আমি একটাই সম্ভাবনা খুঁজে পেলাম। সেটা হল, কোন বিশেষ ব্যক্তির জন্য অ্যালিবাই তৈরি করা। তাহলে সেই বিশেষ ব্যক্তিটি কে?
রুবি কীনের মৃত্যুর ক্ষেত্রে অ্যালিবাই ছিল তিনজনের ক্ষেত্রে–মার্ক গ্যাসকেল, মিসেস জেফারসন আর যোসির।
ওদের পরিকল্পনা কিভাবে কাজ করেছিল, সেটা খুঁজে পাওয়া আপাত দৃষ্টিতে খুবই কঠিন বলে বোধ হবার কথা। অথচ ব্যাপারটা ছিল খুবই সরল।
প্রথমত বেছে নেওয়া হয়েছিল হতভাগ্য পামেলাকে। ফিল্মের টোপ ফেলে তাকে সহজেই বশ করা গিয়েছিল। ফিল্মে নামার সম্ভাবনাটাকে খুব বিশ্বাসযোগ্য ভাবে তার সামনে তুলে ধরেছিল মার্ক গ্যাসকেল। লোভ সামলাতে না পেরে টোপ গিলে নিয়েছিল সে।
মার্ক গ্যাসকেল তার জন্য হোটেলে অপেক্ষা করে ছিল। পামেলা হোটেলে আসে। সে মেয়েটিকে পাশের দরজা দিয়ে যোসির কাছে নিয়ে যায়। মেয়েটিকে তার পরিচয় দেয় একজন মেকআপ বিশেষজ্ঞ বলে।
হতভাগ্য সরল মেয়েটির কথা ভাবলে আমার খুব কষ্ট হয়।
বাথরুমে বসে যোসি ওর চুল আর মুখে প্রসাধনী লাগিয়ে দেয়। হাত ও পায়ের নখে । নখপালিশ লাগিয়ে দেয়। এরই মাঝখানে তাকে ওরা সম্ভবতঃ কোন আইসক্রীম বা সোডার মধ্য দিয়ে ওষুধও প্রয়োগ করে। ফলে পামেলা আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে।
শুনেছি হোটেলের ঘরগুলো সপ্তাহে একবার মাত্র সাফ করা হয়। এই সুযোগটা ওরা নিয়েছিল। পাশের কোন খালি কামরাতেই তারা পামেলাকে রেখে দেয়।
ডিনারের পর মার্কা গ্যাসকেল তার গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গিয়েছিল। সে জানিয়েছিল সমুদ্রের দিকে যাচ্ছে। সেই সময়েই সে পামেলার দেহ মিঃ ব্লেকের কটেজে নিয়ে যায়।
গাড়িতে তুলবার আগেই রুবির একটা পুরনো পোশাক পামেলাকে পরিয়ে নিয়েছিল। তখনো সে মারা যায়নি, অজ্ঞান হয়ে ছিল। তারপর কটেজে চুল্লীর সামনে কার্পেটের ওপরে নামিয়ে দেয়। তারপর পামেলার ফ্রকের বেল্ট দিয়ে সে তাকে শ্বাসরোধ করে খুন করে। স্বস্তির বিষয় যে এই নৃশংস কাজটা বেচারী মেয়েটা টের পায়নি। ওই নিষ্ঠুর লোকটা–মার্ক গ্যাসকেল ওকে ফাঁসির দড়িতে ঝুলতে না দেখলে আমার শান্তি হবে না।
রাত দশটার মধ্যেই সমস্ত কাজ সারা হয়ে গিয়েছিল। মিঃ ব্লেকের কটেজ থেকে বেরিয়ে সে দ্রুত গাড়ি হাঁকিয়ে হোটেলে ফিরে আসে।
সেই সময় রুবি কীন রেমণ্ডের সঙ্গে নাচছিল। মেয়েটা সবসময়ই যোসি যেভাবে বলত তাই মেনে চলতে অভ্যস্ত ছিল। আমার ধারণা যোসি আগেই তাকে কিছু বলে রেখেছিল। সেই মতই সে নাচের শেষে পোশাক বদলে যোসির ঘরে চলে এসেছিল। তাকেও মাদক প্রয়োগ করা হয়েছিল। যার ফলে দেখা গেছে তরুণ বাৰ্টলেটের সঙ্গে কথা বলার সময় সে হাই তুলছিল।
রেমণ্ড যোসিকে জানিয়েছিলে, রুবিকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছে না। এদিকে রাতের দ্বিতীয় নাচের সময় হয়ে আসছিল।
যোসি রেমণ্ডকে নিয়ে ওকে খুঁজতে আসে। রুবিকে ঘরে অনুসন্ধান করা হয়। তবে রুবির ঘরে ঢুকেছিল যোসি নিজে। আর কেউ না।
সম্ভবতঃ সেই সময়ই সে মেয়েটিকে শেষ করে। হয় ইনজেকশান দিয়েছে নয়তো মাথায় আঘাত করে।
এরপর নিচে গিয়ে যোসি রেমণ্ডকে বলে, রুবিকে বদলে সেই তার সঙ্গে নাচবে। এবং দুজনেই নাচে অংশ নেয়। তারপর শুতে যায়।
রুবির দেহ সেভাবেই পড়েছিল। ভোরে উঠে যোসি রুবির পামেলার পোশাক পরিয়ে দেয়। পাশের সিঁড়ি দিয়ে তাকে বাইরে নিয়ে যায়।
যোসির বয়স কম, স্বাস্থ্যবতী, কাজটা করতে তার কোন অসুবিধা হয়নি। এরপর সে বার্টলেটের গাড়ি নিয়ে দুমাইল দূরে খনির দিকে চলে যায়। গাড়ির গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়।
এরপর সে আবার হোটেলে ফিরে আসে।
সকলে মন্ত্রমুগ্ধের মত শুনছিলেন মিস মারপলের ব্যাখ্যা। সবার আগে কথা বললেন কর্নেল মেলচেট।
–খুবই জটিল ছক।
কাজও নিখুঁত, বললেন মিস মারপল, নখের গোলমালের ব্যাপারটা যোসি ঠিক লক্ষ্য করেছিল। সেজন্য সে কোন ত্রুটি রাখতে চায়নি, রুবির একটা নখ ভেঙ্গে শালের ওপর লাগিয়ে রেখেছিল। যাতে পরে দরকার হলে বলতে পারে রুবি তার সব নখ কেটে ফেলেছে।
-হ্যাঁ, সবদিকেই সতর্ক নজর ছিল, হার্পার বললেন, আপনি যে প্রমাণ পেয়েছিলেন তা ছিল কোন স্কুলের মেয়ের কামড়ানো নখ।
–মার্ক গ্যাসকেল বেশি কথা বলে। রুবির সম্পর্কে সে বলেছিল, তার দাঁত ভেতরে ঢোকানো। কিন্তু কর্নেল ব্যান্টির লাইব্রেরিতে যে মৃতদেহ পাওয়া যায় তার দাঁত ছিল উঁচু, বাইরে ঠেলে বেরিয়ে আসা।
কনওয়ে জেফারসন গম্ভীর হয়ে বসেছিলেন। বললেন, শেষের ওই নাটকীয় দৃশ্যটাও নিশ্চয়ই আপনারই কল্পনা প্রসূত, মিস মারপল?
–তা বলতে পারেন। সম্পূর্ণ নিশ্চিত হবার জন্যই পরিকল্পনা নিতে হয়েছিল। ব্যাপারটা হল, আপনি একটা নতুন উইল করতে চলেছেন, এই কথা এরা দুজন যখনই শুনল, বুঝতে পারল, তার আগেই একটা কিছু করা দরকার।
তাদের দরকার টাকার। টাকার জন্য ইতিমধ্যেই দুটো খুন করা হয়েছিল, প্রয়োজনে তৃতীয় খুনটি করবার জন্যও তারা পিছপা ছিল না।
মার্ককে ঝামেলার বাইরে রাখার দরকার ছিল নানা কারণেই। তাই আলিবাই তৈরি করার উদ্দেশ্যেই সে লণ্ডনে চলে গিয়েছিল।
সেখানে সে বন্ধুদের সঙ্গে রেস্তোরাঁয় ডিনার খায়, পরে নৈশ ক্লাবেও যায়।
কাজটা করার দায়িত্ব ছিল যোসির। মিঃ জেফারসনের মৃত্যু ঘটানো।