ল্যান্সলট সাড়া দিলেন।
দয়া করে আমার সঙ্গে আসুন।
অন্য যাত্রীরা প্লেন থেকে নামার আগেই ল্যান্সলট আর প্যাট অফিসারটির সঙ্গে নেমে এলেন।
আশপাশে যাত্রীরা সন্দেহ আর কৌতূহলের দৃষ্টি নিয়ে তাদের দিকে তাকিয়ে রইলেন।
.
–এমন একটা উদ্ভট কাণ্ড আমি একেবারে মেনে নিতে পারছি না ইনসপেক্টর। অসম্ভব। ইনসপেক্টর নীলের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন ল্যান্সলট। পরে আবার বললেন, ট্যাকসিন ইউফল, আমাদের পরিবারে এসব বিষ প্রয়োগ হবে–নাঃ নাঃ–
-তাহলে বলছেন আপনার কোন ধারণা নেই, কে আপনার বাবাকে বিষপ্রয়োগ করতে পারে?
-না, ইনসপেক্টর, না। ব্যবসাসংক্রান্ত ব্যাপারে অনেকেই তার ওপরে চটা ছিল…যথেষ্ট শই তৈরি হয়েছিল। কিন্তু বিষ খাইয়ে হত্যা করবে…না…আমি বাইরেই থাকতাম…বাড়িতে কি চলছে, আমার জানার কথা নয়
ইনসপেক্টর নীল বললেন, আপনার ভাইয়ের কাছে শুনেছি, অনেক বছর আগে আপনার সঙ্গে মিঃ ফর্টেস্কুর মনোমালিন্য ঘটেছিল এবং তা বজায় ছিল। এই অবস্থায় আপনার বাড়ি ফিরে আসার ব্যাপারে কিছু বলতে পারেন?
–তাহলে আপনাকে খুলেই বলি ইনসপেক্টর। মাস দুয়েক আগে, আমার বিয়ের ঠিক পরেই, বাবার একটা চিঠি আমি পাই। তিনি আমাকে জানিয়েছিলেন, অতীতকে নতুন করে আর ভাবতে চান না তিনি। আমি ইচ্ছে করলে বাড়ি ফিরে এসে ব্যবসাতে যোগ দিতে পারি।
তার এই প্রস্তাবের পরে আমি ইংলন্ডে ফিরে আসা স্থির করে ফেলি।
মাস তিনেক আগে, গত অগাস্টে, ইউট্টি লজে এসে বাবার সঙ্গে আমি দেখা করি। সেই সময়ে তিনি চমৎকার একটা প্রস্তাব আমাকে দেন।
–আমি তাকে জানাই স্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে ইংলণ্ডে ফিরে আসার দিন জানিয়ে দেব।
তারপর আমি দক্ষিণ আফ্রিকায় ফিরে যাই এবং প্যাটকে সব কথা বলি। আমাদের দুজনের কাছেই বাবার প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য মনে হয়। তারপরই আমরা ওখানকার কাজ কারবার গুটিয়ে ইংলণ্ডে চলে এলাম।
–আপনি ইংলণ্ডে ফিরে এসেছেন, এই খবরে আপনার ভাই আশ্চর্য হয়েছেন।
তির্যক দৃষ্টিতে নীল তাকালেন ল্যান্সলটের দিকে। তার দিকে চোখ তুলে হাসলেন ল্যান্স।
-আশ্চর্য হবারই কথা পার্সির। ও ছুটি কাটাতে নরওয়েতে গিয়েছিল, বাবা সেই সময়টাই বেছে নিয়েছিলেন। সব কিছু পার্সির অজান্তে করাই তার ইচ্ছে ছিল বলে আমি মনে করি।
পার্সি নিজেকে ভ্যাল বলতেই পছন্দ করে। তার সঙ্গে বাবার দারুণ বচসা হয়। সে বাবাকে কোন ঝামেলায় জড়াতে চেয়েছিল বলেই আমার ধারণা। ঠিক কি নিয়ে গণ্ডগোলটা তা অবশ্য আমি বলতে পারব না। তবে এটা বুঝেছিলাম, তিনি তার ওপরে প্রচণ্ড চটে গিয়েছিলেন। আমার ধারণা, বাবা বুঝতে পেরেছিলেন আমাকে ফিরিয়ে আনতে পারলে পার্সিকে রুখে দিতে পারবেন।
আপনি কতদূর কি জেনেছেন, আমি জানি না ইনসপেক্টর। আমাদের পরিবারের সকলেই জানে বাবা পার্সির স্ত্রীকে বিশেষ সুনজরে দেখতেন না। যদিও আমার বিয়েতে মনে মনে খুশি হয়েছিলেন। আমাকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনার সেটাও একটা কারণ বলে আমি মনে করি।
–গত অগাস্টে আপনি ইউট্রি লজে এসেছিলেন বললেন, ওই সময়ে কতদিন ছিলেন?
–ঘন্টা দুয়েকের বেশি নয়। চাকরবাকররাও সম্ভবত একথা জানতে পারেনি। তিনি জানিয়েছিলেন, তার প্রস্তাবটা নিয়ে প্যাটের সঙ্গে আলোচনা করে আমার সিদ্ধান্তের কথা তাকে যেন লিখে জানিয়ে দিই। আমি তার কথামতোই কাজ করি। আমি এখানে আসার আনুমানিক দিন ও সময় লিখে জানিয়ে দিই। গতকালই একটা টেলিগ্রাম করেছি।
-হ্যাঁ, সেটা আমি দেখেছি, মাথা নেড়ে সায় দিলেন নীল, সেটা দেখে আপনার ভাই খুবই আশ্চর্য হয়ে যান।
-তা হওয়াই স্বাভাবিক। দীর্ঘশ্বাস মোচন করে পার্সিভাল বললেন, এবারেও ভাগ্য পার্সিকে জিতিয়ে দিল–আমার আসতে দেরি হয়ে যায়।
–গত অগাস্টে পরিবারের কারোর সঙ্গেই কি আপনার দেখা হয়নি?
–হয়েছিল। আমার সম্মা চায়ে উপস্থিত ছিলেন।
–আপনার সঙ্গে কি তার আগেই পরিচয় হয়েছিল?
-না। হেসে উঠে বললেন ল্যান্সলট, বুড়োর চেয়ে অন্তত ত্রিশ বছরের ছোট আমার সৎমা।
–প্রশ্নটার জন্য আমাকে মার্জনা করবেন মিঃ ল্যান্সলট, আপনার বাবার দ্বিতীয়বার বিয়েতে আপনি বা আপনার ভাই কি সন্তুষ্ট হয়েছিলেন?
–অসন্তুষ্ট কিনা ঠিক জানি না, তবে আমি খুবই আশ্চর্য হয়ে যাই, পার্সিও তাই। আমাদের যখন দশ বারো বছর বয়স, সেই সময় আমাদের মা মারা যান। এতদিন পরে কেন বাবা বিয়ে করলেন, কেন আগে করেননি–এসব ভেবে আমরা খুবই অবাক হয়েছিলাম।
-বয়সের এরকম ব্যবধানে কাউকে বিয়ে করায় বেশ ঝুঁকি থেকে যায়, এটা অবশ্য ঠিকই। বললেন নীল।
–কথাটা নিশ্চয় আপনি পার্সির মুখ থেকে শুনে থাকবেন। কাউকে এরকম দোষারোপ করতে অভ্যস্ত। আমার সম্মাই বাবাকে বিষ খাইয়েছেন, আপনিও কি এরকম ভাবছেন নাকি, ইনসপেক্টর?
–এরকম কোন সিদ্ধান্তে আসার মতো পরিস্থিতি এখনো আসেনি মিঃ ল্যান্সলট। আর একটা কথা, এখন আপনার পরিকল্পনা কি, জানতে পারি?
কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থেকে ভাবলেন ল্যান্সলট। পরে বললেন, নতুন করে ভাববার দরকার হয়ে পড়েছে। বাড়ির সবাই কি ইউট্রি লজেই রয়েছে?
–হ্যাঁ।
–তাহলে আমার সেখানেই এখন যাওয়া ভাল। আর তুমি, স্ত্রীর দিকে তাকালেন ল্যান্সলট, বরং সাময়িক ভাবে একটা হোটেলেই যাও প্যাট।