স্টিভেন রেস্টারিক ব্যস্ত হয়ে ঢুকল। অ্যালেক্সকে আর্নির কথা বলল। আনি জিনা যা দেখেছে বলেছে স্টিভেন সেকথা অ্যালক্সকে জানাল। অ্যালেক্স কৌতূহলী হল।
তারপর পরে ওকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে বলে স্টিভেন লাইব্রেরীর দিকে চলে গেল।
অ্যালেক্স মারপলের কথা ভুলেই গিয়েছিল। সে লাইব্রেরীতে চলে গেল। বন্ধ দরজার আড়াল থেকে কথা ভেসে এল। সে দিকে মারপল মন দিল না মনে হয়েছিল আর্নি বানিয়ে বানিয়ে বলেছে। কুয়াশার রাতে বাগানে বেড়ানোটা বিশ্বাস করা শক্ত হল।
মারপল একমনে অ্যালেক্সের কথাগুলো চিন্তা করতে লাগল। জজেট হাঁপাচ্ছে-নিঃশ্বাস ফেলছে ঘনঘন অন্য কেউ..অন্য কেউ হঠাৎ মারপলের কি মনে হতে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে গেল।
.
১৮.
আচমকা অন্ধকারের মধ্যে ওয়ালিকে দেখে জিনা চমকে উঠল। ওয়ালি তাকে খুঁজতে এসেছে। এখানে ছাড়া আর তো কোথাও তাকে পাওয়া যায় না।
জিনা বলল তাকে থিয়েটারের কাজ করতেই এখানে থাকতে হয়।
ওয়ালি জিনার কাছে জানতে চাইল এসব ঝামেলা শেষ হতে আর কতদিন লাগবে।
জিনা একটু ভেবে জানাল আর দিন পনের লাগবে।
শুনে ওয়ালি চিন্তিত হল। তারপর বলল তারপরেই আমেরিকা যাওয়া যাবে।
জিনা একথা শুনে যেতে রাজি হল না। থিয়েটার, দিদাকে ছেড়ে সে যেতে পারবে না।
ওয়ালি জানাল সে একা যাওয়ার কথা বলেছে।
জিনা অবাক হয়ে তার দিকে তাকাল। তার মানে ওর যাওয়া না যাওয়াটা ওয়ালির কাছে বড় নয়। জিনা খুব রেগে যেতে ওয়ালি একটা বোঝাঁপড়া করতে চাইল তার সঙ্গে। সে জিনাকে বলল বিয়ের আগে পারিবারিক অবস্থার খবর সে রাখেনি। কিন্তু এখন দেখছে এসব কাণ্ড কারখানা সহ্য করা তার পক্ষে মুস্কিল। সে ফিরে যেতে চায়। জিনার কাছে কিছু আশা করে না। সে যদি মুক্তি পেয়ে অন্য কারোর সঙ্গে চায় থাকতে পারে। ওয়ালি চায় তার স্ত্রী তার সঙ্গে থাকবে সব সময়।
জিনা ওয়ালিকে স্বার্থপর বলল। সে এখানে থাকতে চায়। ওয়ালি জানাল তার এইসব খুনখারাপি জায়গার মধ্যে থাকতে ভালো লাগে না।
জিনা তাকে বলল, যেতে না দিলে সে এসময় যাবে কি করে। ইনসপেক্টর এমনিতেই ওয়ালিকে সন্দেহ করে। ওয়ালি বলল প্রমাণ ছাড়া তো আর ধরা যাবে না।
জিনা হঠাৎ কেঁদে ফেলল, ওয়ালির জন্য তার খুব ভয় লাগছে। ওয়ালি বলল, শুধু শুধু ভয় পেয়ে লাভ নেই। কারণ তাদের হাতে কোনো প্রমাণ নেই।
ওরা বাড়ির দিকে রওনা হল। জিনা ওয়ালিকে যখন জিজ্ঞেস করল যে সে কি চায় না যে জিনা তার সঙ্গে থাক সে তখন চুপ করে রইল।
জিনা রেগেমেগে ওয়ালির উদ্দেশে যা তা কথা বলে স্পষ্ট বলে দিল, সে তার সঙ্গে যাবে না। তাকে বিয়ে করাই ওর ভুল হয়েছিল। আমেরিকায় গিয়ে সে যে কোনো মেয়ের সঙ্গে থাকতে পারে। ওয়ালি রাজি হল।
.
১৯.
ইনসপেক্টর ক্যারি জজেটের সাহায্যে যেখানে তদন্ত চালাচ্ছিলেন, সেখানে মিস মারপল ওদের দুজনকে ঘরে ঢুকতে দেখল।
আচমকা বেলভার তাকে ঠান্ডা লেগে যাবে বলে ঘরে ঢুকতে বলল।
যেতে যেতে মিস মারপল যাদুর ভেলকির সাহয্যে মানুষকে কেমন বোকা বানানো হয় সে কথা বলতে বলতে যাচ্ছিল। কাটা মানুষও কেমন জোড়া হয়ে যায়।
বেলভার কিছু বুঝল না। ভাবল গণ্ডগোলের মধ্যে বেচারির মাথা খারাপ হয়ে গেছে।
হঠাৎ মারপল লুইজির খবর নিল। বেলভার জানাল সে মনে মনে খুব আঘাত পেয়েছে।
মারপল বলল, লুইজি এমন কিছু ব্যাপার বুঝতে পারে যা অন্যেরা বোঝে না।
বেলভার যখন বলল লুইজি বাস্তব জগতের বাইরের মানুষ, তখন মারপল কথাটা শুনে বিস্ময়ের ভান করল।
এইসময় এডগার লজ্জিত মুখে তাদের পাশ দিয়ে চলে গেল।
দুজনে কথা বলতে বলতে বাড়ির ভেতর গেল।
.
২০.
লাইব্রেরী ঘরে চাপা উত্তেজনা, সবাই একসঙ্গে রয়েছে। লিউইস অন্যমনস্ক হয়ে পায়চারী করছেন।
বেলভার জানতে চাইল কি ব্যাপার। উত্তরে তিনি বললেন আর্নিকে পাওয়া যাচ্ছে না।
জিনা দৌড়ে লুইজির কাছে গেল। জিজ্ঞেস করল তার শরীর অসুস্থ লাগছে কিনা।
ক্যারি ফ্যাকাসে মুখে বলল, ছেলেটার জন্য তার খুব কষ্ট হচ্ছে।
মারপল অস্ফুটে বলল, বোকা ছেলেটার এমন বিপদ ঘটল।
স্টিভেন আসতে লিউইস তাকে সব ঘটনা খুলে বললেন।
ডঃ ম্যাডরিক একটি সুদর্শন ছেলেকে নিয়ে ঢুকলেন, আর্থার জেসকিনসের সঙ্গেই আর্নির শেষ দেখা হয়।
লিউইস আর্থারকে আর্নির সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করে জানলেন সে কিছু জানে না। এও বললো যে তালা খোলা নিয়ে সে কখনো সত্যি বলত না। কাল রাত্রে ও বিছানা ছেড়ে কোথাও যায়নি।
লিউইস আর্থারের কথা বিশ্বাস করতে পারলেন না।
দরজার কাছে হৈচৈ শোনা গেল। একজন মাস্টারমশাই ধপ করে চেয়ারে বসে বললেন যে তাদের পাওয়া গেছে।
মিলড্রেড জানতে চাইল কে তারা।
উত্তরে তিনি বললেন, স্টেজের ওপর ভারী লোহা পড়ে অ্যালেক্স আর আর্নি দুজনেরই মাথা একেবারে গুঁড়িয়ে গেছে। সবশেষ।
৩. গরম সুরুয়া
২১.
লুইজির জন্য মারপল গরম সুরুয়া নিয়ে এসে ডাকল। ক্যারি বিছানা থেকে উঠে মারপলের হাত থেকে বাটিটা নিল। মুখটা ম্লান। মারপল পাশে চেয়ারটা টেনে বসল।
লুইজি তিনটে মৃত্যু সম্পর্কে বলতে গিয়ে কেঁপে উঠল। এদের জন্য তারা কত কি করতে চেয়েছে। বর্তমান জীবন ধারাটাই বদলে গেছে। সবকিছু জটিল হয়ে পড়েছে।
মারপল একটা নখ কাটার কাচি তুলে নিল। কাচিটা বেশ নতুন রকমের। একদিকে একটা বাড়তি আঙুল ঢোকানোর জায়গা।