–আপনার চুল্লীর সামনে কোন কার্পেট নেই দেখছি। অন্তরঙ্গ স্বরে বললেন মিস মারপল।
অবাক হয়ে ঘুরে তাকাল ডিনা লী। বৃদ্ধা যে তাকে খুঁটিয়ে দেখতে বুঝতে পারল।
-এটা কিন্তু বিপজ্জনক। আগুনের ফুলকি ছিটকে পড়তে পারে। বললেন মিস মারপল।
ডিনা লী মিষ্টি করে বলল, কোথায় যে রাখা আছে, জানি না। এই নিন
সে ব্যাগ থেকে আধ ক্রাউন বার করে বাড়িয়ে ধরল।
–অসংখ্য ধন্যবাদ। মিস মারপল বই খুললেন, কি নাম লিখব?
–লিখুন মিস ডিনা লী।
–এ বাড়িতে মিঃ বেসিল ব্লেকের বলেই শুনেছি।
–হ্যাঁ। আর আমি মিস ডিনা লী।
স্বামীর সঙ্গে রয়েছেন অথচ কুমারী নাম বলছেন–এখানকার গ্রামীণ জীবনে ওটা ব্যবহার না করাই ভাল।
–আপনি কিভাবে জানলেন আমরা বিবাহিত? আপনি নিশ্চয়ই সমারসেট হাউসে যাননি?
–সমারসেট হাউস? ওহ না। তবে আন্দাজ করতে কষ্ট হয়নি। কিন্তু জানেন তো গ্রামে। সহজেই নানা কথা রটনা হয়ে যায়। আপনাদের মধ্যে যে ধরনের ঝগড়াঝাটি হয়েছিল সেটা। অবৈধ সম্পর্কের ক্ষেত্রে বেমানান। তারা ঝগড়া করতে সাহস পায় না। বিবাহিত স্বামী স্ত্রীর মধ্যেই প্রথম দিকে এই ঝগড়াঝাটি বেশ উপভোগ্য হয়।
-হ্যাঁ, মানে
ডিনা লী বলতে গিয়ে হেসে ফেলল। সে বসে বলল, আপনি অসাধারণ। কিন্তু আমাদের সম্পর্কের কথাটা সম্মানজনকভাবে প্রকাশের কথা বলছেন কেন?
–কারণ যে কোন মুহূর্তেই আপনার স্বামীকে খুনের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হতে পারে।
.
১৭.
–বেসিল..খুন করেছে বলছেন? আপনি কি সেই ম্যাজেস্টিক হোটেলের মেয়েটির কথা বলছেন?
-হ্যাঁ।
–কিন্তু ও তো একদম বাজে কথা।
ঠিক সেই সময়েই বাইরে একটা গাড়ির শব্দ শোনা গেল। দুহাতে কয়েকটা বোতল নিয়ে বেসিল ব্লেক দরজা খুলে ভেতরে ঢুকল।
ডিনা লী উঠে দাঁড়িয়ে রুদ্ধশ্বাসে বলে উঠল, উনি কি বলছেন শোন তো। সেই মেয়েটাকে খুন করার অপরাধে তোমাকে নাকি গ্রেপ্তার করা হবে।
–ওহ ভগবান।
বেসিল ব্লেকের হাত থেকে বোতলগুলো সোফার ওপর পড়ে গেল। সে ধপ করে একটা চেয়ারে বসে পড়ে দুহাতে মুখ ঢাকল।
–বেসিল, আমি জানি একথা সত্য নয়। আমার দিকে তাকাও বেসিল। তুমি তো তাকে চিনতেই না, তাই না?
-হ্যাঁ, উনি ওকে জানতেন। বললেন মিস মারপল।
-চুপ করুন। বেসিল তীক্ষ্ণস্বরে বলে উঠল, ম্যাজেস্টিক হোটেলে দু-একবার ওর সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল মাত্র। তুমি একথা বিশ্বাস কর ডিনা?
ডিনা হতভম্ব হয়ে জিজ্ঞেস করল, আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না, তোমার ওপরে তাহলে সন্দেহ পড়ছে কেন?
কার্পেটটা কি করেছেন? মিস মারপল বলে উঠলেন।
–ডাস্টবিনে ফেলে দিয়েছি।
আর্তনাদের স্বরে বেসিলেন গলা চিড়ে বেরিয়ে এল কথাগুলো।
-কাজটা খুব বোকার মত হয়ে গেছে। ওর মধ্যে নিশ্চয় মেয়েটির পোশাকের আঁশ লেগেছিল।
–হ্যাঁ। সেটা কিছুতেই তুলে ফেলতে পারিনি।
–এসব কি বলছ তোমরা!
তীব্র স্বরে চিৎকার করে উঠল।
–ওকে জিজ্ঞেস কর, তিক্তস্বরে বলল বেসিল, উনি মনে হচ্ছে সবই জানেন।
-আমি অনুমান করতে পারছি। তাহলে শুনুন বলছি, বললেন মিস মারপল, আমার মনে হয় এক পার্টিতে আপনার স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া হওয়ার পর আপনি গাড়ি চালিয়ে এখানে চলে এসেছিলেন। সে রাতে মাত্রা ছাড়িয়ে পান করার ফলে সময়টা নিশ্চয়ই খেয়াল করতে পারেননি।
-রাত প্রায় দুটোর সময় বাড়িতে ফিরে এসেছিলাম। বলল বেসিল, দরজা খুলে আলো জ্বালাতেই চোখে পড়ল
-হ্যাঁ বাকিটা আমি বলছি, বললেন মিস মারপল, দেখলেন সামনে কার্পেটের ওপরে একটা মেয়ের অসাড় দেহ পড়ে আছে। সান্ধ্য পোশাকে শ্বাসরুদ্ধ একটি মেয়ে।
-হ্যাঁ, মুখ প্রায় নীল হয়ে গিয়েছিল, ফোলা, দেখে মনে হয়েছিল অনেকক্ষণ আগেই মারা গিয়েছিল। কিন্তু সে পড়েছিল আমারই শোবার ঘরে।
বলতে বলতে কেঁপে উঠল বেসিল।
–আমার ভয় হচ্ছিল, যে কোন মুহূর্তে ডিনা এসে পড়বে, ওই অবস্থায় আমাকে দেখলে ভেবে নেবে আমিই মেয়েটিকে খুন করেছি। সেই মুহূর্তেই একটা মতলব মাথায় এসে গেল। নাকউঁচু দাম্ভিক বুড়ো ব্যান্ট্রির কথা মনে পড়ল। আমাকে বরাবর অবজ্ঞার দৃষ্টিতে দেখে। তাকে জব্দ করার জন্য মৃত স্বর্ণকেশীকে ব্যান্ট্রির লাইব্রেরিতে চালান করে দিলাম।
সকালে কিন্তু পুলিস এখানেই চলে এল। সেই চিফ কনস্টেবল। ইচ্ছে করেই লোকটির সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছিলাম। এ সব ঘটনা যখন ঘটছে, তখনই ডিনা এসে পড়ে।
ডিনা জানালার বাইরে তাকাল। বলল, একটা গাড়ি আসছে, অনেকগুলো লোক রয়েছে ভেতরে।
-খুব সম্ভব ওরা পুলিস, বললেন মিস মারপল, বেসিল ব্লেক উঠে দাঁড়াল। হাসবার চেষ্টা করল।
–তাহলে এর সঙ্গে আমি জড়িত? ভাল কথা, ডিনা ভয় পাবার কিছু নেই। আমাদের পারিবারিক উকিল বুড়ো সিমের কাছে যেও। মার কাছে গিয়ে আমাদের বিয়ের কথা জানিও। ভেঙ্গে পড়ার কিছু নেই–আমি খুন করিনি–সবই ঠিক হয়ে যাবে।
ঘরে ঢুকলেন ইনসপেক্টর স্ল্যাক। সঙ্গে একজন।
–মিঃ বেসিল ব্লেক।
–হ্যাঁ।
–গত কুড়ি সেপ্টেম্বর রাতে রুবি কীন নামে একটি মেয়েকে খুন করার অভিযোগে আপনাকে গ্রেপ্তারের পরোয়ানা রয়েছে। আমার সঙ্গে আপনাকে আসতে হবে।
বেসিল মাথা নিচু করল। ডিনাকে দেখল। বলল, বিদায় ডিনা।
ইনসপেক্টর স্ল্যাক মিস মারপলের উপস্থিতি লক্ষ্য করে সুপ্রভাত জানালেন।
উৎসাহে তিনি টগবগ করছিলেন। কার্পেটটা হাতে পেয়েছিলেন। তাছাড়া গাড়ি রাখার জায়গার লোকটাকে জিজ্ঞেস করে জানতে পেরেছিলেন বেসিল ব্লেক রাত এগারটার সময় চলে এসেছিল। বেসিলকে বিকারগ্রস্ত বলেই মনে হচ্ছিল তার। প্রথমে রিভস মেয়েটাকে শ্বাসরোধ করে মারা হয়েছে। পরে নিজের গাড়ি নিয়ে পার্টিতে চলে আসে তারপর ডেনমাউথে। তারপর রুবি কীনকে এখানে এনে গলা টিপে মেরে কর্নেল ব্যান্ট্রির লাইব্রেরিতে ফেলে আসে। যৌন উন্মাদ ছাড়া কিছু নয়।