–লোকটি অত্যন্ত বুদ্ধিমান স্যর।
-বাড়ির মেয়েদের মধ্যে কাউকে সন্দেহ করছ না তুমি? অথচ সমস্ত ব্যাপারটা পর্যালোচনা করলে, বোঝা যায় এই কাজে মেয়েদের হাত রয়েছে।
ইলেইন ফর্টেঙ্কু আর পার্সিভালের স্ত্রী, এরা দুজনেই প্রাতরাশের সময় উপস্থিত ছিলেন। আবার দেখ, বিকেলে চা পানের সময়েও তারা। এদের দুজনের যে কেউ একজনের পক্ষেই কাজটা করা সম্ভব। ওদের মধ্যে অস্বাভাবিক কিছু লক্ষ্য করোনি?
ইনসপেক্টর নীল কোন জবাব দিলেন না। তিনি তখন ভাবছিলেন মিস মেরী ডাভের কথা। তাকে অতিমাত্রায় স্বাভাবিক দেখা গেছে বরাবর।
আর কেমন একটা হালকা খুশির ছোঁয়া রয়েছে কথায় ও কাজে। গোটা ব্যাপারটাই নীলের চিন্তা তাই মিস ডাভের দিকে প্রবাহিত করতে চাইছিল।
আর ওই গ্ল্যাডিস মার্টিন–তার সম্পর্কে নিজেকেই দায়ী ভাবতে চাইছিলেন তিনি।
তার মধ্যে পুলিস সম্পর্কে স্বাভাবিক ভীতি লক্ষ্য করেছিলেন তিনি। এখন তার মনে হচ্ছে ওটা ছিল তার চাপা অপরাধবোধ।
গ্ল্যাডিস নিশ্চয় কিছু দেখেছিল বা শুনেছিল। হয়তো সামান্য কিছু–কিন্তু তার সন্দেহ জেগে উঠেছিল। কিন্তু তা নিয়ে সে মুখ খুলতে চায়নি। এখন আর কিছুই জানা যাবে না তার কাছ থেকে।
.
ইউট্রি লজে প্রথম সাক্ষাতেই বেশ উদারতার সঙ্গে মিস মারপলকে গ্রহণ করলেন মিস ডাভ। বৃদ্ধাকে সৎ আর কর্তব্যনিষ্ঠ বলেই তার মনে হল।
–মেয়েটির সম্পর্কে এখানে কেউই বিশেষ কিছু জানত না। আপনি এখানে আসায় আমাদের কাজের অনেক সুবিধা হল।
-কর্তব্যবোধেই আমাকে আসতে হল ইনসপেক্টর। মেয়েটি আমার বাড়িতেই একসময়ে ছিল। বড্ড বোকা মেয়ে তাই তার জন্য দুঃখবোধ না করে পারছি না।
–গ্ল্যাডিসের জীবনে কি কোন পুরুষের ব্যাপার ছিল?
–আহা বেচারি, একজন পুরুষবন্ধু পাওয়ার জন্য ও বড় ব্যাকুল ছিল। সেজন্যেই সে, আমার ধারণা, রেস্তোরাঁর কাজে চলে এসেছিল। যাই হোক, মনে হয় শেষ পর্যন্ত একজন তরুণকে সে জোগাড় করেছিল।
-আমারও তাই মনে হয়। সম্ভবত তরুণটির নাম অ্যালবার্ট ইভান্স। কোন হলিডে হোমে ওদের পরিচয় হয়েছিল–গ্ল্যাডিস রাঁধুনীকে বলেছিল ছেলেটি নাকি একজন মাইনিং ইঞ্জিনিয়ার।
-না, এমনটি সম্ভব নয়, বিষণ্ণ কণ্ঠে বললেন মিস মারপল, ছেলেটি নিশ্চয় ওকে এরকমই বুঝিয়েছিল। সহজেই ও সবকিছু বিশ্বাস করে বসত। আপনি কি ছেলেটিকে এব্যাপারে জড়িত বলে মনে করছেন?
না, ওরকম কিছু মনে হয়নি আমার। যতদূর জেনেছি, ছেলেটি এখানে কখনো আসেনি। সে নানান সামুদ্রিক বন্দর থেকে মাঝেসাঝে একখানা ছবির কার্ড পাঠাতো। মনে হয় কোন জাহাজের নিম্নতম ইঞ্জিনিয়ার গোছের ছিল সে।
–অসুখী মেয়েটির জীবনে এই ছেদ বড় মর্মান্তিক ইনসপেক্টর–আমি ভুলতে পারছি না ওর নাকে কাপড়ের ক্লিপ আটকানো ছিল নিদারুণ নিষ্ঠুরতার কাজ
একটু থেমে আবার বললেন মিস মারপল, যাইহোক, ইনসপেক্টর, আমি আমার সামান্য মেয়েলি শক্তি দিয়ে যদি এই ব্যাপারে আপনাকে সাহায্য করতে চাই আপনার আপত্তি আছে? এমন নৃশংস একটি খুনের পর আসামী যেন কিছুতেই শাস্তি এড়াতে না পারে।
–আপনার সহযোগিতা আমার কাম্য মিস মারপল।
–এখানে স্টেশনের কাছে একটা গলফ হোটেল রয়েছে দেখলাম, আর মনে হয়, বিদেশী মিশন সম্বন্ধে আগ্রহী একজন বৃদ্ধাও আছেন এই বাড়িতে–মিস র্যামসবটম তার নাম।
-হ্যাঁ, সঠিক ক্ষেত্রই বেছে নিয়েছেন আপনি, সচকিত হয়ে বললেন নীল, ওই বৃদ্ধা মহিলার কাছে আমি গিয়েছিলাম–কিন্তু কোন কথা বার করতে পারিনি।
কাজের ক্ষেত্রে আপনার উদারতার পরিচয় পেয়ে আমি খুশি ইনসপেক্টর। খবরের কাগজ পড়ে সঠিক ঘটনা জানা যায় না আজকাল। বড় বেশি ফেনানো-ফাপানো থাকে। মূল বিষয়গুলো যদি জানা যেত
–এখানে যা ঘটেছিল তা এরকম–মিঃ রেক্স ফর্টেষ্ণু তাঁর নিজের অফিসে ট্যাকসিন নামের বিষের ক্রিয়ায় মারা যান। ইউগাছের ফল বা পাতা থেকে বিষ পাওয়া যায় জানেন নিশ্চয়ই।
-হ্যাঁ–খুবই সহজলভ্য। মিসেস ফর্টেস্কুর ঘটনা
-হ্যাঁ, তিনি পরিবারের অনেকের সঙ্গে লাইব্রেরীতে চা পান করছিলেন। তার সৎ মেয়ে মিস ইলেইন সবার শেষে লাইব্রেরী ছেড়ে বেরিয়ে যান। তিনি বলেছেন, মিসেস ফর্টে আর এক কাপ চা পট থেকে ঢালছেন, দেখে গেছেন তিনি।
এর পর প্রায় কুড়ি-পঁচিশ মিনিট পরে বাড়ির হাউসকীপার মিস ডাভ চায়ের ট্রে আনার জন্য লাইব্রেরীতে ঢোকেন। তিনিই মৃত অবস্থায় সোফায় বসে থাকা মিসেস ফর্টেস্কুকে আবিষ্কার করেন। তখনো তার পাশে ছিল অর্ধেকপূর্ণ চায়ের কাপ। চায়ের ওই তলানিতেই পটাসিয়াম সায়ানাইড পাওয়া যায়।
–বিষক্রিয়া প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই হয়। ওই মারাত্মক বিষ লোকে বোলতার চাক ভাঙার কাজে ব্যবহার করে।
–ঠিকই বলেছেন। এখানে এক প্যাকেট পাওয়া গেছে বাগানে মালীর ঘরের শেডের মধ্যে ।
-মিসেস ফর্টেস্কু চা ছাড়া আর কিছু খাচ্ছিলেন?
–হ্যাঁ, সঙ্গে চকোলেট কেক, সুইস রোল ইত্যাদি ছিল।
জ্যাম আর মধুও ছিল সম্ভবত? বললেন মিস মারপল।
–হ্যাঁ, মধু ছিল। পটাসিয়াম সায়ানাইড ছিল চায়ে।
–হ্যাঁ, বুঝতে পেরেছি। এবারে তৃতীয় মৃত্যুটার সম্পর্কে বলুন, ইনসপেক্টর।
–এই ঘটনাটিও খুব পরিষ্কার। গ্লাডিস লাইব্রেরীতে চায়ের ট্রে নিয়ে আসে। খাবারের ট্রে সে হলঘরে ফেলে রেখেই চলে যায়। তারপর থেকে মেয়েটিকে আর কেউ দেখেনি।