এরপর ওয়ালটার হাড়ের ডাক পড়ল। সে বেশ সতর্ক ভঙ্গিতে কথা বললো।
স্টোনিগেটসে বিদ্যুতের তারগুলো বহু পুরনো দিনের। তাই বারবার লাইন খারাপ হয়ে যায়। কালকে সে ফিউজটা সারিয়েই ফিরে এসেছিল, দশ পনের মিনিটের বেশি সময় লাগেনি। সে গুলির আওয়াজ শুনতে পায়নি। ফিরে এসে দেখে সেরাকোন্ডের অফিসের পাশে সবাই জটলা করেছে। প্রথমে সবাই ভেবেছিল তাকে গুলি করা হয়েছে কিন্তু পরে দেখা গেল তা নয়।
ক্যারি রিভলবারের প্রসঙ্গ তুলতেই হাড বলল সে দেখেই চিনতে পেরেছে ওটা তার রিভলবার। ওটা সে ঘরের ড্রয়ারে রাখে। এই খবর কে জানে আর কে জানে না সেকথা তার অজানা। হলে ফিরে এসে সে যারা আগে সেখানে ছিল তাদের সবাইকেই দেখে।
ইনসপেক্টর তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, মিঃ গুলব্রাজেন এবারে যে হঠাৎ এসে পড়েছিলেন তাতে কেউ বিচলিত হয়ে পড়ছিল কিনা।
একটু ভেবে ওয়ালটার জানালেন সে সম্বন্ধে তার কিছু মনে হয়নি। সে কেন এসেছিল সে ব্যাপারে ও কিছু জানে না। কে হত্যাকারী হতে পারে সে সম্বন্ধে ধারণা নেই তার।
ক্যারি এই ঘটনার পিছনে অ্যালেক্স রেস্টারিকের সম্ভাবনা কতখানি জানতে চাইলেন কারণ সে সেইসময় একা গাড়ি চালিয়ে এসেছে। থিয়েটারের কাজের জন্য তারও তো টাকার লোভ থাকতে পারে।
হাড নিশ্চিত হয়ে কিছু বলতে পারল না। এ ব্যাপারে জোর করে কিছু বলতেও চায় না সে।
.
১৩.
জোর গলায় হাত পা নেড়ে অ্যালেক্স কথা বলছিল।
রাগত স্বরেই সে জানাল একা গাড়ি চালিয়ে আসবার জন্যই তাকে সবাই সন্দেহ করছে, একথা সে বুঝতে পেরেছে। কাউকে বুঝিয়ে লাভ নেই। সেই সময় চারিদিকে কুয়াশা। গাড়ির আলো তার ওপর দিয়ে পড়াতে তার মাথায় একটা বুদ্ধি খেলে গিয়েছিল। এইটা যদি নাটকের সিনারী তৈরি করার কাজে লাগায় তবে বেশ হবে। একটা রহস্যময় পরিবেশের কল্পনা করছিল। বেশ গা ছমছম বিপজ্জনক পরিবেশ।
মিঃ গুলব্রাজেনকে অ্যালেক্স চিনত কিনা ক্যারি জানতে চাইলেন।
অ্যালেক্স জানাল খুন করতে হলে যতখানি জানার প্রয়োজন হয় অতখানি নয়, তাছাড়া তার বড়লোকদের সঙ্গে মেশার বিশেষ ইচ্ছেও হয় না।
রেস্টারিক বিষ নিয়ে নাড়াচাড়া করে কিনা ক্যারি জানতে চাইলেন। সে জানালো এ ব্যাপারে তার কোনো আগ্রহ নেই।
ক্যারি আর্সেনিকের কথা তুলতে সে বললো কুশীলবের মেজাজ দেখে মাঝে মাঝে মনে হয়েছে বটে আর্সেনিক মাখা খাবার খাওয়াতে।
এখানে আসা যাওয়া সম্বন্ধে ক্যারি জানতে চাইলে সে উত্তরে বললো তার কোনো ঠিক থাকে না। তবে শনিবারই আসার চেষ্টা করে। মিসেস সেরাকোল্ডের কাছে সে অফুরন্ত ভালোবাসা পেয়েছে।
ক্যারি মন্তব্য করলেন, তার সঙ্গে সে হয়ত প্রচুর টাকাও পেয়েছে। এ কথায় অ্যালেক্স বিরক্ত হল। লুইজির উইলের সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করা হলে সে ঠিকমত সহোয়যাগিতা করল না। তার মতে, তার সম্বন্ধে এত প্রশ্ন করবার কোনো মানে হয় না, কারণ তার তো কিছু ঘটেনি।
অ্যালেক্স চলে যাবার পর স্টিভেন রেস্টারিক এসে সেইদিন তখন কি করছিল সে কথা বলল। ঝগড়া শুনে সে অবিচলিতই ছিল। কারণ মাঝে মাঝেই সে ওরকম চেঁচামেচি করে। তাদের কাউকেই সে পছন্দ করে না। জিনা মেয়ে বলে তার ওপরেও খুব রাগ। সেও এডগারের সঙ্গে ইয়ার্কি করে। জিনার অবজ্ঞা এডগার একদম সহ্য করতে পারে না। আসলে সেও জিনাকে ভালোবাসে। সে বলল গোলমাল শুরু হতে তার পিয়ানো বাজানো থেমে যায়। তার মতে সেদিন এডগার নাটক ছাড়া আর কিছুই করছিল না। এই গণ্ডগোলের মধ্যে ওয়ালি আর বেলভার ছাড়া কেউ বের হয়নি। তবে ঝগড়ার দিকে সবার মন থাকায় কেউ অতটা ভালো লক্ষ্য করেনি। তবে মিসেস সেরাকোল্ড আর জিনা যে বাইরে যায়নি সে ব্যাপারে সে নিশ্চিত।
স্টিভেনের কথা শুনেই ক্যারি বুঝছিলেন সে নিজেকে খুব চালাক মনে করে। তাকে এ ব্যাপারে সে সন্দেহ করে। তার নাম সে কিছুতেই মুখে আনল না। ভাবটা এমন, প্রমাণ না পেলে তো তারা বিশ্বাস করবে না বলে লাভ কি।
স্টিভেন চলে গেলে ক্যারির মাথায় একরাশ চিন্তা ঘুরপাক খেতে লাগল।
এমন সময় জিনা তার সৌন্দর্যের পসরা নিয়ে ঘরে ঢুকল। আজ সে অন্যদের মতো কালো পোষাক পরেনি। এই রঙটা তার পছন্দও নয়, তাছাড়া গুলব্রাজেন তার নিকট আত্মীয়ও নয়। ছোট বেলায় তিনচারবার দেখেছে।
জিনা সেই সন্ধ্যার ঘটনা বলতে লাগল। ক্যারির মনে হল এর আগে এত নাটকীয়ভাবে আর কেউ বলেনি। সেই সময় কে কি করছিল সে সব কথা বেশ মজার ভঙ্গিতে বলে গেল। ওর ধারণা দুষ্টু ছেলেদের মধ্যে কেউ নয় পাগলদের মধ্যেই কেউ খুনী।
যখন ইনসপেক্টর বললেন ঐ কড়া পাহাড়া থেকে কেউ বেরোতে পারবে না জিনা বললো ওরা যদি ইচ্ছে করে তবে অবশ্যই বেরোতে পারবে। সে তাদের জানে ভালো করে।
জিনা চলে গেলে ক্যারির মাথায় দুটো কথা ঘুরতে লাগল। প্রথমত এর আগে কেউ বলেনি ওয়ালটার হলঘরে ফিরে আসবার পর গুলির শব্দ শোনা গেছে। দ্বিতীয়ত, মিস বেলভার চাবি আনবার জন্য ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন, তাও তিনি বললেন না।
.
১৪.
মিসেস স্ট্রেট সম্পূর্ণ কালো পোষাকআসাকে সজ্জিত হয়ে লাইব্রেরী ঘরে বসেছিল। এহেন পরিবেশে জিনা আবশ্যই বেমানান।
মিসেস স্ট্রেট ক্যারির ডাকের অপেক্ষায় বসে থাকতে থাকতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। কিছুটা ক্ষুণ্ণ হয়েই এই অযথা সময় নষ্টের কথা ক্যারিকে জানালো।