আর তার পক্ষে যা সম্ভব, নীল আন্দাজ করতে পারলেন, ভিভিয়ান নিশ্চয় চিঠিগুলো নষ্ট করে ফেলতে বলেছিলেন অ্যাডেল ফর্টেস্কুকে।
অ্যাডেল নিশ্চয়ই তাকে জানিয়েছিলেন তার কথামতোই তিনি কাজ করেছেন। যদিও তা করেননি।
ভাবনার সিঁড়ি বেয়ে একের পর এক ঘটনায় প্রবেশ করে চলল নীলের সন্ধানী মন।
অ্যাডেল ফর্টেষ্ণু তার স্বামীকে বিষপ্রয়োগ করেছেন এই সন্দেহ মিথ্যা প্রমাণ হয়ে গেল তার মৃত্যুতে। তার পরও একটা মৃত্যুর ঘটনা ঘটল ইউট্রি লজে।
এভাবেই এক নতুন সম্ভাবনার মুখোমুখি হয়ে পড়লেন ইনসপেক্টর নীল।
ভিভিয়ান ডুবয়কে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন অ্যাডেল ফর্টেস্কু। কিন্তু ভিভিয়ান অ্যাডেলকে চাননি, তিনি চেয়েছিলেন তার একলক্ষ পাউণ্ড। স্বামীর মৃত্যুর পর যা অ্যাডেলের হাতে আসতো।
ভিভিয়ান মিঃ ফর্টেস্কুর মৃত্যুটাকে স্বাভাবিক বলেই ধরে নিয়ে থাকবেন। হৃদপিণ্ডের গোলযোগ জাতীয় কিছু। যদিও পরে প্রমাণিত হয়েছে মিঃ ফর্টেস্কুকে বিষপ্রয়োগ করা হয়েছিল।
ইনসপেক্টর নীল ঘটনাটাকে নেড়েচেড়ে দেখতে লাগলেন। যদি এমন ঘটেই থাকে, মিঃ ফর্টেষ্ণুর মৃত্যুর জন্য অ্যাডেল ফর্টেষ্ণু আর ভিভিয়ান ডুবয়ই দোষী, তাহলে তাদের পরিকল্পনা কি রকম হতে পারে?
ভিভিয়ান ডুবয় নিশ্চয় ভয় কাটিয়ে উঠতে পারতেন না–অ্যাডেলের মধ্যে তার প্রতিক্রিয়া নিশ্চিত প্রকাশ পেতে।
উল্টোপাল্টা কিছু বলা বা করে ফেলা তার পক্ষে সম্ভব ছিল। ঘন ঘন ডুবয়কে টেলিফোনও করে ফেলতে পারতেন। হয়তো তার ঘাবড়ে যাওয়ার কথাবার্তা ইউট্টি লজের কেউ শুনে ফেলতেও পারতো।
অতিশয় সতর্ক আর সাবধানী ডুবয় নিশ্চিত এসব আশঙ্কা করতেন। তিনি নিশ্চয় চুপচাপ থাকতেন না। সেক্ষেত্রে ডুবয় কি করতেন?
নীল ভাবলেন…এ প্রশ্নের উত্তর অনেক কিছুই হওয়া সম্ভব। যাই হোক না কেন…তিনি স্থির করলেন একবার গলফ হোটেলে খোঁজ নেওয়া দরকার…ডুবয় ওইদিন বিকেল চারটে থেকে ছটার মধ্যে হোটেল ছেড়ে বেরিয়েছিলেন কিনা।
ভিভিয়ান ডুবয়ের চেহারাটা মনে করবার চেষ্টা করলেন নীল। ল্যান্স ফর্টেস্কুর মতোই দীর্ঘকায় তিনি। আবছা অন্ধকারে বাগানে গাছের আড়ালে তাকে ল্যান্স ফর্টেস্কু বলে ভয় ভুল হওয়া অসম্ভব নয়।
বাড়ির পাশ-দরজা দিয়ে ওপরে উঠে যাওয়া তার পক্ষে অসম্ভব কিছু নয়। সহজেই তা করে থাকতে পারেন।
নিজের নিরাপত্তার তাগিদেই একাজটা তাকে করতে হতো। ওপরে গিয়ে চিঠিগুলোর খোঁজ করতেন অবশ্যই।
কিন্তু যখন দেখতেন, সেগুলো বেপাত্তা, তখন নিশ্চয় মরিয়া হয়ে উঠলেন। আশপাশে কেউ নেই দেখে এরপর লাইব্রেরী ঘরে ঢুকে যেতে পারতেন।
সেখানে তখন অ্যাডেল ফর্টেন্ধু একা বসে আছেন-চা-পর্ব শেষ।–এমনটা কি নিতান্তই অসম্ভব?
মেরী ডাভ আর ইলেইন ফর্টেস্কুকে জেরা করা হয়েছে। এবারে একবার মিসেস পার্সিভালের সঙ্গে কথা বলা দরকার। তার খোঁজে গিয়ে দোতলার বসার ঘরেই দেখা পেয়ে গেলেন নীল।
-মাপ করবেন মিসেস পার্সিভাল, কয়েকটা প্রশ্ন করব বলে এলাম।
নিশ্চয়ই, আসুন।
–দুজনেই পাশাপাশি দুটো চেয়ারে বসলেন। এবারে মহিলাকে কাছাকাছি থেকে দেখার সুযোগ হল।
নীলের মনে হল, খুবই সাধারণ এক মহিলা। মনের অসুখী-ভাবটা মুখ দেখে আঁচ করা যায়। হাসপাতালের একজন নার্স অর্থবান মানুষকে বিয়ে করেও মানসিক শান্তি পাননি।
–অনেক জটিল বিষয় পরিষ্কার করবার জন্য আমাদের বারবার নানা প্রশ্ন করতে হয়। ব্যাপারটা ক্লান্তিকর মনে হতে পারে–আসলে সময়ের বিষয়েই কয়েকটা কথা জানতে হবে।
সেদিন বিকেলের চা-পর্বে শুনেছি, একটু দেরিতেই আপনি যোগ দিয়েছিলেন। মিস ডাভ ওপরে এসে আপনাকে ডেকেছিলেন।
-হ্যাঁ, তাই। আমি চিঠি লিখছিলাম,–ও এসে জানায় চা দেওয়া হয়েছে।
–ওহ্, আমি ভেবেছিলাম আপনি একটু হাওয়ায় ঘুরতে বেরিয়েছিলেন।
–মেরী ডাভ বলেছেন? ঠিক তাই…চিঠি লিখতে লিখতে মাথাটা একটু ধরেছিল, তাই বাগানে খোলা হাওয়ায় একটু পায়চারি করব বলে বেরিয়েছিলাম।
-ওখানে কারও সঙ্গে আপনার দেখা হয়নি?
-কার সঙ্গে দেখা হবে? আশ্চর্য হলেন মিসেস পার্সিভাল, আপনার একথা বলার উদ্দেশ্য বুঝতে পারলাম না।
-আমার প্রশ্নের উদ্দেশ্য হল, বাগানে আপনার সঙ্গে কারোর দেখা হয়েছিল কিনা। অথবা হাঁটবার সময় আপনাকে কেউ দেখেছিল কিনা?
-না, এসব কিছুই হয়নি। তবে একটু দূরে মালীকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখি।
–এরপর আপনি ঘরে ফিরে আসেন–আর মিস ডাভ এসে বলেন চা দেওয়া হয়েছে?
-হ্যাঁ। এত দেরি হয়েছিল বুঝতে পারিনি। আমি নিচে নেমে যাই।
–লাইব্রেরী ঘরে কারা ছিলেন?
–অ্যাডেল আর ইলেইন। দু-এক মিনিট পরে আমার দেওর ল্যান্সও আসে।
–তারপর সকলে একসঙ্গে বসে চা পান করেন?
–হ্যাঁ।
–তারপর?
-ল্যান্স ওপরে এফি মাসির সঙ্গে দেখা করতে চলে যায়, আমিও অর্ধেক লেখা চিঠিটা শেষ করার জন্য ঘরে চলে আসি। ওরা দুজন ঘরে রইল।
-হ্যাঁ, মিস ইলেইন আরও পাঁচ-দশ মিনিটের মতো ছিলেন মিসেস ফর্টেন্ধুর সঙ্গে। আপনার স্বামী এখনো ফেরেননি?
-ওহ, না। শহরে কাজ শেষ করে ফিরতে ফিরতে সাধারণত সাতটা হয়ে যায়।
–আপনার স্বামীর কাছে জানতে চেয়েছিলাম, মিসেস ফর্টেস্কু কোন উইল করেছিলেন কিনা। উনি জানিয়েছেন, সম্ভবত করেননি। এবিষয়ে আপনি কিছু জানেন?