হতাশ হয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলেন নীল। তারপর ঘোরানো সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে লাগলেন।
শেষ ধাপে নামতেই সার্জেন্ট হে উত্তেজিত ভাবে হাঁপাতে হাঁপাতে এসে হাজির হলেন।
–স্যর, ওকে খুঁজে পেয়েছি স্যর—
কাকে খুঁজে পেয়েছ? সচকিত হলেন নীল।
–স্যর সেই হাউসমেইড…এলেনই ওকে দেখতে পেয়েছে। খিড়কির দরজার পিছনে তার জামাকাপড় শুকোতে দেওয়া ছিল। সেগুলো তুলে আনা হয়নি, তাই একটা টর্চ নিয়ে এলেন গিয়েছিল সেখানে। মেয়েটার লাশের ওপর প্রায় হুমড়ি খেয়ে পড়েছিল–কেউ তাকে গলা টিপে মেরে রেখে গিয়েছিল। একটা মোজা জড়ানো ছিল মেয়েটার গলায়। আমার মনে হয়, স্যর, অনেকক্ষণ আগে মারা গেছে। তাছাড়া স্যর, অত্যন্ত কদর্য তামাশা করেছে। খুনী–মেয়েটার নাকে কাপড়ের ক্লিপ আটকে রেখেছে
.
০৭.
ভোরের ট্রেনেই মেরী মিড ছেড়ে রওনা হয়েছিলেন মিস মারপল। তারপর জংশনে ট্রেন বদল করে চক্ররেল ধরে লণ্ডন হয়ে বেডন হীথ স্টেশনে পৌঁছালেন।
ট্রেনে আসতে আসতেই সকালের সংস্করণের তিনটি দৈনিক পড়া শেষ করেছেন। খবরটা সব কাগজেই প্রথম পাতায় ছাপা হয়েছে। ইউট্রি লজের তিনটি বিয়োগান্ত ঘটনার বিবরণ।
বেডন হীথ স্টেশন থেকে ট্যাক্সি ধরে ইউট্রি লজে পৌঁছে সদর দরজায় বেল বাজালেন বৃদ্ধা মহিলাটি।
সাবেকী ধরনের টুইডের কোট আর স্কার্ট তার পরণে, একটা স্কার্ফ আর মাথায় ফেল্টের পালক বসানো টুপি। তার সঙ্গে মালপত্র বলতে একটা ভাল জাতের সুটকেস আর একটা হাতব্যাগ।
-বলুন মাদাম। বাটলার ক্রাম্প দরজা খুলে দাঁড়াল।
–গ্ল্যাডিস মার্টিন নামে যে মেয়েটি মারা গেছে, আমি এসেছি তার সম্পর্কে কথা বলতে।
–ওহো, মাদাম–এই যে
ঠিক সেই মুহূর্তে লাইব্রেরী ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন মিসেস ল্যান্স ফর্টেস্কু-কথা শেষ না করে তার দিকে তাকাল ক্রাম্প।
-উনি গ্ল্যাডিসের ব্যাপারে কথা বলতে এসেছেন মাদাম। বলল ক্রাম্প।
দয়া করে আসুন আমার সঙ্গে মাদাম।
প্যাট মিস মারপলকে সঙ্গে করে লাইব্রেরীতে এসে বসলেন।
–আপনি কি বিশেষ কারু সঙ্গে কথা বলবেন বলে এসেছেন? বললেন প্যাট, আমি আর আমার স্বামী কয়েকদিন হল আফ্রিকা থেকে এসেছি–এব্যাপারে কিছুই প্রায় জানি না
মিস মারপল প্যাট্রিসিয়া ফর্টেস্কুকে লক্ষ্য করছিলেন। তার গাম্ভীর্য আর সরলতায় তিনি মুগ্ধ হলেন। মুখভাবে কেমন অসুখী ভাব।
হাতের দস্তানা খুলতে খুলতে মিস মারপল বললেন, ওই গ্ল্যাডিস নামের মেয়েটি খুন হওয়ার খবরটা খবরের কাগজে পড়লাম। মেয়েটিকে আমি ভালভাবেই জানি। বলতে গেলে তাকে আমিই বাড়ির কাজকর্ম শিখিয়েছি। তাই দুঃসংবাদটা পড়ে ছুটে না এসে পারলাম না–যদি কিছু করার থাকে।
-হ্যাঁ, বুঝতে পেরেছি। ওর সম্পর্কে এখানে কেউই বিশেষ কিছু জানে না। আপনি আসাতে ভালই হয়েছে।
–মেয়েটি ছিল অনাথ–একটা অনাথ আশ্রমে মানুষ হয়েছে। সতেরো বছর বয়সে আমার কাছে এসেছিল। সেন্ট মেরী মিডে অনাথ মেয়েদের শিক্ষাদানের একটা ব্যবস্থা আমাদের রয়েছে। আমার কাছেই ঘরের কাজকর্ম শিখেছে ও। পরে অবশ্য কাফেতে কাজ নিয়ে চলে আসে।
–আমি মেয়েটিকে কখনো দেখিনি। দেখতে কেমন ছিল বলতে পারব না।
–ওহ একেবারেই দেখতে ভাল ছিল না। বুদ্ধিও একটু ভেঁতা। আর খানিকটা পুরুষঘেঁষাও ছিল। তবে পুরুষরা বিশেষ পাত্তা দিত না ওকে–অন্য মেয়েরাও তাকে নিজেদের স্বার্থে কাজে লাগাতো।
-আহা বেচারি। প্যাট সহানুভূতি প্রকাশ করল।
–সত্যিই দুর্ভাগ্য মেয়েটির। হয়তো একটু বেশি স্বাধীনতা ভোগ করবে বলে কাফেতে কাজ নিয়েছিল। কিন্তু রেস্তোরাঁর জীবনে সুখকর কিছু ঘটেনি সম্ভবত তাই বাড়ির কাজ বেছে নেয়। এ বাড়িতে ও কতদিন ছিল?
–শুনেছি, মাস দুয়েক এখানে কাজ করেছিল। আর এর মধ্যেই কী ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটল ওর জীবনে। আমার মনে হয় ও কোন কিছু শুনে বা দেখে থাকতে পারে…তারই জের–
–আমাকে সবচেয়ে আঘাত করেছে ওই নাকে কাপড়ের ক্লিপ আটকানো ব্যাপারটা। বড় নিষ্ঠুর কাজ। মনুষ্যত্বের অপমান।
-আপনার কথা বুঝতে পারছি মাদাম। প্যাট বললেন, আপনি বরং ইনসপেক্টর নীলের সঙ্গে কথা বলুন। তিনি এই তদন্তের দায়িত্বে আছেন। তিনি খুবই মানবিক।
.
এক বাড়িতে পরপর তিনটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা…সারা দেশের খবরের কাগজগুলো পুলিসের কাজের সমালোচনায় মুখর হয়ে উঠেছিল। ফলে খুবই অস্বস্তি দেখা দিয়েছিল পুলিস মহলে।
অ্যাসিস্ট্যান্ট পুলিস কমিশনার অস্থিরভাবে পায়চারি করতে করতে বললেন, প্রথমে স্বামী তারপরে স্ত্রী–দুজনকে পর পর খুন করা কোন বাইরের লোকের কাজ নয়, নীল। আমার মনে হয়, উন্মাদের মত এই খুন যে করেছে, সে বাড়িরই কেউ। মিঃ ফর্টেস্কুর কফিতে ট্যাকসিন মিশিয়ে দিয়েছে কোন সুযোগে। তারপর সায়ানাইড মিশিয়ে দিয়েছে মিসেস অ্যাডেল ফর্টেস্কুর চায়ের কাপে।
পরিবারের বিশ্বাসভাজন এমন কারোর পক্ষেই এই কাজ করা সম্ভব। তুমি কি ভেবেছ–নীল, বাড়ির লোকেদের মধ্যে কে হতে পারে?
-একটা ব্যাপার, স্যর, আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। দুটি ঘটনাতেই পার্সিভাল ফর্টেস্কুর নাম অনুপস্থিতের তালিকায় রয়েছে।
হ্যাঁ, তুমি কি বলতে চাইছ, চিন্তিতভাবে অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার বললেন, সে নিজেকে সরিয়ে রেখে কৌশলে কাজ সমাধা করেছে? কিন্তু কিভাবে তার পক্ষে এটা সম্ভব?