কটেজের সামনের অংশটা গ্রামের পথের দিকেই।
প্রথমে শোনা গিয়েছিল একজন চিত্রতারকা বাড়িটা কিনেছেন। গ্রামের লোক উৎসাহিত হয়ে উঠেছিল রুপোলী পর্দার কোন নায়ককে দেখতে পাবে বলে। পরে অবশ্য তারা হতাশ হয়েছিল।
জানা গিয়েছিল বেসিল ব্লেক কোন চিত্রতারকা নয়, এক ফিল্ম কোম্পানির স্টুডিও মঞ্চসজ্জার সাহায্যকারী কর্মী।
কটেজের মরচে ধরা লোহার গেটের সামনে পুলিসের গাড়ি এসে থামলে চিফ কনস্টেবল মেলচেট গাড়ি থেকে নামলেন।
এক তরুণ এগিয়ে এসে দরজা খুলল। তার কাঁধ অবধি লম্বা কালো চুল।
–কি ব্যাপার? এখানে কি চাই?
–আপনিই কি মিঃ বেসিল ব্লেক? বললেন মেলচেট।
–অবশ্যই আমি।
–আপনার সঙ্গে একটা ব্যাপারে কিছু কথা বলতে চাই।
–আপনি কে?
–আমি…আমি কর্নেল মেলচেট, এই কাউন্টির চিফ কনস্টেবল।
–তা আমার সঙ্গে কি বিষয়ে কথা বলতে চাইছেন?
-শুনেছি আপনার এখানে গত সপ্তাহের শেষে একজন মানে তরুণী…ইয়ে স্বর্ণকেশী তরুণী এসেছিলেন?
–অ। আমার নৈতিকচরিত্র নিয়ে গ্রামের বুড়িগুলি বুঝি চিন্তায় পড়ে গেছে। কিন্তু…
তাকে বাধা দিয়ে কর্নেল মেলচেট বলে উঠলেন, একজন সুন্দরী তরুণীর মৃতদেহ পাওয়া গেছে…তাকে খুন করা হয়েছে
-তাজ্জব ব্যাপার, কোথায়?
গ্যামিংটন হলের লাইব্রেরিতে।
–গ্যামিংটনে-সেই বুড়ো ব্যান্ট্রির বাড়িতে কর্নেল মেলচেট ব্লেকের চাচাছোলা কথাবার্তায় ক্রমশই মেজাজ হারিয়ে ফেলছিলেন। অনেক কষ্ট করে ক্রোধ সংবরণ করে রেখেছিলেন।
এবারে আর চড়া স্বরে উত্তর না দিয়ে পারলেন না।
দয়া করে সংযত ভাষায় কথা বললে খুশি হব। আমার জানার ব্যাপার ছিল, এই ব্যাপারে আপনি কোন আলোকপাত করতে পারেন কি না।
–অর্থাৎ আমার এখান থেকে কোন স্বর্ণকেশী খোয়া গেছে কিনা-এটাই আপনি জানতে এসেছেন–আরে হ্যাল্লো-কি ব্যাপার, আবার এসে জুটেছ?
সেই মুহূর্তে একটা গাড়ি এসে দাঁড়িয়েছিল। গাড়ি থেকে নেমে এলো এক সোনালী চুলের সুন্দরী তরুণী। ঢোলা সাদাকালো ডোরাকাটা পাজামা, লিপস্টিক রাঙানো ঠোঁট, আর কাজল মাখা চোখে মেয়েটিকে অদ্ভুত সুন্দর লাগছিল।
ক্রুদ্ধভঙ্গিতে কটেজের দরজা ঠেলে সে চিৎকার করে বলল, তুমি আমাকে ফেলে পালিয়ে এলে কেন? বেশতো ওই স্পেনীয় মেয়েটার সঙ্গে ফুর্তি লুটছিলে।
-তুমিও তো ওই নোংরা রোজেনবার্গের সঙ্গে ছিলে।
-ও, তুমি হিংসায় জ্বলে পুড়ে মরছিলে। কিন্তু তুমি বলেছিলে পার্টি থেকে দুজনে এখানে চলে আসব।
–সেই কারণেই তোমাকে বলে এসেছিলাম।
–একেবারে দেখছি বিনয়ী ভদ্রলোক।
প্রায় খেঁকিয়ে উঠল মেয়েটি, আমি তোমার হুকুম তামিল করে চলবো–তুমি ভাবলে কি করে?
–আমার ওপরে কর্তৃত্ব ফলাবার স্পর্ধা তুমি দেখিও না খুকি।
দুজনে দুজনের দিকে জ্বলন্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে একমুহূর্ত নীরব হল।
এই সময় কর্নেল মেলচেটের কাশির শব্দ শোনা গেল। বেসিল ব্লেক দ্রুত ঘুরে দাঁড়াল।
–আহা, আপনার কথা একদম ভুলেই গিয়েছিলাম, আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিই…ডিনা লী–কাউন্টি পুলিসের সবজান্তা কর্নেল…তাহলে কর্নেল আমার স্বর্ণকেশী সশরীরেই উপস্থিত দেখতেই পাচ্ছেন…সুপ্রভাত।
চিফ কনস্টেবল মুখ লাল করে দ্রুত পায়ে তার গাড়িতে গিয়ে উঠলেন।
.
০৩.
মাচ বেনহ্যামের অফিস কামরায় বসে অধঃস্তন কর্মচারীদের তদন্তের রিপোর্টে চোখ বোলাচ্ছিলেন মেলচেট। সামনে বসে ইনসপেক্টর স্ল্যাক বলে চলেছেন, সবই বেশ পরিষ্কার মনে হচ্ছে স্যার…নৈশভোজের পর মিসেস ব্যান্ট্রি লাইব্রেরিতে বসেছিলেন, তারপর রাত দশটা নাগাদ শুতে চলে যান। চাকরবাকররা রাত সাড়ে দশটার মধ্যে শুতে যায়। রাতের কাজকর্ম শেষ করে লরিমার শুতে যায় পৌনে এগারোটায়।
রিপোর্ট দেখতে দেখতে কর্নেল মেলচেট বললেন, চাকরবাকরদের কেউ কিছু জানে মনে হয় না।
এই সময়ে দরজা খুলে ঘরে ঢুকলেন ডাঃ হেডক।
–ময়না তদন্তের বিষয়টা জানিয়ে যেতে এলাম।
–হ্যাঁ, হ্যাঁ, ধন্যবাদ, এটারই দরকার এখন। বললেন কর্নেল মেলচেট।
বলার মত বেশি কিছু নেই। শ্বাসরোধের ফলেই মৃত্যু ঘটেছে। মেয়েটির পোশাকের কোমর বন্ধ গলায় ফাঁস লাগিয়ে পেছনে টেনে এনে হত্যা করা হয়েছে। ধস্তাধস্তির কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
-মৃত্যুর সময়টা কখন মনে হয়।
–সেভাবে বলতে গেলে বলতে হয় রাত দশটার আগে না, আর মধ্যরাত্রির পরে নয়।
–আর গুরুত্বপূর্ণ কিছু?
-না তেমন কিছু নেই। মেয়েটির কুমারীত্ব অটুট ছিল। বয়স আঠারোর মধ্যে–চমৎকার স্বাস্থ্য।
কথা শেষ করে ডাঃ হেডক বিদায় নিলেন।
কর্নেল মেলচেট ইনসপেক্টর স্ল্যাকের দিকে তাকালেন। আমার মনে হচ্ছে মেয়েটা লণ্ডন থেকেই এই এলাকায় এসেছিল। কোন সূত্র তো চোখে পড়ছে না। স্কটল্যাণ্ড ইয়ার্ডকে জানানোই ভাল মনে হচ্ছে।
শহর থেকে এলেও, স্ল্যাক বললেন, মেয়েটির আসার উদ্দেশ্য কর্নেল আর মিসেস ব্যান্ট্রি কিছু জানেন বলে আমার মনে হয়। অবশ্য আমি জানি তারা আপনার বন্ধু।
এ কথায় কর্ণপাত না করে কর্নেল মেলচেট কি বলতে যাচ্ছিলেন। এমন সময় টেলিফোন বেজে উঠল। তিনি উঠে গিয়ে রিসিভার কানে তুলে নিলেন।
হ্যাঁ, ম্যাচ বেনহ্যাম পুলিস সদর দপ্তর…হ্যাঁ, একমিনিট…টুকে নিচ্ছি…বলুন…রুবি কীন… বয়স আঠারো…পেশাদার নৃত্য শিল্পী…পাঁচ ফুট চার ইঞ্চি উচ্চতা…সোনালী চুল, পাতলা চেহারা…সাদা সান্ধ্য পোশাক পরণে…পায়ে রুপোলি চপ্পল…ঠিক আছে…মিলে যাচ্ছে…হা… এখুনি আমি স্ল্যাককে পাঠিয়ে দিচ্ছি…ওকে।