নৃত্য শিল্পী রেমণ্ডস্টারকে তিনি আগে থেকেই জানতেন। সুদর্শন চেহারার দীর্ঘকায় ক্ষিপ্রগতি মানুষটির ব্যবহার খুবই বন্ধুত্বপূর্ণ। তিনি হোটেলে সকলেরই প্রিয়।
হাপারের প্রশ্নের জবাবে রেমণ্ডস্টার বললেন, রুবিকে আমি ভালভাবেই জানতাম। এখানে একমাসের ওপরে ছিল। খুবই ভাল স্বভাবের মেয়ে।
–তার ছেলে বন্ধুদের সম্পর্কে আমাকে বলুন। বললেন হাপার।
–এ ব্যাপারে আমার কিছুই জানা নেই। তবে জেফারসন পরিবারই তাকে প্রায় দখল করে রেখেছিল।
–আপনি জানতেন যে মিঃ জেফারসন রুবি কীনকে দত্তক নেবার ব্যবস্থা করেছিলেন?
–ওরেব্বাস। বুড়োর যদি তেমন ইচ্ছাই থাকতো তাহলে নিজের শ্রেণীর কাউকেই তো, নেওয়া ভাল ছিল।
–আর যোসি? সে জানত বলে মনে হয় আপনার?
যোসি কোন আঁচ পেলেও পেতে পারে। ও খুবই চালাক-চতুর মেয়ে।
-রুবির আগের জীবনের কোন বন্ধু কি এখানে তার সঙ্গে কখনো দেখা করতে আসছিল
–এরকম কারুর কথা জানি না।
–গত সন্ধ্যায় আপনি কি করছিলেন?
–আমরা দুজনে একসঙ্গে রাত সাড়ে দশটার নাচে অংশ নিয়েছিলাম।
–সে সময় তার মধ্যে কোন চঞ্চলতা নজরে পড়েছিল?
–তেমন কিছু চোখে পড়েনি। নাচের পরে কি হয়েছিল লক্ষ্য করিনি। তবে বলরুমে তাকে দেখিনি। আমাদের দ্বিতীয় নাচের সময় হয়ে আসছিল দেখে যোসির কাছে ওর খোঁজ করি। যোসি সেই সময় জেফারসনদের সঙ্গে ব্রিজ খেলছিল। রুবি নেই শুনে চমকে উঠেছিল সে। বেশ উদ্বিগ্নভাবে মিঃ জেফারসনের দিকে একবার তাকিয়েছিল। তারপর আমাকে নিয়ে যোসি রুবির ঘরে আসে।
–যোসি কিছু বলেছিল?
-ও খুবই রেগে উঠেছিল। আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল রুবির সঙ্গে কেউ ছিল কি না। তারপর নিজেই বলে উঠেছিল–সেই ফিল্মের লোকটার কাছে যায়নি তো?
–ফিল্মের লোক? কে তিনি? হার্পার উত্তেজিতস্বরে বলে উঠলেন।
–লোকটার নাম আমি জানি না। কালো চুল, হাবভাব নাটুকে। শুনেছি লোকটার ফিল্মের সঙ্গে যোগাযোগ আছে। সে দু-একবার নৈশভোজে এসেছে। রুবির সঙ্গে নেচেও ছিল।
-তারপর?
–আমরা রুবির ঘরে গিয়ে তাকে দেখতে পেলাম না। তার নাচের পোশাক একটা চেয়ারের ওপরে পড়েছিল। রুবিকে না পেয়ে যোসি ক্রুদ্ধ হয়ে বলে উঠল যদি সব গণ্ডগোল পাকিয়ে দেয় তাহলে সে রুবিকে ক্ষমা করবে না।
-তারপর আপনারা কি করলেন?
রুবির বদলে যাসিই আমার সঙ্গে নেচে ছিল। পরে সে আমাকে বলে, জেফারসনদের একটু বুঝিয়ে বলতে–আমি যতটা সম্ভব তাকে সাহায্য করি।
এরপর রেমণ্ডস্টারকে ধন্যবাদ জানিয়ে বিদায় দিলেন হার্পার। তিনি সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে যাবার প্রায় সঙ্গে সঙ্গে সার্জেন্ট হিগিনস হাঁপাতে হাঁপাতে এসে হাজির হল।
–হেড কোয়ার্টার থেকে এই মাত্র আপনার জন্য খবর এসেছে স্যার। ভেনস খাদের কাছাকাছি–এখান থেকে প্রায় মাইল দুই দূরে একটা পোড়া গাড়ি নোকজন দেখতে পায়। গাড়ির ভেতরে ঝলসে যাওয়া একটা দেহও রয়েছে।
হার্পার উত্তেজিত ভাবে নড়েচড়ে বসলেন। বলে উঠলন, কি আরম্ভ হয়েছে বল তো? গাড়ির নম্বরটা জানা গেছে?
-না স্যার। ইঞ্জিনের নম্বর মিনোয়ান ১৪ বলেই অনেকে মনে করছে।
.
১০.
স্যার হেনরি ক্লিদারিং মেট্রোপলিটন পুলিসের কমিশনার। সম্প্রতি তিনি অবসর নিয়েছেন। কনওয়ে জেফারসনের পুরনো বন্ধু তিনি। তাই জরুরী তলব পেয়ে প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ম্যাজেস্টিক হোটেলে এসে পৌঁছলেন।
লাউঞ্জ পার হয়ে যাবার সময় উপস্থিত অতিথিদের দিকে একবার তাকিয়ে দেখে নিলেন।
মিঃ জেফারসন বন্ধুকে দেখে অভ্যর্থনা করে বসালেন। তারপর সরাসরি প্রসঙ্গ উত্থাপন করলেন।
–একটা খুনের ঘটনায় জড়িয়ে পড়েছি হেনরি, তার সঙ্গে তোমার বন্ধু সেই ব্যান্ট্রিরাও।
আর্থার আর ডলি ব্যান্ট্রি? ব্যাপারটা খুলে বল।
এরপর জেফারসন সংক্ষেপে সমস্ত ঘটনা খুলে বললেন। সব শুনে ক্লিদারিং চিন্তিত হলেন।
–আমাকে এব্যাপারে কি করতে বলছ? জানতে চাইলেন তিনি।
–ব্র্যাডফোর্ডশায়ারের চিফ কনস্টেবল মেলচেট কেসটা দেখছে। কোথাও গিয়ে কিছু করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু ব্যাপারটা কিভাবে পরিষ্কার জানা যায় সেই ব্যবস্থা করতে হবে।
ক্লিদারিং-এর মনে পড়ে গেল লাউঞ্জ পেরিয়ে আসার সময় একটা পরিচিত মুখ তার নজরে পড়েছিল। তিনি বন্ধুকে বললেন, আমি এখন অবসরপ্রাপ্ত। বুঝতেই তো পারছ, বেসরকারী গোয়েন্দা হিসেবে কাজ করতে ততটা স্বচ্ছন্দবোধ করব না। তুমি জানতে চাও, মেয়েটিকে কে খুন করেছে, এই তো?
-হ্যাঁ, ঠিক তাই।
–এসম্পর্কে তোমার নিজের কোন ধারণা আছে?
–কিছু মাত্র না।
-ঠিক আছে, শোন। আসার পথে লাউঞ্জে উপস্থিত এমন একজনকে দেখে এলাম। এ ধরনের রহস্য সমাধানে যার দক্ষতা প্রশ্নাতীত।
–তুমি কার কথা বলছ?
–তার নাম মিস মারপল। একমাইল দূরে সেন্ট মেরী মিড গ্রামে থাকেন। গ্যামিংটন থেকে দূরত্ব আধমাইল। তিনি ব্যান্ট্রিদেরও বন্ধু। কোন অপরাধের তদন্তের ব্যাপারে তার চেয়ে যোগ্যব্যক্তি আর কেউ নেই।
-কিন্তু রুবির মত মেয়ের বিষয়ে তিনি কতটুকু জানবেন?
–আমার মনে হয় তার ধারণা নিশ্চয়ই থাকবে। বললেন ক্লিদারিং।
.
স্যার হেনরিকে দেখে মিস মারপল উজ্জ্বল আনন্দে অভিবাদন জানালেন।
চেয়ার টেনে পাশে বসে দু-চারটে সৌজন্যমূলক কথাবার্তার পরে মিস মারপল বললেন-আপনি নিশ্চয়ই সেই ভয়ানক ঘটনার কথা শুনেছেন?