রুমাল থেকে বের করে টেবিলের ওপরে জিনিসটা রাখতেই নীল চমকে উঠলেন। একটা মারমালেডের কৌটো-সামান্য একটু-মাত্ৰ ওপর থেকে খরচ করা হয়েছে।
কৌটোটার দিকে তাকিয়ে থেকে নীল কয়েক মুহূর্ত হতবাক হয়ে রইলেন। তাঁর মন সেই মুহূর্তে একটা দৃশ্য কল্পনা করবার চেষ্টা করছিল।
নতুন এক কৌটো মারমালেড–ওপর থেকে খানিকটা তুলে নেওয়া…মারমালেডে ট্যাকসিন মিশিয়ে সকলের অজ্ঞাতেই আসল কাজটা তাহলে সেরে রাখা হয়েছিল…পরে কৌটোর ঢাকনা বন্ধ করে–
–স্যর, সার্জেন্ট হে বলল, সেদিন প্রাতরাশে মিঃ ফর্টেঙ্কু শুধু মারমালেড নিয়েছিলেন, অন্যরা নিয়েছিলেন জ্যাম আর মধু
সম্বিত ফিরে পেলেন নীল। বললেন, ব্যাপারটা দেখছি খুবই সহজ হয়েছিল–কফির কাপে বিষ মিশিয়ে দেওয়ার চাইতে এই কাজটা অনেক কম ঝুঁকির ছিল। মিঃ ফর্টেস্তু নিজের হাতেই কৌটো খুলে ওপর থেকে এক চামচ মারমালেড তুলে টোস্টের ওপর লাগিয়ে নিয়েছিলেন। বিষপ্রয়োগের খুবই নির্ভুল উপায়
–হ্যাঁ স্যর।
সার্জেন্ট হে-ও কল্পনায় দৃশ্যটা দেখতে পাচ্ছিল। উদ্গ্রীব হয়ে তাকিয়ে রইল ইনসপেক্টর নীলের দিকে।
তার মানে, কোন অদৃশ্য হাত কৌটো খুলে সমান মাপে খানিকটা মারমালেড সরিয়ে নিয়ে আবার ঢাকনা এঁটে যথাস্থানে সেটা রেখে দিয়েছিল। তারপর…তারপর আগের মারমালেডের কৌটোটা, যেটায় ট্যাকসিন মেশানো ছিল সেটা জানালা গলিয়ে ঝোপের মধ্যে ফেলে দিয়েছিল। হা…কিন্তু ওই অদৃশ্য হাতের মালিকটি কে হতে পারে…বুঝেছ হে, এই কৌটোর মধ্যে ট্যাকসিন পাওয়া গেলেই ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়ে যাবে।
-ঠিক স্যর। আঙুলের ছাপও পাওয়া সম্ভব।
-না হে, সেই অদৃশ্য হাত এমন অসতর্ক কাজটা নিশ্চয়ই করবে না। এতে যদি আঙুলের ছাপ থেকে থাকে…সে হয়তো মিঃ ফর্টেস্কু…কিংবা ক্রাম্প বা গ্ল্যাডিসের। যাই হোক, পরীক্ষার পরেই সব পরিষ্কার বোঝা যাবে।
আচ্ছা, এ বাড়িতে মারমালেড কিভাবে আনা হয়, কোথায় রাখা হয় এসব খবর নিয়েছ?
–হ্যাঁ স্যর। জ্যাম আর মারমালেড ছখানা করে কৌটো একসঙ্গে আনা হয়। পুরনো কৌটো শেষ হয়ে এলে নতুন কৌটো রান্নাঘরে পাঠানো হয়।
-তাহলে ঠিকই অনুমান করেছি, বললেন নীল, বাড়ির কোন লোক অথবা এখানে যাতায়াত আছে এমন কেউই কারচুপির কাজটা করে রেখেছিল। তারপর প্রাতরাশের টেবিলে ঠিক হিসেব মতোই….
নীল সহসা নিজের কথায় নিজেই সজাগ হয়ে উঠলেন। তিনি ভাবলেন, মারমালেডে বিষ মেশানোর কাজটা যদি আগেই হয়ে থাকে তাহলে একটা বিষয় একদিক থেকে পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে, ওই দিন প্রাতরাশের টেবিলে যারা উপস্থিত ছিলেন, তারা কেউই দায়ী নন।
একটা গুরুত্বপূর্ণ নতুন সম্ভাবনার ইঙ্গিত যেন পেলেন নীল। সম্পূর্ণ ঘটনাটাকে নতুনভাবে পর্যালোচনা করার কথা তার মনে হল।
মিস মারপলের ছেলেভুলানো ছড়ার সেই ব্ল্যাকবার্ডস-এর কথাটাও এই সঙ্গে মনে পড়ে গেল তার। ছড়ার কথার সঙ্গে ঘটনার পরম্পরা অদ্ভুত ভাবে মিলে যাচ্ছে–কাজেই উপেক্ষা করা যায় না সেই পাই আর ব্ল্যাকবার্ডস।
-ও. কে, হে, তুমি তোমার কাজে যাও।
.
দোতলার একটা শোবার ঘরে এলেন বিছানা গোছাচ্ছিল। মিস মেরী ডাভ তদারক করছিলেন। ইনসপেক্টর তার খোঁজে সেই ঘরের সামনে এসে দাঁড়ালেন।
এলেন বিছানায় নতুন চাদর পাতছিল। ব্যাপারটা লক্ষ্য করে নীল জানতে চাইলেন, কোন অতিথি আসছেন মনে হচ্ছে?
মেরী স্থির দৃষ্টিতে তাকালেন। শান্তকণ্ঠে বললেন, মিঃ জেরাল্ড রাইটের আসবার কথা ছিল। কিন্তু তার আসা নাকচ হয়ে গেছে
–জেরাল্ড রাইট? উনি কে?
সামান্য হাসলেন মেরী। কিন্তু সংযতকণ্ঠে বললেন, মিস ইলেইন ফর্টেস্কুর একজন বন্ধু।
-এখানে তার কখন আসার কথা ছিল?
–আমি শুনেছি তিনি গলফ হোটেলে উঠেছিলেন-মিঃ ফর্টেস্কুর মৃত্যুর পরের দিন। মিস ইলেইন তার জন্য ঘরটা তৈরি রাখতে বলেছিলেন। কিন্তু পর পর মৃত্যুর ঘটনাগুলো ঘটে যাওয়ায় মিঃ রাইট হোটেলেই থেকে যাওয়া স্থির করেন।
–গলফ হোটেলে বললেন?
–হ্যাঁ।
চাদর আর তোয়ালে গুছিয়ে নিয়ে এলেন ঘর ছেড়ে চলে গেল। মেরী ডাভ ইনসপেক্টরকে বললেন, আপনি কি কোন কারণে আমাকে খুঁজছিলেন?
-হ্যাঁ। আসলে সময়ের ব্যাপারটা একটু পরিষ্কার করে নিতে চাইছিলাম আপনার কাছ থেকে।
-হ্যাঁ, বলুন, নির্লিপ্ত কণ্ঠে বললেন মেরী ডাভ।
–আমার জানার বিষয় সময় আর স্থান নিয়ে। চা পানের আগে আপনি শেষবার গ্ল্যাডিসকে দেখেছিলেন হলঘরে, তাই না?
-হ্যাঁ, আমি ওকে চা আনার কথা বলেছিলাম।
–তখন সময় পাঁচটা বাজতে কুড়ি মিনিট বাকি
–হ্যাঁ, তাই হবে।
–আপনি কোথা থেকে আসছিলেন?
–ওপর থেকে নিচে একটা টেলিফোনের আওয়াজ শুনেছিলাম
–টেলিফোন ধরেছিল কি গ্ল্যাডিস?
–হ্যাঁ। রঙ নাম্বার ছিল। কে লন্ড্রীর খোঁজ করছিল।
–সেই শেষবার আপনি তাকে দেখেছিলেন?
–এর মিনিট দশ-পনেরো পরেই ও চায়ের ট্রে লাইব্রেরীতে নিয়ে এসেছিল।
–মিস ফর্টেঙ্কু কি সেই সময়েই ঢোকেন?
–দু-তিন মিনিট পরেই। আমি তখন মিসেস পার্সিভালকে চায়ের কথা জানাতে যাই।
–আপনি বলেছিলেন, ওপরে কারও পায়ের শব্দ শুনেছিলেন
-হ্যাঁ। মনে হয়েছিল মিসেস পার্সিভাল আসছেন–কিন্তু কেউ নিচে নেমে না আসায় আমি উঠে যাই।
-মিসেস পার্সিভাল কোথায় ছিলেন?
তিনি তাঁর শোবার ঘরে ছিলেন। সবে এসেছিলেন, বাগানে একটু হাঁটতে বেরিয়েছিলেন।