লিউইস বললেন, তার কথাগুলো যদি তার স্ত্রীকে না বলা হয় তবে তিনি কৃতজ্ঞ থাকবেন। ক্রিস্টিয়ান এসেছিল তাকে একটু জানাতে যে, কেউ তার স্ত্রীকে বিষ খাইয়ে মারবার চেষ্টায় আছে।
শুনে ক্যারি অবাক হয়ে গেলেন।
ক্রিস্টিয়ান কথাটা বলবার পর তিনি লক্ষ্য করলেন, বাতের ব্যথা বলে স্ত্রী যা কষ্ট পাচ্ছিলেন তা আর্সেনিক বিষ খাবার ফলে হতে পারে।
এ সম্বন্ধে বিস্তৃত আলোচনা করার সুযোগ পাননি তারা, ভেবেছিলেন নিশ্চিত হয়ে লুইজিকে জানাবেন।
ক্যারি জিজ্ঞাসা করলেন, ক্রিস্টিয়ান কাউকে সন্দেহ করেছিল কিনা।
লিউইস জানালেন, হয়তো করেছিলেন। নইলে খুন হবেন কেন। তবে কারোর নাম বলেনি। তবে তারা ঠিক করেছিলেন পরিবারের পুরনো বিচক্ষণ বন্ধু ক্রোমারের বিশপ ডঃ গ্যালব্রেথকে সব জানাবেন। ওনার কথামত কাজ হবে। তাই খাওয়া দাওয়ার শেষে ক্রিস্টিয়ান ডঃ গ্যালব্ৰেথকে একটা চিঠি লিখতে বসেছিলেন। সেই সময় কেউ তাকে গুলি করে মারে।
প্রমাণ হিসেবে লিউইস বুকপকেট থেকে ভাঁজ করা চিঠিটা বের করে দেখালেন।
ক্যারি বেশ রাগত স্বরেই জানালেন যে তার এই কাজটা করা অন্যায় হয়েছে।
লিউইস জানালেন অকারণে তিনি একাজ করেননি। তিনি জানতেন তার স্ত্রী ঐ ঘরে যাবেন তাই তিনি সেটা সরিয়ে দিয়েছেন। তিনি যাতে আঘাত না পান তার জন্য লিউইস সব করতে রাজী।
কোনো কথা না বলে ইনসপেক্টর চিঠিতে চোখ রাখলেন, সেখানে ডঃ গ্যালব্ৰেথকে পত্রপাঠ স্টোনিগেটসে চলে আসতে অনুরোধ করা হয়েছে। এখানে একটা বিপদ দেখা দিয়েছে। উনি লুইজির হিতাকাঙ্খী, এই ভালোমানুষ লুইজিকে অল্প অল্প করে বিষ খাওয়ানো হচ্ছে। প্রথম কখন সন্দেহ হয় সেকথা জানাতে গিয়েই চিঠিটা অসমাপ্ত হয়েছে। এর পরই তাকে গুলি করা হয়। লিউইসের মতে হত্যাকারী চিঠির তাৎপর্য জানত না বা সরাবার সময় পায়নি বলে সরায়নি।
গুলব্রাজেন লিউইসকে সেই সন্দেহ জনক ব্যক্তিটির নাম বলেছে কিনা ইনসপেক্টর জানতে চাইলেন। লিউইস একটু থেমে অস্বীকার করলেন তারপর হঠাৎই বলে উঠলেন যে ক্রিস্টিয়ান মানুষ হিসেবে অত্যন্ত ন্যায় পরায়ণ ছিল।
ক্যারি জিজ্ঞেস করলেন তিনি কিভাবে বুঝলেন বিষটা মেশানো হচ্ছে। উত্তর লিউইস জানালো সবাই যা খায় উনিও তাই খান শুধু ওষুধটাই আলাদা।
ক্যারি ওষুধটা পরীক্ষা করতে চাইলেন। লিউইস বেশ চটজলদি সেটা আনবার জন্য উদ্যোগী হল। যা দেখে ক্যারি একটু অবাকই হলেন। যেন লিউইস আগে থেকেই জানেন ক্যারি তাকে কি বলবেন।
লিউইস লুইজির কাছ থেকে ব্যাপারটা কেন গোপন রাখতে চাইছেন সেকথা জানার ইচ্ছে প্রকাশ করলেন ইনসপেক্টর। তাকে তো বরং সজাগ করে দেওয়াই উচিত ছিল।
লিউইস জানালেন, লুইজি অন্য ধাতের মানুষ। তিনি কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারবেন না। কেউ তাকে মেরে ফেলতে পারে।
লিউইস এতদূর ভেবে ফেলেছেন দেখে ইনসপেক্টর বিস্মিত হলেন।
লিউইস সত্যকে অস্বীকার করতে চান না, তিনি বললেন এখানকার দুশো লোকের অতীত ভালো নয়, তা সত্ত্বেও তারা মতলব করে বিষ খাওয়াতে পারবে না, কোনোদিন। তাহলে বাড়ির লোকদের মধ্যেই কেউ হবে।
ধীর স্বরে ক্যারি বললেন, বাইরের লোকও তো কেউ কেউ আছেন।
লিউইস সে কথায় সম্মতি জানিয়ে বললেন, তাতে তাদের কি স্বার্থ থাকতে পারে?
ক্যারি লোমনের কথা তুললেন।
লিউইস বললেন, ও ক্যারিলিনের ভক্ত। ও কোনও ক্ষতি করতে পারে না। আর সন্ধ্যায় যা করেছে তা নিতান্তই অভিনয়।
ক্যারি জানতে চাইলেন, এই সাংঘাতিক অভিনয়ের জন্য ওর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ দায়ের করা হবে কিনা।
লিউইস জানালেন, তার প্রয়োজন নেই। নির্দ্বিধায় বলা যায় ও নিরপরাধী।
ক্যারি জানতে চাইলেন ক্রিস্টিয়ান ধনী ছিলেন কিনা। তাহলে ওর মৃত্যুতে নিকট আত্মীয়েরা লাভবান হবে। তাহলে দাঁড়াচ্ছে এই যে এ বাড়ির কেউই হত্যাকারীর ভূমিকা নিয়েছে। লিউইস কাউকে সন্দেহ করেন কিনা তিনি জানতে চাইলেন।
লিউইস জানালেন সেকথা বলা খুব কঠিন। তা যে কেউ হতে পারে। ক্রিস্টিয়ান যাওয়ার পর কেবলমাত্র ওয়ালটার হাড় বেরিয়েছিল। তবে এডগার আর তিনি বেরিয়ে পরার পর আর কে কে বেরিয়েছিল তা তার অজানা।
ইনসপেক্টর সেদিনকার মত সবাইকে শুতে যেতে বলে বিদায় দিলেন।
মিঃ সেরাকোল্ড বেরিয়ে যেতে ক্যারি লেককে জিজ্ঞাসা করলেন তার কাকে খুনী মনে হয়।
লেক জবাব দেয় তার সন্দেহ সেরাকোল্ড জানেন কে খুনী। ক্যারি তার সঙ্গে একমত হন।
২. পুলিসের লোকেরা এসেছে
১১.
পরদিন সকালে খেতে বসে জিনা বললো, পুলিসের লোকেরা আবার এসেছে। ওয়ালি ওদের ধীরস্থির ভাব দেখে খুব অবাক হয়েছে।
ওর কথা শুনে মিস মারপল হাসল! অ্যালেক্স আর স্টিভেন নির্বিকার চিত্তে খাচ্ছিল। জিনা মারপলকে দেখাল ওদের ওই ভাবলেশহীনতা।
অ্যালেক্স জানান এইসব বলে তাদের ওপর জিনা অবিচার করছে। পুলিসরা তাকেই সবচেয়ে বেশি সন্দেহের চোখে দেখছে। কারণ খুনের সময়ই সে এসেছে।
স্টিভেন হেসে বলল, অ্যালেক্স যদি ঝামেলায় পড়ে তবে সে খুব খুশি হবে। তাকে আর কেউ সন্দেহ করবে না। কারণ হল ছেড়ে সে একটুও নড়েনি।
জিনা হতাশ সুরে জানাল পুলিস নিশ্চয় ভাবছে না একাজটা তারাই কেউ করছে।
অ্যালেক্স মন্তব্য করল, কাজটা নিশ্চয় বাইরের কোনো আগন্তুক এসে করেনি।