–তা সত্ত্বেও তিনি তাকে কাছে রেখেছিলেন?
-হ্যাঁ স্যার। সবই ওই মেয়ে রোজামণ্ডের জন্য। মেয়েকে তিনি চোখের মণির মত ভালবাসতেন।
–মিসেস জেফারসন যদি বিয়ে করতেন?
–তিনি সেটাও মেনে নিতে পারতেন না। কেবল ওই মেয়েটির প্রতি একটু টান অনুভব করতেন।
–তুমি তাহলে বলছ, রুবি কীন খুবই মতলববাজ ছিল?
–আসলে অল্প বয়স। তেমন অভিজ্ঞতা ছিল না।
–আচ্ছা মেয়েটি সম্পর্কে পরিবারে কোন রকম আলোচনা হয়েছিল?
–কোন আলোচনা হত না। মিঃ জেফারসন তার মনোভাব পরিষ্কার ভাবেই জানিয়ে দিয়েছিলেন।
–মেয়েটির মনোভাব কেমন ছিল?
–আমার মনে হয়েছিল সে খুবই খুশি। একটা ঘটনার কথা মনে পড়ছে স্যার।
বেশ তো। বল শুনি।
–এর মধ্যে তেমন কিছু সম্ভবত নেই। একদিন মেয়েটি তার ব্যাগ খুলবার সময় একটা ফটো পড়ে গিয়েছিল। ফটোটা একজন তরুণের ছিল স্যার। মিঃ জেফারসন খুবই বুদ্ধিমান। তিনি বেশ রেগে গিয়েছিলেন মেয়েটির কৈফিয়ত শুনে। সে বলেছিল, তরুণটিকে চেনে না। পরে বলেছিল, মাঝে মাঝে এখানে আসে; তার সঙ্গে দু-একবার নেচেছে। নামধাম জানে না। মিঃ জেফারসন কড়া দৃষ্টিতে কয়েকবার তাকিয়ে তাকে কেবল দেখে নিয়েছিলেন। তাছাড়া সে কোথাও গেলে, তিনি আমার কাছে জানতে চাইতেন, সে কোথায় গেল।
স্যার হেনরি মাথা দোলালেন। তিনি আরও কয়েকটা প্রশ্ন করলেন। কিন্তু এডওয়ার্ডস তেমন কিছু বলতে পারল না।
.
ডেনমাউথের পুলিস দপ্তরে সুপারিন্টেন্ডেন্ট হার্পার কয়েকটি মেয়ের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করছিলেন।
প্রত্যেকেই প্রায় একই কথা চাইছিল, পামেলা রীভস তাদের কাছে বলেছিল সে উলওয়ার্থ যাচ্ছে আর পরের বাসে করে ফিরবে।
ঘরের এককোণে অত্যন্ত সাধারণ হাবভাব নিয়ে বসেছিলেন মিস মারপল। কেউই তাকে বিশেষ ভাবে লক্ষ্য করেনি।
শেষ মেয়েটিকে বিদায় দেবার পর মিস মারপল, ঘর্মাক্ত হাপারের দিকে তাকিয়ে বললেন, আমি ফ্লোরেন্স স্মলের সঙ্গে কথা বলতে চাই।
হার্পার একটি কনস্টেবলকে দিয়ে মেয়েটিকে আবার ডেকে পাঠালেন।
ফ্লোরেন্স স্মল একজন অবস্থাপন্ন কৃষকের মেয়ে। দীর্ঘাঙ্গী, কালো চুল, বাদামী চোখ। সে খুবই ঘাবড়ে গিয়েছিল।
মিস মারপল মেয়েটিকে বললেন, নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ, পামেলার মারা যাওয়ার দিনের সব ঘটনার কথা বিশেষ ভাবে জানা দরকার। তুমি যা জান, আমাকে খুলে বল। যদি তা না বল, তাহলে পুলিস তোমাকে সন্দেহ করবে–তোমাকে জেলে পাঠানো হতে পারে। সবকথা এখনই আমাকে খুলে বল।
ফ্লোরেন্স কয়েকবার ইতস্ততঃ করল। পরে মিস মারপলের ভাবলেশহীন চোখের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগল।
পামেলা সেদিন উলওয়ার্থে যাচ্ছিল, তাই না? মিস মারপল তীব্র স্বরে বললেন।
কাতরভাবে মেয়েটি মিস মারপলের দিকে তাকাল। মিস মারপল প্রশ্ন করলেন, কোন ফিল্মের ব্যাপার ছিল, তাই না?
মেয়েটি চাপা স্বরে বলে উঠল, হ্যাঁ।
–এবারে সবকথা গোড়া থেকে খুলে বল। পামেলা তোমাকে কি বলেছিল?
র্যালিতে যোগ দিতে যাওয়ার সময় আমরা এক সঙ্গে বাসের জন্য হাঁটছিলাম, ও আমাকে বলেছিল ওর সঙ্গে একজন ফিল্মের প্রযোজকের আলাপ হয়েছিল। লোকটা পামকে বলেছিল পামের অভিনয় ক্ষমতা আছে, তবে কিছুদিন শিক্ষানবিশী করতে হবে। পামকে র্যালির পরে ডেনমাউথে একটা হোটেলে লোকটার সঙ্গে দেখা করতে বলেছিল। সে তাকে স্টুডিওতে নিয়ে যাবে। সেখানে পরীক্ষা নেয়ার পর পাম বাস ধরে বাড়ি ফিরতে পারবে।
-বেশ, বলে যাও।
–আমাদের র্যালি ভালভাবে শেষ হয়েছিল। পাম আমাকে বলেছিল, সে এবারে ডেনমাউথ হয়ে উলওয়ার্থ যাচ্ছে। ওকে আমি ফুটপাথ ধরে যেতে দেখেছিলাম।
কথা শেষ করে বেদনার্ত দৃষ্টিতে মেয়েটি মিস মারপলের চোখের দিকে তাকাল।
–আমাকে সবকথা বলে তুমি ঠিক কাজ করেছ।
ফ্লোরেন্সকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেবার পর মিস মারপল ওর কাহিনী হার্পারকে শোনালেন।শেষে বললেন, এরকম কিছুই আমি ভেবেছিলাম।
-আপনি অসাধারণ মিস মারপল। কি করে যে এতগুলো মেয়ের মধ্যে এই মেয়েটিকেই । বেছে নিলেন ভেবে পাচ্ছি না…লেনভিল স্টুডিও বললেন, তাই না?
কোন উত্তর না দিয়ে মিস মারপল উঠে দাঁড়ালেন।
এবারে উঠি। এখুনি হোটেলে ফিরে যেতে হবে।
.
১৬.
মিস মারপলের বাগানের পাশের গির্জার যাজক ভদ্রলোকের স্ত্রী গ্রিসলডার সঙ্গে দেখা করলেন মিস মারপল।
গ্রিসলডা, একটা রসিদ বই টাকা তোলার জন্য দাও।
ছেলে সামলাচ্ছিল গ্রিসলডা। হেসে বলল, নিশ্চয়ই কোন মতলব এঁটেছেন? ব্যাপার কি আমাকে বলবেন না?
-পরে বলব। এখন ব্যস্ততা রয়েছে।
.
চাঁদা তোলার একখানা রসিদ বই নিয়ে মিস মারপল গ্রামের পথ ধরে এগিয়ে চললেন। চৌমাথা থেকে বাঁ দিক ঘুরে ব্লু বোর পেরিয়ে চ্যাটস ওয়ার্থে মিঃ বুকারের নতুন বাড়ির দরজায় এসে দাঁড়ালেন।
দরজা খুলে দিল স্বর্ণকেশী এক তরুণী ডিনালী। তার দেহে ধূসর রঙের স্ল্যাকস আর হালকা সবুজ জাম্পার।
-এক মিনিট একটু ভেতরে আসতে পারি?
বলতে বলতেই ভেতরে ঢুকে পড়লেন মিস মারপল।
–অশেষ ধন্যবাদ। একটা বেতের চেয়ারে বসে পড়লেন মিস মারপল। আমি এসেছিলাম সামান্য কিছু চাদার জন্য। সামনের বুধবার গির্জায় কিছু হাতের কাজ বিক্রি হবে
-ওহ। আমি মানে
সামান্য আধ ক্রাউন চাঁদা দিতে পারবেন না?
ডিনা লী তার হাতব্যাগ খুঁজতে লাগল।
মিস মারপল তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে দ্রুত ঘরের চারপাশ জরিপ করে নিলেন।