মেরীর সাড়া পেয়ে অ্যাডেল বললেন, চা কোথায়?
এখনই আসছে।
চারটেয় চায়ের সময়। এখন সময় পাঁচটা বাজতে কুড়ি। গ্ল্যাডিস তাড়াহুড়ো করে রান্নাঘরে ঢুকে চায়ের সরঞ্জাম গুছাতে শুরু করল।
মিসেস ক্রাম্প একটা গামলায় প্যাস্ট্রি মেশাচ্ছিল। বিরক্তমুখে তার দিকে তাকিয়ে বলল, কি হল মেয়ে, চা কখন নিয়ে যাবে, লাইব্রেরী থেকে ঘন্টা কতক্ষণ ধরে বেজে যাচ্ছে
–এখুনি যাচ্ছি–মিসেস ক্রাম্প।
রান্নাঘরে কেতলিতে চায়ের জল চাপিয়ে পাশের ভাঁড়ার ঘরে ঢুকল গ্ল্যাডিস। কেক, বিস্কুট, প্যাস্ট্রি আর মধু ট্রেতে নিয়ে নিল।
হুড়োহুড়ি করে না মেপেই আন্দাজ মতো কিছু চায়ের পাতা নিয়ে রুপোর পটে ঢেলে দিল। তারপর রান্নাঘরে ফিরে এসে পটে গরম জল ঢেলে নিয়ে লাইব্রেরী ঘরের দিকে ছুটল।
সোফার পাশে টেবিলে চায়ের পট নামিয়ে রেখে, ফের রান্নাঘর থেকে খাবারের ট্রে নিয়ে এল।
মেরী ডাভ যখন লাইব্রেরী ঘর থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে সেই সময় ঘরে ঢুকল ইলেইন ফর্টেস্কু। চুল্লীর পাশে বসে হাত সেঁকতে লাগলেন।
হলঘরে ঢুকে আলো জ্বেলে দিলেন মেরী ডাভ। এই সময় তার মনে হল কেউ ওপরে হাঁটছে। বোধহয় জেনিফার ফর্টেস্কু। কেউ অবশ্য নিচে এল না।
মেরী ধীরে ধীরে ওপরে উঠে গেলেন।
.
বাড়ির একপাশে একটা আলাদা সুইটে স্ত্রীকে নিয়ে থাকতেন পার্সিভাল ফর্টেস্কু। মেরী এসে বসার ঘরের দরজায় টোকা দিয়ে ভেতরে ঢুকলেন।
–চা দেওয়া হয়েছে ।
জেনিফার ফর্টেব্দুর পরণে বাইরে যাওয়ার পোশাক দেখে আশ্চর্য হলেন মেরী। তিনি উটের লোমের কোটটা খুলবার চেষ্টা করছিলেন। সেদিকে তাকিয়ে মেরী ফের বললেন, আপনি বাইরে গিয়েছিলেন জানতাম না।
-একটু বাগানে গিয়েছিলাম কিন্তু থাকতে পারলাম না, বড্ড ঠাণ্ডা, মিস ডাভ। আগুনের কাছে যেতে হবে।
কোটটা গা থেকে খুলে রেখে জেনিফার মিস ডাভের পেছনে ঘর থেকে বেরিয়ে এসে আগে আগে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে গেলেন।
মেরী হলঘরে এলে, সেই সময়েই সদরে ঘণ্টা বেজে উঠল। এই শব্দটার জন্যই যেন তিনি উৎসুক হয়েছিলেন। ভাবলেন, নিশ্চয় গৃহত্যাগী ছেলেকে দেখতে পাবেন।
দরজা খুলতেই চোখে পড়ল, মুখে স্মিত হাসি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আগন্তুক।
–মিঃ ল্যান্স ফর্টেস্কু?
–বিলক্ষণ।
মেরী পাশে তাকিয়ে দেখলেন। বললেন, আপনি একা? মালপত্র
হাতের জিপ লাগানো ব্যাগটা দেখিয়ে বললেন ল্যান্স এই আমার সব, ট্যাক্সির ভাড়া মিটিয়ে দিয়েছি।
-আপনার স্ত্রী আসেননি?
–তিনি আপাতত আসছেন না।
বুঝেছি। আসুন আমার সঙ্গে। সকলেই লাইব্রেরী ঘরে আছেন।
সুদর্শন ল্যান্সকে কাছে থেকে দেখলেন মেরী। তারপর তাকে লাইব্রেরীতে পৌঁছে দিলেন।
.
ইলেইন ছুটে এসে জড়িয়ে ধরলেন ল্যান্সকে। অনেকদিন পরে গৃহত্যাগী ভাইকে দেখে তিনি যেন স্কুলের মেয়ের মতো হয়ে গেলেন।
ল্যান্স অবাক হল। নিজেকে ছাড়িয়ে নিল।
–উনি জেনিফার?
জেনিফার ফর্টেস্কু তাকালেন। তার চোখে আগ্রহের দৃষ্টি। বললেন, ভ্যাল, শহরে কাজে আটকে গেছে। সবই তো ওকে একা সামাল দিতে হচ্ছে। কী যে যাচ্ছে আমাদের ওপর দিয়ে।
সোফায় বসে অ্যাডেল, হাতে একটা কেক, তাকিয়ে দেখছিলেন ল্যান্সকে।
-অ্যাডেলকে তুমি চেনো নিশ্চয়ই, তাই না? বললেন জেনিফার।
–হ্যাঁ…চিনি বইকি। মৃদু হেসে বললেন ল্যান্স, এগিয়ে এসে অ্যাডেলের হাত নিজের হাতে তুলে নিলেন।
–আমার পাশে সোফায় বসে ল্যান্স। বললেন অ্যাডেল। তারপর এক কাপ চা ঢেলে এগিয়ে দিলেন।
-তুমি আসাতে খুশি হয়েছি। বাড়িতে আর একজন পুরুষের উপস্থিতির অভাব আমরা বোধ করছিলাম। বাড়িতে পুলিস এসেছিল, জান নিশ্চয়ই। ওরা ভাবছে–
গলা ভারী হয় এলো অ্যাডেলের, মৃদু স্বরে উচ্চারণ করলেন, বড় ভয়ঙ্কর…
-আমি সবই জানি, সহানুভূতির স্বরে বললেন ল্যান্স, আমার সঙ্গে ওরা লণ্ডন এয়ারপোর্টে দেখা করেছিল।
পুলিস তোমাকে কি বলেছে?
–যা ঘটেছে, সবই বলেছে।
–তাকে বিষ খাওয়ানো হয়েছে, নিশ্চয় এরকম বলেছে? আমাদের মধ্যেই যে কেউ বিষপ্রয়োগ করেছে, একথাই ওরা ভাবছে।
ল্যান্স শুষ্ক হাসি হাসল। তার চোখে শীতল দৃষ্টি।
যাই ভেবে থাকুক, সবই প্রমাণ করার বিষয়। ওরা ওদের কাজ করুক। এনিয়ে আমাদের ভাববার কিছু নেই।…অনেক দিন পরে মনে হচ্ছে সত্যিকার চা মুখে তুললাম–চমৎকার চা।
-তোমার স্ত্রী? তাকে আনলে ভালো হতো।
–প্যাট…প্যাট লণ্ডনেই আছে…অবস্থা বুঝে পরে…আঃ কেক দেখে লোভ হচ্ছে… ল্যান্স একখণ্ড কেক কেটে মুখে তুলল।
–আমাদের এফি মাসি? এখনো বেঁচে আছেন তো? বললেন ল্যান্স।
–ও হ্যাঁ, তিনি ভালই আছেন। তিনি নিচে আসতে চান না বড় একটা…কেমন যেন হয়ে পড়েছেন।
-তার সঙ্গে একবার দেখা করতে হবে। আচ্ছা, আমাকে যিনি ঢুকতে দিলেন সেই গম্ভীরমুখ মহিলাটি কে?
নিশ্চয় মেরী ডাভ হবে। আমাদের বাটলার-ক্রাম্প তো আজ ছুটি নিয়েছে। মেরী আমাদের বাড়ি দেখাশোনা করে। খুবই কাজের মেয়ে।
-ওহ, তাই বুঝি। আমারও মনে হল খুব বুদ্ধিমতী।
–তাহলে অচল পেনির মতো তুই আবার ফিরে এলি? মিস র্যামসবটম বললেন ল্যান্সকে।
–হ্যাঁ, এলাম এফি মাসি। ল্যান্স হাসল।
সময়টা ভালই বেছে নিয়েছিস। বাড়িতে পুলিস, গতকাল তোর বাবা খুন হয়েছে। আমি জানালা দিয়ে দেখছি, ওরা সব জায়গা খুঁজে বেড়াচ্ছে। তোর বউকে এনেছিস?