ওয়াল্টার জানায় তার কথার কিছু ঠিক নেই। জিনাকে নাকি বলেছে রাশিয়ার রাজ সিং হাসনের উত্তরাধিকারী নাকি ওই। তার মতে এ বাড়ির সকলের মাথা খারাপ।
মারপল তাকে জিজ্ঞেস করে স্টোনিগেটসে কি তার থাকতে ভালো লাগছে না।
ওয়াল্টার এই পরিবেশটা ঠিক বুঝে উঠতে পারে না। এত বড়লোক হয়েও এরা কেন। এভাবে জীবনযাপন করে তার মাথায় ঢোকে না। ভালো চাকর বাকর নেই, জিনিসপত্র ভাঙা ছেঁড়া ফাটা তাই দিয়েই দিন চলছে। চারদিকে অপরিষ্কার। কারুর যেন কোনও হুঁশ নেই। টাকা পয়সার অভাব না থাকা সত্ত্বেও তালি দেওয়া নোংরা জামাকাপড় পড়ে।
ওয়াল্টারের হাতেও একেবারে পয়সা ছিল না। পরিশ্রম করে নিজের চেষ্টায় সে উন্নতি করেছে। জিনা আর ও দুজনকে পরস্পর পছন্দ করে বিয়ে করেছে। নিজেদের নিয়ে মেতে ছিল। মাঝখান থেকে বাদ সাধল জিনার একজন অহঙ্কারী কাকীমা। জিনা তার দিদিমার কাছে কদিনের জন্য ইংল্যাণ্ডে এল। সঙ্গে ওয়াল্টারও।
কিন্তু এখানে আসবার পর তাদের জোর করা হল বরাবরের জন্য থেকে যাওয়ার। এখানে নাকি অনেক কাজ আছে কারবার। কাজ বলতে সেই বিরক্তিকর বাচ্চাদের লজেন্স খাওয়ানো আর খেলানো। ওয়াল্টার এই একঘেঁয়ে কাজে কোনো আনন্দ পায় না। জিনাও কেমন যেন এখানে এসে পাল্টে গেছে। দুজনের মধ্যে যে ভালোবাসা ছিল তার মৃত্যু হয়েছে।
মিস মারপল ওর কথা বুঝলেন। মারপলের সঙ্গে ওয়াল্টার নিজের এক কাকীমার খুব মিল পেল। মনের মধ্যে অত কথা জমে ছিল, অনায়াসে বলে ফেলল। তারপর সুন্দর হেসে সে মারপলকে বললো, সে যেন কিছু মনে না করে তাকে এত কথা বলে ফেলল বলে। তাকে খুব ভলো লাগল মারপলের।
মিলড্রেড ওয়াল্টারকে পছন্দ করে না। তাকে এদিকে আসতে দেখে ওয়াল্টার উঠে পড়ল।
ওই লোকটা বড্ড বিরক্ত করে তাই না! বলতে বলতে হাঁপাতে হাঁপাতে স্ট্রেট এসে ঘরে ঢুকল। তারপর জিনার বিয়েটা যে কতখানি মর্মান্তিক সেকথা বলতে লাগল। আমেরিকায় পাঠানোর জন্যই জিনার এমন দুর্ঘটনা হল।
মারপল বলল, কিন্তু শত্রুদের ভয়েতেই তো এই কাজ করতে হয়েছিল। মিসেস স্ট্রেট কথাটা উড়িয়ে দিয়ে বলল, ওসব বাজে ভয়ের মানেই হয় না। মায়ের জন্যই আজ এই অবস্থা। এইসব উদ্ভট আদর্শের মধ্যেই স্ট্রেটকে বাস করতে হয়।
মারপল চিন্তিত মুখে তার দিকে তাকিয়ে বলল সে মনে করে, স্ট্রেটের ছোটবেলাটা বোধহয় খুব একটা সুখের হয়নি।
মিলড্রেড কৃতজ্ঞতা নিয়ে বলল, যাক একজন তাহলে বুঝেছে। তার পাশাপাশি সুন্দরী পিপাও বড় হয়ে উঠতে থাকায় তাকে যে খুব একটা ভালো থাকতে দেয়নি কেউ, এর জন্য ছেলেমেয়েরা যে কত কষ্ট সহ্য করে তা বলবার নয়। বোনের দিকেই সবার নজর ছিল। তার দিকে কেউ ফিরেও তাকাত না। অথচ পিপপার জন্মের কোনো ঠিকানা ছিল না। জিনাকে দেখলেই বোঝা যায় খারাপ রক্ত ওর মধ্যেও বয়ে চলেছে।
মারপল এই সময় জিনাকে যে তার পছন্দ হয়েছে সেকথা বুঝিয়ে দিল।
কিন্তু স্ট্রেট ভোলবার পাত্রী নয়। স্টিভেন রেস্টারিককে নিয়ে যা কাণ্ড করে চলেছে জিনা তাই নিয়ে বেশ ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকে। এত টাকাকড়ি থাকা সত্ত্বেও বাড়ির এই দশা কেন সে বুঝতে পারে না। সব মিলিয়ে তার মনে খুব অসন্তোষ। মিলড্রেডের বাবা এই বাড়িতে বাস করে গেছে বলে তারও অধিকার আছে এখানে থাকবার।
বেলভারের সম্বন্ধে মারপল জানতে চাইল।
মিলড্রেড বলল, তার মাকে ও খুব ভালোবাসে। ও অনেকদিন হল এখানে রয়েছে। মায়ের বিপদের সময় পাশে থেকে বেলভার অনেক সাহায্য করেছে। ওকে ছাড়া মার চলে না।
এমন সময় লিউইস এসে ঘরে ঢুকলেন। মিলড্রেডকে লক্ষ্যই করলেন না।
তিনি এসে মারপলের কাছে দুঃখপ্রকাশ করলেন, প্রতিষ্ঠানের কাজ দেখাতে না পারার জন্য। তাকে এখন লিভারপুল যেতে হবে। তবে ডঃ ম্যাডরিক একটু বাদে এসেই ঘোরাতে নিয়ে যাবে।
ইতিমধ্যে স্ট্রেট উঠে গেল, লিউইস খেয়ালও করলেন না।
মারপল এডগারের সম্বন্ধে লিউইসকে জিজ্ঞেস করল, তার স্বাভাবিকতা সম্বন্ধে জানতে চাইল। লিউইস বললেন, এডগার অবৈধ সন্তান। মা ভালো ঘরের মেয়ে, বাবা নাবিক, ছেলেবেলাটা তার ভালো কাটে না। নিজের সম্বন্ধে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে গল্প বানিয়ে লোককে বলে। ডঃ ম্যাডরিক ওকে দায়িত্বপূর্ণ কাজের ভার দিয়ে স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে নিয়ে আসতে চেষ্টা করছে। ওকে বোঝানো হচ্ছে জন্মটা বড় নয়, মানুষ নিজেকে কিভাবে গড়ে তুলছে সেটাই বড় কথা।
এডগার বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে কিনা মারপল জানতে চাইল। অর্থাৎ শত্রুরা ওকে নির্যাতন করে এসব কথা কি কোনও ইঙ্গিত বহন করছে!
লিউইস এই ব্যাপারটা খুব একটা ভয়ের বলে মনে করেন না।
মিঃ সেরাকোল্ড ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বিদায় নিলেন।
মিস বেলভার ঘরে ঢুকে বললো, কবে হয়তো একদিন লোকটা কাজ করতে করতে মুখ থুবড়ে পড়বে। কাজ পাগল মানুষ। স্ত্রীর কথাও একটু ভাবে না।
দুজনে বাগানের মধ্যে দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে একটা তোরণের কাছে এসে দাঁড়াল। গুলব্রাজেন এটা তৈরি করেন।
ডঃ ম্যাডরিক এলেন। তাকেও মিস মারপলের প্রকৃতস্থ বলে মনে হল না।
মিস মারপলকে ধন্যবাদ জানিয়ে একটু অসংলগ্ন ভাবেই বলে যেতে লাগলেন তাদের ভবিষ্যৎ উদ্যোগ, সেরাকোল্ড মানুষ হিসেবে কত মহৎ বর্তমান চিকিৎসা শাস্ত্রের সমস্যা ইত্যাদি। ছেলেদেরকে শাস্তি না দিয়ে তাদের মধ্যে আশার সঞ্চার করাই তার উদ্দেশ্য।