লুইজি বিস্মিত হল। তাকে থামিয়ে লিউইস দরজার দিকে পা বাড়ালেন। ম্যাডরিক বেলভার সবাই সঙ্গে সঙ্গে গেল।
মারপল লুইজিকে একটা চেয়ারে বসিয়ে দিল। সে যেন কিছুতেই কথাটা বিশ্বাস করতে পারছে না। মুখচোখ বিহ্বল।
ওয়ালটার রিভলবার হাতে এডগারের দিকে সন্দেহের চোখে তাকালো।
কিন্তু লুইজি তাকে মিথ্যে সন্দেহ করতে বারণ করল।
জিনা স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে।
আচমকা দরজা খুলে ঘরে যে প্রবেশ করল তাকে দেখে মিস মারপল চমকে উঠল। স্টিভেনের সঙ্গে চেহারার অসম্ভব মিল। ছেলেটির মুখে বুদ্ধি আর আত্মবিশ্বাস মাখা।
বোঝা গেল এর আসবার খবর সবার জানা। এতক্ষণ যা কাণ্ড ঘটেছে অ্যালেক্সকে মিলড্রেড এমনভাবে সেকথা বলতে শুরু করল মিস মারপলের সেটা ভালো লাগল না।
অ্যালেক্স প্রথমে এটা আত্মহত্যা বলে সন্দেহ প্রকাশ করল। মিস মারপলকে দেখে সে একটু অবাক হল।
এমন সময় বেলভার এসে জানালো সেরাকোল্ড সকলকে লাইব্রেরীতে বসতে অনুরোধ করছে। এতে পুলিসের পক্ষে সুবিধা হবে। সে লুইজিকে যেতে বারণ করল। লুইজি ক্রিস্টিয়ানকে একবার দেখতে চাইল। জলি বাধা দিলে সে শুনল না, মারপলকে ডেকে সঙ্গে নিয়ে দরজার দিকে এগোল।
দুজনে বারান্দায় বেরিয়ে ওক সুইটের দিকে হাঁটতে লাগল। এখানেই ক্রিস্টিয়ানকে থাকতে দেওয়া হয়েছিল। লুইজি দরজার সামনে দাঁড়াল। ডেস্কে টাইপরাইটারের সামনে বসে। চেয়ারের ওপর হেলে পড়েছে শরীরটা। উঁচু হাতল আছে বলে পড়েনি।
লিউইস ক্যারির কাছে এগিয়ে এলেন। লুইজি এটাকে আত্মহত্যা নয় খুন বলেই মনে করলো। ক্রিস্টিয়ানকে দেখে লুইজির মুখে বেদনার ছায়া নামল। আত্মার শান্তি কামনা করল।
লিউইসের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে লুইজি বেরিয়ে এল। মারপল একহাতে তাকে জড়িয়ে ধরল।
.
০৯.
ইনসপেক্টর ক্যারি তার দলকে নিয়ে পৌঁছলেন, বেলভার অভ্যর্থনা জানালো। নিজের পরিচয় দিয়ে বেলভার তাদের নিয়ে গেল।
পুলিস তার কাজ শুরু করল, ছবি তোলা হল। তারপর সব পরীক্ষা করে অ্যামবুলেন্স আনিয়ে দেহটা পাঠিয়ে দেওয়া হল। ইনসপেক্টর জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করলেন।
ইনসপেক্টর সকলকে দেখে নিয়ে বলতে শুরু করলেন, এই অবস্থায় তারা হয়তো সকলে খুব বিচলিত। আজ তাদের বেশিক্ষণ আটকাবেন না। মিঃ সেরাকোল্ডের কাছ থেকে তিনি অনেক কিছু জেনে নিলেন।
মিস বেলভার এডগার আর সেরাকোল্ডের ঘটনার কথা জানিয়ে বললো, সেরাকোল্ডের কথা মত ডঃ ম্যাডরিককে ডাকার পর কিছু দরকার আছে কিনা জানার জন্য ক্রিস্টিয়ানের ঘরের দরজায় ধাক্কা দিয়ে কোনো সাড়া না পেয়ে ঘরে ঢুকে দেখে সে মরে পড়ে আছে।
ইনসপেক্টর বাড়িতে ঢোকা বেরোনোর ব্যবস্থা কিরকম সে সম্বন্ধে বিশদ জানলেন। এখানকার প্রতিষ্ঠানের কথা দরজায় পাহারা থাকে কিনা সে সম্বন্ধে জানলেন, ক্রিস্টিয়ানের আসার কারণ কি এবং যার সঙ্গে দরকার তার সঙ্গে কথা না বলে ঘর থেকে চলে গেছেন শুনে একটু অবাক হলেন।
ঘটনার সময়টা নটা বেজে তেইশ মিনিট নাগাদ হবে। গুলির আওয়াজটা এডগারদের ঘর থেকে হয়নি একথা মনে করলেও বাড়িরই অন্য কোনো অংশ থেকে হয়েছে একথা কেউ সেই সময় বিশ্বাস করতে পারেনি– বেলভার জানালো, বাড়িতে একটা খুন আর একটা খুনের চেষ্টা দুটো একই সঙ্গে হচ্ছে একথা কেউ ভাবতেই পারেনি।
ইনসপেক্টর প্রশ্ন করলেন ঘরের কোনো জিনিস তারপর সরানো হয়েছে কিনা।
বেলভার একটু ভেবে নিয়ে উত্তর দিল। পরের বার সে টাইপরাইটারের ওপর কাগজটাকে দেখতে পায়নি।
ইনসপেক্টর জিজ্ঞাসা করলেন তারা আসবার আগে আর কে ঘরে ঢুকেছিল, উত্তরে বেলভার মিসেস সেরাকোল্ড ও মিস মারপলের নাম করলো।
মিস মারপলের সঙ্গে পরিচিত হবার পর ইনসপেক্টর বিনীত হয়ে সেদিনের সন্ধ্যার ঘটনার কথা জানতে চাইলেন। তারপর তারা একসঙ্গে মৃতদেহ দেখতে ঘরে ঢুকেছিলো সেকথা শুনলেন। ইনসপেক্টরের প্রশ্নের জবাবে মারপল জানাল সে টাইপরাইটারের ওপর কোনো কাগজ দেখতে পায়নি। এটা তাকে বিস্মিত করেছিল।
মারপলের সঙ্গে ক্রিস্টিয়ানের কি কথা হয়েছিল ক্যারি শুনলেন। ক্রিস্টিয়ানের সঙ্গে সেরাকোল্ডের কথাবার্তা হয়েছিল সে খবর মারপল ইনসপেক্টরকে দিলেন। জানলা দিয়ে তিনি পাখি দেখছিলেন। দু-একটা কথা কানে এসেছিল ইনসপেক্টর বরং সে সব কথা মিঃ সেরাকোল্ডকে জিজ্ঞাসা করলেই ভালো করবেন।
এছাড়া আর কিছু অদ্ভুত ঘটনা মারপলের চোখে পড়েছে কিনা ক্যারি জানতে চাইলে মারপল জবাব দিল, সন্ধ্যেবেলার সব ঘটনাই অদ্ভুত। মারপলের হঠাৎ মনে পড়ে যেতে সে বললো মিঃ সেরাকোল্ড আজ সন্ধ্যায় তার স্ত্রীকে ওষুধ খেতে দেননি।
বেলভার বিরক্ত হয়েছিল। মারপল চলে যাবার পর সার্জেন্ট লেক তার প্রশংসা না করে পারল না।
.
১০.
লিউইস সেরাকোল্ড ঘরে প্রবেশ করতেই সবার দৃষ্টি তার ওপর পড়ল। ক্লান্ত ও বিষণ্ণ পায়ে তিনি এগিয়ে এসে চেয়ারে বসলেন। লিউইসের নিকট আত্মীয় নয় গুলব্রাজেন। তাই তাঁর এতখানি বিষণ্ণতা ক্যারিকে একটু বিস্মিত করেছিল।
ইনসপেক্টর তাকে প্রশ্ন করলেন ক্রিস্টিয়ানের আসা সম্বন্ধে তিনি কি একেবারেই কিছু জানতেন না। ক্রিস্টিয়ানের আসবার কারণ জানতে চাইলেন।
একটু চুপ করে থেকে লিউইস বললেন, ক্রিস্টিয়ান বছরে দুবার মিটিং করতে আসত। মাত্র একমাস আগেই সে ঘুরে গেছে। তাই সে আসায় সবাই একটু অবাকই হয়েছিল।