–প্যাটকে আপাতত লণ্ডনেই রেখে এসেছি।
–বুদ্ধির কাজ করেছিস। এখানে কখন কি ঘটে কেউ বলতে পারে না।
–এসব যা শুনছি, তোমার কোন ধারণা আছে এফি মাসি?
–ঠিক এরকম প্রশ্নই একজন ইনসপেক্টর কাল এখানে এসে আমাকে করেছিল। লোকটার বুদ্ধিসুদ্ধি আছে মনে হল।
এদিকে কি চলছিল, আমি তো জানি না কিছুই। বাবাকে এই বাড়িতেই বিষপ্রয়োগ করা হয়, পুলিস একথা কেন বলছে?
–পাপের রাজত্ব, বুঝলি।
একটু থেমে মিস র্যামসবটম আকাশের দিকে তাকালেন।
–ব্যাভিচার আর খুন–দুটো এক ব্যাপার নয়। ওর কথা আমি ভাবতে চাই না ল্যান্স।
–অ্যাডেল, বলছ?
সতর্ক কণ্ঠে জানতে চাইলেন ল্যান্সলট ফর্টেস্কু।
–আমার মুখ বন্ধ।
–তুমি আমাকে খুলে বলো তো এফি মাসি। অ্যাডেলের একজন ছেলে বন্ধু আছে, তাই না? তারা দুজনে যোগসাজসে বাবাকে চায়ের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে খাইয়েছিল, তুমি কি তাই বলতে চাইছ?
–ওসব নিয়ে ঠাট্টা তামাশার ইচ্ছে নেই আমার। তবে মনে হয় ওই মেয়েটা কিছু জানে।
কোন মেয়েটা। ল্যান্স উৎকণ্ঠ হল।
-ওই যে মেয়েটা, ওরা বলছে ছুটি নিয়েছে…আমার চা এনে দেবার কথা ছিল তার। সে যদি ছুটির নাম করে পুলিসের কাছে যায়, আমি অবাক হব না। তোকে দরজা খুলে দিয়েছে কে?
চুপচাপ শান্ত চেহারার একজন। ওরা বলল নাম মেরী ডাব। সেই পুলিসের কাছে গেছে বলছ?
–সে যাবে না। আমি বলছি পার্লারমেইডের কথা। ও কথায় কথায় একবার আমাকে বলে ফেলেছিল, কাউকে সে ঝামেলায় ফেলতে চায় না। আমি তাকে পুলিসের কাছে যেতে বলেছিলাম। সে আজেবাজে বকতে বকতে জানালো, পুলিস তার কথা বিশ্বাস করবে না। পরে ফের বলল, ও কিছুই জানে না। মেয়েটা কেবলই উল্টোপাল্টা বকছে। মনে হয় ভয় পেয়েছে। নিশ্চয় কিছু ও দেখেছিল বা শুনেছিল, কিন্তু গুরুত্ব বুঝে উঠতে পারছে না।
-তোমার ধারণা ও পুলিসের কাছে যেতে পারে? সন্দিগ্ধ কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল ল্যান্সলট, বলছ–ও কিছু দেখে থাকতে পারে? কিন্তু…।
–জানিস, পার্সিভলের বউ একজন নার্স।
প্রসঙ্গ পাল্টে একেবারে অন্য প্রসঙ্গ তুললেন হঠাৎ মিস র্যামসবটম। ল্যান্সলট বিহ্বল দৃষ্টিতে তাকাল তার দিকে।
-হাসপাতালের নার্সরা ওষুধ নাড়াচাড়া করতে অভ্যস্ত। বললেন, র্যামসবটম।
–ওই যে কি নাম ট্যাকসিন…ওটা কি ওযুধে ব্যবহার করা হয়?
মনে হয় ওই জিনিসটা পাওয়া যায় ইউগাছের ফল থেকে। বাচ্চারা ওগুলো খেয়ে অনেক সময় বিপদ ঘটায়।
ল্যান্সের ভুরু উঠে গেল। তীব্র দৃষ্টিতে সে তাকাল এফি মাসির দিকে।
-সত্যি কথা, আমি স্নেহবৎসল। সকলেই তা জানে। কিন্তু তাই বলে আমি বদ কাজ বরদাস্ত করতে পারব না।
.
মেরী ডাভ রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে মিসেস ক্রাম্পের অভিযোগ শুনছিলেন। প্যাস্ট্রি বেলতে বেলতে বেচারীর মুখ লাল হয়ে উঠেছিল।
–একবার আপনি ভাবুন মিস, বাড়ির কর্তা মারা গেছেন, বহুদিন পরে বিদেশ থেকে ফিরে এসেছেন মিস্টার ল্যান্স…তার ওপরে তার সঙ্গে রয়েছে স্ত্রী…অভিজাত ঘরের মেয়ে… নৈশভোজের ব্যবস্থাটা তো আমি নমঃ নমঃ করে অন্যদিনের মতো সারতে পারি না। অত করে বোঝালাম যে আজ ছুটি নেবার দরকার নেই… কে শোনে কার কথা–আমাকে শুনিয়ে গেল, আজ আমার ছুটি…আমি সে ছুটি নিচ্ছি। তা চুলোয় যাক ক্রাম্প…তার তো আর আমার মতো নিজের কাজ নিয়ে গর্ব নেই।…তা এদিকে দেখুন, গ্ল্যাডিসকে বললাম, রাত্তিরে আমার কাজে একটু হাত লাগিও মেয়ে…বলল, ঠিক আছে, আমি আছি। তারপর সেই যে বেরুলো আর দেখা নেই। আজ রাত্তিরে একা আমি কি করে সামাল দেব…তবু ভাগ্য ভাল মিঃ ল্যান্স তার স্ত্রীকে সঙ্গে আনেননি।
-ঠিক আছে, মিসেস ক্রাম্প, আমি আছি। আর মেনুটা একটু সাধারণ করে নিলেই হবে। সান্ত্বনার সুরে বললেন মিস মেরী ডাভ।
–আপনি নিজে টেবিলে থাকবেন বলছেন, মিস?
–গ্ল্যাডিস সময় মতো ফিরে যদি না আসে–
মেরী ডাভকে বাধা দিয়ে মিসেস ক্রাম্প বলে উঠলেন, ও ফিরে আসবে না, আমি জানি। ও গেছে তার ছেলেবন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে। ছোকরার নাম অ্যালবার্ট। সামনের বসন্তে ওরা বিয়ে করবে বলেছে ও আমাকে।
-চিন্তার কি আছে আমিই চালিয়ে নেব-ঠিক আছে আমি যাচ্ছি।
মেরী ডাভ ড্রইংরুমে ফিরে এলেন। ঘরে এখনো আলো জ্বালানো হয়নি। অ্যাডেল ফর্টেস্কু তখনো চায়ের ট্রের পেছনে সোফায় বসেছিলেন।
–একি আলো জ্বালানো হয়নি। আলোটা দেব, মিসেস ফর্টেস্কু?
বলতে বলতে সুইচ টিপে আলো জ্বালিয়ে দিলেন মেরী ডাভ। পর্দা টেনে দিতে গিয়ে তার চোখ পড়ল অ্যাডেলের মুখের দিকে, থমকে গেলেন তিনি
কুশনের ওপরে কাৎ হয়ে এলিয়ে পড়েছে দেহটা…পাশেই পড়ে রয়েছে আধখাওয়া একটুকরো কেক আর মধু…কাপের চা-ও সম্পূর্ণ খাওয়া হয়নি।…আচমকা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন অ্যাডেল ফর্টেস্কু।
.
–সম্ভবত পটাসিয়াম সায়ানাইড, ইনসপেক্টর, চায়ের সঙ্গে ছিল। ডাক্তার বললেন।
–সায়ানাইড? অধৈর্যভাবে বলে উঠলেন নীল। অথচ ওঁকেই হত্যাকারী বলে সন্দেহ করা হচ্ছিল।
–হুম তাহলে তো এবারে আপনাকে ছক পাল্টে নিতে হবে।
–হুম।
রেক্স ফর্টেস্কুর কফিতে প্রয়োগ করা হয়েছিল ট্যাকসিন। আর সায়ানাইড দেওয়া হল অ্যাডেল ফর্টেস্কুকে চায়ের সঙ্গে।…এবারে একেবারে চোখের ওপরে। ব্যাপারটা যে একান্তভাবেই পারিবারিক তা বুঝতে কষ্ট হল না ইনসপেক্টর নীলের।