রুবি কীনের সেই ছেলে বন্ধু?
–হ্যাঁ, স্যার। এখানে আসার আগে থেকেই হয়তো রুবি তাকে জানতো।
–কিন্তু রুবির দেহ কর্নেল ব্যান্ট্রির লাইব্রেরী ঘরে গেল কি করে?
–ধরুন নাচের শেষে রুবি তার সঙ্গেই গাড়িতে বাইরে গিয়েছিল। কোন বিষয়ে কথা কাটাকাটিতে মেজাজ হারিয়ে সে রুবিকে খুন করে বসে। সেই সময় তারা একটা বাড়ির সামনে পৌঁছে গিয়েছিল। লোকটি নিজেকে সন্দেহমুক্ত রাখার জন্য রুবির দেহটা কাঁধে তুলে নিয়ে ছিল। গাড়িতে একটা বাটালি ছিল। সেটা দিয়ে জানালা খুলে
-তোমার কথা অসম্ভব বলে মনে হয় না। তবে তার আগে আরও একটা কাজ করার আছে।
রুরি কীনের ঘরে তদন্ত করে তার পরিচারিকার সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছিলেন স্ল্যাক। মেলচেট তার জন্যই অপেক্ষা করছিলেন।
এমনি সময়ে জর্জ বার্টলেট ঘরে ঢুকল। সে দুজন অফিসারের সঙ্গে কথা বলতে চাইল।
মেলচেট তরুণটিকে আগেই ভালচোখে দেখেননি। ভুরু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলেন, বলুন কি ব্যাপার–কি হয়েছে?
–আমার গাড়িটা খুঁজে পাচ্ছি না স্যার।
–মানে, আপনি বলতে চাইছেন আপনার গাড়ি চুরি গেছে? বললেন হার্পার।
কেমন কুঁকড়ে গেল বার্টলেট। দুপা পিছিয়ে গিয়ে সে ইতস্তত করে বলল, মানে…ইয়ে…ঘটনাটা সেরকমই…
–গাড়িটা শেষ কোথায় দেখেছিলেন আপনি? গতরাত্রে হোটেল চত্বরে রাখা ছিল এরকমই তো বলেছিলেন।
-হ্যাঁ। কিন্তু একটু বেরুবো ভেবে গিয়ে গাড়িটা সেখানে দেখতে পেলাম না।
–কি ধরনের গাড়ি?
–মিনোয়ান চোদ্দ। মধ্যাহ্নভোজের আগে গাড়িটা নিয়ে এসেছিলাম। বিকেলে একপাক ঘুরে আসব ভেবেছিলাম মানে…আর যাওয়া হয়নি…পরে নৈশভোজের পরেও বেরুবো ভালোম…কিন্তু গাড়িটা দেখতে পেলাম না।
–গাড়িটা সেখানেই ছিল?
–হ্যাঁ, সেটাই তো স্বাভাবিক।
হার্পার কর্নেল মেলচেটকে লক্ষ্য করে বললেন, আপনার সঙ্গে আমি ওপরে দেখা করব স্যার। মিঃ বাৰ্টলেটের কথাগুলো লিখে নেবার জন্য একবার সার্জেন্ট হিগিনসকে বলে আসি।
–ঠিক আছে। বললেন মেলচেট।
ক্ষীণস্বরে ধন্যবাদ দেবার চেষ্টা করে বার্টলেট বিদায় নিল।
.
যোসেফাইন টার্নার আর রুবি কীন হোটেলের দোতলায় বারান্দার শেষ প্রান্তে ছোট্ট নোংরা একটা ঘরে থাকতো। ঘরটা হোটেলের পেছনের অংশে।
মেলচেট আর হার্পার উত্তরমুখো ঘরটায় ঢুকে বুঝতে পারলেন ঘরটার অবস্থান এমন জায়গায় যে এখান থেকে বাইরে বেরিয়ে যাবার সময় হোটেলের কারোরই নজরে পড়ার কথা নয়।
গতরাতের পর থেকে ঘরটা একইভাবে পড়েছিল। ইতিমধ্যে গ্লেনসায়ার পুলিস ঘরে আঙুলের ছাপ খুঁজে গেছে। ঘরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল রুবি, যোসি আর দুজন পরিচারিকার হাতের ছাপ। এছাড়া কয়েকটা ছাপ পাওয়া গেছে রেমণ্ডস্টারের। সে জানিয়েছিল, রাতে নাচের সময় হলে রুবিকে খুঁজতে এ ঘরে এসেছিল।
ঘরের কোণের দিকে রাখা ছিল মেহগিনি কাঠের বিরাট একটা ডেস্ক। তার খোপে পাওয়া গেছে বেশ কিছু চিঠি। স্ল্যাক চিঠিগুলো উল্টেপাল্টে দেখে বুঝতে পেরেছিলেন এগুলো কোন কাজে আসবে না।
চিঠিগুলোতে কয়েকটা নাম পাওয়া গেল–লিল, (প্যালেস দ্য ডান্সে থাকে), মিঃ ফাইণ্ডিসন, বার্নি, বুড়ো গ্রাউসার, অ্যাড প্রভৃতি। স্ল্যাক সবকটি নাম তার খাতায় লিখে নিলেন। এদের সকলের সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে হবে।
ঘরের মাঝখানে একটা চেয়ারে রাখা ছিল একটা ফোমের গোলামী নাচের ফ্রক। রুবি এটাই পরেছিল সন্ধ্যার দিকে। মেঝের ওপরে পড়েছিল একজোড়া উঁচু হিলের জুতো। দেখেই বোঝা গিয়েছিল, অযত্নে ছুঁড়ে ফেলা হয়েছিল। সিল্কের দুটো মোজা রাখা ছিল মেঝের ওপর।
মেলচেটের মনে পড়ল, মৃতের পায়ে কোন মোজা ছিল না।
আলমারির পাল্লা খোলাই ছিল। ভেতরে সাজানো ছিল কিন্তু ঝলমলে সান্ধ্য পোশাক। নিচের র্যাকে সাজানো রয়েছে একসার জুতো।
রুবি খুব দ্রুত উপরে এসে জামাকাপড় বদলে আবার দ্রুত বেরিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু কোথায় যাবার জন্য বেরিয়েছিল সে?
স্ল্যাক বললেন, পঙ্গু ভদ্রলোক রুবিকে যেরকম জেনেছিলেন, তাতে তার কোন ছেলে বন্ধু থাকতে পারে, সে সম্পর্কে কোন ধারণাই তার ছিল না। তাছাড়া যোসিও কোন অবাঞ্ছিত লোকের সঙ্গে তাকে জড়িয়ে পড়তে দিতে রাজি ছিল না। এসব জেনেই সে তার কোন পুরনো বন্ধুকে আড়ালে রাখতে চেয়ে থাকতে পারে। রুবি তার সঙ্গে দেখা করবার জন্য বেরিয়েছিল। আর সম্ভবতঃ দত্তকের ব্যাপারে মতভেদের জন্যই তাকে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়।
স্ল্যাক নিজের বক্তব্য এমন অপ্রীতিকরভাবে জাহির করছিল যে মেলচেট খুবই বিরক্ত হয়ে উঠেছিলেন। তবু নিজেকে সংযত রেখে তিনি বললেন, তাহলে তো রুবীর সেই বন্ধুর পরিচয় বার করা আমাদের মোটেই কষ্টকর হবে মনে হয় না।
ব্যাপারটা আমার হাতেই ছেড়ে দিন স্যার। আসল সত্য জানা যাবে প্যালেস দ্য ডান্সের ওই লিল বলে মেয়েটিকে জেরা করলেই–আমি ঠিক বুঝতে পারছি।
একটু থেমে স্ল্যাক আবার বললেন, নৃত্য শিল্পী ওই রেমণ্ড ছোকরার কাছ থেকেও কিছু সাহায্য পেতে পারেন স্যার। পরিচারিকাদের আমি ভালভাবেই জেরা করেছি। তারা কিছুই জানে না। আর ওই বার্টলেটকে আপনার কেমন মনে হয় স্যার?
–হ্যাঁ, ওই ছোকরার ওপর নজর রাখা ভাল। বললেন মেলচেট।
তারপর তারা সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে এলেন।
.
০৯.
দুটো কাউন্টির পুলিস মিলে মিশে কাজ আরম্ভ করেছে। সুপারিন্টেণ্ডেন্ট হার্পার জিজ্ঞাসাবাদের দায়িত্ব পেয়ে খুশি হয়েছেন।