মিস বেলভার এসে মারপলকে লাইব্রেরী ঘরে যেতে অনুরোধ করল।
পিস্তলের শব্দ শোনা যাচ্ছে। যে ঘরে খুন হয়েছে সেখানে আর বাইরে পিস্তল ছুঁড়ে তারা পরীক্ষা করছে কিসব।
কালো পোশাক পরে বিষঃ মুখে মিলড্রেড ঘরে এল। লাইব্রেরী ঘরে যাবার জন্য মিস মারপল উঠে পড়লেন।
লিউইস সেরাকোল্ড জানলার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। মারপল ঘরে ঢুকতে তিনি বললেন মারপলের নিশ্চয় খুব কষ্ট হচ্ছে তার ওপর দিয়েও তো ধকল যাচ্ছে।
মারপল একটু হাসল। লিউইস তার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করলেন। একটু কুণ্ঠিত হয়েই তিনি যা বললেন মারপল তো তা শুনে চমকে উঠল। লুইজির কোনও শত্রু থাকতে পারে সে বিশ্বাস করে না। তাকে কেউ বিষ খাইয়ে মারবার চেষ্টা করবে একথা অবিশ্বাস্য। মিঃ ব্রাউণ্ডজেনের কথাকে এতটা বিশ্বাস করছেন কেন লিউইস।
লিউইস বললেন ক্রিস্টিয়ানের ধারণা ভুল নয় কারণ পুলিস ওষুধে বিষ পেয়েছে।
মারপল বলল, তাহলে বাতের ব্যথা, অসুস্থতা সব এই জন্যই হয়েছে। রুথ তা হলে ঠিকই তো বলেছে।
লিউইস হঠাৎ রুথের নাম শুনে অবাক হয়ে গেলেন।
মারপলের মুখ আরক্ত হল। সে আর গোপন না করে বলেই ফেলল, তার এখানে আসটা হঠাৎ বেড়াতে আসা নয়। মারপল সব ঘটনা খুলে বলল।
লিউইস একেবারে আকাশ থেকে পড়লেন। তিনি মারপলের কাছে পারমর্শ চাইলেন।
মারপল লুইজিকে জানাতে বারণ করল। ওর বিশ্বাস আর ভালোবাসায় আঘাত করলে ও বাঁচবে না।
লিউইস জানেন মারপল আর লুইজির সম্পর্ক একদিনের নয়। তাই তাকে বিশ্বাস করা যেতে পারে।
মারপল একটু দ্বিধা নিয়ে জানতে চাইল ক্যারির মৃত্যু হলে অর্থের দিক দিয়ে ক্যারি লাভবান হবে।
টাকা শব্দটা শুনেই লিউইস উত্তেজিত হল। এই জিনিসটা ছাড়া পৃথিবীতে আর কেউ কিছু ভাবতে পারে না।
মারপল বুঝিয়ে বলল, এক্ষেত্রে এ ছাড়া অন্য কিছু ভাবা তো সম্ভব নয়। লুইজির মত অত ভালো মেয়ের ওপর কেউ রেগে থাকতে পারে না। একমাত্র লোভের বশেই মানুষ যা ইচ্ছে করতে পারে।
লিউইস জানালেন ইনসপেক্টরও এই কথা মনে করেন। ক্যারিলিনের সলিসিটার লণ্ডন থেকে আজ আসবে। গিলফয় কোম্পানীর সাহয্যেই সে তার উইল করেছে। যাইহোক আইনের কথা ছেড়ে লিউইস বলতে শুরু করলেন নানা প্রতিষ্ঠানে দান করে এরিক কিছু টাকা সমান ভাগ করে দেয় মিলড্রেড আর পিপপার মধ্যে। আর সব সম্পত্তি নিয়ে ট্রাস্ট ফাণ্ড করে। তা থেকে যা আয় হয় তা পাবে ক্যারিলিন। তার মৃত্যুর পর মিলড্রেড আর পিপা বা তার ছেলেমেয়েরা সমান ভাবে পাবে। ক্যারিলিনেরও নিজস্ব অনেক সম্পত্তি আছে। সে তার অর্ধেক লিউইসকে দিয়েছে। বাকি টাকাটা পাবে বেলভার তারপর যা থাকবে তার সমান ভাগ হবে অ্যালেক্স ও স্টিভেনের মধ্যে।
এত গণ্ডগোলের কথা শুনে মারপল অবাক হল। ক্যারির মৃত্যু তাহলে সত্যিই সবাই লাভবান হবে।
লিউইস বললেন, এটা ঠিক কথা হলেও এদের মধ্যে কেউ খুনের মতলব ভাঁজছে একথা ভাবাই যায় না।
বাড়ির সবাই ক্যারিলিনকে কত ভালোবাসে সেকথা লিউইস বললেন। একজনের কথা শুধু বাদ দিল, জিনার স্বামী। মারপল তার কথা মনে করিয়ে দিতেই লিউইস একটু গম্ভীর হলেন।
লিউইস তার সম্বন্ধে বললেন, ওর বয়স অল্প বলে কাজে এখনো মন বসাতে পারেনি। সবার সঙ্গে মিশে যেতে পারেনি। চিন্তাভাবনাও অপরিণত। আমেরিকায় মানুষের বিচার হয় তার সাংসারিক সাফল্য দিয়ে।
মারপল মন্তব্য করল, এদেশে আমরা জাগতিক ব্যর্থতাগুলোকেই বড় করে তুলি।
একথা শুনে লিউইসের দৃষ্টি তীক্ষ্ণ হল।
মিস মারপল, একটু লজ্জা পেয়ে অপ্রাসঙ্গিক ভাবেই বললো, সে মনে করে সৎ পরিশ্রমী মানুষেরাই বিপথগামী ছেলেদের মঙ্গল করে। এদের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলা তার উদ্দেশ্য নয়। আসলে তার বক্তব্য এসব কিছু ওয়ালটার কাছে দুর্বোধ্য মনে হয়।
লিউইস তার কথা স্বীকার করলেন। তবে যুদ্ধে সে খুবই সাহস দেখিয়েছিল।
মারপল বলল, হত্যাকারীর পক্ষে সবচেয়ে প্রয়োজন হল সাহস ও অহঙ্কার।
লিউইস অবাক সুরে বললেন, সে কেন এই কাজ করবে সে বুঝতে পারছে না।
মারপল বলল, সে যদি চায় তাহলে করতেই পারে। এ জায়গাটা ওর পছন্দ নয়। এদিকে জিনা এ জায়গা ছেড়ে যেতে চাইছে না। টাকা হাতানোই যদি উদ্দেশ্য হয় তবে জিনা যত তাড়াতাড়ি টাকা পেয়ে যায় ততই তো ভালো। অন্য কারুর প্রতি জিনা প্রেমে পড়বার আগেই টাকা পাওয়া চাই।
একথা শুনে লিউইস বিস্মিত হলেন।
মারপল তাকে জানালেন, তিনি বোধহয় জানেন না অ্যালেক্স আর স্টিভেন দুজনেই জিনার প্রতি অনুরক্ত।
লিউইস কিছুতেই কথাটা বিশ্বাস করতে পারলেন না। স্টিভেন অত্যন্ত ভালো ছেলে, সবসময় নাটক নিয়ে ব্যস্ত থাকে। তিনি ম্যাডরিককেও একথা বলছিলেন। ডঃ ম্যাডরিকের কথা উঠতেই তার মনে পড়ল তাকে বলতে হবে, ক্যারির সঙ্গে দেখা করে এডগার সম্বন্ধে একটা রিপোর্ট দিতে।
মিস মারপল লিউইসরা সেরাকোল্ড সম্বন্ধে কতটুকু জানেন জানতে চাইল। তিনি জানালেন তার বিষয়ে তিনি সব জানেন।
তার পক্ষে বিষ প্রয়োগ করা সম্ভব কিনা জানতে চাইল।
উত্তরে লিউইস বললেন, তাকে তিনি ঠিক এ কাজের জন্য সন্দেহ করতে পারছেন না। কারণ এতে তার কী লাভ থাকতে পারে।
মারপল বলল, লাভক্ষতির কথা নয় সে একটু অস্বাভাবিক বলেই তার কথাটা মনে এসেছে।
লিউইস একটু চিন্তা করে বললেন, সে বেশ সুস্থই হয়ে উঠেছিল, হঠাৎ যে তার কী হল এটাই অদ্ভুত ব্যাপার।