মারপল এডগার লোমনের কথা তুলল। তাকে কিছুটা অস্বাভাবিক বলেই মনে হয়েছে একথাও জানাল। ডঃ ম্যাডরিক হেসে বললেন মানুষ মাত্রেই কিছুটা অস্বাভাবিক।
.
০৬.
দিনান্তে কিছুটা ক্লান্তি এল মারপলের। একটা বাড়িকে কেন্দ্র করে অনেক কিছু ঘটে চলেছে কিন্তু কোনো ধারণা স্পষ্ট হচ্ছে না। লোমনের মধ্যে অসঙ্গতি আছে ঠিকই কিন্তু লুইজির সঙ্গে তার কি সম্পর্ক বুঝতে পারছে না সে।
হঠাৎ মারপলের মনে হল ক্যারি লুইজি নামটা রুথ আর সে ছাড়া কেউ ব্যবহার করে না। স্বামীর কাছে ক্যারলিন, বেলভারের কাছে কারা, রেস্টারিওর কাছে মা, ওয়ালির কাছে মিসেস সেরাকোল্ড আর জিনার কাছে দিদা।
এই বিভিন্ন নাম দেওয়ার অর্থ কি? হতে পারে মারপলের মাথায় ঘুরতে লাগল।
পরদিন সকালে লুইজি মারপলকে চিন্তিত মুখে থাকতে দেখে তার কারণ জিজ্ঞেস করল।
মারপল সঙ্গে সঙ্গে বলল সে লুইজির কথাই ভাবছে। সে তার কাছ থেকে জানতে চাইল একটা সত্যি কথা–এখানে দুশ্চিন্তা করবার মত তার কিছু আছে কিনা।
লুইজি তার কথা শুনে বিস্মিত হল।
মারপল নানাভাবে কথাটা জানতে চাইল।
লুইজি অন্যমনস্ক হয়েই কিছুটা বলল, তার চিন্তা লিউইসকে নিয়ে সে বড্ড পরিশ্রম করে। স্টিভেনটার খেতে মনে থাকে না। জিনা বড় ছটফটে।
মারপল মিলড্রেডের কথা জানতে চাইল।
লুইজি জানাল, মিলড্রেড কখনোই হাসিখুশি থাকে না। পিপার একেবারে উল্টো স্বভাবের।
মারপল বলল, তার তো অসুখী হবার কারণ থাকতেও পারে।
লুইজি জবাব দিল, মেজাজ দেখানোর জন্য বেশির ভাগ মানুষেরই কারণের প্রয়োজন হয় না।
লুইজির সঙ্গে মারপল একমত হল। লুইজি জানাল বেলভারের জন্য কোনো বিষয়ে তার কোনো চিন্তা নেই। তার হাতে সব ভার দিয়ে সে একেবারে নিশ্চিন্ত। বেলভার তার জন্য সব কিছু করতে পারে। সে চায় লুইজি সবসময় দামী পোষাক পরিচ্ছদে নিজেকে সাজিয়ে রাখুক। লিউইসের কাজের ব্যাপারে তার কোনও উৎসাহ নেই।
এমন সময় মিসেস বেলভার এসে একটা টেলিগ্রাম লুইজির হাতে দিল, ক্রিস্টিয়ান গুলব্রাজেন আজ বিকেলে এসে পৌঁছবেন খবর পাঠিয়েছেন।
লুইজি শুনে একটু অবাক হল। তারপর বেলভারকে সব ব্যবস্থা করতে বলল।
লুইজি ক্রিস্টিয়ান সম্বন্ধে বলল, সে ওদের সৎ ছেলে। এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান আছে ও। এইসময়ই লিউইস এখানে নেই, ক্রিস্টিয়ান খুব ব্যস্ত মানুষ বলে এক রাতের বেশি থাকতেও পারবে না।
বিকেলে ক্রিস্টিয়ান এসে পৌঁছল। স্বাস্থ্যবান মানুষ। ধীরস্থির যুক্তিসম্পন্ন কথা বলে। লুইজি আর মিলড্রেডের সঙ্গে কুশল বিনিময় করল। ক্রিস্টিয়ান আর মিলড্রেডের মধ্যে চেহারার খুব মিল।
জিনা এখানে এখনো রয়েছে দেখে ক্রিস্টিয়ান কৌতুক করল। ওয়ালি তার কথার ধরনে বিরক্ত হল।
মারপল ক্রিস্টিয়ানের উচ্ছলতার চিন্তামগ্ন মনটাকে লক্ষ্য করল। তার সঙ্গেও ক্রিস্টিয়ানের আলাপ হল।
লিউইস কবে ফিরবেন জেনে নিয়ে ক্রিস্টিয়ান লুইজিকে বলল যে, তাকে লিউইসের সঙ্গে দেখা করেই যেতে হবে।
সবাই ধরে নিয়েছিল প্রতিষ্ঠানের কোনো কাজের ব্যাপারেই ক্রিস্টিয়ান এখানে এসেছে। মিস মারপলের চোখে কিন্তু অন্য একটা ব্যাপার নজরে পড়ল। সে লক্ষ্য করল ক্রিস্টিয়ান বারবার লুইজির দিকে তাকাচ্ছে, দৃষ্টিতে তীক্ষ্ণতা।
চা-পানের শেষে মারপল লাইব্রেরীতে এসে বসল। তাকে অবাক করে দিয়ে ক্রিস্টিয়ান এসে তার কাছে বসল। তারপর মারপলের সম্বন্ধে একটু জেনে নিয়ে তাকে প্রশ্ন করল লুইজিকে সে কেমন ভালোবাসে।
মারপল তাকে সত্যিই ভালোবাসে জানার পর বলতে লাগল, সবাই লুইজিকে খুব ভালোবাসে। কিন্তু সে জানে না পৃথিবীটা আসলে পাপে ভরা।
মারপল এসব শুনে বিস্মিত হল। ক্রিস্টিয়ান তাকে লুইজির শরীর সংক্রান্ত খবরগুলো বেশ সন্দেহের ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করল, ধারালো চোখে জেনে নিতে চাইল লুউজির সঙ্গে মিলড্রেড আর বেলভারের সম্পর্ক কেমন। জিনাকে নিয়েও সে কেমন যেন চিন্তিত। একমনে সে এমন কিছু অসংলগ্ন কথা বলে যেতে লাগল যা শুনে মারপলের মনে হল আসন্ন কোনো বিপদের গন্ধ সে যেন পেয়েছে তাই সে লুইজি সম্বন্ধে বেশ চিন্তিত।
এমন সময় মিস স্ট্রেট ঘরে এসে ক্রিস্টিয়ানকে এখানে থাকতে দেখে অবাক হল। ডঃ ম্যাডরিকের সঙ্গে কোনো দরকার আছে কিনা তিনি জানতে চেয়েছেন।
ক্রিস্টিয়ান জানালো যা কথা বলবার লিউইস আসবার পরই হবে। তারপর কি মনে হতে ক্রিস্টিয়ান ডঃ ম্যাডরিকের উদ্দেশে বেরিয়ে গেল।
ক্রিস্টিয়ানের হঠাৎ চলে যাওয়াতে মিলড্রেড অবাক হল। মারপলের সঙ্গে এতক্ষণ কি কথা বলছিল জানতে চাইল। মারপল বেশ সরলভাবে সব বলল, মিলড্রেড জানালো লুইজির শরীর ভালোই আছে তাকে নিয়ে চিন্তার কোনো কারণই নেই।
.
০৭.
পরদিন দুপুর অব্দি নির্বিঘ্নে কাটল। মারপল লক্ষ্য করল বিকেল বেলা বেলভারকে নিয়ে ক্রিস্টিয়ান বাগানের দিকে গেল। নিশ্চয়ই কোনো আলোচনা হবে। অথচ সেরাকোল্ডের সঙ্গে কাজের কথা বলতেই তো তার আসা।
বিকেল চারটে নাগাদ মারপল বাগানে বেড়াচ্ছিল। হঠাৎ চমকে দেখে একটা ঝোঁপের আড়াল থেকে এডগার বেরিয়ে এলো।
আপন মনে সে বিড়বিড় করছে চোখে উদ্ভ্রান্ত দৃষ্টি।
মারপল অবাক হয়ে তার কাছে এই অবস্থার কারণ জানতে চাইল।
হাঁটতে হাঁটতে এডগার জানাল, সে একটা ব্যাপার আবিষ্কার করেছে। তার গলা ধরে এল। যাকে সে বিশ্বাস করে এসেছে আজ সেই তার শত্রু। ওর পেছনে চর লাগিয়েছে। এর কারণ কি সে তাকে জিজ্ঞেস করবে।