–অবশ্যই। বেসরকারীভাবে আর একটা কথা জানাচ্ছি, ভায়া, বিষটা ছিল ট্যাকসিন –
ট্যাকসিন–সে আবার কি রকম বিষ…কোন দিন তো নাম শুনিনি–
-খুবই স্বাভাবিক। খুব কম লোকেই নামটা জানে। মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগেই এরকম একটা কেস আমার হাতে আসে। একটা বাচ্চা খেলার সময় ইউ গাছের ফল খেয়ে বিভ্রাট বাঁধিয়েছিল…একই কেস
–ইউ গাছের ফল?
-ফল বা পাতা। সমান বিষাক্ত। এর উপক্ষার হল ট্যাক্সিন। এসব কাজে ট্যাক্সিন একেবারে মোক্ষম। অবশ্য আমারও ভুল হতে পারে…তবে তোমাকে ব্যক্তিগত ভাবে জানালাম। কাজটা খুবই আগ্রহ জাগাবার মতো–ভদ্রলোকের জন্য দুঃখ হয়।
–মারা যাবার আগে তিনি কিছু বলেছিলেন?
–তোমার লোক পাশেই ছিল, লিখে নিয়েছে। তার কাছ থেকে জানতে পারবে সব কিছু। অফিসে চায়ের মধ্যে কিছু দেওয়া হয়েছিল এরকম কথা তিনি বলেছিলেন–অবশ্য এটা ঠিক নয় একেবারে।
–ঠিক নয় বলছ কেন?
–কারণ হল, এই বিষটা দ্রুত কাজ করতে পারে না। আমার বিশ্বাস, বিষের প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় তিনি চা পান করার পরেই।
–হ্যাঁ, অফিসের লোকরা এরকমই জানিয়েছে।
–সায়ানাইড আর মাত্র কয়েক ধরনের বিষই আছে যা দ্রুত কাজ করে।
–এক্ষেত্রে সায়ানাইড জাতীয় কিছু নয় বলছ?
-না, ভায়া, ওরকম বিষের কোন সম্ভাবনাই নেই। অ্যাম্বুলেন্স পৌঁছবার আগেই তিনি মারা যান। বেসরকারী ভাবেই তোমাকে বলছি, আমি বাজি রেখে বলতে পারি বিষটা ছিল ট্যাকসিন।
–এই বিষের প্রতিক্রিয়া হতে কত সময় লাগে?
–ধর, এক থেকে তিন ঘণ্টা। সময়টা নির্ভর করে অনেক কিছুর ওপর। মৃতব্যক্তির প্রাতরাশটা ভালই করা ছিল মনে হয়। তাই বিষের ক্রিয়া একটু সময় নিয়ে হয়েছে।
–প্রাতরাশ? চিন্তিত ভাবে বললেন ইনসপেক্টর নীল।
–তোমার শিকার সফল হোক ভায়া…তাহলে রাখছি।
–ধন্যবাদ ডাক্তার। ফোনটা দয়া করে একটু সার্জেন্টকে দিন। তার সঙ্গে কথা বলব।
একটু পরেই টেলিফোনের অপর প্রান্ত থেকে সার্জেন্ট হে’র গলা ভেসে এল।
-বলুন স্যর
–নীল বলছি। আমাকে শোনাবার মতো কিছু কি আছে–মৃত ব্যক্তি কি বলেছিলেন?
-উনি বলেছিলেন চায়ে কিছু ছিল–অফিসে খেয়েছিলেন। তবে মেডিক্যাল অফিসার অন্য কথা বলেছেন।
-হ্যাঁ, সেকথা শুনেছি। আর কিছু?
–একটা অদ্ভুত ব্যাপার স্যর। উনি সে স্যুট পরেছিলেন তার পকেট পরীক্ষা করে আমি রুমাল, চাবি, পকেটব্যাগ, খুচরো টাকা–সাধারণত যা থাকে তার সঙ্গে একটা অদ্ভুত জিনিস পেয়েছি।
–কি জিনিস?
–তার জ্যাকেটের ডানদিকের পকেটে কিছু শস্যের দানা ছিল।
–শস্যদানা? কি শস্য? প্রাতরাশের কোন খাবার কি? বার্লি, গম বা ভুট্টার দানা—
ওটা রাই বলেই মনে হল স্যর, বেশ কিছুটা পরিমাণেই ছিল–
–আশ্চর্য ব্যাপার…ব্যবসা সংক্রান্ত কিছু হবে সম্ভবত–কোন নমুনা—
আমারও তাই ধারণা–তবে জানানো উচিত মনে হল–তাই –
ঠিক কাজই করেছ।
চিন্তিত ভাবে রিসিভার নামিয়ে রাখলেন ইনসপেক্টর নীল। অফিসেই বিষপ্রয়োগ হয়েছে–এরকম সন্দেহটা মাথা জুড়ে ছিল। সন্দেহ থেকে এবারে নিশ্চিত অবস্থায় এলেন।
রেক্স ফর্টেস্কুকে বিষপ্রয়োগ করা হয়েছে এবং তা করা হয়েছে লক্ষণ প্রকাশ হবার অন্তত এক থেকে তিন ঘন্টা আগে।
সুতরাং একটা দিকে নিশ্চিত হওয়া গেল যে অফিসের কর্মচারীরা এ ব্যাপারে নির্দোষ।
মিঃ ফর্টেস্কুর খাস কামরায় বসে এতক্ষণ কাজ করছিলেন ইনসপেক্টর নীল। তার সঙ্গে একজন অধস্তন পুলিস কর্মচারীও ছিল।
এবার সেখান থেকে উঠে তিনি অফিসের বাইরের ঘরে এলেন। সেখানে টাইপিস্টরা টাইপরাইটারে কাজ করছিলেন। কিন্তু তাদের কাজে কোন গতি ছিল না।
মিস গ্রিফিথকে ডেকে হাসপাতাল থেকে পাওয়া দুঃসংবাদটা জানালেন নীল।
–মিঃ ফর্টেস্কু বারোটা তেতাল্লিশে মারা গেছেন।
মিস গ্রিফিথ আশ্চর্য হলেন না। মাথা ঝাঁকিয়ে বললেন মনে হয় তিনি অসুস্থ ছিলেন।
কোন রকম ভূমিকা না করে নীল এরপর সরাসরি মিস গ্রিফিথকে বললেন, মিঃ ফর্টেস্কুর পরিবারের কিছু খবরাখবর আমার জানা দরকার। আপনি নিশ্চয় আমাকে সাহায্য করবেন?
নিশ্চয়ই ইনসপেক্টর।
এরপর এসম্পর্কে তাঁর কাছ থেকে যা জানা গেল তা এরকম।
মিঃ ফর্টেস্কু সপরিবারে বেডন হীথ অঞ্চলে অভিজাত পাড়ায় নিজস্ব বাড়িতে বাস করেন। লণ্ডন থেকে এই অঞ্চলের দূরত্ব মাত্র কুড়ি মাইল। ট্রেন চলাচল ব্যবস্থা খুবই ভাল।
বছর দুয়েক আগে মিঃ ফর্টেঙ্কু দ্বিতীয়বার বিবাহ করেন। প্রথম মিসেস ফর্টেষ্ণু বহুদিন আগে মারা যান। দ্বিতীয়া স্বামীর চেয়ে বয়সে অনেক ছোট।
প্রথম পক্ষের দুই ছেলে ও এক মেয়ে। ছেলেরা হল পার্সিভাল ও ল্যান্সলট। মেয়ে ইলেইন।
মেয়ে বাড়িতেই থাকে। বড় ছেলেও। তিনি ব্যবসার একজন অংশীদার। সম্প্রতি ব্যবসাসংক্রান্ত কাজে ইংলণ্ডের উত্তরাঞ্চলে গেছেন। আগামীকাল তার ফিরে আসার কথা।
মিঃ ফর্টেস্কুকে হাসপাতালে নিয়ে যাবার পর মিঃ পার্সিভালের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছে, হোটেলে পাওয়া যায়নি। তিনি ম্যাঞ্চেস্টারের হোটেল ছেড়ে আজ সকালেই অন্যত্র চলে গেছেন।
মিঃ ফর্টেস্কুর দ্বিতীয় ছেলে মিঃ ল্যান্সলট, বাবার সঙ্গে মতভেদ হওয়ায় তিনি বিদেশে থাকেন।
দুই ছেলেই বিবাহিত। মিঃ পার্সিভাল বছর তিন আগে বিয়ে করেছেন। তিনি ইউটি লজেই আলাদা ফ্ল্যাটে থাকেন। তবে শিগগিরই বেডন হীথেই নিজেদের বাড়িতে উঠে যাবেন।