রিসিভার নামিয়ে রেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন কর্নেল মেলচেট।
–সঠিক সন্ধানটা পাওয়া গেল। গ্লেনসায়ার পুলিসের কাছ থেকে ফোন এসেছিল। ডেনমাউথের ম্যাজেস্টিক হোটেল থেকে একটি মেয়ে নিরুদ্দেশ হয়েছিল।
-ও তো জলা ভূমিতে ঘেরা একটা জায়গা। বললেন ইনসপেক্টর স্ল্যাক।
–হ্যাঁ, এখান থেকে আঠারো মাইলের পথ। ওই ম্যাজিস্টিক হোটেলেই মেয়েটি নৃত্য শিল্পী ছিল। গতরাতে কাজে উপস্থিত হয়নি বলে হোটেল কর্তৃপক্ষ পুলিসকে জানিয়েছে। তুমি এখনই রওনা হয়ে যাও। সেখানে সুপারিন্টেন্টে হার্পারের সঙ্গে দেখা করে যা দরকার করবে।
.
০৪.
এরপর যথাসম্ভব দ্রুত গাড়ি হাঁকিয়ে স্ল্যাক ডেনমাউথে পৌঁছেছেন, সদর দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন, আর হোটেল ম্যানেজারের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছেন।
এরপর তিনি রুবি কীনের এক বোনকে সঙ্গে নিয়ে মাচ ব্যানহামে ফিরে এলেন।
কর্নেল মেলচেট স্ল্যাকের অপেক্ষাতেই ছিলেন। স্ল্যাকের সঙ্গে ঘরে ঢুকে তরুণীটি জানাল, পেশাদারী জগতে আমি জোসি নামেই পরিচিত। আমার আসল নাম অবশ্য জোসেফাইন টার্নার। আমার সহকারী রেমণ্ড নামে পরিচিত।
কর্নেল মেলচেটের ইঙ্গিতে মিস টার্নার একটা চেয়ারে বসল। মেয়েটি রূপসী, বয়স তিরিশের বেশি হয়নি। সৌন্দর্যের অনেকটাই প্রসাধনের সহায়তায় বাড়ানো। মেলচেটের মনে হল বেশ বুদ্ধিমতি আর নম্রস্বভাবা। উদ্বিগ্ন মনে হলেও শোকগ্রস্ত মনে হচ্ছিল না মোটেই।
আরও দু-একটি কথার পরে সকলে মর্গের দিকে পা বাড়ালেন।
মৃতদেহ পর্যবেক্ষণ করে বেরিয়ে এসে মিস, টার্নার কম্পিত গলায় বলল, হ্যাঁ, রুবির মৃতদেহ, কোন সন্দেহ নেই। ওঃ আমার শরীর কেমন করছে।
অফিসে ফিরে এলে কর্নেল মেলচেট বললেন, মিস টার্নার, আপনার কাছ থেকে রুবি সম্পর্কে সব কথা আমাদের জানা দরকার।
-হ্যাঁ, নিশ্চয়ই। আমি গোড়া থেকেই বলছি। একটু দম নিল জোসি। পরে বলতে শুরু করল, ওর নাম রুবি কীন। অবশ্য ওটা পেশাদারী নাম। আসল নাম রোজি লেডা। ওর মা ছিল আমার মায়ের মাসতুতো বোন। ওকে আমি ছেলেবেলা থেকেই চিনি। বাইরে থেকে যতটা সম্ভব অবশ্য। রুবি নিজেকে নৃত্যশিল্পী হিসেবে তৈরি করেছিল। দক্ষিণ লন্ডনের রিক্সওয়েলের প্যালে দ্য ভাস প্রতিষ্ঠানে নৃত্যশিল্পীর জুড়ি হিসেবে কাজ করছিল।
আমি ডেনমাউথের ম্যাজেস্টিক হোটেলে তিন বছর ধরে কাজ করে আসছি।
গত গ্রীষ্মকালে একটা দুঘর্টনায় আমার পায়ের গোড়ালি মচকে যায়। ফলে হোটেলে নাচ বন্ধ রাখতে বাধ্য হই। আমার বদলে রুবিকে নিয়ে আসার জন্য আমি তখন ম্যানেজারকে বলি, টেলিগ্রাম করে তাকে নিয়ে আসা হয়।
–এ ঘটনা কতদিন আগেকার? জিজ্ঞেস করলেন কর্নেল মেলচেট।
–তা এক মাস হল রুবি জয়েন করেছে। ওর সবই ভাল ছিল, দেখতেও সুন্দরী। কিন্তু তেমন মিশুকে ছিল না আর কেমন বোকা-সোকা ধরনের। অল্প বয়সীদের চাইতে বয়স্কদের সঙ্গেই ভাল মানিয়ে নিতে পারত।
-ওর বিশেষ কোন বন্ধু ছিল? জানতে চাইলেন মেলচেট।
–তা বলতে পারব না। আমাকে বলেনি কখনো।
–আপনার মাসতুতো বোনকে শেষ কখন দেখেছিলেন?
–গতরাত্রেই। ও আর রেমণ্ড দুটো প্রদর্শনী নাচে অংশ নিয়েছিল। প্রথমবার নেচেছিল রাত সাড়ে দশটায়। দ্বিতীয়টা মাঝরাতে হবার কথা ছিল। প্রথম নাচটা শেষ করার পর আমি দেখতে পাই হোটেলে থাকে এমন একজনের সঙ্গে নাচছে। আমি তখন লাউঞ্জে কয়েকজনের সঙ্গে ব্রিজ খেলছিলেন।
ওকে ওই শেষবার দেখি। মাঝরাতের পর রেমণ্ড হঠাৎ ছুটে এসে জানায় রুবিকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছে না। ওদিকে নাচেরও সময় হয়ে গেছে।
আমি তখনই রেমণ্ডকে নিয়ে রুবির ঘরে গেলাম। ঘরে সে ছিল না। যে পোশাক পরে নেচেছিল–হাল্কা গোলাপী স্কার্ট চেয়ারের ওপরে পড়েছিল।
হেড কনস্টেবল কর্নেল মেলচেট নীরবে বসে মিস টার্নারের কথা শুনে যাচ্ছিলেন।
রুবি ফেরেনি দেখে আমিই বাধ্য হয়ে রেমণ্ডের নাচের জুড়ি হয়েছিলাম। খুবই কষ্ট হয়েছিল। সকালে দেখলাম পা বেশ ফুলে উঠেছে। রুবির জন্য বেলা দুটো পর্যন্ত বসে রইলাম।
তারপর আপনি পুলিসে খবর দিলেন?
–না আমি দিইনি। আমার ধারণা ছিল, বোকার মত নিশ্চয়ই কোন ছেলের পাল্লায় পড়েছে, ঠিক ফিরে আসবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত
–মিঃ জেফারসন বলে কে একজন পুলিসে খবর দিয়েছিল। তিনি কে?
–হোটেলের অতিথিদের একজন। তিনিই পুলিসে খবর দিয়েছিলেন।
–কিন্তু তিনি হঠাৎ খবর দিতে গেলেন কেন?
–ভদ্রলোক পঙ্গুমানুষ। সামান্য কিছু ঘটলেই অস্থির হয়ে পড়েন।
–আপনার বোনকে যে তরুণের সঙ্গে শেষ নাচতে দেখেন সে কে?
তার নাম বার্টলেট। গত দশ দিন ধরেই সে হোটেলে আছে।
–এদের মধ্যে কি বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিল?
–এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। কথাটা শুনে কর্নেল মেলচেটের মনে হল, জোসি ইচ্ছাকৃতভাবেই কিছু চেপে যাচ্ছে। তিনি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, এসম্পর্কে ছেলেটির কি বক্তব্য?
–সে বলেছে নাচের পরে রুবি তার ঘরে গিয়েছিল।
–এর পরেই কি সে-
-হ্যাঁ, অদৃশ্য হয়ে যায়।
–সেন্ট মেরী মিডে মিস কীন কাউকে চিনতেন বলে জানেন?
–আমার জানা নেই।
–কখনো তাকে গ্যামিংটন হলের নাম করতে শুনেছিলে?
–না, ও নামটা এই প্রথম শুনলাম।
কর্নেল মেলচেট তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে মিস টার্নারকে লক্ষ্য করে বললেন, গামিংটন হলেই মিস কীনের মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছিল।