জেন বিস্মিত হয়। কিন্তু রুথ বলে, জেনই একমাত্র পারবে। সামনে মিষ্টি ব্যবহার দেখিয়ে অন্তনিহিত সমস্ত ঘটনা জানবার মত ক্ষমতা সে রাখে। গ্রাম্য শান্তিময় পরিবেশের মধ্যে থাকলেও বাস্তবের সঙ্গে সে খুব ভালো করে পরিচিত। মানুষের মুখোশের আড়ালে মুখটা তার চোখে সহজেই ধরা পড়ে। সেইজন্যই রুথ জেনকে স্টোনিগেটসে গিয়ে খোঁজ খবর নিতে বলে। এর জন্য প্রাথমিক কাজটুকুও রুথ করে রেখেছে।
মিসেস ভ্যান রাইডক একটা সিগারেট ধরিয়ে তার বক্তব্য মারপলকে বলতে লাগলো।
রুথ ধীরে ধীরে বলতে শুরু করলো, একথা অস্বীকার করা যায় না যে যুদ্ধের পর থেকে নির্দিষ্ট আয়ের মানুষের পক্ষে জীবন নির্বাহ করা কঠিন হয়েছে। জেনও তাদের মধ্যে একজন। জেন তার কথায় সম্মতি জানিয়ে বললো, ভাইপো রেমণ্ড যদি তাকে সাহায্য না করতো তবে দিন চালানো সত্যি দুষ্কর হত।
রুথ জেনকে থামিয়ে বলে যে ক্যারি লুইজি তার ভাইপোর সম্বন্ধে জানে না। লুইজিকে সে বলেছে, জেন খুবই অর্থকষ্টের মধ্যে দিন যাপন করছে। প্রখর আত্মসম্মানবোধের জন্য কারোর কাছে সাহয্যেও নেবে না। তাই যদি তাকে ডেকে কোনো বন্ধু একটু আরামে রাখার ব্যবস্থা করে– রুথ ভেবেছিল এইসব শুনলে হয়তো জেন রাগ করবে কিন্তু জেন অবাক হয়ে আনন্দের সঙ্গে বললো এইরকম বুদ্ধি করে রুথ এগিয়েছে যখন তখন নিশ্চয়ই লুইজি ফাঁদে পা দিয়েছে। রুথ বলে লুইজি জেনকে চিঠি লিখবে বলেছে।
জেন প্রয়োজনটা বুঝে যেতে রাজি হয়ে যায়! রুথ জানায় তার কিন্তু কোনো স্পষ্ট ধারণার ভিত নেই। মিস মারপলের মনে অনেক দিনের আগেকার একটা ঘটনা মনে পড়ল। একবার রবিবার গীর্জার প্রার্থনা করতে গিয়ে গ্রেসের জন্য খুব চিন্তা হতে লাগল। ভয়ঙ্কর কোনো বিপদ যেন ওত পেতে রয়েছে এমন মনে হতে লাগল। ঘটলও তাই। পরদিনই, গ্রেসের বাবার, নৌ-বিভাগের বড় কর্তা ছিলেন…. মাথায় কিছুটা গণ্ডগোল দেখা দিয়েছিল। হঠাৎই কয়লাভাঙ্গার হাতুরি দিয়ে লুইজিকে মারতে শুরু করে দিয়েছিলেন। সে ধর্মবিরোধী মেয়ে, তার মেয়ে নয় এই যাচ্ছেতাই কথা বলতে বলতে প্রায় আধমরা করে ফেলেছিলেন। অবশেষে ধরে বেঁধে তাকে পাগলা গারদে পাঠিয়ে দেওয়া হল। কয়েকমাস হাসপাতালে থেকে গ্রেস সুস্থ হয়ে বাড়ি এল।
রুথ তাকে বললো তাহলে সেদিন সে ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে আভাস পেয়েছিলো।
আসলে জেনের ধারণার পিছনে যুক্তি ছিল। গ্রেস নিয়ম কানুন জানা মেয়ে হয়েও সেদিন উল্টো টুপি পরে এসেছিল। তার এই অসচেতনতাই জেনকে বুঝিয়ে দিয়েছিল সে অন্যমনস্ক। কিছু একটা ঘটতে চলেছে। গ্রেস সেইদিন তার বাবার আচরণের মধ্যে কিছু বিসদৃশ্য ব্যাপার লক্ষ্য করেও এটা তার মেজাজ বলে উপেক্ষা করেছিলো।
রাইডক বন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধার দৃষ্টিতে তাকালো। সে ভেবেছিল সেন্ট মেরি মিড শান্ত সরল জায়গা। জেন তাকে বললো সব জায়গায় মানুষ সমান হয়। শহরে চট করে নজরে পড়ে না।
জেন স্টোনিগেটস্ যেতে রাজি হল। পরোক্ষভাবে রেমণ্ডের ওপর অবিচার করা হল ঐ কথা বলে তবে সে এখন মেক্সিকোয় গেছে ছমাসের জন্য। তার আগে সব ঠিক হয়ে যাবে। তারমধ্যেই জেন গোলমালটা ধরে ফেলতে পারবে এই বিশ্বাসটুকু রাখে।
.
০২.
মিস মারপল খুব হিসেবী মহিলা। সেন্ট মেরি মিডে ফিরে যাবার আগে কিছু প্রয়োজনীয় কথা জেনে নিলেন।
ক্যারি লুইজির সঙ্গে চিঠি আর কার্ডের মধ্যে দিয়ে কুশল বিনিময় ছাড়া বিশদভাবে কোনো যোগাযোগ তাদের মধ্যে নেই। সেইজন্য রুথের কাছ থেকে সংক্ষেপে কিছু খবর সে সংগ্রহ করতে চায়। যেমন স্টোনিগেটসের বাড়িতে কোন কোন লোকের সঙ্গে তার দেখা হবে।
রুথ বলে, গুলব্রাজেনকে বিয়ে করে লুইজির কোনো সন্তান ছিল না। গুলব্ৰাণ্ডজেনের আগের পক্ষের তিনটি বড় ছেলে ছিল। পরে ওরা একটি মেয়েকে দত্তক নেয়, নাম পিপা। তখন তার দু বছর বয়স। ভারী মিষ্টি দেখতে তাকে। রুথ সঠিক জানে না কোথা থেকে তাকে আনা হয়েছিল তবে সম্ভবত কোনো শিশু প্রতিষ্ঠান থেকে হবে। এর মধ্যে লুইজি বুঝল সে সন্তানসম্ভবা। কিন্তু যতটা আনন্দ পাবার কথা ততটা সে পেল না। বারবার নিজেকে অপরাধী মনে হতে লাগল। মনে হলো পিম্পাকে সে এবার তার প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করবে। মিলড্রেড একেবারে সাধারণ চেহারা নিয়ে জন্মাল। নিজের সন্তান আর পালিত কন্যা দুজনকে সমানভাবে গুরুত্ব দিতে চাইলেও পিপাই যেন অনেকখানি অধিকার করে থাকত। এতে হয় তো মিলড্রেড মনক্ষুণ্ণ হত। কুড়ি বছর বয়সে সুন্দরী পিপ্পা একজন ইতালিয়ানকে বিয়ে করল। গুলব্রাজেনের বাহু টাকা পিপ্পা পাবে জেনেই মারচিজ তাকে বিয়ে করল। মিলড্রেড বিয়ে করল স্ট্রেট নামে এক পাদরীকে। লোকটি তার থেকে বয়সে কিছু বড় হলেও ভালো ছিল। তারা সুখেই থাকত।
স্বামীর মৃত্যুর পর মিলড্রেড স্টোনিগেটসে তার মার কাছে ফিরে এল। পিপপার বিবাহিত জীবন সম্বন্ধেও লুইজি বেশ খুশি হয়েছিল। গিদো ছিল স্বাস্থ্য সৌন্দর্যে ভরপুর প্রাণবন্ত ছেলে। বছর কয়েক বাদে সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে পিপা মারা যায়। গিদো অত্যন্ত ভেঙে পড়ে। লুইজি অত্যন্ত আঘাত পায়। এরপর জনি রেস্টারিকের সঙ্গে লুইজির দেখা এবং বিয়ে হয়। গিদো আবার বিয়ে করে। তার বাচ্চা জিনা, ক্যারি লুইজি; জনি রেস্টারিক, জনির প্রথম স্ত্রী, দুই ছেলে অ্যালেক্সিস ও স্টিভেন সবাই এসে স্টোনিগেটেসে বাস করতে লাগল।