বুঝতে পেরেছিলাম, মেয়েটির মৃত্যুতে লাভবান হবে দুজন লোক। পঞ্চাশ হাজার পাউণ্ড নেহাৎ ছেলেখেলা নয়। বিশেষ করে যার অর্থনৈতিক অবস্থা সঙ্গীন।
ওই দুজন লোকেরও অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। যদিও তাদের দুজনকেই বাইরে থেকে খুবই ভদ্র মানুষ বলে মনে হয়েছিল। সন্দেহ করার মত নয়। তবু কিছুই তো বলা যায় না।
মিসেস জেফারসন যেভাবে জীবন কাটিয়ে চলেছিলেন, শ্বশুরের ওপর নির্ভরশীলতার জীবন, তাতে তিনি হাঁপিয়ে উঠেছিলেন। গত গ্রীষ্মকাল থেকে তার মধ্যে অসহিষ্ণুতা প্রকাশ পেতে শুরু করেছিল। যদিও তিনি জানতেন। ডাক্তার জানিয়েছিলেন, তার শ্বশুর বেশিদিন বাঁচবেন না। রুবি কীনের আবির্ভাব না হলেও অবস্থাটা মোটামুটি মানিয়ে নিয়ে চলার মতই ছিল।
মিসেস জেফারসন তার ছেলেকে খুবই ভালবাসতেন। সন্তানের ভালর জন্য কোন অপরাধকে নৈতিক দিক থেকে সঠিক বলে মনে করে এমন বহু স্ত্রীলোক দেখা যায়। মিসেস জেফারসন ছিলেন সেই শ্রেণীর।
মিঃ মার্ক গ্যাসকেল স্বভাবতই সন্দেহ করার মত মানুষ। তিনি জুয়ায় আসক্ত ছিলেন, তাঁর নৈতিক চেতনাও তেমন জোরালো ছিল না। তবু তাকে আমি উপেক্ষা করেছিলাম।
বিশেষ কতগুলো কারণে আমার ধারণা হয়েছিল এই হত্যার ঘটনার সঙ্গে কোন স্ত্রীলোক জড়িত।
তবে এই দুজনের ব্যাপারটা অর্থের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখেও আমি হতাশ হয়েছিলাম। কেননা রুবি কীনের মৃত্যুর সময়ে এদের দুজনেরই জোরালো অ্যালিবাই ছিল।
এর পরেই পাওয়া গেল দগ্ধ গাড়িটা আর তার মধ্যে পামেলা রিভসের দেহ। এই ঘটনার পরেই সমস্ত কিছু আমার চোখের সামনে পরিষ্কার হয়ে গেল। আমি বুঝে গেলাম ওই অ্যালিবাইয়ের কোন মূল্য নেই।
এভাবে মূল ঘটনার দুটো অংশ আমার হাতে এল। কিন্তু অত্যন্ত বিশ্বাসযোগ্য হওয়া সত্ত্বেও দুটো ঘটনাকে মেলাতে পারছিলাম না। বুঝতে পারছিলাম কোথায় একটা যোগসূত্র আছে, কিন্তু আমি তা খুঁজে পাচ্ছিলাম না।
যে লোকটিকে অপরাধী বলে সন্দেহ করছিলাম, তার কোন মোটিভই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। স্বীকার করতেই হয়, আমি খুবই বোকামী করে ফেলেছিলাম। ডিনা লীর সঙ্গে দেখা হবার পর কথাটা আমার মনে পড়ে। অথচ অত্যন্ত স্বাভাবিক একটা ব্যাপার।
বিবাহ! সমারসেট হাউস। কেবল মিঃ গ্যাসকেল বা মিসেস জেফারসনের বিয়েই নয়। আরও একটা বিয়ের সম্ভাবনা ছিল।
ওই দুজনের কারো বিয়ে হয়ে থাকলেও, এই বিয়ের চুক্তিতে অন্য আর একজনেরও জড়িত থাকার কথা।
রেমণ্ডের মনে এমন ভাবনা থাকতেই পারত যে একজন ধনী স্ত্রী পাবার তার সম্ভাবনা ছিল। মিসেস জেফারসনের প্রতি সে গভীরভাবে আকৃষ্ট ছিল। আর তার প্রেরণাতেই মিসেস জেফারসন একটা সময়ে বৈধব্যের জীবন থেকে বেরিয়ে আসার জন্য বিশেষভাবে চঞ্চল হয়ে উঠেছিলেন।
রেমণ্ড ছাড়া আর একজন ছিলেন। তিনি হলেন মিঃ ম্যাকলীন। তাকে মিসেস জেফারসন খুবই পছন্দ করতেন। শেষ পর্যন্ত হয়তো তিনি তাকেই বিয়ে করতেন।
মিঃ ম্যাকলীন আর্থিক দিক থেকে খুবই দুরবস্থার মধ্যে ছিলেন। আর তিনি ডেনমাউথ থেকে সে রাতে খুব দূরেও ছিলেন না। সেকারণেই আমার ভাবনাচিন্তা আমি একজনের মধ্যেই কেন্দ্রীভূত করে নিয়েছিলাম। কেননা এদের যে কোন একজনের পক্ষে কাজটা করে ফেলা অসম্ভব কিছু নয়।
তবে ওই দাঁতে নখ কাটার ব্যাপারটাই আমাকে জানিয়ে দিয়েছিল খুনী কে।
–সেই নখ। সবিস্ময়ে বলে উঠলেন স্যার হেনরী, একটা নখ ভেঙ্গে যাওয়ায় বাকি নখ তো সে কেটে ফেলেছিল।
–কথাটা কিন্তু ঠিক নয় স্যার হেনরী। কেননা দাঁতে কাটা নখ আর এমনি ভেঙ্গে যাওয়া নখ কিন্তু আলাদা। মেয়েদের নখ সম্বন্ধে যাদের ধারণা আছে তারা আমার কথাটা অস্বীকার করবেন না। নখগুলো ছিল বাস্তব ঘটনা। তা না হলে আর একটা অর্থই হতে পারে। কর্নেল ব্যান্ট্রির লাইব্রেরী ঘরে যে মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছিল সেটা রুবি কীনের নয়।
যে এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত, এই সূত্র সরাসরি তার দিকেই আঙ্গুলি নির্দেশ করছিল। লাশটা সনাক্ত করেছিল যোসি। সে ভাল ভাবেই জানত দেহটা রুবি কীনের নয়। লাইব্রেরি ঘরে দেহটা দেখার পরে সে খুবই ধাঁধায় পড়ে গিয়েছিল। সব রহস্য ফাঁস করে দেবার মুখে প্রায় চলে এসেছিল সে। কারণ সে জানত দেহটা কোথায় পাওয়ার কথা ছিল।
সে জানত, দেহটা পাওয়ার কথা ছিল বেসিল ব্লেকের কটেজে। আপনাদেরও নিশ্চয় মনে পড়বে, যোসিই বেসিলের দিকে ইঙ্গিত করেছিল। সে রেমণ্ডকে জানিয়েছিল রুবি হয়তো ফিল্মের লোকটার কাছে গিয়ে থাকতে পারে।
আরও একটা কাজ সে আগেই করে রেখেছিল। বেসিলের একটা ফটো রুবির হাতব্যাগে তার অগোচরে ঢুকিয়ে রেখেছিল।
যোসি এমন একটা মেয়ে যে টাকা ছাড়া দুনিয়ায় আর কিছু চেনে না। তার বাস্তবজ্ঞান টনটনে, আর অত্যন্ত কুটিল। এসব মানুষ নখের মতই শক্ত ধাতের হয়ে থাকে।
তাহলে কি দাঁড়াচ্ছে, দেহটা যখন রুবি কীনের নয়, তখন অবশ্যই আর কারও হবে। কিন্তু সে কে? সম্ভাবনা তো একটাই–যে মেয়েটি নিরুদ্দেশ বলে জানা যায়। নিশ্চয় তার দেহ–সে হল পামেলা রীভস।
বয়সের দিকটা লক্ষ্য করুন। রুবিন ছিল আঠারো, পামেলার মোল। দুজনেই স্বাস্থ্যবতী এবং অপক।
আমি ব্যাপারটা একটু নেড়েচেড়ে ভাববার চেষ্টা করলাম। পেছনে এমন কি ব্যাপার কাজ করছে যাতে ব্যাপারটাকে এমন গোলমেলে করে তুলবার দরকার হল?