প্রাথমিক সৌজন্য বিনিময়ের পর তিনি অতিথিদের সামনের সোফায় বসতে ইঙ্গিত করলেন।
-আমরা এসেছি মৃত মেয়েটি সম্পর্কে আপনার কাছ থেকে জানতে। কর্নেল মেলচেট বললেন।
-আমার মনে হয়, সমস্ত কথা আপনাদের খোলাখুলিই জানানো দরকার।
কোনরকম ভূমিকা না করেই মিঃ জেফারসন বলতে শুরু করলেন, আটবছর আগে একটা বিয়োগান্ত ঘটনা আমার জীবনে ঘটে। এক বিমান দুর্ঘটনায় আমার স্ত্রী আর আমার ছেলে ও মেয়েকে হারাই। জীবনের অর্ধেকটাই আমার এভাবে হারিয়ে যায়। আমিও পঙ্গু দেখতেই পাচ্ছেন।
এখন আমার পুত্রবধূ আর জামাই আমার সঙ্গে থাকেন। তারা আমার সঙ্গে সুন্দর ব্যবহারই করেন। আমার নিঃসঙ্গ জীবনে অল্পবয়স্কদের ভাল লাগে। তাদের আমি উপভোগ করি।
যে বাচ্চা মেয়েটি মারা গেল গত একমাস যাবৎ তার সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল। মেয়েটি স্বাভাবিক ও সরল। বড় নিষ্পাপ। কোন রকম অশ্লীলতা তার মধ্যে ছিল না। আমি ঠিক করেছিলাম আইনসিদ্ধভাবেই তাকে দত্তক নেব।
আশা করি এ থেকে আপনারা বুঝতে পারবেন সে হারিয়ে গেছে শুনে কেন আমি অস্থির হয়ে পড়েছিলাম।
–এ ব্যাপারে আপনার পুত্রবধূ আর জামাইয়ের বক্তব্য জানতে পারি কি? বললেন হাপার।
তাদের এতে বলার কিছু নেই। তবে এটা ঠিক তেমন ভালভাবে নেয়নি। আমার ছেলে ফ্র্যাঙ্ককে তার বিয়ের পরে আমার সমস্ত সম্পত্তির অর্ধেকটাই দিয়ে দিয়েছিলাম।
মেয়ে রেজামণ্ড এক দরিদ্রকে বিয়ে করেছিল। তাকেও আমি অনেক টাকা লিখে দিয়েছিলাম। তার মৃত্যুর পরে সে টাকার মালিক হয় তার স্বামী। অর্থকরীর দিক থেকে এদের কোন অভিযোগই আমি রাখিনি।
যাই হোক বুঝতেই পারছেন মিঃ গ্যাসকেল আর মিসেস জেফারসন আমার পরিবারে থাকলেও রক্তের সম্পর্কের কেউ নয়।, আমি মানুষের চরিত্র বিচার করতে জানি। বুঝতে পেরেছিলাম কিছুটা শিক্ষা পেলে রুবি কীন সঠিক ভাবে নিজেকে তুলে ধরতে পারবে।
-বুঝতে পারছি, বললেন কর্নেল মেলচেট, মেয়েটির দায়িত্ব আপনি নিতে চাইছিলেন, তার নামে টাকাও রাখতে চাইছিলেন–কিন্তু কাজটা আপনি
-আপনার বক্তব্য আমি বুঝতে পেরেছি, মেলচেট, মেয়েটির মৃত্যুতে লাভবান হবার সম্ভাবনা কারো ছিল না। কেন না, দত্তক গ্রহণের প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা তখনো সম্পূর্ণ করা হয়নি।
–কিন্তু আপনার দিক থেকে তো আশঙ্কা
-না সেই সম্ভাবনা নেই। ডাক্তাররা যাই বলুক না কেন আমি তখনও টগবগে ঘোড়ার মতই শক্তিশালী তবে এব্যাপারেও আমি সব ব্যবস্থা করে রেখেছি। দশ দিন আগে একটা নতুন উইল করেছি আমি।
-নতুন উইল করেছেন। সাগ্রহে জিজ্ঞেস করলেন হার্পার।
রুবি কীনের জন্য ট্রাস্টি করে পঞ্চাশ হাজার টাকা তাদের হাতে দিয়েছি।
–এ যে অনেক টাকা। হার্পার যেন সামনে পথ দেখতে পেলেন, মাত্র কয়েক সপ্তাহের পরিচয়ের সূত্রে আপনি একজনকে এতটাকা দিচ্ছেন, এ খুবই আশ্চর্য।
–কারুর কিছু বলার নেই। এ টাকা আমার উপার্জন করা। কাজেই এ টাকা খরচ করার ব্যাপারে আমার পূর্ণ স্বাধীনতাই রয়েছে।
যাই হোক, এই ভয়ঙ্কর ঘটনা সম্পর্কে আমি সবকিছু জানতে চাই। আমি শুনেছি এখান থেকে কুড়ি মাইল দূরে একটা বাড়িতে রুবিকে শ্বাসরুদ্ধ অবস্থায় পাওয়া গেছে।
-হ্যাঁ, গ্যামিংটন হলে। কর্নেল ব্যান্ট্রির বাড়ি
মিঃ জেফারসন ভ্রু কুঁচকে তাকালেন। বললেন, ব্যান্ট্রি..আর্থার ব্যান্ট্রি? তিনি এবং তাঁর স্ত্রী আমার পরিচিত। আমার ধারণা ছিল না তারা এই এলাকায় থাকেন। ব্যাপারটা
-কর্নেল ব্যান্ট্রি এই হোটেলেই গত সপ্তাহের মঙ্গলবারে নৈশভোজ সেরেছিলেন, আপনার নজরে পড়েনি? বললেন হার্পার।
মঙ্গলবার…না আমরা হার্ডেন হেড-এ গিয়েছিলাম। পথেই নৈশভোজ সারতে হয়েছিল।
রুবি কীন আপনার কাছে ব্যান্ট্রিদের সম্পর্কে কখনো উল্লেখ করেছিলেন?
–না, কখনও না। ব্যান্ট্রি এব্যাপারে কি বলেছেন?
–তিনি জানিয়েছেন মেয়েটিকে কখনও দেখেননি।
–গোটা ব্যাপারটাই কেমন অবিশ্বাস্য ঠেকছে।
মিনিট দুই নীরবতার মধ্যে কাটল। পরে হার্পার বললেন। একাজ কে করে থাকতে পারে, এ সম্পর্কে আপনার কি কোন ধারণা আছে?
–সম্পূর্ণ অকল্পনীয় ব্যাপার এটা আমার কাছে। এরকম কিছু ঘটতে পারে আমার কখনই মনে হয়নি।
–তার অতীত জীবনের পরিচিত কেউ
–না। তেমন কেউ থাকলে অবশ্যই আমাকে বলত। তাছাড়া তার নিয়মিত কোন ছেলে বন্ধুও ছিল না। তবে রুবীর পেছনে কেউ যদি ঘোরাঘুরি করে থাকে তার কথা যোসিই ভাল জানবে।
–সে বলছে, কেউ তেমন ছিল না।
এরপর আর দু-একটা কথা বলে হার্পার আর মেলচেট বিদায় নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন।
কনওয়ে জেফারসন তাঁর ব্যক্তিগত পরিচারক এডওয়ার্ডসকে ডাকলেন। ডাক শুনে সে পাশের কামরা থেকে সঙ্গে সঙ্গেই ঘরে ঢুকল।
বলুন স্যার।
–স্যার হেনরি ক্লিদারিংকে এখুনি যোগাযোগ কর। তিনি মেলবোর্ন অ্যাবাসে রয়েছেন। বলবে, জরুরী প্রয়োজন। যেন আজই এখানে আসেন।
.
০৮.
–পঞ্চাশ হাজার পাউণ্ড। খুনের একটা কারণ মনে হয় খুঁজে পাওয়া গেল স্যার। বললেন। সুপারিটেণ্ডেন্ট হার্পার।
-হ্যাঁ, তা গেছে। তবে সমস্ত কিছু খতিয়ে দেখা দরকার, বললেন কর্নেল মেলচেট, গ্যাসকেট লোকটিকে আমার সুবিধার মনে হয়নি। তবে খুনটা সেই করেছে। এমন কথা বলা আমার উদ্দেশ্য নয়।
–ওদের দুজনের কেউই খুশি বলে মনে হল না আমরা তবে, অন্য এক সম্ভাবনার কথাই আমার মনে হচ্ছে।