–তার ওপরে ঘটল আর একটা দুঃখজনক ঘটনা। বললেন মিস মারপল।
–এ ঘটনার সঙ্গে কি সম্পর্ক?
–নেই বলছ? মিঃ জেফারসনই তো পুলিসে খবরটা দিয়েছিলেন।
.
.
০৬.
গ্রেনসায়ার পুলিসের সুপারিন্টেন্টে হার্পার আর ইনপেক্টর ক্ল্যাককে নিয়ে কর্নেল মেলচেট কথা বলছিলেন হোটেলের ম্যানেজার মিঃ প্রেসকটের সঙ্গে।
কর্নেলের প্রশ্নের উত্তরে মিঃ প্রেসকট বললেন, মেয়েটির সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। তাকে এনেছিল যোসি
–যোসি এখানে কতদিন আছে?
বছর তিনেক।
–মেয়েটিকে আপনি পছন্দ করেন?
-হ্যাঁ। ও খুব কাজের মেয়ে। আমাদের পক্ষে সবদিক থেকেই উপযুক্ত। ব্যবহারও বেশ মনোরম। ওর ওপর যথেষ্ট নির্ভর করি আমি।
–গোড়ালির চোট পাওয়ার পরেই কি সে তার মাসতুতো বোনটিকে আনার প্রস্তাব দিয়েছিল?
-হ্যাঁ। আমি মেয়েটির বিষয়ে কিছুই জানতাম না। যোসিই তাকে নিজের খরচে নিয়ে এসেছিল। মাইনের ব্যাপারটাও ওরা নিজেদের মধ্যে ঠিক করে নিয়েছিল।
এরপর রুবী কীনের সম্পর্কে জানাতে গিয়ে হোটেল ম্যানেজার জানালেন মিঃ জেফারসন তাকে খুবই পছন্দ করতেন। মাঝেমাঝে গাড়ি করে বেড়াতেও নিয়ে যেতেন। তিনি পঙ্গু মানুষ, হুইল চেয়ারেই চলাফেরা করেন। অল্পবয়সী মেয়েদের তিনি খুবই স্নেহ করেন। তাদের জন্য মাঝে মধ্যে এখানে পার্টি দিয়ে থাকেন।
–পুলিসে ফোনটা তো তিনিই করেছিলেন? জানতে চাইলেন সুপারিন্টেন্টে হার্পার।
–হ্যাঁ। আমার ঘরে বসেই ফোন করেছিলেন।
এরপর মিঃ জেফারসনের সঙ্গে কথা বলার জন্য আগ্রহী হয়ে উঠলেন কর্নেল মেলচেট। মিঃ প্রেসকট তাদের নিয়ে মিঃ জেফারসনের সুইটে উপস্থিত হলেন।
মিসেস এডিলেড জেফারসন জানালেন তার শ্বশুর প্রচণ্ড মানসিক আঘাত পেয়েছেন। ডাক্তার তাকে ঘুমের ওষুধ দিয়েছেন। ঘুম থেকে উঠলেই তার সঙ্গে কথা বলা ভাল।
সুপারিন্টেন্টে হার্পার কর্নেল মেলচেটকে বললেন, তাহলে ততক্ষণে তরুণ জর্জ বার্টলেটের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আসা যাক।
কর্নেল মেলচেট তার এই প্রস্তাবে সায় দিলেন।
.
০৭.
কৃশ চেহারার ছিপছিপে তরুণ জর্জ বার্টলেট। তার সঙ্গে কথা বলে কিন্তু বিশেষ কিছুই জানা গেল না।
রাত এগারটা নাগাদ সে রুবী কীনের সঙ্গে নেচেছিল। তারপর সে তার নিজের ঘরে চলে গিয়েছিল। সেই সময় তাকে কিছুটা ক্লান্ত আর বিমর্ষ মনে হয়েছিল তার।
এরপর খানিকটা এদিক ওদিক ঘুরে ফিরে এসে একমাত্র পানীয় পান করেছিল। সেই সময় তার চোখে পড়েছিল যোসি টেনিস খেলে যে ভদ্রলোক তার সঙ্গে নাচছিল।
যোসির গোড়ালিতে চোট লেগেছিল সে জানত, এই অবস্থায় তাকে নাচতে দেখে সে খুব বিস্মিত হয়েছিল।
কর্নেল মেলচেট তাকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনার কোন গাড়ি আছে?
–হ্যাঁ, আমার গাড়ি আছে। বলল বার্টলেট।
–গাড়িটা নিয়েই ঘুরতে বেরিয়েছিলেন কি?
–না। ওটা চত্বরেই ছিল।
–একেবারে মাথামোটা গর্দভ।
বার্টলেটের সঙ্গে কথা বলার পর কর্নেল মেলচেটের এই ছিল সর্বশেষ প্রতিক্রিয়া
.
হোটেলের নাইটগার্ড ও বারম্যানদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হল। রুবী কীন যে সদর দরজা দিয়ে বাইরে যায়নি সে রাত্রে সে কথা বেশ জোর দিয়েই জানাল নাইটগার্ড। তবে সেই সঙ্গে একথাও জানাল, দোতলার ঘর থেকে বেরিয়েই যে ঘোরানো সিঁড়ি সেটা দিয়ে বেরিয়ে গেলে তাকে চোখে পড়বার কথা নয়।
রাত দুটোয় নাচ বন্ধ হওয়ার আগে সেই দরজা বন্ধ করা হয় না।
বারম্যানের সঙ্গে কথা বলে বেরিয়েই নয় বছরের একটি বালকের সামনে পড়ে গেলেন কর্নেল মেলচেট ও তার সঙ্গরী।
ছেলেটি বেশ উত্তেজিত ভঙ্গিতেই জিজ্ঞেস করল, আপনারা কি গোয়েন্দা? আমি পিটার কার মেসি। আমার দাদু মিঃ জেফারসনই রুবীর জন্য পুলিসে ফোন করেছিলেন। আমি ডিটেকটিভ গল্প খুব পছন্দ করি। গোয়েন্দাদের আমার ভাল লাগে।
ছেলেটির চটপটে কথাবার্তা শুনে সুপারিন্টেন্টে হার্পার খুবই কৌতূহলী হয়ে উঠলেন। তিনি তার সঙ্গে কথায় কথায় বেশ ভাব জমিয়ে নিলেন।
শেষ পর্যন্ত এই সাক্ষাৎকার থেকে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সূত্র তারা পেয়ে গেলেন।
–রুবী কীনকে খুব ভাল লাগত। কিন্তু মা আর মার্ক কাকা ওকে একদম দেখতে পারত না। কেবল দাদু ওকে ভালবাসতো…ও যে মরে গেছে এজন্য তারা খুব খুশি…
পিটার কারমেসির কথা শুনে কর্নেল মেলচেট আর হার্পার পরস্পর দৃষ্টি বিনিময় করলেন।
এরপর তারা কনওয়ে জেফারসনের সুইটে উপস্থিত হলেন। সেই সময় দীর্ঘকায় অস্থির চিত্ত এক ভদ্রলোকের সঙ্গে কথা বলছিলেন কনওয়ের পুত্রবধূ এডিলেড।
পুলিস কর্তাদের দেখে সেই ভদ্রলোক ঘুরে দাঁড়িয়ে বললেন, আপনাদের জন্যই অপেক্ষা করছিলাম। আমার শ্বশুর আপনাদের জন্য অপেক্ষা করছেন। তাঁর স্বাস্থ্য বিশেষ ভাল নয়।
ডাক্তার বলে দিয়েছেন কোন অবস্থাতেই যেন তাকে উত্তেজিত হতে দেওয়া না হয়।
-হ্যাঁ। ওঁর হার্ট খুবই খারাপ। এডিলেড জেফারসন মার্ক গ্যাসকেলকে সমর্থন করার চেষ্টা করলেন।
লোকটি দুঃসাহসী, অবিবেচক আর বিবেকবর্জিত। এমন চরিত্রের মানুষ যে কোন কাজই নির্বিকারে করতে সক্ষম–এরকমই ধারণা হল তার।
শোবার ঘরেই জানালার সামনে তার হুইল চেয়ারে বসেছিলেন মিঃ জেফারসন। প্রথম দৃষ্টিতেই বোঝা যায় মানুষটি প্রচণ্ড ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন। লাল চুলে সাদা ছোপ পড়েছে। নীলাভ চোখে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি মুখের রেখায় ফুটে উঠেছে দীর্ঘ যন্ত্রণার ছায়া। শরীরে রোগ বা দুর্বলতার কণামাত্র ছাপও নজরে পড়েনা।