ছকটা নিজের মনে গোছাতে গোছাতে বেসিলকে নিয়ে বেরিয়ে যান স্ল্যাক।
ডিনা মিস মারপলের দিকে তাকাল। তার চোখে কাতরতা।
–আমি জানি না। আপনি কে–কিন্তু বেসিল কখনও এমন কাজ করেনি।
–আমি জানি সে করেনি। কে করেছে তাও জানি। তবে প্রমাণ করতে একটু সময় লাগবে।
.
১৮.
বাড়ি ফিরেই স্টাডি রুমে ঢুকলেন মিসেস ব্যান্ট্রি। রাজকীয় ভঙ্গিতে ঘোষণা করলেন, আমি ফিরে এলাম আর্থার।
কর্নেল ব্যান্ট্রি লাফিয়ে উঠে স্ত্রীকে আদর করে কাছে টেনে নিলেন।
-খুব ভাল হল।
স্বামীর দিকে তাকিয়ে মিসেস ব্যান্ট্রির মনে হল, তিনি যেন কেমন চুপসে গেছেন। একটু কৃশও। চোখের কোণে কালি পড়েছে।
–ডেনমাউথে কেমন কাটালে বল। বললেন কর্নেল ব্যান্ট্রি।
–খুব মজা হল। তুমি তো জেফারসনদের পছন্দ করতে। তুমি গেলে খুব আনন্দ হত।
–যেতে পারলাম না, অনেক কাজ।
ব্র্যাফফাডসায়ারে তোমাদের সভা কেমন হল? তুমিই তো সভাপতি
–কিন্তু ইয়ে মানে..আমি যাইনি।
মিসেস ব্যান্ট্রি থমকে গেলেন। কড়া স্বরে বললেন, বৃহস্পতিবার ডাফের সঙ্গে ডিনারের কথা ছিল
-ওহ, হা–সেটা বন্ধ রাখা হয়েছিল। ওদের রাঁধুনি অসুস্থ।
–গতকাল তো জেলরদের কাছে যাওয়ার কথা ছিল।
–শরীর ভাল নেই বলে ওদের টেলিফোন করে জানিয়ে দিয়েছিলাম।
.
খুবই বিরস মুখে বসেছিলেন মিসেস ব্যান্ট্রি। এমন সময় মিস মারপল ঘরে ঢুকলেন।
-তোমাকে টেলিফোন করে কোথাও পেলাম না জেন। তাই ভাবছিলাম কি করব, বললেন মিসেস ব্যান্ট্রি, সবকিছুই বিশ্রী লাগছে। লোকে আর্থারকে এড়িয়ে চলতে আরম্ভ করেছে। ও কেমন যেন বুড়োটে হয়ে গেছে। জেন, তুমি একটা কিছু কর। আমার ভয় করছে।
–ভাবনার কিছু নেই, ডলি। বললেন মিস মারপল।
কর্নেল ব্যান্ট্রি ঘরে ঢুকলেন। মিস মারপলকে দেখে খুশি হলেন।
–একটা খবর দিতে এলাম। বললেন মিস মারপল, রুবি কীনের হত্যাকারী হিসেবে বেসিল ব্লেককে পুলিস গ্রেপ্তার করেছে। তবে সে খুন করেনি। সে লাশটাকে আপনার লাইব্রেরিতে এনে রেখেছিল।
–একদম বাজে কথা। নিশ্চয়ই খুন করেছে। বললেন কর্নেল ব্যান্ট্রি।
–সে মেয়েটির মৃতদেহ তার কটেজেই দেখতে পায়।
–গল্পটা পুলিস বিশ্বাস করল? ভাল মানুষ হলে তো সঙ্গে সঙ্গে পুলিসকে জানানো উচিত ছিল।
–ঠিকই বলেছেন। বললেন মিস মারপল। কিন্তু সবার স্নায়ু তো আপনার মত দৃঢ় নয়। আজকালকার তরুণ প্রজন্ম একেবারেই আলাদা।
একটু থেমে তিনি পরে বললেন, বেসিলের সম্পর্কে অনেক কথাই আমি শুনেছি। ছেলেটি আঠারো বছর বয়সে এ আর পি-র হয়ে কাজ করেছে। একবার একটা জ্বলন্ত বাড়িতে ঢুকে চারটি শিশুকে পরপর উদ্ধার করেছিল। এরপর একটা কুকুরকে বাঁচাতে জ্বলন্ত বাড়িটাতে ঢুকেছিল। সবাই ওকে বারণ করেছিল। বাড়িটা ওর ওপরেই ভেঙ্গে পড়ে। ওকে উদ্ধার করা হয়েছিল। বুকে চোট লেগেছিল-বহুদিন শয্যাশায়ী ছিল। এরপরেই সে নকশা আঁকার কাজে হাত দিয়েছিল।
-ওহ, অসাধারণ। কর্নেল লজ্জিত স্বরে বললেন, আমি ইয়ে–এতসব জানতাম না।
বেসিল এসব বলে বেড়ায় না। বললেন মিস মারপল।
–এটাই উপযুক্ত কাজ। ছেলেটা দেখছি, যা ভেবেছিলাম তা নয়। না জেনে শুনে হঠাৎ কিছু ভেবে নেয়া ঠিক কাজ হয়নি। যাই হোক, এটা খুবই দুর্বোধ্য ঠেকছে, আমার ওপরে ও কেন খুনের দায় চাপিয়ে দেবার চেষ্টা করেছিল?
–আমার মনে হয়, সে ঠিক এভাবে ব্যাপারটাকে ভাবতে চায়নি। বললেন মিস মারপল, নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ব্যাপারটাকে একটা তামাশা বলেই মনে করেছিল, আমার ধারণা।
নেশাগ্রস্ত অবস্থায় কিছু করে থাকলে অবশ্য তাকে দোষ দেওয়া যায় না। আপনি বিশ্বাস করেন না সে খুন করেছিল?
–সে খুন করেনি, এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত।
–কে করেছে সে বিষয়ে কোন
মিস মারপল মাথা নেড়ে সায় দিলেন।
–জেন, তুমি বাঁচালে। আমি জানতাম তুমিই পারবে।
উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠলেন মিসেস ব্যান্ট্রি।
–তাহলে খুনী কে?
–এজন্যেই আপনার সাহায্য দরকার। আমরা যদি সমারসেট হাউসে যাই তাহলে, সেটা পরিষ্কার ভাবে জেনে যেতে পারব।
.
১৯.
স্যার হেনরির মুখ গম্ভীর হল। তিনি বললেন, ব্যাপারটা আমার ভাল লাগছে না।
–আমি জানি, আপনার কাছে এটা নীতিসম্মত বলে মনে হবে না। তবে অন্তত নিশ্চিত হয়ে নেবার পক্ষে এটা না করে উপায় নেই। মিঃ জেফারসন যদি রাজি হন ।
–তাহলে হার্পারকেও তো সঙ্গে নিতে হয়।
-না, তার পক্ষে বেশি জেনে ফেলা ঠিক হবে না। তবে আপনি খানিকটা ইঙ্গিত দিয়ে রাখতে পারেন, যেমন কোন বিশেষ ব্যক্তির ওপর নজর রাখা বা ওই রকম একটা কিছু।
–হ্যাঁ, এটা করা চলতে পারে।
–স্যার হেনরি বললেন ধীরে ধীরে।
.
–আপনি কি আমাকে কোন ইঙ্গিত করতে চাইছেন স্যার?
সুপারিন্টেন্টে হার্পার স্যার হেনরি ক্লিারিংকে সসম্ভ্রমে জিজ্ঞেস করলেন।
–আমার বন্ধু আপনাকে যেটুকু জানাতে বলেছেন, আপনাকে আমি শুধু সেটুকুই জানাচ্ছি। এর মধ্যে গোপনীয়তা কিছু নেই। তিনি আগামীকাল ডেনমাউথে একজন সলিসিটারের কাছে যাচ্ছেন–একটা নতুন উইল করার ইচ্ছা তার।
হাপারের ভ্রু কুঁচকে উঠল। তিনি বললেন, মিঃ কনওয়ে জেফারসন একথা কি তার জামাতা ও পুত্রবধূকে জানিয়েছেন?
–আজ সন্ধ্যায়ই কথাটা জানাবেন।
-বুঝলাম, হার্পার চিন্তিত ভাবে বললেন, তাহলে বেসিল ব্লেকের অপরাধ সম্পর্কে আপনি নিশ্চিত নন, স্যার?
-আপনি নিজে নিশ্চিত নিশ্চয়ই?