–খুবই আশ্চর্যের ব্যাপার। স্ল্যাক বললেন।
এই সময় বাইরে পরপর দুটো গাড়ি থামবার শব্দ শোনা গেল। প্রথম গাড়ি থেকে নেমে এলেন বিশালদেহী ডক্টর হেডক। তিনি পুলিসেরও সার্জন।
দ্বিতীয় গাড়ি থেকে নামল সাদা পোশাকের দুজন পুলিস। তাদের একজনের হাতে ক্যামেরা।
সবাই এসে গেছে। এবার তাহলে লাইব্রেরি ঘরে যাওয়া যাক। বললেন কর্নেল মেলচেট।
লাইব্রেরি ঘরের দিকে যেতে যেতে কর্নেল ব্যান্ট্রি বললেন, সকালে আমার স্ত্রী বলল, মেরি লাইব্রেরি ঘরে একটা লাশ দেখেছে। আমি প্রথমে বিশ্বাসই করতে পারিনি।
-আশাকরি তোমার স্ত্রী তেমন দুশ্চিন্তায় পড়েননি।
-না, সুন্দর সামলে নিয়েছেন। আমাদের গ্রামের সেই মহিলা মিস মারপল রয়েছেন ওর সঙ্গে।
মিস মারপল। ভুরু কুঁচকে উঠল কর্নেল মেলচেটের, তাকে আবার ডেকে পাঠিয়েছেন নাকি তোমার স্ত্রী? মহিলা তো এই এলাকার স্থানীয় গোয়েন্দা বলা চলে। একবার আমাদের খুব টেক্কা দিয়েছিলেন।
কথা বলতে বলতে তারা লাইব্রেরি ঘরের সামনে উপস্থিত হলেন।
.
ইতিমধ্যে ডাইনিং রুমে বসে মিসেস ব্যান্ট্রি আর মিস মারপল প্রাতরাশ সেরে নিয়েছেন।
মিসেস ব্যান্ট্রি এলাকায় বিশেষ পরিচিতা। ঘটনার জট খোলা এবং কার্যকারণ খুঁজে বের করার অসাধারণ ক্ষমতা রয়েছে তার–একথা এলাকার সকলেই বিশ্বাস করে।
-ওই অল্পবয়সী মেয়েটার এখানে আসার কথাই আমি ভাবছি। সেন্ট মেরী মিড এমন কোন বেড়াবার জায়গা নয় যে লণ্ডন থেকে কেউ এখানে আসবে। বেসিল ব্লেকের কথাটা মনে পড়ে যাচ্ছে। তার ওখানে মাঝে মাঝে পার্টি হয়।
–মেয়েটার পোশাকও কোন নাচের আসরে যাওয়ার মত। কিন্তু বেসিল ব্লেক–আমি তো তার মাকে চিনি। সেলিনা ব্লেক–আমরা একসঙ্গে স্কুলে পড়েছি।
–বেসিল ব্লেকের পার্টিতে লণ্ডন থেকে অনেকেই আসে। বৃদ্ধা মিসেস বেরীর কাছে শুনেছি যে, সপ্তাহের শেষে মাঝে মাঝেই এক সোনালী চুল তরুণী তার ওখানে এসে থাকে।
-তুমি কি তাহলে মেয়েটাকে সে রকম কেউ ভাবছ?
–মেয়েটিকে অবশ্য সেরকম ভাবে খুঁটিয়ে দেখিনি। একবার মাত্র কটেজের বাগানে . দেখেছিলাম একফালি জাঙ্গিয়া আর কাঁচুলি পরে সূর্যস্নান করছিল।
তুমি যে রকম ভাবছ, তা হতেও পারে।
.
০২.
কর্নেল ব্যান্ট্রি আর কর্নেল মেলচেট–দুই বন্ধুও ওই সময় আলোচনা করছিলেন। কর্নেল মেলচেট সতর্ক দৃষ্টি চারপাশে বুলিয়ে নিয়ে বললেন, তুমি তাহলে বলছ মেয়েটাকে একদম চেনো না।
–একই কথা বারবার কেন আমাকে জিজ্ঞেস করছ বুঝছি না। তুমি কি
–মেজাজ গরম করো না বন্ধু। এটা খুনের ঘটনা–ভেতরের সমস্ত কথাই একসময় প্রকাশ হয়ে পড়বে। পাছে তুমি বিসদৃশ অবস্থায় পড়ে যাও আমি সেকথাই ভাবছি। মেয়েটার সঙ্গে তোমার কোন রকম যোগাযোগ থাকলে সেকথা এখনই বলে দেয়া ভাল। আমি জানি, তুমি কখনও মেয়েটাকে গলা টিপে মারতে পার না। কিন্তু মেয়েটা যে এবাড়িতে এসেছিল–হয়তো তোমার সঙ্গে দেখা করবার জন্যই এসেছিল–এরকম হওয়া অসম্ভব নয়। তুমি ভেবে দেখ।
–মেয়েটাকে জীবনে কখনও দেখিনি।
–তাহলে প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে মেয়েটা তোমার বাড়িতে কেন ঢুকেছিল। সে যে এলাকার কেউ নয় তাতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু তোমার লাইব্রেরিতে সে কি করছিল?
–সে কথা তো আমার জানবার কথা নয়। আমি তাকে ডেকে পাঠাইনি।
–তুমি কোন বেয়াড়া ধরনের চিঠি বা ওরকম কিছু পেয়েছিলে?
–না, ওসব কিছু পাইনি।
–গতরাত্রে তুমি কি করছিলে?
হাল্কা ভাবেই প্রশ্নটা করলেন কর্নেল মেলচেট।
–একটা সভায় গিয়েছিলাম রাত নটার সময়–কেনহ্যামে।
বাড়ি ফিরেছ কটায়?
-ওখান থেকে বেরিয়েছিলাম রাত দশটার পরে। পথে গাড়ির গোলমালে পড়তে হয়েছিল বাড়ি ফিরতে পৌনে বারোটা হয়ে গিয়েছিল।
–সে সময় লাইব্রেরিতে ঢুকেছিলে?
–না।
লাইব্রেরি কে বন্ধ করে?
লরিমার। এ সময়ে সন্ধ্যা সাতটা সাড়ে সাতটার মধ্যেই বন্ধ করে দেয়।
–বুঝেছি। তোমার স্ত্রী?
–আমি বাড়ি ফেরার সময় গভীর ঘুমে ছিল। সন্ধ্যায় লাইব্রেরিতে গিয়েছিল কিনা জিজ্ঞাসা করিনি।
–চাকরদের মধ্যে কেউ এর সঙ্গে জড়িত বলে তোমার মনে হয়?
–না-না, ওরা সবাই অত্যন্ত ভদ্র বংশের মানুষ। এ বাড়িতে বহু বছর ধরে আছে।
কর্নেল মেলচেটও মাথা নেড়ে বললেন, হ্যাঁ, ওদের কাউকে আমারও সন্দেহভাজন মনে হয় না। মেয়েটি সম্ভবতঃ কোন তরুণের সঙ্গে শহর থেকেই এসেছিল।
লণ্ডন-হ্যাঁ, আমারও তাই ধারণা। দাঁড়াও, মনে পড়েছে–বেসিল ব্লেক
–কে সে?
–সিনেমা জগতের সঙ্গে জড়িত এক ছোকরা। আমার স্ত্রীর পরিচিত। ছেলেটির মা তার সঙ্গে পড়াশোনা করেছে। একেবারে বকে যাওয়া ছেলেটি…স্ল্যানসহ্যাম রোডে একটা কটেজ নিয়েছে। মাঝে মাঝে সে এখানে পার্টি দেয়। খুবই হৈ-হুঁল্লোড় আমোদ হয়। শুনেছি সপ্তাহের শেষে সে শহর থেকে সুন্দরী মেয়েদেরও নিয়ে আসে।
-মেয়ে?
–হ্যাঁ। ওই রকম সোনালী চুল একটি মেয়েকে সে গত সপ্তাহের শেষে নিয়ে এসেছিল। কর্নেলকে খুব চিন্তিত মনে হল।
–স্বর্ণকেশী। কর্নেল মেলচেটের কপালেও চিন্তার ভাঁজ পড়ল। হ্যাঁ, একটা সম্ভাবনা আঁচ করা যাচ্ছে…।
কি যেন নাম বললে…তার সঙ্গে একবার কথা বলা দরকার।
তারপর কর্নেল মেলচেট বিদায় নিলেন।
.
সেন্ট মেরী মিডের অধিবাসীদের কাছে বেসিল ব্লেকের কটেজ বুকারের নতুন বাড়ি বলেই পরিচিত। গ্রামের নতুন বাড়ির এলাকায় ওটা কিনেছিলেন মিঃ বুকার। মূল গ্রাম থেকে কটেজের দূরত্ব সিকি মাইলের মত।