–সবরকম সম্ভাবনার কথাই আমাদের খতিয়ে দেখতে হয় মিস ফর্টেস্কু। আশাকরি আপনি আমার বক্তব্য বুঝতে পারছেন।
ইলেইন ফর্টেঙ্কু একটু ইতস্তত করলেন। পরে বললেন, আলোচনা হয়েছিল আমার বিষয়েই
-আপনার বিষয়ে বলতে আপনি কি বোঝাতে চাইছেন?
–আমরা একজন বন্ধু…তার কথাই অ্যাডেলকে বলছিলাম আমি। জানতে চাইছিলাম, আমার এক বন্ধুকে বাড়িতে থাকার জন্য আসতে বলতে তার কোন আপত্তি আছে কিনা?
-আপনার এই বন্ধুটি কে?
–তার নাম জেরাল্ড রাইট। একজন স্কুলশিক্ষক। উনি গলফ হোটেলে উঠেছেন।
–আপনার খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু নিশ্চয়ই?
–আমরা বিয়ের কথা ভাবছি।
–কথাটা বলতে গিয়ে মিস ফর্টেস্কুর মুখে লালের আভা পড়ল। নীল তা লক্ষ্য করলেন।
-খুব আনন্দের কথা। আমার অভিনন্দন রইল। মিঃ রাইট গলফ হোটেলে কতদিন উঠেছেন?
-বাবা মারা যাওয়ার পর আমি তাকে তার পাঠিয়েছিলাম।
–তারপরেই উনি চলে আসেন?
–তার এবাড়িতে থাকার কথায় মিসেস ফর্টেস্কু কি বলেছিলেন?
–তিনি কোন আপত্তি করেননি। মনে হয়, ভাল মনেই নিয়েছিলেন।
–শুনেছি আপনার বাবা মিঃ রাইট সম্পর্কে বিরূপ মনোভাব পোষণ করতেন।
-বাবা খুবই অন্যায় ব্যবহার করেছিলেন। তীক্ষ্ণ হয়ে উঠল মিস ফর্টেস্কুর কণ্ঠস্বর, জেরাল্ড খুবই বুদ্ধিমান আর প্রগতিশীল ধ্যানধারণার মানুষ। বাবার ব্যবহারে জেরাল্ড খুবই আঘাত পেয়েছিল। তখনই সে চলে যায় আর বহুদিন ওর খবরাখবর পাইনি।
-বোঝা গেল।
মোটা অর্থপ্রাপ্তির সম্ভাবনা দেখা দেওয়ায় জেরাল্ট রাইটের পুনরায় আবির্ভাব হয়েছে, এরকম ভাবনাই ইনসপেক্টর নীলের মাথায় খেলে গেল।
–আপনার আর মিসেস ফর্টেস্কুর মধ্যে আর কোন বিষয়ে কথা হয়েছিল?
–সেরকম কিছু নয়।
–আপনারা যখন কথা বলেন, তখন সময় পাঁচটা বেজে পঁচিশ। আর মিসেস ফর্টেস্কুকে মৃত অবস্থায় দেখা যায় ছটা বাজার পাঁচ মিনিট আগে। মাঝখানের সময় আধঘণ্টা–ওই সময়ের মধ্যে আপনি কি আর ঘরে ঢুকেছিলেন?
না।
–ঘর থেকে বেরিয়ে আপনি কোথায় গিয়েছিলেন?
–একটু ঘুরতে বেরিয়েছিলাম।
–গলফ হোটেলের দিকে কি?
–হ্যাঁ। কিন্তু জেরাল্ড সেখানে ছিল না।
–ঠিক আছে, আপাতত এটুকুই। ধন্যবাদ। মিস ইলেইন ঘর ছেড়ে চলে যাওয়ার মুখে নীল বলে উঠলেন, একটা কথা, আপনি কি কালোপাখি বিষয়ে কিছু জানেন?
-ওহ, কালোপাখি-বুঝেছি, পাইয়ের মধ্যে যেগুলো ছিল, তার কথা বলছেন?
নীলের মনে পড়ল, ব্ল্যাকবার্ডস তো পাইয়ের মধ্যেই থাকার কথা।
–পাই-হ্যাঁ, কবে এ ব্যাপার হয়েছিল?
–সে তো তিন চার মাস আগের কথা–কয়েকটা বাবার টেবিলের ওপরেও ছিল?
–আপনার বাবা নিশ্চয়ই খুব বিরক্ত হয়েছিলেন?
–হ্যাঁ, প্রচণ্ড ক্ষেপে গিয়েছিলেন। কিন্তু কে এগুলো রেখেছিল আমরা জানতে পারিনি।
–আর একটা কথা। আপনার সৎমা কি কোন উইল করেছিলেন?
ইলেইন একমুহূর্ত চুপ করে থাকল। পরে মাথা ঝাঁকিয়ে বলল, আমার কোন ধারণা নেই ইনসপেক্টর। আজকাল তো অনেকেই করে শুনেছি।
–আপনি কোন উইল করেছেন?
-না-না–আমি করিনি। উইল করবার মতো কিছু তো ছিল না এতদিন। এখন অবশ্য
–হ্যাঁ, আপনি এখন পঞ্চাশ হাজার পাউণ্ডের মালিক–দায়িত্ব বড় কম নয়।
ইলেইন ফর্টেস্কু চলে গেলেন। কিন্তু নতুন ভাবনা আলোড়ন তুলল নীলের মনে। মেরী ডাভের কথাটা তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল।
বাগানে একজনকে দেখতে পাওয়া গিয়েছিল–চারটে পঁয়ত্রিশের সময়। মেরী ডাভ মিথ্যা কথা বলে তাকে বিভ্রান্ত করতে চেয়েছে–এমন মনে হল না নীলের।
নতুন একটা সম্ভাবনার পথ দেখতে পেলেন নীল। ওই সময়ে বাগানে নিশ্চয়ই কেউ একজন ছিল–তাকে দেখে ল্যান্সলট ফর্টেন্ধু হতে পারেন–মনে হয়েছিল মেরী ডাভের। তার মনে অজ্ঞাত পরিচয় লোকটির চেহারা আর শরীরের গড়নের সঙ্গে ল্যান্সলট ফর্টেস্কুর চেহারার মিল ছিল।
ইউ ঝোপের আড়ালে এমন একজন গা ঢাকা দিয়েছিল ব্যাপারটা একেবারে নতুন কিছু।
আর একটা বিষয়-এর সঙ্গেই যেন একটা যোগসূত্র খুঁজে পেলেন নীল। মেরী ডাভ ওপরে কার পদশব্দ শুনেছে। তার মানে, কেউ ওপরে ছিল বোঝা যাচ্ছে–অথচ তাকে কেউ দেখতে পায়নি।
নীল একটুকরো ভেজা মাটি অ্যাডেল ফর্টেস্কুর ঘরে কুড়িয়ে পেয়েছিলেন। এই দুই বিষয়ে সম্পর্ক না থেকে পারে না–নীল ভাবলেন।
একটা সাবেকী আমলের চমৎকার ডেস্ক রাখা আছে সেই ঘরে। তার মধ্যে গোপন দেরাজ ছিল। তাতে তিনখানা চিঠি পাওয়া গেছে। অ্যাডেল ফর্টেস্কুকে ভিভিয়ানের লেখা।
এরকম উদ্ভ্রান্ত প্রেমের চিঠিচাপাটি নীলের সারা কর্মজীবনে আরো অনেক হাতে পড়েছে। প্যাঁচপ্যাঁচে আবেগের বোকামি ভরা সব প্রেমপত্র।
তবে অ্যাডেল ফর্টেস্কুর লুকনো ডেস্কে যে তিনখানা চিঠি পাওয়া গিয়েছিল–সেগুলোর লেখা ছিল সতর্কতায় ভরা। নিষ্কাম প্রেমের চিঠি বলে মনে হওয়া স্বাভাবিক। যদিও নীল জানেন, এগুলা মোটেই তা ছিল না।
চিঠিগুলোর গুরুত্ব বুঝতে পেরে নীল সঙ্গে সঙ্গে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন পাবলিক প্রসিকিউটারের অফিসে।
এই চিঠিগুলো থেকে একটা যোগসাজসের ইঙ্গিত স্পষ্টতই পাওয়া যায়ভিভিয়ান ডুবয় আর অ্যাডেল ফর্টেস্কুর।
মিঃ রেক্স ফর্টেস্কুকে বিষপ্রয়োগের ঘটনাটা ঘটিয়েছিলেন তার স্ত্রীই নিজে থেকে অথবা ভিভিয়ান ডুবয়ের যোগসাজসে।
যদিও চিঠিগুলোতে খুনের কোনরকম ইঙ্গিত ছিল না। তা অবশ্য থাকবার কথাও নয়-নীল বুঝতে পেরেছেন ভিভিয়ান অতিশয় সাবধানী মানুষ।