র্যামন আমার পেশাদারী নাম। যদিও নামটা দিয়েছিলেন আমার এক ঠাকুমা। তবে প্রথম নাম টমাস, বলে স্যার হেনরির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, আপনি তো ডেভনসায়ারের মানুষ, নাম টমাস, বলে স্যার হেনরির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, আপনি তো ডেভনসায়ারের মানুষ, তাই না স্যার? স্টেন? আমার আত্মীয়স্বজনরাও ওই দিকেই থাকতেন, আলসম্পটনে।
–আপনি কি আলসম্পটনের স্টারেদের কেউ? এ তো আমার জানা ছিল না।
–তিনশ বছর ওখানেই আমাদের বাস। এখন অবশ্য আমার বড়ভাই নিউইয়র্কবাসী। আমাদের বাকিরা সবাই পৃথিবীর নানা প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছি।
একটু থেমে আবার বলল, আমি নাচ আর টেনিস খেলাটা জানতাম। সেই কাজই নিলাম রিভিয়েরাতে এক হোটেলে। সেখান থেকে চলে এলাম এখানে। মেয়েদের টেনিস খেলা শেখাতে হয় তার সঙ্গে বড় মানুষের সুখী মেয়েদের সঙ্গে নাচা, এই হল জীবন।
–আপনার সঙ্গে কথা বলে আনন্দ পেলাম। বললেন স্যার হেনরি, একটা কথা জিজ্ঞাসা করার ছিল।
রুবি কীন সম্পর্কে? দুঃখিত, এ ব্যাপারে সাহায্য করার মত কিছুই আমি মেয়েটার সম্পর্কে জানি না। ব্যাপারটাতে কোন মোটিভ আছে বলে আমার মনে হয় না।
–দুজন মানুষের মোটিভ ছিল, বললেন মিস মারপল, রুবি কীনের মৃত্যুতে সম্ভবতঃ লাভবান হচ্ছেন মিসেস জেফারসন আর মিঃ গ্যাসকেল–প্রায় পঞ্চাশ হাজার পাউণ্ড।
–না, না, এ অবিশ্বাস্য। এ ঘটনায় ওদের হাত থাকতে পারে না।
–টাকা সবই সম্ভব করে তুলতে পারে। বললেন মিস মারপল।
ঠিক এই সময়ে অ্যাডিলেড জেফারসন সেখানে উপস্থিত হলেন। তার সঙ্গে ছিলেন হুগো ম্যাকলীন।
দেরি হয়ে গেল, বলে ক্ষমা চেয়ে টেনিস কোর্টের দিকে চলে গেলেন মিস জেফারসন। তাকে অনুসরণ করল রেমণ্ড। হুগো ম্যাকলিন বেঞ্চে বসে পড়লেন। তার দৃষ্টি টেনিস কোর্টে খেলায় ব্যস্ত দুটি সাদা মূর্তির দিকে।
-এই রেমণ্ড লোকটা কে? পেশাদারেরা কেমন অদ্ভুত হয়। বললেন হুগো।
–ও হল ডেভনসায়ার স্টারেদের বংশধর। স্যার হেনরি বললেন।
-সত্যিই তাই? হুগো ম্যাকলীন অখুশিই হলেন বোঝা গেল। অ্যাডি আমাকে কেন যে ডেকে পাঠাল বুঝতে পারছি না।
–আপনাকে কখন ডেকে পাঠিয়েছে? সাগ্রহে জানতে চাইলেন স্যার হেনরি।
–যখন এসব ঘটছিল–টেলিগ্রাম পেলাম গলফ খেলে আসার পরেই। সঙ্গে সঙ্গে চলে আসি।
–আপনাদের ডেনবারি হেড শুনেছি খুব ভাল জায়গা। খরচও কম। বললেন মিস মারপল, একদিন যেতে হবে ওখানে।
-যাবেন–ইয়ে…হ্যাঁ, বেশ তো।
বলে হুগো ম্যাকলীন উঠে পড়লেন। তারপর বিদায় নিয়ে চলে গেলেন।
–আমিও চলি। অনেক কাজ রয়েছে। এই তো, মিসেস ব্যান্ট্রি আসছেন আপনাকে সঙ্গ দেবেন।
হাঁপাতে হাঁপাতে এসে পৌঁছলেন মিসেস ব্যান্ট্রি।
–পরিচারিকাদের সঙ্গে কথা বললাম। কিন্তু কিছুই জানতে পেলাম না। মেয়েটা যে বাইরের কারো সঙ্গে প্রেম করত, হোটেলের কেউই সেটা জানতে পারেনি।
ততক্ষণে টেনিস কোর্টের দিকে চোখ পড়েছে।
–অ্যাডি টেনিস ভালই খেলে দেখছি।
–মিঃ জেফারসন মারা গেলে উনি বেশ পয়সাওয়ালা মহিলা হয়ে যাবেন। বললেন মিস মারপল।
–জেন, তুমি এখনো রহস্যের কোন কিনারা করতে পারলে না। ভেবেছিলাম তুমি সঙ্গে সঙ্গেই সব বুঝতে পারবে। মিসেস ব্যান্ট্রির গলায় অনুযোগ ঝরে পড়ল।
-প্রথমে বুঝতে পারিনি, এখন বুঝতে পারছি। বললেন মিস মারপল।
–রুবি কীনকে কে খুন করেছে, এখন বুঝতে পেরেছ বলছ?
–হ্যাঁ, তা জানি।
–সে কে, জেন?
–তোমাকে কেবল ইঙ্গিত দিতে পারি। তোমার পেটে কথা থাকে না ডলি।
–কিন্তু আমি যে এটা জানার জন্যেই ডেনমাউথে এসেছি জেন। তাকে একা বাড়িতে রেখে আসতে হয়েছে।
–আমি তা জানি ডলি। আর তোমার মত আমিও একই কারণে এখানে এসেছি।
.
১৫.
হোটেলের একটা নিরিবিলি কামরা। এডওয়ার্ডস সমসম্ভ্রমে স্যার হেনরি ক্লিদারিং-এর বক্তব্য শুনছিল।
-তুমি তো জান এডওয়ার্ডস, এখানে দুর্ঘটনাটা ঘটে যাবার পরে তোমার মনিব আমাকে ডেকে পাঠিয়েছেন। এই রহস্য ভেদ করার অনুরোধ জানিয়েছেন।
আমি আগে স্কটল্যাণ্ড ইয়ার্ডে পুলিস কমিশনার ছিলাম। আমার বুদ্ধি আর অভিজ্ঞতার ওপর নির্ভর করে আছেন তিনি।
মৃত মেয়েটির মৃত্যু সম্পর্কে আসল সূত্রগুলো তুমি নিশ্চয় বুঝতে পেরেছ। মেয়েটিকে মিঃ জেফারসন দত্তক নেবার কথা ভেবেছিলাম। কিন্তু ওরা দুজন–মিঃ গ্যাসকেল আর মিসেস জেফারসন–এদের ঘোরতর আপত্তি ছিল ব্যাপারটাতে। এখন আমার ধারণা ভেতরের খবরাখবর যা তোমারই তা জানা সম্ভব। একজন পুলিস হিসেবে নয়, তোমার মনিবের হিতাকাঙ্ক্ষী একজন বন্ধু হিসেবে আমি এসব জানতে চাইছি। তুমি আমাকে নির্ভয়ে সব বল।
এডওয়ার্ডস দু মিনিট চুপ করে থাকল। পরে বলল, আমি অনেক দিন মিঃ জেফারসনের কাছে রয়েছি। তার ভালমন্দ দুটো দিকই আমার জানা আছে। আমি দেখেছি সবচেয়ে যেটা পছন্দ করতে পারেন না, তা হল তাকে ঠকানোর চেষ্টা।
–কোন বিশেষ কারণে একথা বলছ?
–হ্যাঁ স্যার। যে মেয়েটাকে মিঃ জেফারসন দত্তক নেবেন মনস্থ করেছিলেন, সে তার যোগ্য ছিল না। মিঃ জেফারসনের প্রতি তার কণা মাত্র টান ছিল না।
মিসেস জেফারসনও যথেষ্ট সহানুভূতি পেয়ে এসেছেন তার কাছ থেকে, কিন্তু তিনিও গত গ্রীষ্মকাল থেকে কেমন যেন বদলে যেতে শুরু করেছেন।
মিঃ জেফারসন সেটা লক্ষ্য করে মনে খুবই আঘাত পেয়েছিলেন। আর মিঃ মার্ককেও তিনি কখনও ভাল চোখে দেখেননি।