–গ্যামিংটন হলে? আশ্চর্য কাণ্ড।
–কর্নেল ব্যান্ট্রি বলে কাউকে আপনি চেনেন? কিংবা মিঃ বেসিল ব্লেক বলে কাউকে?
–বেসিল ব্লেক নামটা শুনেছি বলে মনে হচ্ছে। তবে এসম্বন্ধে কিছু জানি না।
এই সময় ইনসপেক্টর স্ল্যাক তার নোটবই থেকে একটা পাতা ছিঁড়ে চিফ কনস্টেবলের দিকে এগিয়ে দিলেন। তিনি কাগজে চোখ বুলিয়ে দেখলেন, পেন্সিলে লেখা রয়েছে, কর্নেল ব্যান্ট্রি গত সপ্তাহে ম্যাজেস্টিক হোটেলে নৈশ ভোজ সেরেছিলেন।
কর্নেল মেলচেট মুখ তুলে স্ন্যাকের চোখে চোখ রাখলেন। তার বন্ধু কর্নেল ব্যান্ট্রি সম্পর্কে স্ল্যাকের মনোভাব বুঝতে পেরে তিনি নীরব রইলেন। পরে জোসির দিকে তাকিয়ে বললেন, মিস টার্নার, আমার ইচ্ছে, আপনি আমার সঙ্গে একবার গ্যামিংটন হলে যান, তাহলে কাজের কিছু সুবিধা হয়।
-আমার আপত্তি নেই।
.
০৫.
গ্যামিংটন হলেন ব্যাপারটা চিরকুমারী ওয়েদারবেরী বেশ রসালো করে রটিয়ে দেবার ব্যবস্থা করলেন।
মিস মারপলকেও যে গ্যামিংটন হলের গাড়ি এসে নিয়ে গেছে সে খবরও সেন্ট মেরী মিডের অনেকেরই জানা হয়ে গেল।
ঘটনাটা বেশ মুখরোচক এবং কলঙ্কজনক রূপ নিয়ে আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে উঠল।
মিসেস প্রাইস রিডলে খবরটা পেলেন তাঁর পরিচালিকা ক্লারার মুখে। তিনি আবার ঘটনাটা পৌঁছে দিলেন গ্রামের যাজক রেভারেণ্ড মিঃ ক্লিমেন্টকে।
মিসেস প্রাইস রিডলে গত এক বৃহস্পতিবারে লণ্ডন যাবার পথে কর্নেল ব্যান্ট্রিকে দেখতে পেয়েছিলেন। প্যাডিংটনে একটা ট্যাক্সি নিয়ে সেন্ট জনস উডের একটা ঠিকানায় যাচ্ছেন–এরকম তার কানে এসেছিল। যাজক ভদ্রলোককে বেশ সন্দেহের সুরেই এই বিবরণও জানিয়েছিলেন।
মিঃ ক্লিমেন্ট অবশ্য এতে কিছুই বুঝতে পারেন নি। তিনি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেছিলেন, এতে কি প্রমাণ হয়?
.
লাইব্রেরী ঘর থেকে ইতিমধ্যে মৃতদেহটা সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। পুলিসের লোক যারা আঙুলের ছাপ আর ছবি নিতে এসেছিল, তারাও চলে গিয়েছিল।
মিসেস ব্যান্ট্রি আর মিস মারপল বসার ঘরে এসে বসেছিলেন।
–জানো জেন, আমার মনে হচ্ছে কিছু একটা ঘটতে পারে। ভালো লাগছে না। তুমি বসো। কর্নেল মেলচেট ফোন করে জানিয়েছেন, যে মেয়েটি মারা গেছে তার এক মাসতুতো বোনকে নিয়ে আসছেন এখানে। তুমি কিছু বুঝতে পারছ?
–মেয়েটাকে এখানে কেন আনা হচ্ছে বুঝতে পারছি না, বললেন মিস মারপল, তবে এমন হতে পারে কর্নেল মেলচেটের ইচ্ছে কর্নেল ব্যান্ট্রিকে মেয়েটা একবার দেখুক।
-ওকে চিনতে পারে কিনা সে জন্য? বললেন মিসেস ব্যান্ট্রি। ওরা কি আর্থারকে সন্দেহ। করছে?
-আমারও সেরকম ধারণা।
–আর্থার এই ঘটনায় জড়িত! আশ্চর্য।
–এ নিয়ে চিন্তা করো না, ডলি।
–আর্থারও বেশ ভেঙ্গে পড়েছে।
এই সময় বাইরে গাড়ির শব্দ শোনা গেল। একটু পরেই কর্নেল মেলচেট সেই মেয়েটিকে নিয়ে ঘরে ঢুকলেন।
–ইনি হলেন মিস টার্নার, মিসেস ব্যান্ট্রি। নিহত মেয়েটির মাসতুতো বোন।
মিসসে ব্যান্ট্রি তার সঙ্গে করমর্দন করে মিস মারপলকে তার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন। তারপর তাকে নিয়ে লাইব্রেরী ঘরে এলেন।
কর্নেল মেলচেট আর মিস মারপল তাকে অনুসরণ করলেন।
–ও ওখানে পড়েছিল।
কার্পেটটা দেখিয়ে বললেন মিস ব্যান্ট্রি।
-ওহ। বড় অদ্ভুত লাগছে–এমন একটা জায়গায়
ব্যাপারটা নিয়ে মিস মারপল নিশ্চয়ই কিছু ভেবেছেন? বললেন কর্নেল মেলচেট।
মিস মারপল কথাটা শুনেও না শোনার ভান করে রইলেন। পরক্ষণেই সকলে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এলেন।
ঠিক সেই মুহূর্তে তাদের সঙ্গে মিলিত হবেন কর্নেল ব্যান্ট্রি। কর্নেল মেলচেট তাঁকে অভ্যর্থনা জানালেন। পরে তাকে মিস টার্নারের পরিচয় জানালেন। তিনি লক্ষ্য করলেন দুজনের কারো মুখেই পরস্পরকে চিনতে পারার কোন ভাব জাগল না। তিনি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন।
মিস টার্নারের মুখে রুবী কীনের অদৃশ্য হওয়ার ঘটনা শুনলেন।
মিস মারপল তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তার পরেই আপনি পুলিসে খবর দিলেন?
–ওহ না। খবরটা দিয়েছিলেন মিঃ জেফারসন। তিনি হোটেলের বাসিন্দা। মানুষটা পক্ষাঘাতে পঙ্গু।
–মিঃ জেফারসন? মিসেস ব্যান্ট্রি বললেন।
–কনওয়ে জেফারসন কি?
–হ্যাঁ।
–তিনি তো আমাদের বহুকালের পুরনো বন্ধু। তিনি ম্যাজেস্টিক হোটেলে আছেন? আর্থার, এতো দেখছি রীতিমত এক সমাপতন।
এরপর মিস টার্নারের দিকে তাকিয়ে বললেন, তিনি আজকাল কেমন আছেন? তাঁর পরিবারের আর সকলেও কি সেখানেই আছেন?
-হ্যাঁ মিঃ গ্যাসকেন, ছোট মিসেস জেফারসন আর পিটার–ওরা সবাই রয়েছেন। মিস মারপল লক্ষ্য করলেন, মিঃ জেফারসন সম্পর্কে মেয়েটি যখন কথা বলছিল, তার গলায় কিছুটা যেন কৃত্রিম রয়েছে।
আরও দু-চারটি কথা বলার পর কর্নেল মেলচেট বিদায় নিলেন।
–লক্ষ্য করেছ ডলি, জেফারসনদের কথা উঠতেই মেয়েটি কেমন অস্বাভাবিক হয়ে উঠেছিল? বললেন মিস মারপল।
–ব্যাপারটা কি হতে পারে জেন? মেয়েটি বোনের জন্য দুঃখ পেয়েছে বলে কিন্তু মনে হল না আমর।
-হ্যাঁ, রুবী কীনের কথা বলতে গিয়ে কেমন রেগে উঠছিল, আমারও নজরে পড়েছে। কারণটা কি হতে পারে সেটাই আগ্রহের বিষয়।
এক মুহূর্ত কি ভাবলেন মিসেস ব্যান্ট্রি। পরে বললেন, ব্যাপারটা জানতে হবে। আমরা আজ ডেনমাউথে খাব আর ম্যাজেস্টিক হোটেলে থাকব–তুমিও থাকবে আমাদের সঙ্গে। জেফারসনের সঙ্গে তোমার পরিচয় করিয়ে দেব-দেখবে খুবই ভাল মানুষ। মানুষটা বড় দুঃখী। এক ছেলে আর এক মেয়ে ছিল তার–দুজনেই বিবাহিত। একবার ফ্রান্স থেকে ফেরার পথে দুর্ঘটনায় ওরা সকলেই মারা যায়।–মিসেস জেফারসন রোজামণ্ড আর ফ্র্যাঙ্ক। কনওয়ের পা দুটো কেটে বাদ দিতে হয়েছিল। অসাধারণ মনের জোরে নিজেকে সামলে রেখেছেন। পুত্রবধূটি এখন ওঁর সঙ্গেই থাকে। ফ্র্যাঙ্ক জেফারসনের সঙ্গে বিয়ের আগে ও ছিল বিধবা। প্রথম পক্ষের এক ছেলে আছে তার পিটার কারমোডি। ওরা দুজন ছাড়া সৰ্ক গ্যামকেল, রোজামণ্ডর স্বামীও থাকে কনওয়ের সঙ্গে। ওদের কথা ভাবতে গেলে বুক ফেটে যায়।