-হাঁটতে বেরিয়েছিলেন? তখন সময় কত?
সময়…মনে হয় পাঁচটা।
–মিঃ ল্যান্সলট ফর্টেস্কু কখন আসেন?
মিসেস পার্সিভালকে চা দেওয়া হয়েছে জানিয়ে নিচে নেমে আসি। তার কয়েক মিনিট পরেই। আমার ধারণা হয়েছিল, তিনি আগেই এসেছিলেন কিন্তু
–তিনি আগে এসেছিলেন এরকম ধারণা হয়েছিল কেন আপনার?
-কারণ…টেলিফোনের শব্দ পেয়ে নিচে নামার সময় সিঁড়ির জানালা দিয়ে তাকে যেন চোখ পড়ল।
–বাগানে তাকে দেখেছেন বলে মনে হয়েছে?
–হ্যাঁ। ইউ ঝোপের আড়ালে কাউকে যেন একঝলক চোখে পড়ল–তাই মনে হয়েছিল তিনিই হবেন।
বাগানে কাউকে দেখেছেন, এবিষয়ে আপনি নিশ্চিত মিস ডাভ? চিন্তিতভাবে বললেন, নীল।
আমি সম্পূর্ণ নিশ্চিত ইনসপেক্টর। এই কারণেই দরজায় বেল বাজাতে তাকে দেখে অবাক হয়ে যাই।
ইনসপেক্টর নীল ধীর সংযতকণ্ঠে বললেন, না মিস ডাভ, বাগানে আপনি কোনমতেই মিঃ ল্যান্সলট ফর্টেস্কুকে দেখে থাকতে পারেন না। তার ট্রেন বেডন হীথ স্টেশনে পৌচেছিল চারটে সাঁইত্রিশ মিনিটে–নির্দিষ্ট সময়ের কয়েক মিনিট দেরিতে। ট্রেনে খুবই ভিড় ছিল। সেসব সামলে ট্যাক্সি ধরা-কয়েক মিনিট অন্তত দেরি হয়ে থাকে, স্টেশন থেকে বেরুতে বেরুতে পৌনে পাঁচটা হয়ে যাবার কথা।
ট্যাক্সি খুব তাড়াতাড়িও যদি এসে থাকে–তিনি যখন ট্যাক্সির ভাড়া মিটিয়ে দিচ্ছেন, তখন সম্ভবতঃ পাঁচটা কি পাঁচটা বাজতে পাঁচ মিনিট বাকি। না…আপনি যাকে বাগানে দেখেন তিনি মিঃ ল্যান্সলট ফর্টেন্ধু হতে পারেন না।
–তবে আমি যে কাউকে দেখেছি, তাতে কোন সন্দেহ নেই।
মাথা ঝাঁকালেন ইনসপেক্টর নীল। ধীরে ধীরে বললেন, হ্যাঁ, আপনি দেখেছিলেন কাউকে। তবে আবছা অন্ধকারে লোকটাকে নিশ্চয় স্পষ্টভাবে দেখতে পাননি?
–মুখ দেখতে পাইনি। আবছাভাবে দেখলেও মনে আছে বেশ লম্বা আর ছিপছিপে চেহারার মানুষ…আমরা সকলে তো ল্যান্সলট ফর্টেস্কুর অপেক্ষাই করছিলাম, তাই মনে হয়, উনিই হবেন।
–লোকটা কোনদিকে যাচ্ছিল বলে মনে হল?
–ইউগাছের ঝোপের পেছন দিয়ে বাড়ির পুবদিকে।
–ওই দিকে তো একটা দরজা আছে–সেটা তালাবন্ধ থাকে?
রাত্রে সব দরজা বন্ধ করার পরে তালা লাগানো হয়।
–তা হলে তো ওই পাশ-দরজা দিয়ে যে কেউ বাড়ির ভেতরে অজান্তে ঢুকে যেতে পারে!
–তা অসম্ভব নয়। তাহলে ওই লোকটাই কি গা-ঢাকা দিয়ে ওপরে গিয়েছিল তারই পায়ের শব্দ পেয়েছিলাম বলে আপনার মনে হচ্ছে?
–এরকম হতে পারে।
–কিন্তু লোকটা তাহলে কে?
–আমিও তাই ভাবছি–
আর একটা কথা মিস ডাভ, ব্ল্যাকবার্ডস বিষয়ে আপনি কিছু জানেন?
আচমকাই প্রশ্নটা করে ফেললেন নীল। কিন্তু মেরী ডাভ কথাটা প্রথমে ঠিক বুঝতে পারলেন না। তিনি হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলেন।
–ব্ল্যাকবার্ডস মানে কালোপাখি সম্পর্কে জানতে চাইছি।
ক্রমশ মুখভাব পরিবর্তিত হল মিস ডাভের। তিনি চিন্তিতভাবে বললেন, ওহ, আপনি গত গ্রীষ্মের সেই অদ্ভুত ঘটনার বিষয়ে বলছেন? কিন্তু…
ইনসপেক্টর নীল বাধা দিয়ে বললেন, ভাসাভাসা কিছু কানে এসেছে, তাই ভাবলাম আপনি হয়তো বিষয়টা পরিষ্কার ভাবে বলতে পারবেন।
ব্যাপারটা, আমার মনে হয়, কেউ তামাশা করতেই করেছিল। চারটে মরা কালোপাখি মিঃ ফর্টেস্কুর লাইব্রেরী ঘরের টেবিলে কেউ রেখে গিয়েছিল। আমরা ভেবেছিলাম মালীর ছেলেরই কাণ্ড। জানালা তো খোলা ছিল।
ছেলেটা অবশ্য পরে বলেছিল সে একাজ করেনি। কালোরঙের পাখিগুলোকে মালী ফলের গাছের ডালে গুলি করে মেরেছিল।
-তারপর কেউ ওগুলো মিঃ ফর্টেস্কুর টেবিলে রেখে দিয়েছিল?
–হ্যাঁ।
–মিঃ ফর্টেঙ্কু ব্যাপারটা কিভাবে নিয়েছিলেন। তিনি বিরক্ত হন?
–বিরক্ত হওয়াই স্বাভাবিক।
–বুঝেছি।
–আচ্ছা, ধন্যবাদ মিস ডাভ। আপনাকে আর বিরক্ত করব না।
মেরী ডাভ একটু ইতস্তত করলেন। তারপর ঘর ছেড়ে চলে গেলেন। নীলের মনে হল, হয়তো তার কিছু জানার উদ্দেশ্য ছিল।
ওই কালো পাখির ব্যাপারটা মিস মারপল ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন ইনসপেক্টর নীলের মাথায়। তিনি আশ্চর্য হলেন জেনে যে কালোপাখির একটা যোগাযোগ এসবের মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। যদিও ঘটনার স্রোতের সঙ্গে তার কি সম্পর্ক এখনো তিনি জানেন না। আর সংখ্যাটা চার আর কুড়ি নয়। প্রতীক হিসেবেই যেন কালোপাখির উপস্থিতি রয়েছে বাস্তবে।
ঘটনাটা যদিও আগের–গত গ্রীষ্মকালের। তবু নীলের মনে হলো খুনীর অপরাধের সঙ্গে এর যোগসূত্রের সম্ভাবনাটা খতিয়ে দেখতে হবে।
.
০৮.
মিস মেরী ডাভের পর নীল মিস ইলেইন ফর্টেস্কুর সঙ্গে কথা বলতে এলেন।
–আমি দুঃখিত মিস ফর্টেস্কু, আর একটু বিরক্ত করতে হচ্ছে আপনাকে। আসলে ব্যাপারটা আমরা পরিষ্কার করে নিতে চাইছি–আপনিই সম্ভবত শেষ জন যিনি মিসেস ফর্টেস্কুকে জীবিত অবস্থায় দেখেছেন? সময়টা সম্ভবত পাঁচটা বেজে কুড়ি মিনিট
-মনে হয়। সারাক্ষণ তো আর ঘড়ির দিকে তাকিয়ে থাকা সম্ভব নয়। সংযতকণ্ঠে বললেন ইলেইন ফর্টেস্কু।
-তা ঠিকই বলেছেন। তবে অন্যরা চলে যাওয়ার পর আপনিই মিসেস ফর্টেন্ধুর সঙ্গে থেকে যান?
-হ্যাঁ।
–আপনাদের মধ্যে কি কথাবার্তা হয়েছিল জানতে পারি?
–আমরা কি নিয়ে কথা বলেছিলাম, তা কিছু এসে যায় না, ইনসপেক্টর।
–সম্ভবত না, তবে শুনলে সেসময়ে মিসেস ফর্টেস্কুর মানসিকতা কি রকম ছিল তা আন্দাজ করা যাবে।
–মানসিকতা–আপনার কি ধারণা তিনি আত্মহত্যা করেছেন?