নীল লক্ষ্য করলেন, জেনিফার ফর্টেঙ্কু বেশ আগ্রহের সঙ্গে তার প্রশ্নের উত্তর দিলেন।
-হ্যাঁ, অ্যাডেল একটা উইল করেছিল, ও নিজেই আমাকে একথা বলেছিল।
–এটা কতদিন আগের কথা?
-বেশি দিন আগের নয়–একমাস মতো হবে হয়তো। ভ্যাল কথাটা জানতো না। ঘটনাচক্রে আমিই জেনে ফেলি।
–খুবই আগ্রহ জাগানো ব্যাপার। বললেন নীল।
–সেদিন দোকানে কেনাকাটা করতে গিয়েছিলাম ফেরার পথে চোখে পড়ল অ্যাডেল এক সলিসিটারের অফিস থেকে বেরিয়ে এলো। হাইস্ট্রিটের অ্যানসেল ওয়ারেলের অফিস।
-তারপর?
–অ্যাডেলকে জিজ্ঞেস করি, ও সলিসিটরের অফিসে এসেছিল কেন? ও আমাকে বলে, কথাটা কাউকে যেন প্রকাশ না করি তখন, আমাকেই কেবল জানাচ্ছে–ও একটা উইল তৈরি করেছে।
ও বলে, প্রত্যেকেরই উইল করা উচিত। তবে লণ্ডনে পারিবারিক সলিসিটর বিলিংলের অফিসে ইচ্ছে করেই যায়নি। বুড়ো তাহলে বাড়ির সবাইকে কথাটা জানিয়ে দেবে। ও বলেছিল, আমি আমার নিজের পথেই চলতে চাই। আমি অ্যাডেলকে বলেছিলাম, কাউকে কিছু জানাব না। বলিওনি কাউকে।
–আপনার এই মনোভাব প্রশংসার যোগ্য মিসেস পার্সিভাল।
–ধন্যবাদ, যথেষ্ট সাহায্য পেলাম আপনার কাছ থেকে।
–সব ব্যাপারটাই বড় ভয়ানক ইনসপেক্টর–বড় ভয়ানক। আচ্ছা, সকালে যে বৃদ্ধা মহিলা এসেছেন, উনি কে বলতে পারেন?
–ওঁর নাম মিস মারপল। গ্ল্যাডিস মার্টিন ওঁর কাছে কিছুদিন ছিল। তার সম্পর্কেই খোঁজখবর করতে এসেছেন তিনি।
-তাই। আশ্চর্য ঘটনা।
–আর একটা কথা আপনাকে জিজ্ঞেস করব মিসেস পার্সিভাল। ব্ল্যাকবার্ডস বা কালো পাখি বিষয়ে আপনি কিছু জানেন?
নীল আশ্চর্য হলেন দেখে, কথাটা শোনামাত্র জেনিফার ফর্টেস্কু যেন কেঁপে উঠলেন। তার হাতব্যাগটা মাটিতে পড়ে গেল। সেটা তুলে নিয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বললেন, ব্ল্যাকবার্ডস? কালো পাখি? কি রকম কালোপাখি?
–শুধুই কালোপাখি–জ্যান্ত বা মরাও হতে পারে—
আপনি কি বলছেন কিছু বুঝতে পারছি না। তীব্র স্বরে বলে উঠলেন জেনিফার।
–ওহ, তাহলে বলছেন, কালোপাখির বিষয়ে আপনি কিছু জানেন না?
–আপনি কি গত গ্রীষ্মকালে পাইয়ের মধ্যে যেগুলো পাওয়া গিয়েছিল তার কথা বলছেন? সে তো এক হাস্যকর ঘটনা।
কয়েকটা লাইব্রেরীর টেবিলের ওপরেও ছিল
–হ্যাঁ। একটা বিশ্রী তামাশার ব্যাপার। এজন্য মিঃ ফর্টেষ্ণু খুবই বিরক্ত হয়েছিলেন।
–শুধুই বিরক্ত হয়েছিলেন বলছেন? আর কিছু না?
-না, মানে, বুঝতে পারছি আপনি কি বলতে চাইছেন। উনি জানতে চেয়েছিলেন, কে এরকম কাজটা করেছিল–কাছাকাছি এরকম কাউকে দেখা গিয়েছিল কি না।
-অচেনা কেউ–একথা উনি বলেছিলেন?
-হ্যাঁ, ইনসপেক্টর, একথাই তিনি বলেছিলেন। সতর্ক দৃষ্টিতে জেনিফার তাকালেন নীলের দিকে।
–অচেনা কেউ..নীল বললেন চিন্তিত ভাবে, তাকে কি ভয় পেয়েছেন মনে হয়েছিল? মানে অচেনা কারো সম্পর্কে…
অত ভাল মনে নেই, তবে তেমনই মনে হয়েছিল। ওরকম বিশ্রী তামাশা ক্রাম্পই মনে হয় পানাসক্ত অবস্থায় করে থাকবে, ও অনেকটা অন্যরকম। মাঝে মাঝে আমার মনে হয়েছে মিঃ ফর্টেস্কুর ওপরে ওর কোন রকম রাগ ছিল কিনা। আপনার কি মনে হয় ইনসপেক্টর?
–সবই সম্ভব মনে হয়।
এরপর ওখান থেকে বিদায় নিলেন নীল।
.
লাইব্রেরীতে এসে নীল দেখতে পেলেন ল্যান্সলট স্ত্রীকে নিয়ে সেখানে দাবা খেলছেন।
খেলায় বাধা দেয়ার জন্য যথারীতি দুঃখ প্রকাশের পর নীল বললেন, মিঃ ল্যান্সলট, আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করতে এলাম। আপনি কি ব্ল্যাকবার্ডস মানে কালোপাখি সম্পর্কে কিছু বলতে পারেন?
–ব্ল্যাকবার্ডস? ল্যান্স যেন একটু মজাই পেলেন, কি ধরনের কালো পাখি? যারা দাসব্যবসা করে তাদেরও তো ব্ল্যাকবার্ডস বলা হয়।
ইনসপেক্টর সহজ কণ্ঠে হেসে উঠলেন। বললেন, সত্যিকথা বলতে আমি নিজেই ব্যাপারটা জানি না। ব্ল্যাকবার্ডস সম্বন্ধে কথাটা উঠেছে বলেই জানতে চাইলাম।
ল্যান্স সতর্ক দৃষ্টিতে জরিপ করবার চেষ্টা করলেন ইনসপেক্টর নীলকে।
–ওহ, তাহলে নিশ্চয় ব্ল্যাকবার্ডস খনি সম্বন্ধে নয়?
–ব্ল্যাকবার্ডস খনি? যেন জোর একটা ধাক্কা খেলেন নীল, ব্যাপারটা কি?
–ওই ব্যাপারটা আমি নিজেও ভাল করে জানি না ইনসপেক্টর। ছেলেবেলায় শোনা। যতদূর মনে পড়ে, এটা বাবার জীবনের একটা অসাধু লেনদেনের ঘটনা। আফ্রিকার পশ্চিম উপকূলেরই কোন খনি হবে এটা। এফি মাসি সম্ভবত একবার বাবাকে এনিয়ে খুব কথা শুনিয়েছিলেন।
–এফি মাসি মানে মিস র্যামসবটন?
–হ্যাঁ।
–তাহলে তো ওঁর কাছে জিজ্ঞেস করলে পরিষ্কারভাবে জানতে পারব। কিন্তু ওই জাঁদরেল মহিলার সঙ্গে কথা বলতে গেলে আমি কেমন দুর্বল হয়ে পড়ি।
–উনি ওরকমই বরাবর। তবে ইনসপেক্টর, ঠিকভাবে চলতে পারলে ওঁর কাছ থেকে যথেষ্ট সাহায্য আপনি পাবেন। বয়স হলেও ওঁর স্মৃতিশক্তি অসাধারণ। অতীতের কোন কিছুই ভোলেন নি।
একটু থামলেন ল্যান্সলট। তারপর আবার বললেন, এবারে এখানে আসার পরেই ওঁর সঙ্গে আমি দেখা করতে গিয়েছিলাম। সেদিন লাইব্রেরীতে চা পানের একটু পরেই। এফি মাসির ধারণা গ্ল্যাডিস এমন কিছু জানত যা সে পুলিসকে জানায়নি। অবশ্য, আমরা জানতাম না যে ইতিমধ্যে সে মারা গেছে।
উনি ঠিকই বলেছিলেন, আমরাও এখন বুঝতে পারছি, বললেন নীল, তবে এখন তো সে বেচারী সব কিছুর বাইরে
-এফি মাসি নাকি ওকে পুলিসের কাছে যাবার পরামর্শ দিয়েছিলেন। মেয়েটা অবশ্য সে-কথা শোনেনি।