মারপল অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল এসব কথা সে কার সম্বন্ধে বলছে।
এডগার বলল যে তার বাবাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করবে, বলতে বলতে পালিয়ে গেল। মারপল এসবের কোনো অর্থ বুঝতে পারল না।
সাড়ে ছটা নাগাদ লিউইস ফিরলেন তারপর ক্রিস্টিয়ানের সঙ্গে বারান্দায় পায়চারী করতে করতে কথা বলতে লাগলেন।
মিস মারপল দূরবীনে চোখ রাখলেন। দুটো চিন্তাচ্ছন্ন মুখচ্ছবি ভেসে উঠল।
ওদের টুকরো কথাবার্তা যেটুকু কানে এল তাতে মারপল বুঝতে পারলেন লুইজির কাছ থেকে ওরা কোনো ব্যাপার গোপন করতে চাইছে। রুথ যে ভুল বলেনি মারপল সেটা বুঝতে পারল। স্টোনিগেটসে যে বিপদ ঘনিয়ে উঠেছে তার ধাক্কা লুইজির গায়ে এবার লাগবে।
নৈশাহার তেমন জমল না। সবাই কেমন চুপচাপ। খাওয়া শেষ করেই ক্রিস্টিয়ান নিজের ঘরে চলে গেল।
অন্যেরাও যে যার কাজে ব্যস্ত হল। বই পড়বার জন্য ওয়ালার একটা টেবিল ল্যাম্পের বোতাম টিপতেই হলঘরের অর্ধেক আলো নিভে গেল।
সে বিরক্ত হয়ে উঠে গিয়ে সারানোর ব্যবস্থা করতে গেল।
বেলভারের হঠাৎ মনে হল লুইজি ওষুধ খায়নি। সে তাড়াতাড়ি ওষুধটা নিয়ে এল।
হঠাই লিউইস বলে উঠলেন ওষুধটা আজ আর তাকে খেতে হবে না, ওটা তার পক্ষে উপকারী নাও হতে পারে। তিনি গ্লাসটা নিয়ে পাশে রেখে দিলেন। বেলভার বেশ বিরক্ত হল।
হঠাৎ সামনের দরজাটা খুলে এডগার এসে প্রবেশ করল। তারপর চাপা আক্রোশ নিয়ে লিউইসের দিকে এগিয়ে এল।
লিউইস অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন তার কি হয়েছে।
এডগার ঝাঁঝের সঙ্গে বলল, সে তাকে এতদিন ঠকিয়েছে। তার শত্রুদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে।
লিউইস এডগারের হাত ধরে শান্ত হতে বললেন। তারপর তাকে অফিস ঘরে নিয়ে গেলেন। সশব্দে দরজা বন্ধ হল। বেলভার আর মারপল দুজনেই বুঝতে পারল এডগার লিউইসকে তালাবন্দী করল।
মিস বেলভার, মিলড্রেড এডগারের এই পাগলামীতে অত্যন্ত বিরক্ত হল। লুইজির প্রশ্রয়কেই মিলড্রেড এর জন্য দায়ী করল।
লুইজি তার সম্বন্ধে বললো ও সত্যিই খুব ভালো ছেলে।
এডগার এতক্ষণ যা ব্যবহার করেছে তারপরেও লুইজির এই মন্তব্য শুনে মারপল অবাক হল।
জিনা বলল সে লক্ষ্য করেছে এডগারের পকেটে কিছু একটা নাড়াচাড়া করছিল।
ওদিকে লিউইস আর এডগারের চেঁচামেচির শব্দ ভেসে আসছিল।
এডগার বলে যাচ্ছিল, সে জানে লিউইসই তার বাবা। তাকে বঞ্চিত করাই তার লক্ষ্য। তাকে সে ঘৃণা করে।
লিউইস ঠান্ডা গলায় কি যেন বলল। এডগারকে থামাতে গিয়ে উল্টো ফল হল, এডগার আরও বেশি চীৎকার করতে লাগল।
হঠাৎ সবার কানে এল লিউইস এডগারকে রিভলবার নামাতে বলছে।
জিনা ভয়ে চীৎকার করে উঠল।
লুইজি এরপরও বললো এটা এডগারের অভিনয় ছাড়া আর কিছু নয়। সে লিউইসকে ভালোবাসে।
এডগারের হাসির শব্দে মারপলের মনে হল সে সত্যিই পাগল হয়ে গেছে।
হঠাৎ বন্দুকের শব্দ। লুইজি বললো ওটা বাইরে থেকে এসেছে। ভয়ের কারণ নেই।
এডগার চীৎকার করে বললো সে লিউইসের এই নির্ভীক চোখ দুটোকে ভয় পায় না। সে তাকে আজ শেষ করবেই। বাবা হয়েও সে পরিচয় গোপন করেছে। আজ আর রেহাই নেই।
কিছু একটা করতে হবে বলতে বলতে মিস বেলভার ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
আবার গুলির শব্দ।
মিলড্রেড কেঁদে উঠল। ধপাস করে একটা শব্দ ভেসে এল।
রেস্টারিক দরজা খোলার জন্য চীৎকার করতে লাগল।
বেলভার একগোছা চাবি নিয়ে এল কোনটা দিয়ে তালা খোলা যায় দেখতে।
এমন সময় আলো জ্বলে উঠল। স্টিভেন তালা খুলতে চেষ্টা করল। ঘরে পাগলের কান্না।
ওয়ালটার এসব দেখে অবাক হল। মিলড্রেড তাকে জানালো ঐ পাগলটা মিঃ সেরাকোল্ডকে গুলি করেছে।
লুইজি তার এই কথা শুনে বিরক্ত হল। উঠে গিয়ে সে বন্ধ দরজার কাছে গিয়ে ধীরে ধীরে এডগারকে ডাকতে লাগল। এমন সময় দরজা খুলে গেল।
লিউইস স্বয়ং দরজা খুললেন। তাকে একটুও বিচলিত দেখালো না। সবাইকে চিন্তিত দেখে তিনি কোনো গুরুত্ব না দিয়েই ডঃ ম্যাডরিকের খোঁজ করতে লাগলেন।
বেলভার পুলিসে খবর দিতে হবে কিনা জানতে চাওয়াতে, ওসবের কোনো প্রয়োজন নেই বলে সেরাকোল্ড জানালেন।
সেইসময় এডগারকে দেখে মনে হল না ভয়ের কিছু আছে। সে বেশ অনুতাপের সুরেই ক্ষমা প্রার্থনা করল। তার কোনো ক্ষতি করার উদ্দেশ্য নেই বলেই জানাল। ওয়ালটার দেখে শুনে লিউইসকে বলল তিনি খুব অল্পের জন্যই বেঁচে গেছেন।
মিস মারপল এই সুযোগে এডগারকে জিজ্ঞেস করলো তার মাথায় কে ঢুকিয়েছে যে লিউইস তার বাবা।
এডগার একটু থতমত খেয়ে জানালো কেউ নয়।
ওয়ালটার তার বন্দুকটা দেখতে পেয়ে খুব চটে গেল।
সেরাকোল্ড বাধা দিয়ে ম্যাডরিককে বললেন এডগারকে পরীক্ষা করতে।
মিলড্রেড চীৎকার করে এডগারের ওপর তার রাগ প্রকাশ করছিল।
এডগার লিউইসের পা ধরে অনুরোধ করলে তাকে যেন পাগলা গারদে না পোরা হয়।
ডঃ ম্যাডরিক এডগারকে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য যেতে বললেন।
মিস বেলভার মুখচোখ কঠিন করে হলঘরে এসে ঢুকলো। তারপর জানালো সে পুলিসকে খবর দিয়েছে আসার জন্য।
শুনে লুইজি ধমকে উঠল।
এডগার আর্তনাদ করে উঠল। লিউইস বিরক্ত হল, তাকে বারণ করা সত্ত্বেও সে এই কাজ করেছে শুনে।
মিস বেলভার ঠান্ডা গলায় জবাব দিল পুলিস না ডেকে তার উপায় নেই। ক্রিস্টিয়ানকে কেউ গুলি করে মেরে রেখে গেছে।
.
০৮.
কথাটা বুঝতে সবাই খানিকটা সময় নিল।