- বইয়ের নামঃ এ পকেট ফুল অফ রাই
- লেখকের নামঃ আগাথা ক্রিস্টি
- প্রকাশনাঃ আকাশ
- বিভাগসমূহঃ অনুবাদ বই, রোমাঞ্চকর, রহস্য, গোয়েন্দা কাহিনী
এ পকেট ফুল অফ রাই
১.১ কনসোলিডেটেড ইনভেস্টমেন্ট ট্রাস্ট অফিসে
এ পকেট ফুল অফ রাই (১৯৫৩) / আগাথা ক্রিস্টি / অনুবাদ : নচিকেতা ঘোষ
প্রথম পর্ব
০১.
কনসোলিডেটেড ইনভেস্টমেন্ট ট্রাস্ট অফিসে এই সময় চা তৈরির পালা এক এক জনের। আজ নতুন টাইপিস্ট মিস সোমার্স চা তৈরি করে সকলকে দিল।
অফিসের কর্তা মিঃ রেক্স ফর্টেস্কুর ব্যক্তিগত সেক্রেটারি মিস গ্রসভেনর। তিনিই বিশেষ চা’টা তৈরি করে মিঃ ফর্টেস্কুর কামরায় ঢুকলেন।
স্বর্ণকেশ এই সুন্দরী মহিলার চলা বলা সমস্ত কিছুই আকর্ষণীয়। বেশবাস ও প্রসাধনে সে নিজেকে আরও মোহনীয় করে তুলবার চেষ্টা করে।
অফিসে এ নিয়ে অনেকেই কানাঘুষা করে। তবে তা ঠিক নয়। মিঃ ফর্টেঙ্কু সম্প্রতি দ্বিতীয়বার বিয়ে করেছেন। তার স্ত্রীটিও যথেষ্ট সুন্দরী। কাজেই অফিসের কোন সুন্দরীর দিকে তার নজর পড়বার কথা নয়।
রাজহংসীর ভঙ্গিতে চায়ের ট্রে হাতে মিস গ্রসভেনর কামরায় ঢুকে কর্তার টেবিলে নামিয়ে রাখলেন। মিষ্টি স্বরে বললেন, আপনার চা মিঃ ফর্টেস্কু।
বেলা এগারোটা দশ মিনিট। খানিকক্ষণ আগে চা দেওয়া হয়েছে।
সহসা মিস গ্রসভেনরের টেবিলের কলিংবেল তীব্রস্বরে বেজে উঠল।
জরুরী ডাকের ইঙ্গিত পেয়ে চেয়ার থেকে ছিটকে উঠে দাঁড়ালেন মিস গ্রসভেনর। ধীর ছন্দে মিঃ ফর্টেস্কুর কামরার সামনে এসে তিনি টোকা দিয়ে ভেতরে ঢুকলেন।
মুহূর্তে যেন এক তীব্র ধাক্কা খেলেন তিনি। যে দৃশ্য চোখের সামনে দেখলেন তা তার কাছে অবিশ্বাস্য ঠেকল।
মিঃ ফর্টেস্কু ডেস্কের পেছনে প্রচণ্ড যন্ত্রণায় ছটফট করছেন। শরীর জুড়ে ভয় জাগানো আক্ষেপ।
–ওহ্ মিঃ ফর্টেস্কু..আপনি কি অসুস্থ
কোনরকমে বলবার চেষ্টা করলেন মিস গ্রসভেনর। থমকে দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন, ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলেন কিন্তু তাঁর পৌঁছবার আগেই মিঃ ফর্টেস্কুর দেহ যন্ত্রণায় প্রায় ধনুকের মতো বেঁকে গেল।
–ওই চা–কি দিয়েছ–একজন ডাক্তার
যন্ত্রণাকাতর শব্দ কয়টি অনেক কষ্টে উচ্চারণ করলেন তিনি।
মিস গ্রসভেনর সন্ত্রস্ত কপোতর মতো ঘর থেকে ছুটে বেরিয়ে টাইপিস্টদের ঘরে ঢুকলেন। চিৎকার করে বললেন, মিঃ ফর্টেঙ্কু বোধহয় মরতে চলেছেন…অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছেন…এখুনি একজন ডাক্তার ডাকতে হবে…তার অবস্থা সংকটজনক।
মুহূর্তে সমস্ত অফিসে তোলপাড় শুরু হল।
ষোল বছরের পুরনো কর্মী, অফিসের প্রধান টাইপিস্ট মিস গ্রিফিথ অফিসের ছোকরা বয়কে একজন ডাক্তার ডেকে আনতে পাঠিয়ে দিলেন।
অপর একজন, মিঃ ফর্টেস্কুর ব্যক্তিগত ঠিকানা লেখা বই খুঁজতে শুরু করলেন। তাতে খুঁজে পাওয়া গেল হার্লে স্ট্রীটের স্যর এডউইন স্যাণ্ডেম্যালের ঠিকানা।
মিস গ্রসভেনর ততক্ষণে একটা চেয়ারে এলিয়ে পড়েছেন। কাতর স্বরে বলছেন, রোজকার মতোই চা বানিয়েছিলাম…ওতে তো কোন গোলমাল থাকতে পারে না–
মিস গ্রিফিথ ডাক্তারকে টেলিফোন করছিলেন। রিসিভার হাতে নিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, একথা বলছ কেন?
–মিঃ ফর্টেঙ্কু বললেন,…চায়ের মধ্যে ছিল….
কিছুক্ষণের মধ্যেই অফিসের ছোকরা বয়ের চেষ্টায় আর মিস গ্রিফিথের টেলিফোনে দুজন ডাক্তার আর দুটো আলাদা অ্যাম্বুলেন্স এসে দাঁড়াল অফিসের সামনে।
মিঃ ফর্টেস্কুকে সেন্ট জিউড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।
ডঃ আইজ্যাক্স বেথনাল গ্রিন আর হার্লে স্ট্রীটের স্যর এডুইন স্যাণ্ডেম্যাল মিঃ ফর্টেস্কুর আকস্মিক অসুস্থতাকে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক বলে মনে করেননি।
ইনসপেক্টর নীল ইতিমধ্যে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে নিয়মমাফিক তদন্তের কাজ শুরু করেছিলেন।
তিনি মিস গ্রসভেনরের কাছ থেকে সকালে মিঃ ফর্টেস্কুর চা পর্বের সমস্ত বর্ণনা শুনে নিয়েছেন।
আনুপূর্বিক ঘটনার বর্ণনা মিস গ্রিফিথের কাছ থেকেও শুনেছেন আলাদা ভাবে।
অফিসের কাপ ডিস, চায়ের পাত্র ইত্যাদি সরঞ্জাম সংগ্রহ করে বিশ্লেষণের জন্য যথাস্থানে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
ইনসপেক্টর জানতে পারলেন এসব বাসনপত্র কেবল মিস আইরিন গ্রসভেনরই হাতে নিয়েছিলেন। কেবল কেটলিটা সকলের চায়ের জন্যই ব্যবহার করা হয়েছিল।
মিস গ্রসভেনরের সাক্ষ্য নেওয়া শেষ হলে সেন্ট জিউস হাসপাতাল থেকে ফোন এল। ধরলেন ইনসপেক্টর নীল।
ওপাশ থেকে আবেগবর্জিত গলায় শোনা গেল, পাঁচ মিনিট আগে মিঃ ফর্টেস্কু মারা গেছেন।
ইনসপেক্টর নীল নিজের হাতঘড়িটা দেখে নিয়ে ব্লটিং কাগজে লিখে রাখলেন বারোটা তেতাল্লিশ।
সেন্ট জিউস হাসপাতালের ডঃ বার্নসডর্ফ বছর খানেক আগে একটি বিষপ্রয়োগের ঘটনায় ইনসপেক্টর নীলের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করেছিলেন। তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল।
ডঃ বার্নসডর্ফ স্বয়ং ইনসপেক্টর নীলের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বললেন।
–হ্যাল্লো নীল, বুড়ো শকুন, বিষের লাশ নিয়ে পড়েছ আবার?
–হ্যাল্লো ডাক্তার, আমাদের রোমী মারা গেছে শুনলাম।
–হ্যাঁ। আমাদের কিছুই করার ছিল না।
–মৃত্যুর কারণ জানা গেছে?
–ময়না তদন্তের আগে কিছু বলা ঠিক হবে না। এটুকু বলতে পারি, স্বাভাবিক মৃত্যু নয়–কথাটা অবশ্য ব্যক্তিগত।
–নিশ্চয়ই…নিশ্চয়ই…তাহলে বলছেন বিষপ্রয়োগের ঘটনা?