মিস মারপল…তিনিও কি নিশ্চিত?
একটু থেমে তিনি আবার বললেন, আপনি সব ব্যাপার আমার হাতে ছেড়ে দিন স্যার। কয়েকজন লোককে লাগিয়ে রাখব–নতুন করে আর কোন ঘটনা আমি ঘটতে দেব না।
–আর একটা কথা।
স্যার হেনরি একটুকরো কাগজ টেবিলের ওপরে এগিয়ে ধরে বললেন, এই কাগজটা দেখে নাও।
কাগজটার ওপর চোখ বুলিয়েই হাপারের মুখভাব বদলে গেল। তিনি উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বলে উঠলেন, এই ব্যাপার? তাহলে গোটা ব্যাপারটাই অন্যরকম দাঁড়িয়ে গেল। এটা খুঁজে বের করলেন কি করে?
-বিয়ের ব্যাপারে মেয়েদের আগ্রহের কথাটা তো তোমার অজানা নয়।
–তার ওপরে স্যার, বয়স্কা অবিবাহিতা স্ত্রীলোক।
.
স্যার হেনরি নিচে নেমে এসে পোর্টারের কাছে খোঁজ নিলেন মিঃ গ্যাসকেলের।
সে জানাল, তিনি তো এই মাত্র গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেলেন, লণ্ডন যাবেন।
–মিসেস জেফারসন?
–তিনিও একটু আগেই শুতে গেলেন। লাউঞ্জ আর বলরুমের দিকে একবার তাকিয়ে নিলেন স্যার হেনরি। বলরুমে নাচগান চলছে।
শুতে যাবার সময় হয়ে গিয়েছিল। স্যার হেনরি ওপরে উঠে গেলেন।
.
রাত তখন তিনটে। নিস্তব্ধ চরাচর। শান্ত সমুদ্রের বুকে লুটোপুটি খাচ্ছে চাঁদের আলো।
কনওয়ে জেফারসনের শোবার ঘর থেকে তাঁর চাপা শ্বাসপ্রশ্বাসের শব্দ শোনা যাচ্ছিল। বালিশে পিঠ রেখে উঁচু হয়ে শুয়েছিলেন তিনি।
বাইরে বাতাসের বেগ কমে এসেছিল। তবু একসময় জানালার পর্দা নড়ে উঠল। কয়েক মুহূর্ত পরেই সামান্য ফাঁক হল পর্দা। তার আড়ালে চাঁদের আলো আঁধারিতে দেখা গেল একটা অস্পষ্ট ছায়ামূর্তি।
পর্দা আবার যেমনকার তেমনি হয়ে গেল। চারপাশে অখণ্ড নিস্তব্ধতা।
ঘরের ভেতরে সন্তর্পণে একজন আগন্তুক নড়েচড়ে উঠল। নিঃশব্দে পা ফেলে বিছানার দিকে এগিয়ে চলেছে।
বালিশের ওপরে গভীর শ্বাসপ্রশ্বাসের শব্দ তবু থামল না। মিঃ জেফারসন তৈরি হয়েই ছিলেন। বুড়ো আঙুল আর তর্জনী দিয়ে চামড়ার কিছু অংশ টেনে ধরলেই হয় এখন। অপর হাতে ধরা হাইপোডারমিক সিরিঞ্জটা কাজে লাগাতে পারবেন।
ঠিক এমনি সময়েই অন্ধকারের ভেতর থেকে একটা হাত বেরিয়ে এসে সিরিঞ্জ ধরে রাখা হাতটা চেপে ধরল। অন্য হাত তার দেহটা সবলে জাপটে ধরল।
অন্ধকারের ভেতর ভাবলেশহীন একটা কণ্ঠস্বর জেগে উঠল, না, একাজ করতে দেব না। উঁচটা আমার চাই।
দপ করে আলো জ্বলে উঠল। ঠিক সেই মুহূর্তে বালিশে পিঠ রেখে জেগে থাকা মিঃ জেফারসন দেখতে পেলেন তার সামনে দাঁড়িয়ে রুবি কীনের হত্যাকারী।
.
২০.
–আপনার তদন্তের কৌশলটা আমাদের জানতে ইচ্ছে করছে মিস মারপল।
সবার প্রথমে কথা বললেন স্যার হেনরি ক্লিদারিং।
–আমার জানার আগ্রহ হচ্ছে প্রথম কিভাবে আপনি সন্দেহ করতে শুরু করলেন। বললেন সুপারিন্টেন্টে হার্পার।
এবারেও আপনি বাজি মাৎ করলেন মিস মারপল। আপনি সত্যিই অসাধারণ। গোড়া থেকে সবকথা আমরা শুনতে চাই। বললেন কর্নেল মেলচেট।
মুহূর্তের জন্য মুখ লাল হয়ে উঠলেও সচেতনভাবে সামলে নিলেন মিস মারপল।
সপ্রতিভ কণ্ঠে তিনি বললেন, আমার পদ্ধতির কথা শুনলে আপনাদের সকলেরই খুবই অপেশাদার সুলভ বলে মনে হবে।
আসলে কি জানেন, বেশিরভাগ মানুষই, এমনকি পুলিসও সরলভাবে সবকিছুই বিশ্বাস করে নেয়। আমি কিন্তু উল্টো পাপে ভরা পৃথিবীর কোন কিছুই আমি নিজে যাচাই না করে কখনো বিশ্বাস করি না।
-এটাই সঠিক মনোভাব বললেন স্যার হেনরি।
–একেবারে গোড়া থেকেই এই ঘটনার কয়েকটা বিষয় ঠিক বলে ভেবে নেওয়া হয়েছিল, বললেন মিস মারপল, কিন্তু এই ঘটনাগুলো আমি ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখেছিলাম।
নিহত মেয়েটির বয়স খুবই অল্প ছিল। দাঁতে নখ কাটার অভ্যাস ছিল তার। লক্ষ্য করেছিলাম তার দাঁত একটু বাইরে ঠেলে বেরিয়ে থাকত। ছেলেবেলা থেকে দাঁতে নখ কাটার অভ্যাস বন্ধ করতে না পারলে সহজে দূর করা যায় না।
এত অল্প বয়সী একটি মেয়ের মৃত্যু খুবই দুঃখজনক। বুঝতে পেরেছিলাম শয়তান চরিত্রের লোক ছাড়া এমন নৃশংস কাজ কারোর পক্ষে সম্ভব নয়।
ব্যাপারটা শুরু থেকেই ছিল বড় গোলমেলে। মৃতদেহটা পাওয়া গিয়েছিল কর্নেল ব্যান্ট্রির লাইব্রেরি ঘরে। যোগাযোগ ভেবে নেওয়া খুবই কঠিন।
আসলে ব্যাপারটা ওলটপালট হয়ে গিয়েছিল। তাই এমন গোলমেলে হয়ে উঠেছিল।
আসল মতলবটা ছিল, মৃতদেহটার দায় বেসিল ব্লেকের কাঁধে চাপিয়ে দেওয়া। অনেক দিক থেকেই তাকে ফাঁসানো যেত। কিন্তু সে মৃতদেহটা কর্নেল ব্যান্ট্রির লাইব্রেরিতে চালান করে দিয়েছিল। আসল খুনী এতে খুবই অস্বস্তিতে পড়ে গিয়েছিল। আর আমাদেরও অনেকটা সময় নষ্ট হয়ে যায়।
স্বাভাবিক ভাবেই পুলিসের সন্দেহ মিঃ ব্লেকের ওপরেই পড়ত। খোঁজ নিলেই তারা জানতে পারত, সে মেয়েটিকে চিনত। আরও জানা যেত সে অন্য আর একটি মেয়ের সঙ্গেও মেলামেশা করে।
পুলিস ধরে নিত, রুবি কোন ভাবে ব্ল্যাকমেল করতে এসেছিল মিঃ ব্লেককে। তখন তাকে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়। নৈশ ক্লাবগুলোতে সাধারণতঃ এ ধরনের অপরাধই ঘটে থাকে।
কিন্তু ব্যাপারটা ঘুরে গিয়েছিল অন্য দিকে। সকলের দৃষ্টি পড়েছিল জেফারসন পরিবারের ওপর। আর এই ব্যাপারটা বিশেষ একজনের খুবই বিরক্তির কারণ হয়ে উঠেছিল।
আমার যে প্যাঁচালো মন, আগেই তা বলে দিয়েছি। কোন কিছু সোজা ভাবে নিতে আমি অভ্যস্ত নই। আমি অর্থের দৃষ্টিকোণ থেকেই ব্যাপারটা দেখার চেষ্টা করি। অবশ্য এরকম না ভেবে উপায় ছিল না।