ওরা চারজন একসঙ্গে লাইব্রেরীতে বসে বিকেলের চা পান করছিলেন। অ্যাডেল ফর্টে, জেনিফার ফর্টেস্কু, মিস ইলেইন ফর্টেস্কু আর বাইরে থেকে নতুন আসা ল্যান্সলট ফর্টেস্কু।
মিস র্যামসবটমের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন ল্যান্স, জেনিফার নিজের ঘরে ফিরে গিয়ে চিঠি লিখতে বসেছিলেন। সকলের শেষে লাইব্রেরী থেকে বেরিয়ে ছিলেন ইলেইন।
ইলেইন জানিয়েছে, যাবার সময়ও অ্যাডেলকে সুস্থ অবস্থায় দেখে গেছেন। শেষ এককাপ চা ঢেলে নিচ্ছিলেন।
ওই শেষকাপই তাঁর জীবনের শেষ চা হল।
এরপর মেরী ডাভ ঘরে ঢুকেছিলেন সম্ভবত কুড়ি মিনিট পরে। তিনিই আবিষ্কার করেন মৃতদেহ।
অজানা ওই বিশ মিনিটের মধ্যেই ঘটে গেছে যা কিছু। মাত্র বিশ মিনিট।
দ্রুত সিদ্ধান্ত স্থির করে নিলেন ইনসপেক্টর নীল। তিনি রান্নাঘরের দিকে এগিয়ে গেলেন।
চুপসে যাওয়া বেলুনের মত বিশাল বপু নিয়ে একটা টেবিলের পাশে বসেছিলেন মিসেস ক্রাম্প।
–সেই মেয়েটি এখনো ফিরে আসেনি? জানতে চাইলেন নীল।
–কে গ্ল্যাডিস? না, আসেনি। এগারোটার আগে ও আসছে না—
চা সেই করে দিয়ে গিয়েছিল বলছেন?
-হ্যাঁ। আমি ওটা ছুঁইনি পর্যন্ত–শপথ করে বলছি। তাছাড়া গ্ল্যাডিস এরকম কাজ করতে পারে আমি তা বিশ্বাস করি না স্যর। মেয়েটা বোকা–তবে ভালো মেয়ে
নীলেরও অবশ্য তাই ধারণা। কেন না চায়ের পটে সায়ানাইড পাওয়া যায়নি।
–ওর কি আজ ছুটি ছিল?
–না, স্যর, আগামীকাল ওর ছুটির দিন।
–ক্রাম্প-সেও কি
মিসেস ক্রাম্প এবার উদ্ধত ভঙ্গীতে ঘাড় ঘোরালেন।
–এসব নোংরামোর মধ্যে ক্রাম্প নেই, তার ঘাড়ে দোষ চাপাবার চেষ্টা করবেন না স্যর। সে বেরিয়েছে তিনটের সময়–মিঃ পার্সিলের মতোই সে এসবের বাইরে–
আশ্চর্য সমাপতন এই যে সবেমাত্র লণ্ডন থেকে ফিরে এসেই ল্যান্সলট ফর্টেঙ্কু বাড়ির দ্বিতীয় বিয়োগান্ত ঘটনার কথাটা শুনতে পান।
নীল বললেন, আমি সেকথা ভাবছি না মিসেস ক্রাম্প। গ্ল্যাডিসের কথা সে কিছু জানে কিনা তাই আমি জানতে চাইছিলাম।
–আমি ভাল করেই জানি। ভাল জামাকাপড় পরে বেরিয়েছে। নিশ্চয়ই কোন মতলবে বেরিয়ে থাকবে। একবার ফিরে আসুক
নীল রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে দোতলায় অ্যাডেল ফর্টের ঘরে গেলেন।
নিখুঁত সাজানো গোছানো বিলাসবহুল ঘর। একদিকে একটা দরজা; পাশে স্নানঘর। দরজায় পোর্সেলিনের আয়না বসানো। স্নানঘরে একটু দূরে একটা দরজা, ড্রেসিংরুমে যাওয়া যায় সেই দরজা দিয়ে।
নীল চারপাশটা দেখে শয়নঘরের দরজা দিয়ে বসার ঘরে এলেন।
গোলাপী কার্পেটে সাজানো এঘরটা। এঘরে দেখার কিছু ছিল না। কেননা, আগেরদিনই খুঁটিয়ে দেখে গেছেন। ছোট চমৎকার ডেস্কটা তার নজরে পড়েছিল।
সহসা নীলের দৃষ্টি তীক্ষ্ণ হয়ে উঠল। গোলাপী কার্পেটের ওপরে পড়েছিল ছোট একটুকরো মাটি।
এগিয়ে গিয়ে টুকরোটা তুলে নিলেন। মাটি তখনো ভিজে।
সতর্ক চোখে চারপাশ দেখলেন নীল–না, কোন পায়ের ছাপ নেই কোথাও। কেবল এই একটুকরো ভিজা মাটি।
এবারে এলেন গ্ল্যাডিস মার্টিনের শোবার ঘরে। সে অনুপস্থিত। এগারোটা বেজে গেছে অনেকক্ষণ। ক্রাম্প ফিরে এসেছে আধাঘন্টা আগে। কিন্তু গ্ল্যাডিসের পাত্তা নেই।
অগোছালো ঘরে গ্ল্যাডিসের স্বভাবের পরিচয় খুঁজছিলেন। বিছানা যে কখনো সাফ করা হয় না, তা বোঝা যাচ্ছিল। জানলাগুলোও বন্ধ।
গ্ল্যাডিসের ব্যক্তিগত কিছু জিনিস ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল। তার মধ্যে ছিল সস্তাদরের কিছু গয়না।
আলমারীর দেরাজে চোখে পড়ল কয়েকটা ছবির পোস্টকার্ড; খবরের কাগজের কাটা টুকরো। সেলাইয়ের নকসা, আর সাজসজ্জার, পোশাকের ফ্যাসনের কথা ছিল টুকরোগুলোতে।
ছবির পোস্টকার্ডগুলো নানা জায়গায়। তিনখানা পোস্টকার্ড বেছে নিলেন নীল। এগুলোতে বার্ট নামে কেউ সই করেছিল। মিসেস ক্রাম্প যে তরুণের কথা বলেছেন, সম্ভবত এই সে।
প্রথম পোস্টকার্ডে লেখা, বুকভরা ভালবাসা জানাচ্ছি, তোমারই বার্ট।
দ্বিতীয় পোস্টকার্ডে–এখানে অনেক সুন্দরী মেয়ে তবে তোমার পাশে দাঁড়াবার মতো কেউ নেই। সেদিনের কথাটা ভুলে যেও না। শিগগিরই দেখা হবে। দারুণ সুখের দিন আসছে আমাদের। ভালবাসা নিও। বার্ট।
তৃতীয় পোস্টকার্ডটা, তাতে কেবল লেখা, ভুলে যেও না, তোমার ওপর আমার অগাধ বিশ্বাস। ভালবাসা রইল। বার্ট।
লেখা দেখে বোঝা যায় অনভ্যস্ত হাতে অশিক্ষিত কারও লেখা।
খবরের কাগজের কাটা টুকরোগুলোর নানা জিনিসপত্রের খবরগুলো আগ্রহের সঙ্গে পড়লেন নীল।
পোশাক, রূপচর্চা, রুপোলী পর্দার বিভিন্ন তারকার কথা ছড়িয়ে আছে এগুলোতে। একজায়গায় পাওয়া গেল উড়ন্ত পিরিচ সম্পর্কে কিছু লেখা।
আর একটা অংশে রয়েছে আমেরিকার ডাক্তারদের আবিষ্কার করা ওষুধের কথা, রুশডাক্তারদের আশ্চর্য আবিষ্কারের কথা।
হতাশ হলেন নীল। এসব জিনিসের মধ্যে গ্ল্যাডিসের হঠাৎ অদৃশ্য হবার কোন সূত্র পাওয়া গেল না। রেক্স ফর্টেস্কুর মৃত্যুর বিষয়ে কোন কিছু গ্ল্যাডিস দেখে থাকবে, এরকম বলা হচ্ছে। কিন্তু সন্দেহ করবার মতো তেমন কোন সূত্রও পাওয়া গেল না কোথাও।
চায়ের ট্রেটা বিকেলে সে লাইব্রেরী থেকে এনে হলঘরে ফেলে গিয়েছিল। রান্নাঘরে ফিরে যায়নি।
গ্ল্যাডিসের এরকম ব্যবহার করার কোন কারণ আন্দাজ করা যায়নি। আচমকাই সে গা-ঢাকা দিয়েছিল। ঘরে এসবের কোন সূত্রই কোথাও পেলেন না নীল।