–আমি তোমার সঙ্গেই থাকতে চাই ল্যান্স।
–অবুঝ হয়ো না প্যাট, ইউট্রি লজে আমার অভ্যর্থনাটা কেমন হবে আমি কিছুই জানি না। বাবার মৃত্যুর পরে পার্সি বা অ্যাডেল যে কেউ একজনের দখলে এসেছে বাড়িটা–এই অবস্থায় তোমাকে নিয়ে যাওয়ার আগে আমাকে অবস্থাটা বুঝে আসতে দাও। প্যাট, বিষপ্রয়োগের ঘটনা পর্যন্ত ওই বাড়িতে ঘটছে–কোন রকম ঝুঁকি আমি নিতে চাই না।
১.২ অ্যাডেল ফর্টেস্কুর চিঠি
০৬.
অ্যাডেল ফর্টেস্কুর চিঠিটা টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ে ফেলেও নিশ্চিন্ত হতে পারলেন না মিঃ ডুবয়। দেশলাই ধরিয়ে টুকরোগুলো ছাই করে ফেললেন।
চিঠিটা পাবার পর খুবই চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন তিনি। মেয়েরা এরকম বোকামির কাজই বরাবর করে থাকে। এটা তার অতীতের অভিজ্ঞতা। তাই এবারে যথেষ্ট সাবধানতা অবলম্বন করতে চাইছেন।
বাড়িতে জানিয়ে রেখেছেন, মিসেস ফর্টেষ্ণু টেলিফোন করলে উনি বাইরে গেছেন যেন জানিয়ে দেওয়া হয়।
ইতিমধ্যে তিনবার টেলিফোন করেছেন অ্যাডেল ফর্টেস্কু। তারপর এই চিঠি। চিঠির ব্যাপারটাও বন্ধ করা দরকার। এটা খুবই ঝুঁকির কাজ।
মিসেস ফর্টেস্কুর সঙ্গে কথা বলার জন্য উঠে গিয়ে টেলিফোন তুললেন মিঃ ডুবয়।
ওপাশ থেকে অ্যাডেলের গলাই শুনতে পেলেন তিনি।
–ভিভিয়ান, শেষ পর্যন্ত এলে?
–হ্যাঁ, অ্যাডেল। কথা বলা দরকার। কাছে ধারে কেউ নেই তো?
–না, আমি লাইব্রেরী থেকে বলছি।
–অ্যাডেল, আমাদের অনেক সতর্ক থাকতে হবে।
–নিশ্চয়, প্রিয় ভিভিয়ান।
–উঁহু, টেলিফোনে আর প্রিয় বলবে না–এটা নিরাপদ নয়। মনে রেখো তোমরা–এবং আমিও এখন পুলিসের নজরে রয়েছি।
-হ্যাঁ, তা জানি। কিন্তু তুমি একটু বেশি ভয় পাচ্ছ ভিভিয়ান।
–হ্যাঁ-হ্যাঁ…সাবধান হতে চাই। শোন এখন আমাকে চিঠি টেলিফোন সব বন্ধ রাখো।
–কিন্তু ভিভিয়ান…
–আমাদের সতর্ক থাকতে হবে অ্যাডেল। এটা কেবল সাময়িক ব্যবস্থা
–ঠিক আছে, ওহ
–আর শোন, অ্যাডেল, আমার লেখা চিঠিগুলো—হ্যাঁ
, বলেছি তো পুড়িয়ে ফেলব।
–শিগগিরই কাজটা করবে। ঠিক আছে, খেয়াল রেখো চিঠি লিখবে না…টেলিফোন করবে ….যথাসময়েই আমার কাছ থেকে খবর পাবে।
রিসিভার নামিয়ে রেখেও নিশ্চিন্ত হতে পারলেন না মিঃ ডুবয়। অ্যাডেলকে লেখা তার চিঠিগুলোর জন্য খুবই দুর্ভাবনা হচ্ছে।
সব মেয়ের চরিত্রই একরকম। ব্যক্তিগত চিঠি তারা সহজে নষ্ট করতে চায় না। অথচ নিজেরা চিঠি লিখতে পারলেই বেশি খুশি হয়।
তাঁর লেখা চিঠিগুলোতে কি লিখেছিলেন এই মুহূর্তে ঠিক ঠিক মনে করতে পারছিলেন না তিনি। তবে পুলিশের পক্ষে অসম্ভব নয়, কোন শব্দের কদৰ্থ বার করা। নিরীহ বয়ানের চিঠিও তারা ভয়াবহ করে তুলতে পারে।
ক্রমেই অস্বস্তি বেড়ে চলল। অ্যাডেল যদি চিঠিগুলি পুড়িয়ে না থাকে? যদি সেগুলো পুলিসের হাতে গিয়ে পড়ে? নাঃ অসম্ভব!
মিঃ ডুবয় অস্থির ভাবে উঠে দাঁড়ালেন। ভাবতে চেষ্টা করলেন, অ্যাডেল চিঠিগুলো কোথায় রাখতে পারে?…ওপরের বসার ঘরের ডেস্ক…সেকেলে এই ডেস্কে গোপন ড্রয়ার আছে বলেছিল অ্যাডেল। গোপন ড্রয়ার…পুলিসের চোখ এড়াবার জন্য নিশ্চয় তার মধ্যেই গোপন চিঠিগুলো রাখবে সে…নিশ্চয় তাই।
বিষ কোথা থেকে এলো পুলিস তাই খোঁজ করছে। প্রতিটি ঘর নিশ্চয় এখনো দেখেনি। এখনো সময় আছে…হা…দেরি হবার আগেই কাজটা করে ফেলতে হবে…
পরিকল্পনা ছকতে গিয়ে মনে মনে বাড়ির গঠনটা ভাবতে চেষ্টা করলেন ডুবয়।
বেলা শেষ হয়ে আসছে। একটু পরেই অন্ধকার থেমে আসবে…সেই সুযোগেই সকলের অগোচরে কাজটা হাসিল করতে হবে।
এই সময় চায়ের জন্য সকলেই নিচে থাকবে। হয় লাইব্রেরীতে বা বসার ঘরে। চাকরবাকররাও নিজেদের ঘরে চা পানে ব্যস্ত থাকবে।
এটাই মোক্ষম সুযোগ। দোতলায় কেউ থাকবে না..ইউ ঝোপের মধ্য দিয়ে গেলে সকলের চোখের আড়ালে থাকা যাবে।…বারান্দার শেষে একটা দরজা…ওতে তালা থাকে না…স্বচ্ছন্দে দোতলায় উঠে যাওয়া যাবে।
পরিকল্পনা সতর্কভাবে মনে মনে যাচাই করে নিলেন মিঃ ডুবয়। মিঃ ফর্টেস্কুর মৃত্যুটা স্বাভাবিক হলে এসব কিছুই দরকার হত না। কিন্তু এখন বাড়ির চারপাশে বিপদ…তার থেকে নিজেকে দূরে রাখাই নিরাপদ।
.
সিঁড়ি দিয়ে নামার মুখেই বড় জানালা দিয়ে বাইরে চোখ পড়ল মেরী ডাভের। আবছা অন্ধকার নেমেছে বাগানে। কে একজন যেন হঠাৎ ইউ ঝোপের পাশ দিয়ে মিলিয়ে গেল। মূর্তিটিকে পুরুষ বলে চিনতে পারলেন।
চকিতে মিস ডাভের মনে হলো, তবে কি মিঃ ল্যান্সলট ফর্টেঙ্কু ফিরে এলেন? হয়তো গেটের কাছে গাড়ি রেখে বাগানে ঢুকেছেন। বাড়ি থেকে কেমন অভ্যর্থনা পাবেন সেটাই হয়তো দেখবার ইচ্ছা।
মিস ডাভের ঠোঁটে মৃদু হাসি খেলে গেল। তিনি দ্রুতপায়ে নিচে নেমে এলেন।
গ্ল্যাডিস টেলিফোনের কাছে দাঁড়িয়েছিল। মিস ডাভকে দেখে সে কেমন ঘাবড়ে গেল।
–এই মাত্র টেলিফোনের শব্দ শুনলাম গ্ল্যাডিস, কে করল?
–ভুল নম্বর ছিল মিস, লোকটা লন্ড্রী খোঁজ করছিল। তাড়াহুড়ো করে বলতে লাগল গ্ল্যাডিস, তার আগে মিঃ ডুবয় ফোন করেছিলেন। মাদামের সঙ্গে কথা বলতে চাইছিলেন।
-বুঝেছি। চায়ের সময় হয়ে গেছে অনেকক্ষণ…।
বলতে বলতে মেরী হলঘরে ঢুকলেন। সেখান থেকে লাইব্রেরীতে এলেন। অ্যাডেল ফর্টেস্কু একটা সোফায় চুল্লীর পাশে বসে আছেন।