ল্যান্সলট ফর্টেস্কুর সঙ্গে কথা শেষ করে নীল এক দুঃসাহসিক কাজই করলেন। তিনি মিস র্যামসবটমের ঘরে উপস্থিত হলেন।
মিস মারপল তখন সেই ঘরে বেশ জাঁকিয়ে বসে গল্প করছিলেন। ওঁদের গল্পের বিষয় ছিল বিদেশী মিশন।
ইনসপেক্টর নীল ঘরে ঢুকতেই মিস মারপল উঠবার উপক্রম করলেন, নীল তাকে বাধা দিলেন।
-আপনি বসুন মাদাম। আপনার সামনে কথা বলতে কোন আপত্তি নেই।
–আমিও মিস মারপলকে এবাড়িতে এসে থাকতে বলেছি। ওই গলফ হোটেলে থাকা মানে মিছেমিছি কতগুলো টাকার শ্রাদ্ধ। আমার পাশের ঘরটাই খালি পড়ে আছে। আপনার কি কোন আপত্তি আছে ইনসপেক্টর?
–আমার দিক থেকে আপত্তির কিছু নেই মাদাম। বললেন নীল।
–অশেষ ধন্যবাদ। কৃতজ্ঞস্বরে বললেন মিস মারপল, তাহলে হোটেলে একটা টেলিফোন করে আসি বুকিং বাতিল করতে হবে।
মিস মারপল চলে গেলেন। মিস র্যামসবটম নীলকে উদ্দেশ করে বললেন, এবারে আপনার কথা শোনা যাক।
–ব্ল্যাকবার্ডস খনি সম্পর্কে আপনার কাছে কিছু শুনব বলে এসেছিলাম।
–তাহলে সন্ধানটা পেয়ে গেছেন, সহসা অট্টহাস্য করে উঠলেন মিস র্যামসবটন, তবে খুব বেশ কিছু বলতে পারব বলে মনে হয় না।
-কতদিন আগেকার ব্যাপার এটা মাদাম? জানতে চাইলেন নীল।
–তা প্রায় বছর পঁচিশ তো হবে। পূর্ব আফ্রিকার কোনও অঞ্চলে হবে-খনিটা লিজ নেবার কথা হয়েছিল। সেই উদ্দেশ্যে ম্যাকেঞ্জি নামে এক ভদ্রলোককে নিয়ে আমার ভগ্নীপতি সেখানে যান।
কিন্তু কাজের কাজ কিছু হল না, ম্যাকেঞ্জি সেখানেই জ্বর হয়ে মারা যান। রেক্স বাড়ি ফিরে সকলকে জানিয়েছিল খবরটা ছিল ভুয়ো। আমার জানার মধ্যে এটুকুই ইনসপেক্টর।
-কিন্তু মাদাম, আমি শুনেছি, এর চেয়েও বেশি কিছু আপনি জানেন। বললেন নীল।
–সেসব শোনা কথা। আপনি আইনের মানুষশোনা কথা আইনে গ্রাহ্য নয় বলেই তো শুনেছি।
-কিন্তু মাদাম আমরা এখনো আদালতে যাইনি।
–বেশ। তাহলে যেটুকু যা শুনেছি আপনাকে শোনাতে পারি।
একটু থামলেন মিস র্যামসবটম। এরপর বললেন, সেই সময়ে ম্যাকেঞ্জি পরিবার বলেছিল, রেক্স ম্যাকেঞ্জিকে ঠকিয়েছিল। আমার ভগ্নীপতিকে জানতাম বলে আমি তাদের কথাটা অবিশ্বাস করতে পারিনি।
লোকটা তো ছিল ধূর্তের শিরোমণি। বিবেক বলে কিছু ছিল না তার। যেখানেই যা করত, আইনের দিক থেকে কোন ট্র্যাক রাখতো না। তাই ওরা কিছুই প্রমাণ করতে পারেনি।
মিসেস ম্যাকেঞ্জি স্বভাবতই ভেঙ্গে পড়েছিলেন। তিনি এখানে এসে রেক্সকে হুমকি দিয়ে যান প্রতিশোধ নেবেন বলে। তিনি বলেন রেক্সই ম্যাকেঞ্জিকে খুন করেছে।
এ ঘটনার পরে শুনেছি ভদ্রমহিলা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিলেন। মানসিক রোগের হাসপাতালেও কিছুদিন ছিলেন।
–মিসেস ম্যাকেঞ্জি কি একাই এসেছিলেন এখানে? বললেন নীল।
–সঙ্গে ছেলেমেয়ে দুটিকে নিয়ে এসেছিলেন। ভয়ে কুঁকড়ে থাকা বাচ্চাদের দেখিয়ে তিনি চিৎকার করে বলেন, এদের দিয়েই প্রতিশোধ নেওয়াবেন। খুবই বোকার মতো কাজটা করেছিলেন, সন্দেহ নেই।
এর বেশি আর কিছু জানা নেই আমার ইনসপেক্টর। তবে কি জানেন, ওই ব্ল্যাকবার্ডস খনির মতো অনেক জোছুরি কাজই রেক্স সারাজীবন ধরে করে গেছে। তা হঠাৎ ব্ল্যাকবার্ডের ওপর আপনার নজর পড়ল কেন? ম্যাকেঞ্জির খোঁজ পেয়েছেন নাকি?
-ওই পরিবারের কি হয়, কিছু জানেন মাদাম?
-না ইনসপেক্টর কিছু আর কানে আসেনি। ঈশ্বরের বিচার সময় সাপেক্ষ বটে, তবে তা কেউ এড়াতে পারে না। রেক্স তার উপযুক্ত শাস্তিই পেয়েছে আমি মনে করি। আপনাকে আর কিছু বলার নেই আমার–আপনি এবারে আসুন।
অনেক ধন্যবাদ মাদাম।
বলে নীল উঠে দাঁড়ালেন।
–মিস মারপলকে একটু পাঠিয়ে দেবেন। দাঁতব্য প্রতিষ্ঠান কিভাবে চালাতে হয় এবিষয়ে মহিলার অগাধ জ্ঞান।
ইনসপেক্টর নীল ঘর ছেড়ে নিচে এসে প্রথমে টেলিফোন করলেন অ্যানসেল ও ওয়ারেলে। পরে গলফ হোটেলে। পরে সার্জেন্ট হেকে ডেকে বললেন, তিনি কিছু সময়ের জন্য বাইরে যাচ্ছেন।
জরুরী কোন দরকার পড়লে গলফ হোটেলেই আমাকে পাবে। আর শোন, ব্ল্যাকবার্ডস সম্পর্কে কিছু জানতে পারো কিনা দেখো।
-ঠিক আছে স্যর।
.
সলিসিটর অ্যানসেলের সঙ্গে কথা বলে নীলের মনে হলো তিনি পুলিসকে সাহায্য করতে আগ্রহী।
নীল তার কাছ থেকে জানতে পারলেন, সপ্তাহ পাঁচ আগে অ্যাডেল ফর্টেস্কুর জন্য একটা উইল তিনি করে দিয়েছেন। ভদ্রমহিলা নিজেই অফিসে এসেছিলেন।
মিঃ অ্যানসেল আরও জানালেন ইতিপূর্বে তিনি ফর্টেন্ধু পরিবারের কারও জন্য কোন আইন সংক্রান্ত কাজকর্ম করেননি।
মিসেস ফর্টেস্কুর উইলের বিষয়টাও জানা গেল। তিনি তার মৃত্যুর পর সমস্ত কিছুই দিয়ে গেছেন মিঃ ভিভিয়ান ডুবয়কে।
খবরটাতে অভিনবত্ব ছিল, তবে ইনসপেক্টর নীলের কাছে একেবারে অভাবিত ছিল না। তবু তিনি একটু চিন্তিতই হলেন।
সব শেষে মিঃ অ্যানসেল বললেন, তবে, আমি যতদূর জানি, মিসেস ফর্টেঙ্কু বিশেষ কিছু রেখে যেতে পারেননি।
নীল জানেন, মিঃ রেক্স ফর্টেস্কুর মৃত্যুর পর অ্যাডেল ফর্টেস্কুর অবস্থাটা অনেক বদলে গিয়েছিল। স্বামীর উইল অনুযায়ী তিনি একলক্ষ পাউণ্ডের মালিক হয়েছিলেন। মৃত্যুকর ইত্যাদি বাদ দিয়ে যে অর্থ থাকবে তা আসবে ভিভিয়ান ডুবয়ের হাতে।
সলিসিটর অফিস থেকে বেরিয়ে নীল এলেন গলফ হোটেলে। নীলের টেলিফোন পাবার পর তিনি অপেক্ষা করেছিলেন।