লুইজি মারপলের সঙ্গে তার আলাপ করিয়ে দিল। অন্যমনস্ক ভাবে পরিচয়টুকু সেরে ফেলে তিনি আবার পুরনো কথায় ফিরে এলেন। একটু পরে আবার কি মনে হতে অতিথির প্রতি মনোযোগ দিলেন।
মারপল যে নিমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন একথা জানিয়ে তিনি আনন্দ প্রকাশ করলেন। তাকে অনেক থাকতে অনুরোধ করলেন, তাতে লুইজির মন ভালো হবে জানালেন।
লিউইস হাতের অন্যান্য চিঠি নিয়ে লুইজির সঙ্গে আলোচনা করতে লাগলেন। মারপলের দিকে ফিরে বললেন, এইসব ছেলেরা টাকার গুরুত্ব কিছু জানে না। তাদের শেখাতে হবে টাকার প্রকৃত রহস্য, প্রয়োজনীয়তা।
এরপর চায়ের ডাক পড়ল। জেনের হাত ধরে লুইজি হলঘরের দিকে নিয়ে গেল। যেখানে পরিচয় হল লুইজির মেয়ে মিলড্রেডের সঙ্গে। মোটা চেহারার এই মিলড্রেডের, সাদামাটা পয়সাওয়ালা চেহারা।
লুইজি এরপর জিনার স্বামী ওয়ালিরসঙ্গে আলাপ করাল। অপ্রসন্ন মুখে সে কেক চিবোচ্ছে।
একটু বাদে জিনা আর স্টিভেন রেস্টারিক এল। লিউইসের পাশে এডগার লোমন এসে বসল। জিনা কথা বলতে গেলে এমন ভাব করল যেন শুনতেই পাচ্ছে না। মারপলের কাছে সবটা কেমন বিভ্রান্তিকর লাগল।
নৈশাহারের সময় আরও কয়েকজনের সঙ্গে মারপলের দেখা হল। অল্পবয়সী ডাক্তার ম্যাডরিক, দুজন শিক্ষক আর খুব শান্ত তিনটি ছাত্র। জিনা ফিসফিস করে বলল, এদের মধ্যে যার নীল চোখ সেই লাঠিমারায় ওস্তাদ।
খাবারদাবার পরিবেশনে অযত্নের ছাপ। খাওয়ার শেষে যে যার কাজে চলে গেল, লুইজি আর মারপল পুরনো দিনের গল্প করতে লাগলো। এরমধ্যে এডগার একটু অস্থিরতা নিয়ে স্টেশনের কথাটা তুলল। সে যে খুব আঘাত পেয়েছে তার কথাতেই তা স্পষ্ট। কিছুটা উত্তেজিত।
লুইজি তাকে ভালো করে বুঝিয়ে বলল, জিনা ওই রকমই মেয়ে। এডগার যে গিয়েছিল তার জন্য লুইজি কৃতজ্ঞ, জিনা অপমান করতে যায়নি। যদিও এডগারের ধারণা তাকে। অপমানের জন্যই জিনা স্টেশনে গিয়েছিল। এডগার রেগেমেগে চলে গেল। ওর এই ব্যবহারে মিলড্রেড খুব বিরক্ত হল।
রাত্রে ঘরে বসে মারপল স্টোনিগেটসের মানুষদের জীবনযাত্রা সম্বন্ধে ভাবতে লাগলো। এখনো সম্পূর্ণ রূপটা বুঝতে পারেনি। প্রত্যেকের মধ্যে ঘটনার সংঘাত সমস্যা রয়েছে। এ ওকে পছন্দ করে না ও তাকে পছন্দ করে না। চাপা অসন্তোষ।
পিপপার মৃত্যুর পর মিলড্রেড এই বাড়ির এক মেয়ে হল। লুইজি জিনাকে স্টোনিগেটস থেকে নিয়ে আসার পর মিলড্রেড আড়ালে পড়ে গেল। পাদরী স্ট্রেটের সঙ্গে বিয়ে হল মিলড্রেডের তাদের কোনো সন্তান হয়নি। এতদিন বাদে সে নিজের বাড়িতে ফিরে এসেছে। সত্যই সে সুখী কিনা বোঝা যায় না। লিউইসের নিজের কাজ ছাড়া অন্য দিকে মন নেই। অজানা কোনো স্রোতের কেন্দ্র বিন্দুতে লুইজি অবস্থান করছে। মারপলের মনেও একটা আশঙ্কা তৈরি হতে শুরু করল।
ঘুমিয়ে পড়ার আগে এডগারের মুখটা ভেসে উঠল চোখের সামনে। তার কোথাও যেন কোনো গণ্ডগোল রয়েছে। কিছুতেই যেন সে পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারছে না।
.
০৫.
পরদিন সকালে লুইজিকে না জানিয়ে মারপল বাগানের দিকে গেল। অবহেলার চিহ্ন সবজায়গায় ছড়িয়ে রয়েছে। শাকসজীর বাগানটাতেই একটু যা যত্ন করার ফলে অনেক সবজী হয়েছে। টেনিস খেলবার জায়গাটি বেশ পরিচ্ছন্ন। এমন সময় এডগার এসে মারপলকে দেখে কিছুটা বিস্মিত হল। মারপল তাড়াতাড়ি তাকে ডাকল। বাগান পরিষ্কার করার যন্ত্রপাতি কোথায় আছে সে দিতে পারবে কিনা মারপল তার কাছে জানতে চাইল। এডগারের সঙ্গে কথা বলতে বলতে তাকে মন দিয়ে মারপল লক্ষ্য করতে লাগল। সে এতই সাধারণ যে তাকে দ্বিতীয়বার মনে রাখবার প্রয়োজন হয় না।
মারপল তাকে জিজ্ঞেস করলো মিঃ সেরাকোল্ড তার ওপর নির্ভর করেন কিনা। হয়তো নিশ্চয় করেন।
এডগার অন্যমস্ক হয়ে বললো তার সত্যই সে ব্যাপারে জানা নেই।
এরপর মারপলের কাছে প্রতিজ্ঞা করিয়ে নিয়ে এডগার তার জীবনের কিছু গোপন কথা বলল। মারপলকে কথা দিতে হল সে কাউকে বলবে না। মিঃ সেরাকোন্ডই একমাত্র জানেন। বলে একটু হেসে সে জানালো, তার বাবা উইনস্টন চার্চিল।
মারপলের কাছে ব্যাপারটা অনেকখানি স্পষ্ট হয়ে গেল। এডগার বলে চলল তার কথা। তার মা স্বাধীন ছিলেন না, স্বামী পাগলা গারদে থাকায় বিবাহবিচ্ছেদের উপায় ছিল না। তাই ওদের দোষ দেওয়াও যায় না। এডগারের জন্য যতটা করবার তিনি করেছেন। যদিও খুব গোপন। আর এইখানেই যত গোলমাল।
কিছু শত্রু জুটে গেছে যারা তার বাবার কাছ থেকে তাকে দূরে থাকতে বাধ্য করেছে। তারা সবসময় তাকে নজরবন্দী করে রেখেছে। সে যা কিছু করে তাতেই তারা বাদ সাধে। লণ্ডনে ডাক্তারি পড়বার সময় ওর উত্তরপত্রের উত্তরগুলো তারা সব বদলে দেয় সে ফেল করে। নানাভাবে ওরা ওর জীবনটাকে গণ্ডগোলে ভরিয়ে তুলতে শুরু করে। এখানেও সে নিরাপদ নয়। সবাই ওকে অপছন্দ করে। মিঃ সেরাকোল্ড ছাড়া।
এসব খুব গোপনীয় কথা, বলতে বলতে এডগার উঠে পড়ে, চলে যায়।
মিস মারপলের মাথায় নানা চিন্তা ঘোরে। ওর জন্য কষ্ট হয়। হঠাৎ কে বলে ওঠে পাগল, একেবারে মাথা খারাপ।
ওয়াল্টার কখন এসে দাঁড়িয়েছে মারপল লক্ষ্য করেনি।
ওয়াল্টার বলে সে বিশ্বাস করে না, লর্ড মন্টগোমারি এডগারের বাবা।
মারপল তার সঙ্গে একমত হয়।