে..ঠিক বেড়ানো নয়…দু-এক কোর্স গলফ খেলেছিলাম।
-মনে হচ্ছে ঠিক তা আপনি করেননি মিঃ ডুবয়। আমি খোঁজ নিয়ে জেনেছি এখানকার পোর্টার আপনাকে ইউট্রিলজের দিকে যেতে দেখেছিল।
তীক্ষ দৃষ্টিতে তাকিয়েছিলেন নীল। তার চোখে চোখ পড়তেই মাথা নত করলেন মিঃ ডুবয়।
-ইয়ে…মানে..আমার ঠিক মনে পড়ছে না ইনসপেক্টর।
ইতস্তত করে বললেন মিঃ ডুবয়।
–আপনি সম্ভবত মিসেস ফর্টেস্কুর সঙ্গেই দেখা করতে গিয়েছিলেন?
কখনোই নয়। আমি এই বাড়ির কাছেই যাইনি।
–তবে কোথায় গিয়েছিলেন জানতে পারি কি?
–হাঁটতে হাঁটতে আমি থ্রি পিজিয়ন পর্যন্ত গিয়েছিলাম। তারপর আবার ফিরে আসি।
–আপনি নিশ্চিত যে ইউট্রিলজে যাননি?
–আমি নিশ্চিত ইনসপেক্টর।
নীল এবার স্থির দৃষ্টিতে তাকালেন। ধীর শান্ত কণ্ঠে বললেন, আপনি বুদ্ধিমান, মিঃ ডুবয়। আসল সত্যটা আমাদের কাছে খুলে বললেই ভালো করবেন। খুব সামান্য কারণেই হয়তো আপনাকে ইউট্রিলজে যেতে হয়েছিল।
-না, না, ইনসপেক্টর, ওইদিন আমি মিসেস ফর্টেস্কুর কাছে আদৌ যাইনি।
–তাহলে মিঃ ডুবয়, বলতে বলতে উঠে দাঁড়ালেন ইনসপেক্টর নীল, এ বিষয়ে একটা লিখিত বক্তব্য আপনার কাছ থেকে নেওয়ার দরকার হবে। অবশ্য সেই সময় একজন উকিল সঙ্গে রাখার অধিকার আপনার আছে।
মিঃ ডুবয় যেন একটা ঝাঁকুনি খেলেন একথায়। তাঁর মুখ রক্তশূন্য হয়ে গেল।
-আপনি…আপনি আমাকে ভয় দেখাতে চাইছেন
–একেবারেই না মিঃ ডুবয়। আপনার যে কিছু আইনগত অধিকার আছে আমি সেকথাই বলতে চেয়েছি।
আপনাকে আমি আবারো বলছি, আমি ওদের কোন কিছুর মধ্যেই থাকিনি।
থাকেননি। তাহলে স্বীকার করুন, ওইদিন বিকেল চারটের সময় আপনি ইউট্রিলজে গিয়েছিলেন। বাড়ির জানালার দিকে একজন আপনাকে বাগানে দেখেছিল।
–ঢোকেননি? তাহলে আমিই বলছি শুনুন। বাগানের পাশ দরজা দিয়ে ঢুকে সিঁড়ি বেয়ে আপনি দোতলায় ওঠেন। তারপর মিসেস ফর্টেস্কুর বসার ঘরে ঢুকে তাঁর ডেস্কে; বলছেন কিছু খোঁজেননি?
-তাহলে সেগুলো আপনার হাতেই পড়েছে? রুক্ষস্বরে বলে উঠলেন মিঃ ডুবয়, ও আমাকে বলেছিল ওগুলো পুড়িয়ে ফেলেছিল। কিন্তু ইনসপেক্টর, ওই চিঠিগুলো থেকে আপনি যে কি অর্থ করেছেন তা বুঝতে পারছি। তবে তা একেবারেই সত্যি নয়।
-আপনি মিসেস ফর্টেস্কুর একজন অন্তরঙ্গ বন্ধু ছিলেন, নিশ্চয় তা অসত্য নয়?
–তা অস্বীকার করি কি করে, আমার লেখা চিঠি যখন আপনি পেয়েছেন। তবে একটা অনুরোধ আপনাকে করব, ওগুলো থেকে কোন ভয়ানক ধারণা আপনি করবেন না। আমি বা অ্যাডেল কখনো মিঃ ফর্টেস্কুকে খুন করতে চাইনি। ঈশ্বরের নামে শপথ করে বলছি, আমার মানসিকতা তেমন নয়।
–মিসেস ফর্টেঙ্কু হয়তো এরকম মানুষই ছিলেন।
–একথা ঠিক নয়। সেও কি খুন হয়নি?
–সেকথা অবশ্য ঠিক। বললেন নীল।
–আপনি নিশ্চয় বুঝতে পারছেন একই লোক ওদের দুজনকে খুন করেছে।
–অসম্ভব নয়। তবে অন্য সম্ভাবনাও থেকে যাচ্ছে। মিঃ ডুবয়, এমন তো হতে পারে, মিসেস ফর্টেস্কুই তার স্বামীকে হত্যা করেন। কিন্তু এই কাজের জন্য তিনি বিশেষ একজনের কাছে বিপজ্জনক হয়ে উঠেছিলেন। সেই লোক তাকে এই কাজে সহায়তা হয়তো করেনি, তবে প্ররোচনা জুগিয়েছিল। এবং এর জন্যেই সেই লোকের কাছে মিসেস ফর্টেঙ্কু বিপজ্জনক হয়ে উঠেছিলেন।
-না, না, ইনসপেক্টর, এভাবে আমার বিরুদ্ধে আপনি অভিযোগ আনতে পারেন না।
-মিসেস ফর্টেস্কু একটা উইল করেছিলেন। তিনি মৃত্যুর পরে তার সমস্ত কিছু, মায় টাকাকড়ি, আপনাকে দিয়ে গেছেন।
–আমি এসবের এক কপর্দকও চাই না।
–আপনি অবশ্য যা পাবেন তা খুবই সামান্য। কিছু অলঙ্কার আর লোমের পোশাক। নগদ অর্থ খুবই কম। মিঃ ডুবয় যেন বোকা হয়ে গেলেন কথাটা শুনে। তিনি হাঁ করে তাকিয়ে রইলেন। পরে বললেন, কিন্তু ওর স্বামী-আমি ভেবেছিলাম
–তাহলে আপনি ভেবেছিলেন, কঠিন স্বরে বলে উঠলেন নীল, কিন্তু রেক্স ফর্টেস্কুর উইলের বিষয়বস্তু আপনি জানতেন না—
.
এরপর ইনসপেক্টর নীল গলফ হোটেলেই সাক্ষাৎ করলেন মিঃ জেরাল্ড রাইটের সঙ্গে। তাকে দেখে নীলের মনে হল, চেহারার দিক থেকে দুজনের মিল অনেক।
জেরাল্ড রাইটের ছিপছিপে গড়ন। কিন্তু ভাবভঙ্গী বুদ্ধিজীবীসুলভ।
–ইউট্রিলজে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ঘটনা সম্পর্কে কিছু খোঁজখবর আপনি দিতে পারবেন আশা করছি মিঃ জেরাল্ড। বললেন নীল।
-খবরের কাগজ থেকেই যা জানার জেনেছি; মিষ্টি হেসে বললেন জেরাল্ড। আজকাল তো দেখছি নৃশংস সব খুনখারাবির খবরই কাগজগুলোর উপজিব্য হয়ে উঠেছে। যাই হোক, ইনসপেক্টর, ইউট্রিলজের ঘটনা সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। মিঃ রেক্স ফর্টেঙ্কু যখন মারা যান, আমি তখন আইল অব ম্যান-এ ছিলাম।