নিজে আসা সত্ত্বেও কার্ড পাঠিয়েছে দেখে লুইজি অবাক হল।
মারপল তাড়াতাড়ি লুইজিকে সেই চকোলেট খেতে বারণ করল।
মিসেস সেরাকোল্ড অবাক।
মারপল জিনাকে বলল অ্যালেক্স কোথায় আছে দেখতে।
জিনা উঠে গেল।
অ্যালেক্স ঘরে ঢুকেই লুইজিকে দুহাতে জড়িয়ে ধরে আদর করল। মারপল বলল, লুইজি চকোলেট পেয়ে খুব খুশি হয়েছে।
চকোলেটের কথা শুনে অ্যালেক্স অবাক। সে তো পাঠায়নি।
মারপল বাক্সটা হাতে নিয়ে লিউইসের কাছে গিয়ে সব জানাতে তিনি গম্ভীর হলেন। ডঃ ম্যাডরিক সেগুলো পরীক্ষা করলেন।
লুইজির প্রিয় চকোলেটগুলোই পাঠানো হয়েছে যখন তখন ভেতরের কেউই একাজ করেছে। মিস মারপল আর ব্যাপারটা লুইজির কাছে গোপন রাখতে চাইল না।
.
১৬.
জিনা মন দিয়ে একটা সিনারী আঁকছিল। হঠাৎ শুনতে পেল কেউ বলছে, কোনো বদমাস লোক নাকি খাবারে বিষ মেশাবার তালে রয়েছে।
জিনা তাকিয়ে দেখল সেই তালা খোলায় চৌকশ ছেলেটা আর্নি। যার থিয়েটারে খুব উৎসাহ।
জিনা জিজ্ঞেস করল কার থেকে সে এসব কথা শুনেছে।
সে জানাল তারা সব খবর রাখে। মিসেস সেরাকোল্ডের কেউ ক্ষতি করবে না। তবে ওই বদমাইশ বেলভারটা–
এ ধরনের মন্তব্য শুনে জিনা তাকে এক ধমক দিল।
আর্নি তখন সেটা কি ধরনের বিষ ছিল সে সম্বন্ধে খোঁজ নিতে শুরু করল। চকোলেটের কথাও তার কানে গেছে।
হঠাই সে বলে উঠল সে জানে অপরাধী কে।
জিনা তার কথা শুনে বিরক্ত হল।
আর্নি একভাবে বলে যেতে লাগল, তালা খুলে মজা করবার জন্য প্রায়ই রাত্রে সে বাগানে বেরিয়ে যায়।
জিনা বিশ্বাস করল না।
আর্নি তখন বলল ঠিক আছে সে বরং পুলিশকেই সব বলে দেবে।
জিনার খুব কৌতূহল হল শোনাবার জন্য কিন্তু সে ততক্ষণে হাওয়া।
তারপরেই স্টিভেন এল। তারা কথা বলতে বলতে বাড়ির দিকে চলতে লাগল। চকোলেট আর কার্ড নিয়ে তারা প্রেরকের বোকামির কথা বলতে বলতে এগোতে লাগল।
জিনা চিন্তা করতে লাগল, তার দিদাকে কে বিষ খাওয়াতে পারে। সে ওয়ালিকে সন্দেহ করে না বলে স্টিভ ঠাট্টা করল তার স্বামীপ্রীতি দেখে। জিনা আর্নির কথাগুলো স্টিভেনকে বলল। সে কোনো গুরুত্বই দিল না।
সকালবেলা ঝকমকে রোদে দাঁড়িয়ে ক্যারি অ্যালেক্সকে জিজ্ঞেস করলেন সে কোথায় গাড়ি থামিয়েছিল। অ্যালেক্স সঠিকভাবে বলতে পারল না।
ক্যারি তীক্ষ্ণ চোখে পারিপার্শ্বিক অবস্থাটা পর্যবেক্ষণ করলেন। তারপর কনস্টেবল জজেটকে ডাক দিতেই সে দৌড়তে দৌড়তে মাঠ পেরিয়ে বাড়ির দিকে গেল তারপর রোয়াকের কাছে দরজা দিয়ে ঢুকে গেল। একটু পরেই জানলার পর্দাটা জোরে নড়ে উঠল তারপর বাগানের দরজা দিয়ে বেরিয়ে সে হাঁপাতে হাঁপাতে ফিরে এল।
ক্যারি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলেন মাত্র দুমিনিট বিয়াল্লিশ সেকেণ্ড লেগেছে।
অ্যালেক্সের দিকে তাকিয়ে তিনি বললেন তার বিরুদ্ধে সরাসরি কোনো অভিযোগ তিনি এখনো করেননি, শুধু দেখছিলেন খুন করাটা তার পক্ষে অসম্ভব ছিল না।
অ্যালেক্স বলল, তাকে নিশ্চয়ই অপরাধী ভাবা হচ্ছে না কারণ সে নিশ্চয়ই বোকার মত বিষ মেশানো চকোলেটে নিজের নাম লেখা কার্ড পাঠাবে না।
ক্যারি বললেন যে ইচ্ছে করেই এই খটকা যাতে মনের মধ্যে তৈরি হয় তার ব্যবস্থা করেছে। অ্যালেক্স ব্যঙ্গ করে ক্যারির বুদ্ধির তারিফ করল।
জজেট ক্যারিকে বলল তার মতামত জানলার পর্দা নাড়াতে গিয়ে দেখে, ওপরের একটা হুক খোলা। অর্থাৎ ভেতরের আলো বাইরে দেখা যাবে।
অ্যালেক্স সেই আলো লক্ষ্য করেছিল কিনা জিজ্ঞেস করাতে সে বলল কুয়াশার জন্য কিছুই ভালো করে দেখা যায়নি। তাছাড়া সে দৃশ্যপট ভাবতেই ব্যস্ত ছিল।
মাঠের ওপর দিয়ে ক্যারি আর জজেট বাড়ির দিকে যেতে লাগলেন। অ্যালেক্স ভাবল নিশ্চয় পায়ের ছাপ খুঁজছে। তবে রাত্রির বৃষ্টিতে সব মুছে গিয়েছিল।
অ্যালেক্সকে দেখে জিনা দৌড়ে এল। তাদের মধ্যে নানা কথা হতে লাগল ভবিষ্যৎ নিয়ে। অ্যালেক্স তাকে বিয়ে করতে চায়। ওয়ালিকে ছেড়ে দিয়ে সে তার কাছে চলে আসতে বলে জিনাকে। অ্যালেক্সের সঙ্গে কথা বলতে বলতে হঠাৎ একটা বুদ্ধি খেলে যায় তার মাথায়।
.
১৭.
লুইজি বিভ্রান্ত হয়ে বলে ওঠে সে কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছে না তাকে কেউ বিষ খাওয়ানোর চেষ্টা করছে।
স্নেহের সুরে লিউইস জানাল এই দুঃখটা তিনি তাকে দিতে চাননি।
লুইজি জেনের দিকে ফিরে জানতে চায় এসব কথা সত্যি কিনা।
মারপল সায় দেয়। লুইজি পাগলের মত বলে যায় তার এতদিনের বিশ্বাস ভালোবাসা তাহলে সব মিথ্যে।
লিউইস জানালেন তিনিও একথা জানতে পারেননি।
লুইজি বারবার বলতে লাগল ক্রিস্টিয়ান এবার এসে ঐ জন্য তাকে বারবার শরীরের কথা জিজ্ঞেস করছিল। সে তো তাকে স্পষ্ট করে সব বলতে পারত। যা ঘটেছে সে সব অবিশ্বাস করতে ইচ্ছে হয় তার।
সকলে স্তব্ধ হয়ে বসে থাকে। লুইজি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে সে এবার বুঝেছে কতখানি মনগড়া জগতে সে বাস করছে। বাস্তবের সংস্পর্শে সে আসেনি। তার এই মুহূর্তে কাউকে ভালো লাগল না। সে একা থাকতে চাইল। আত্ম বিশ্লেষণ করতে চাইল।
মিস মারপল হলঘরে চলে এল, অ্যালেক্স নাটকীয় ভঙ্গিতে তাকে অভ্যর্থনা জানাল।
লিউইস সেরাকোল্ড হল পেরিয়ে স্টাডিরুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলেন।
ইনসপেক্টরের সঙ্গে অ্যালেক্সের কি কথা হয়েছিল সব সে মারপলকে জানাল।